أحكام الدعاء
والمناجات المروِّجة برفع الأيدى بعد الصلاة المكتوبة بضوء القرآن والسنة الصحيح
কুরআন ও সহীহ্ হাদীছের আলোকে ফরয নামাযের পর সম্মিলিত ভাবে দুই হাত উত্তোলন করে
দু’আ ও মুনাজাতের বিধানঃ
আবু মাহফুজ আব্দুস সালাম
প্রশ্নঃ ফরজ
নামাজের পর সম্মিলিত ভাবে মোনাজাত করা যাবে কি না এব্যাপারে কোরআন হাদীসের আলোকে
আপনার মতামত জানতে চাই।
উত্তর: এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় আলোচ্য: (১)
নামাযের পরে মুনাজাত করা, (২) মুনাজাত করার সময় হাত উঠানো এবং (৩) উপস্থিত
সকলেই সমবেতভাবে জামাতে যিকর ও মুনাজাত করা।
(১) নামাযের পরে মুনাজাত
করা।
নামায মুমিনের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। নামাযের
শেষে মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি ও আবেগ আসে। এই সময়ে
তাড়াহুড়ো করে উঠে চলে যাওয়া মুমিনের উচিত নয়। নামাযের
পরে যতক্ষণ সম্ভব নামাযের স্থানে বসে দু‘আ মুনাজাত ও যিকিরে রত থাকা
উচিত। মুমিন যদি কিছু না করে
শুধুমাত্র বসে থাকেন তাও তাঁর জন্য কল্যাণকর। নামাযের
পরে যতক্ষণ মুসল্লী নামাযের স্থানে বসে থাকবেন ততক্ষণ ফিরিশতাগণ তাঁর জন্য আল্লাহর
কাছে দু‘আ করবেন
বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন:
إَذَا
صَلَّى الْمُسْلِمُ ثُمَّ جَلَسَ فِيْ مُصَلاَّهُ لَمْ تَـزَلِ الْمَلاَئِكَةُ تَدْعُو لَهُ اَللَّهُمَّ
اغْـفِـرْ لَـهُ اَللَّهُمَّ ارْحَـمْهُ مَا لَـمْ يُـحْدِثْ أَوْ يَـقُمْ
“যদি কোনো
মুসলিম সালাত আদায় করে, এরপর সে তাঁর সালাতের স্থানে বসে থাকে, তবে
ফিরিশতাগণ অনবরত তাঁর জন্য দু‘আ করতে থাকেন : হে আল্লাহ একে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ, একে রহমত
করুন। যতক্ষণ না সে ওযু নষ্ট করে
বা তাঁর স্থান থেকে উঠে যায় ততক্ষণ।”
হাদীসের শিক্ষার আলোকে আমারা দেখতে পাই যে, পাঁচ
ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরে কিছু সময় বসে যিক্র ও মুনাজাত করা সুন্নাত সম্মত গুরুত্বপূর্ণ
নেক আমল। পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের
পরের দু‘আ কবুল হয়
বলে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। হযরত আবু
উমামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো: “কোন্ দু‘আ সবচেয়ে
বেশি শোনা হয় বা কবুল করা হয় ?” তিনি উত্তরে বলেন :
جَـوْفُ
الليـلِ الآخِـرُ، ودُبـُر الصلواتِ الـمكتـوبات
“রাত্রের
শেষ অংশ ও ফরয নামাযের শেষে (দু‘আ বেশি
কবুল হয়)।”
এভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, পাঁচ
ওয়াক্ত সালাতের পরে দু‘আ করা একটি সুন্নাত সম্মত নেক আমল।
সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত নামাযের শেষে কিছু সময় যিকর ও
মুনাজাতে কাটানো। এধরনের আরো কিছু দোয়া নামাযের
পর রাসূল সাঃ করতেন।
(২) হাত তুলে মুনাজাত করা।
দু‘আ-মুনাজাতের একটি আদব হলো, দুই হাত
তুলে দু‘আ করা। এই অর্থে
একটি হাদীসে বলা হয়েছে: “নিশ্চয় আল্লাহ লাজুক দয়াবান। যখন কোনো
মানুষ তাঁর দিকে দু’খানা হাত উঠায় (দু‘আ করতে), তখন তিনি
তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান।”
