Thursday, 17 October 2019

সুস্থ ও সুন্দর জীবন-যাপনে পবিত্র, পরিস্কার ও পরিচ্ছন্নতা একান্ত আবশ্যকঃ


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সুস্থ ও সুন্দর জীবন-যাপনে পবিত্র, পরিস্কার ও পরিচ্ছন্নতা একান্ত আবশ্যকঃ
সংগ্রহে : আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
 

ইসলামে সুস্থ ও সুন্দর জীবন-যাপনে পবিত্র, পরিস্কার ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি বেশ গুরুত্বারূপ করা হয়েছে।

০১. আল-কুরআনে সুস্থ ও সুন্দর জীবন-যাপনে পবিত্র, পরিস্কার ও পরিচ্ছন্নতার নির্শনা :
ক. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন :
فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُوا وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ
সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন’। [সূরা আত-তাওবা : ১০৮]।

খ. মহান আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেছেন :
إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوّٰبِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকেও’ [সূরা বাক্বারা : ২২২]।

০২. হাদীসে সুস্থ ও সুন্দর জীবন-যাপনে পবিত্র, পরিস্কার ও পরিচ্ছন্নতার নির্শনা :
ক. হাদিসেও বিভিন্ন উপায়ে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এমনকি পরিচ্ছন্নতা রক্ষাকে ঈমানের অংশ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছেআবু মালেক আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন :
اَلطُّهُوْرُ شَطْرُ الْإِيْمَانِ
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।[মুসলিম ২২৩]।

খ. ইসলামে ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা, গৃহের পরিচ্ছন্নতা ও পরিপার্শের পরিচ্ছন্নতাসহ সর্কবষয়ে গুরুত্বারূপ করা হয়েছে। ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় অন্তত জুম‘আ বারে গোসলের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন :
اَلْغُسْلُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ
জুম‘আর দিন (শুক্রবার) গোসল করা প্রতিটি সাবালক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব।[বুখারি ৪৭৯]।

গ. আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন : আল্লাহর জন্য প্রতিটি মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য হলো (অন্তত) প্রতি সাত দিনের মাথায় তার মাথা ও শরীর ধৌত করা।[বুখারি ৮৯৭, মুসলিম ৮৪৯]।

কারো ওপর গোসল ফরয না হলেও শরীরে ঘাম ও ধূলা-বালু ইত্যাদি লাগার কারণে দুর্গন্ধ হতে পারে, তাই অন্তত সাতদিনে একবার গোসলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার মানে সাত দিন পর গোসলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা নয়। অন্যদিকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পরিচ্ছন্ন রাখতেও হাদিসে সবিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দাঁত ও মুখের যত্নের জন্য হাদিসে মিসওয়াকের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মিসওয়াক ব্যবহারকে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

ঘ. আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন : যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট না হত তাহলে প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।[বুখারি ৮৮৭, মুসলিম ২৫২]।

ঙ. চুলের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায়ও ইসলামে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জাবির (রা.) বলেন, একদিন রাসুল (সা.) আমাদের ঘরে বেড়াতে এলেন। আসার পর তিনি এলোকেশী এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। তার সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘এ ব্যক্তি কি এমন কিছু জোটাতে পারেনি, যা দিয়ে সে তার মাথার চুল বিন্যস্ত করবে?’ ময়লা কাপড় পরিহিত আরেকজনকে দেখে তিনি বলেন, ‘এ ব্যক্তি কি এমন কিছুর ব্যবস্থা করতে পারেনি, যা দিয়ে সে তার কাপড় পরিষ্কার করবে?’ [মুসনাদ আহমাদ ১৪৮৫০, বাইহাকি ৫৮১৩]।

চ. মানুষের পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য এবং সুস্থতা ও কমনীয়তার নেয়ামত রক্ষায় শরীয়তে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হাদিস ফিকহের গ্রন্থগুলোর পবিত্রতা অধ্যায় পড়লে সহজে বোঝা যাবে। নখ কাটা, গোঁফ ছোট করা, বাহুর নিচের চুল উপড়ানো এমনকি গুপ্তাঙ্গের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করাসহ কোনোটিই বাদ যায়নি। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,  দশটি বিষয় ফিতরাতর অন্তর্ভুক্ত: গোঁফ কাটা, দাড়ি লম্বা রাখা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, চামড়ার ভাঁজের জায়গাগুলো ধোয়া, বগলের নিচের চুল তুলে ফেলা, নাভির নিচের চুল মুণ্ডানো, (মলমূত্র ত্যাগের পর) পানি দ্বারা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। বর্ণনাকারী বলেন, দশম বিষয়টি আমি ভুলে গেছি, সম্ভবত কুলি করা।[মুসলিম ২৭৫৭]।

ছ. ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখতেও হাদিসে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আবাস স্থানকেও নোংরা, আবর্জনা ও দৃষ্টিকটু উপাদান থেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিজের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা রক্ষায় এর বিকল্প নেই। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রা.) থেকে। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্রকে পছন্দ করেন। আল্লাহ পরিচ্ছন্ন। তিনি পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। আল্লাহ মহৎ, তিনি মহত্ব পছন্দ করেন, আল্লাহ বদান্য, তিনি বদান্যতা পছন্দ করেন। অতএব তোমরা তোমাদের (ঘরের) উঠোনগুলো পরিচ্ছন্ন রাখবে। [তিরমিজি ২৭৯৯]।

জ. পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারেও হাদিসে নির্দেশনা এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা লানতকারী (অভিশাপে আক্রান্ত হতে হয় এমন) দুইটি কাজ থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, লানতকারী  কাজ দুইটি কী? তিনি বলেন, যে মানুষের চলাচলের রাস্তায় কিংবা গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে।[আবু দাউদ ২৫, মুসনাদ আহম ৮৮৫৩]।

ঝ. পরিবেশ দূষণ রোধেও হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন : তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে, অতঃপর তা দিয়ে গোসল করে।[বুখারি ২৩৯, মুসলিম ২৮২]।

ঞ. তেমনি খাদ্য ও পানীয়কে দূষণমুক্ত রাখতে পাত্র ঢেকে রাখাসহ বিভিন্ন জরুরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জাবের ইবন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাসন ঢেকে রাখো। পানপাত্রের মুখ বন্ধ রাখো। দরজা কপাটবদ্ধ করো এবং এশারের সময় তোমাদের শিশুদের ঘরের ভেতরে রাখো। কেননা, এসময় জিনরা ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রভাব করে। আর তোমরা নিদ্রাকালে বাতিগুলো (প্রদীপ) নিভিয়ে দিও। কেননা ইঁদুর কখনো প্রদীপের সলতে টেনে নিয়ে যায়। অতঃপর তা গৃহবাসীকে জ্বালিয়ে দেয়।[বুখারি ৩৩১৬]।

ইসলাম হচ্ছে বাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত এবং মাধুর্পূর্ জীবন ব্যবস্থা। তাই আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সব সময় ইসলামের নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে ইহকাল ও পরকালে সুখী হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।

No comments:

Post a Comment