অন্য বর্ণনায় সালমান ফারসী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
مَا
رَفَـعَ قَـوْمٌ أَكُـفَّـهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُوْنَهُ شَيْئًا
إِلاَّ كَـانَ حَـقًّا عَـلَى اللهِ أَنْ يَـضَـعَ فِـيْ أَيْدِيْـهِمْ الَّذِيْ
سَأَلُوْا
“যখনই কিছু
মানুষ আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার জন্য তাদের হাতগুলিকে উঠাবে, তখনই
আল্লাহর উপর হক্ক (রহমতের দায়িত্ব) হয়ে যাবে যে তারা যা চেয়েছে তা তিনি তাদের হাতে
প্রদান করবেন।” হাফিয হাইসামী উল্লেখ
করেছেন যে, হাদীসটির
সনদ সহীহ।
অন্য হাদীসে মালিক ইবনু ইয়াসার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সা. বলেছেন:
إِذَا
سَأَلْتُمْ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلا تَسْأَلُوهُ
بِظُهُورِهَا
“তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন হাতের
পেট দিয়ে চাইবে, হাতের পিঠ দিয়ে চাইবে না।” হাদীসটির
সনদ গ্রহণযোগ্য।
রাসূলূল্লাহ ((সা.) বিভিন্ন সময়ে হাত উঠিয়ে দু‘আ করতেন। আয়েশা
(রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন :
يَرْفَعُ
يَدَيْهِ يَدْعُو حَتَّى إِنِّي لأَسْأَمُ لَهُ مِمَّا يَرْفَعُهُمَا يَدْعُو
اللَّهُمَّ فَإِنَّمَا أَنَا بَشْرٌ فَلا تُعَذِّبْنِي بِشَتْمِ رَجُلٍ شَتَمْتُهُ
أَوْ آذَيْتُهُrكَانَ
رَسُولُ اللَّهِ
“রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাত দু’খানা উঠিয়ে
দু‘আ করতেন, এমনকি আমি
তাঁর (দীর্ঘ সময়) হাত উঠিয়ে দু‘আ করাতে ক্লান্ত ও অস্থির হয়ে পড়তাম; তিনি এভাবে
দু‘আয় বলতেন :
হে আল্লাহ, আমি একজন
মানুষ মাত্র। আমি কোনো মানুষকে গালি
দিয়ে ফেললে বা কষ্ট দিলে আপনি সেজন্য আমাকে শাস্তি দিবেন না।”
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, অন্যান্য
সময়ের ন্যায় নামাযের পরেও মুনাজাতের সময় হাত উঠানো উত্তম। তবে যে
ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা
ফযীলত বাদ দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে ফযীলত বাদ দেওয়াই সুন্নাত। যেমন, কিবলামুখী
হয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। কিন্তু
নামাযের পরে ইমামের জন্য এই ‘মুস্তাহাব’ পরিত্যাগ করাই সুন্নাত।
অনেক হাদীস থেকে আমরা দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ
(সা.) অনেক সময়, বরং অধিকাংশ সময় দু‘আ-মুনাজাতের
জন্য হাত উঠাতেন না। বরং শুধু মুখে দু‘আ-মুনাজাত
করতেন। সাহাবীগণ থেকেও আমরা
অনুরূপ কর্ম দেখতে পাই। এ সকল ক্ষেত্রে আমরা কী
করব? আমরা কি
বলব যে, এ সকল
ক্ষেত্রেও হাত উঠিয়ে দু‘আ করা উত্তম এবং হাত না উঠানো অনুচিত? তাহলে তো
স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কর্ম অনুচিত পর্যায়ের হয়ে গেল। না কি আমরা
বলব যে, এ সকল
ক্ষেত্রে হাত উঠানো উত্তম, তবে না উঠালেও দোষ নেই? সেক্ষেত্রে
স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাজ ‘অনুত্তম’ বলে গণ্য হলো। না কি বলব
যে, এ সকল
ক্ষেত্রে হাত না উঠানোই উত্তম, তবে হাত উঠানোতে দোষ নেই? অথবা বলব
যে, এ সকল
ক্ষেত্রে হাত উঠানো জায়েয নয়? তাহলে হাত উঠানোর ফযীলতে বর্ণিত হাদীসের কী হবে?
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, যে সকল সময়ে তিনি দু‘আ-মুনাজাতে
হাত উঠিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে সেখানে হাত উঠানো সুন্নাত বলে গণ্য হবে। যেমন
আরাফার মাঠে, ইসতিসকার দু‘আয়, যুদ্ধে
শুরুতে, বিশেষ
আবেগের ক্ষেত্রে, ইত্যাদি। আর যেখানে
ও যে সময়ে তিনি হাত উঠাননি বলে জানা গিয়েছে সেখানে হাত না-উঠানো সুন্নাত। অধিকাংশ
নিয়মিত মাসনূন দু‘আ এই প্রকারের।
বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা আরো বুঝতে পারি যে, এ সকল
মুনাজাত পালনের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) দু হাত
তুলে মুনাজাত করেন নি। আমরা দেখছি যে, সাহাবীগণ
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘুরে বসা, ঠোট নাড়া, কথা বলা ইত্যাদি সব কিছুর
বর্ণনা দিচ্ছেন, কিন্তু কখনোই বলছেন না যে, তিনি দুই
হাত তুলে এই কথাগুলি বলেছিলেন। শুধু পাঁচ
ওয়াক্ত নামাযের পরের মুনাজাতের ক্ষেত্রেই নয়, অধিকাংশ নিয়মিত দু‘আ-
মুনাজাতের ক্ষেত্রেই তিনি হাত উঠাতেন না।
উপরের বিষয়গুলি সবই সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। এ সকল
তথ্যের বিষয়ে কোনো মতভেদ আছে বলে জানি না। নামাযের
পরে সামষ্টিক মুনাজাতের পক্ষের কোনো আলেমও কোথাও উল্লেখ করেন নি বা দাবী করেন নি
যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বা সাহাবীগণ কখনো ফরয সালাতের সালাম
ফেরানোর পরে উপস্থিত মুসাল্লীদের নিয়ে সমবেতভাবে দু‘আ করেছেন
বলে কোনো হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে নামাযের পরে দু‘আয় একাকী হাত উঠানোর বিষয়ে
কিছু কথা বর্ণিত হয়েছে। গত শতাব্দীর কোন কোন আলেম
উল্লেখ করেছেন যে, একদিন ফজরের নামাযের পরে ঘুরে বসে রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত তুলে দু‘আ করেছিলেন। তাঁরা বলেন, ইবনে আবী
শাইবা বর্ণনা করেছেন, ইয়াযিদ ইবনুল আসওয়াদ (রা) বলেন:
الْفَجْرَ فَلَمَّا سَلَّمَ
انْحَرَفَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَدَعَاrصَلَّيْتُ
مَعَ رَسُوْلِ اللهِ
“আমি
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে
ফজরের নামায আদায় করলান। তিনি সালামের পরে ঘুরে
বসলেন এবং দুই হাত উঠালেন ও দু‘আ করলেন।”
এর সাথে ফজরের
নামায আদায় করলান। তিনি সালাম ফেরানোর পরে
ঘুরে বসলেন।” কোন গ্রন্থেই “এবং দুই
হাত উঠালেন ও দু‘আ করলেন” এই অতিরিক্ত কথাটুকু নেই। এজন্য
আল্লামা মুফতী আমীমুল ইহসান বলেছেন, হাদীসটি নাযীর হুসাইন
মুঙ্গীরী এভাবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তিনি কোনো গ্রন্থে তা খুঁজে পান নি এবং
এর সনদ জানতে পারেন নি। rএই হাদীসটি
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ও অন্যান্য গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। তবে এ সকল
গ্রন্থে সংকলিত হাদীসের ভাষা নিুরূপ: আসওয়াদ বলেন, “আমি
রাসূলুল্লাহ
অন্য হাদীসে ফাদল ইবনু আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন,
الصَّلاةُ
مَثْنَى مَثْنَى تَشَهَّدُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَتَخَشَّعُ وَتَضَرَّعُ
وَتَمَسْكَنُ وَتَذَرَّعُ وَتُقْنِعُ يَدَيْكَ يَقُولُ تَرْفَعُهُمَا إِلَى
رَبِّكَ مُسْتَقْبِلا بِبُطُونِهِمَا وَجْهَكَ وَتَقُولُ يَا رَبِّ يَا رَبِّ
وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهُوَ كَذَا وَكَذَا، (فَهِيَ خِدَاجٌ)
সালাত দুই রাক‘আত, দুই রাক‘আত করে, প্রত্যেক
দুই রাক‘আতে
তাশাহ্হুদ পাঠ করবে, বিনীত হবে, কাতর হবে, অসহায়ত্ব
প্রকাশ করবে, বেশি করে সাহায্যা প্রার্থনা করবে এবং তোমার
দুই হাত প্রভুর দিকে উঠিয়ে দুই হাতের পেট তোমার মুখের দিকে করবে এবং বলবে: হে
প্রভু, হে প্রভু। যে এরূপ না
করলো তার সালাত অসম্পূর্ণ।
এই হাদীসে নামাযের পরে হাত তুলে দোওয়া করার কথা বলা হয়েছে। তবে
স্পষ্টতই হাদীসটি নফল নামাযের বিষয়ে, যা দুই রাক‘আত করে
পড়তে হয়। সর্বোপরি হাদীসটির সনদ
অত্যন্ত দুর্বল। ইমাম বুখারী, উকাইলী, যাহাবী
প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটির দুর্বলতা উল্লেখ করেছেন।
আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ
ইবনু যুবাইর (রা) এক ব্যক্তিকে দেখেন যে, সে সালাত শেষ করার পূর্বে
তার দুই হাত উত্থিত করে রেখেছে। ঐ ব্যক্তি
সালাত শেষ করলে তিনি বলেন:
لَـمْ
يَكُـنْ يَرْفَـعُ يَدَيْهِ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلاَتِهِ.rإِنَّ
رَسُوْلَ اللهِ
“রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত থেকে বিরত না হওয়া
পর্যন্ত তাঁর দুই হাত উঠাতেন না।” হাদীসটির
সনদ গ্রহণযোগ্য।
‘সালাত
শেষের আগে হাত উঠাতেন না’ থেকে মনে হয় ‘সালাত
শেষের পরে রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত তুলতেন। এখানে ফরয
বা নফল সালাতের কথা উল্লেখ করা নেই। তবে যে
ব্যক্তিকে ইবনু যুবাইর কথাটি বলেছিলেন সে ব্যক্তি বাহ্যত নফল সালাত আদায় করছিল এবং
এজন্যই একাকী সালাতের মধ্যে দুই হাত তুলে দোওয়া করছিল। তার পরেও
এই হাদীসের ভিত্তিতে আমরা দাবি করতে পারি যে, তিনি নফল ও ফরয উভয় সালাতের
পরেই হাত তুলে দু‘আ করতেন। তবে
অন্যান্য অগণিত সহীহ হাদীস, যেগুলিতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ফরয সালাতের
পরের দু‘আ, যিক্র, বক্তৃতা ও
অন্যান্য কর্মের বিবরণ বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে সেগুলি থেকে জানা যায় যে, তিনি ৫
ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরের দু‘আ-মুনাজাত করার সময় হাত তুলতেন না। সে সকল
হাদীস ও এ হাদীসটির সমন্বয়ে আমরা ধারণা করতে পারি যে, তিনি
সম্ভবত মাঝে মাঝে সালাত শেষে দু‘আ-মুনাজাতের জন্য হাত তুলতেন বা নফল সালাতে দু‘আ করলে
সালাত শেষে হাত তুলে দু‘আ করতেন।
এ সবই একা একা হাত তুলে দু‘আ করার
বিষয়ে। ফরয নামাযের পরে মুক্তাদীদেরকে
নিয়ে সমবেতভাবে হাত তুলে বা হাত না তুলে দু‘আ তিনি কখনো করেননি। এ বিষয়ে
কারো কোনো দ্বিমত আছে বলে আমাদের জানা নেই।
(৩) উপস্থিত সকলেই
সমবেতভাবে জামাতে যিক্র ও মুনাজাত করা।
নামাযের পরে জামাতবদ্ধ মুনাজাত গত কয়েকশত বৎসর যাবৎ চালু
হয়েছে। তাতে কোনো প্রকারের ফযীলত
আছে বলে আমি জানতে পারি নি। রাসূলুল্লাহ
(সা.) ও সাহাবীগণের যুগে এইরূপ মুনাজাতের প্রচলন ছিল না বিধায় কোনো কোনো আলিম একে
বিদ‘আত বলেছেন। আমরা জানি
যে, নামাযের
পরে মুনাজাত করা ও মুনাজাতে হাত উঠানোর ফযীলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। একাকী
মুনাজাত করলে এই দুইটি ফযীলতই পলিত হয়। সমবেতভাবে
মুনাজাত করার কোনো ফযীলত হাদীসে উল্লেখ করা হয় নি। এক্ষেত্রে
আমাদের আশা হলো, একজন মুনাজাত করবেন এবং সমবেত সকলেই ‘আমিন’ বলবেন, এতে হয়ত
আল্লাহ সকলের আবেদনে মুনাজাতটি কবুল করবেন। এ জন্য
অবশ্যই ইমামকে জোরে জোরে সবাইকে শুনিয়ে মুনাজাত করতে হবে। এতে ‘মাসবূক’ মুসাল্লীদের
নামায আদায় বিঘিœত হবে। আর ইমাম
যদি মনে মনে মুনাজাত করেন তবে তো কিছুই হলো না। ইমাম একাকী
মুনাজাত করলেন। মুক্তাদিগণ কিছুই না করে
হাত তুললেন ও নামালেন। পক্ষান্তরে একাকী মুনাজাত
করলে নিজের মনের আবেগ ও প্রয়োজন অনুসারে মুনাজাত করা যায়। এতে
মুনাজাতের ফযীলত ও মূল উদ্দেশ্য পুরোপুরি সাধিত হয়, কিন্তু
কারো নামাযের ক্ষতি হয় না। এভাবে আমরা
বুঝতে পারছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর
সুন্নাতই উত্তম। কিন্তু আমরা বিষয়টিকে
উল্টে ফেলেছি।
তাছাড়া রাসূল সাঃ পরের যুগগুলিতেও সাহাবী, তাবেয়ী ও
তাবে-তাবেয়ীগণের যুগেও কেউ কখনো ফরয নামাযের পরে সমবেতভাবে হাত তুলে মুনাজাত
করেননি। তাঁরা সুযোগ পেলে এই সময়ে
ব্যক্তিগতভাবে যিক্র ও মুনাজাত করতেন।) হাদীস থেকে
বুঝা যে, রাসূলুল্লাহ
(সা.)যিকর ও মুনাজাত একাকী পালন করতেন। জামাতে
উপস্থিত সাহাবীগণের সাথে একত্রে তা আদায় করতেন না। কখনোই
সাহাবীগণ নামাযের পরের মুনাজাতে তাঁর সাথে শরীক হয়েছেন বলে বর্ণিত হয় নি। প্রায় অর্ধ
শত সাহাবী থেকে বর্ণিত ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের হাদীসগুলির একটি
হাদীসেও বর্ণিত হয় নি যে, একদিন একটি বারও তিনি মুক্তাদিগণের সাথে একত্রে
মুনাজাত করেছেন। পক্ষান্তরে সাধারণ ফযীলত
জ্ঞাপক হাদীসের আলোকে অনেক আলিম একে সমর্থন করেছেন। তাঁরা এই “জামাতবদ্ধ
মুনাজাত”-কে “মুস্তাহাব” বলেছেন। চার ইমাম ও
পূর্ববর্তী সকল ফকীহ বলেছেন যে সালামের মাধ্যমে নামায শেষ হয়ে যায়। হাদীস
শরীফেও বলা হয়েছে যে তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু এবং সালামেই সালাত শেষ। এগুলির
সাথে সঙ্গতি রক্ষার জন্য তাঁরা বলেছেন যে, এই মুনাজাত নামাযের কোনো
অংশ নয়। নামাযের পরে অতিরিক্ত একটি
মুস্তাহাব কাজ। নামায সালামের সাথে সাথেই
শেষ হয়ে যায়, তবে কেউ যদি এর পরে অন্য কোনো মুস্তাহাব কাজ
করে তাহলে দোষ নেই।
এখানে মূল হলো মনের আবেগসহ মাসনূন মুনাজাতগুলি পালন করা। নামাযের
পরে মুনাজাতের ক্ষেত্রে একাকী মুনাজাতই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রীতি। এছাড়া
মনোযোগ আনয়ন ও মাসনূন বাক্য পালনের জন্যও একাকী মুনাজাত উত্তম। জামাতে
ইমামের সাথেও মুনাজাত করা যেতে পারে। তবে
সদাসর্বদা এইরূপ জামাতবদ্ধ মুনাজাত করা, একে জরুরী মনে করা বা তা
পরিত্যাগকারীকে খারাপ মনে করা খুবই অন্যায়। আল্লাহ
আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন । আমীন।
এব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে ড. খোন্দকার
আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত “ মুনাজাত ও নামাজ “ বইটি পড়ার
জন্য অনুরোধ করছি।