Friday, 27 April 2018

ইসলামে আনুগত্য ও বায়’আত গ্রহনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাঃ


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সূরা তাওবা -এর ১১১ ও ১১২ নং আয়াতদ্বয়ের আলোকে
ইসলামে আনুগত্য ও বায়আত গ্রহণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাঃ
আব্দুস সালাম হুসাইন আলী


  দারসের আলোচ্য বিষয় / শিরোনামঃ
আল-কুরআনের ১০ নং পারা, ৯ নং সূরাতুল বারা‘আত বা আত-তাওবাহ -এর ১১১ ও ১১২ নং আয়াতদ্বয়ের আলোকে : জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলন, আনুগত্য ও বায়আতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুস্মীকার্য

 অবতরণিকাঃ
সকল স্তুতি ও ভূয়ুশী প্রশংসা মহান স্রষ্টার জন্য যিনি মুমিনদের প্রাণাধিকপ্রিয় জান ও প্রাণের বিনিময়ে পরকালীন জীবনের সর্বোচ্চ ও সমগ্র নিয়ামতরাজী সমূহের মহাসমারোহের স্থান, শান্তি ও নিরাপত্তার নিঃছিদ্র নিরাপত্তার বলয়ে ঢাকা জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেনইসলামী আন্দোলন, বায়আত গ্রহন ও আনুগত্যকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অবশ্যম্ভাবী ও ইত্যাবশ্যকীয় করেছেন দুরূদ-সালাম ও শান্তি বর্ষিত হউক মহান চরিত্রের অধিকারী, সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, অনুসরণীয় যোগ্য ও আদর্শ নেতা, ইসলামী আন্দোলন, বায়আত গ্রহন ও আনুগত্যকে জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে বাস্তবায়নকারী রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি এবং সকল সাহাবা (রাঃ) গণ এবং ইসলামী আন্দোলন, বায়আত গ্রহন ও আনুগত্যের দৃষ্টান্তকারী সকল আপামর জনসাধারণের প্রতিও

উপস্থাপনাঃ
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته
সম্মানিত উপস্থিতি, সূধী মন্ডলী এবং দ্বীন প্রিয়, কুরআন প্রিয় তাওহিদী জনতা এবং অদ্যকার দারসুল কুরআন অনুষ্ঠানের শ্রোতা-বক্তা, গবেষক, সাহিত্যিক, ইসলামিক স্কলারশিপ এবং বিজ্ঞ-বিচক্ষণ, নিরপেক্ষ, উদার ও প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারীগণ! মনের সকল সংকীর্ণতা, দীনতা, হীনতা, হীনমন্নতা ও গোঁড়ামী সম্পূর্ণ পরিহার করত; একাগ্রতা, একনিষ্ঠতা, উদারতা, মনের প্রশস্ততা, কুরআন-সুন্নাহ্ ও বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষনের মানসিকতা নিয়ে মনের অন্ধকারাচ্ছন্ন জানালা খুলে কুরআনের প্রশস্ত ও উন্মুক্ত উর্বর ভুমিতে বেরিয়ে এসে ইহ-লৌকিক ও পার-লৌকিক জীবনের সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি, স্বাচ্ছন্দ্য ও সফলতার অর্জন করতে ঐশী গ্রন্থ আল-কুরআন আমাদেরকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে মহান আল্লাহ তায়ালা আল-কুরআনকে মানব জাতীর জন্য সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় অবতীর্ণ করেছেন যাতে মানব সম্প্রদায় উহাকে জীবন-বিধান হিসাবে গ্রহন করতে পারে

 দারসের উদ্দেশ্যঃ
সত্যিকার মুমিনগণ যেন কুরআনের দিক-নির্দেশনা অনুপাতে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলন, আনুগত্য ও বায়আতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতঃ কার্যকরী ভুমিকা রাখাই দারসুল কুরআনের উদ্দেশ্য

 দারসুল কুরআননের মূল পয়েন্ট সমূহঃ
১. সহীহ্ (বিশুদ্ধ) তিলাওয়াত
1-  التلاوة الصحيحة
২. সরল (প্রাঞ্জল) অনুবাদ
2-  الترجمة التسهيلة
৩. নাম করণ (নাম করণের কারণ)
3-  وجه التسمية
৪. অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট ও ঐতিহাসিক পটভূমি
4-  شان نزول وأهمية نزولها فى موكب التاريخية
৫. দারসের আলোচ্য বিষয়
5-  موضوع الدرس
৬. ব্যাখ্যা / নির্দেশনা / আনুসাঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়
6-  التشريحات / المعلومات المتعقلة بالأيات
৭. শিক্ষা / উপকারিতা
7-  الإستفادة من الدرس / الفائدة
৮. উপসংহার / যবণিকা / সমাপনী
8-  الخاتمة / الإختتامة / الإنتهاء

১. সহীহ্ (বিশুদ্ধ) তিলাওয়াতঃ
﴿إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْقُرْآَنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ  التَّائِبُونَ الْعَابِدُونَ الْحَامِدُونَ السَّائِحُونَ الرَّاكِعُونَ السَّاجِدُونَ الْآَمِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّاهُونَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَالْحَافِظُونَ لِحُدُودِ اللَّهِ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ﴾

২. সরল (প্রাঞ্জল) অনুবাদঃ
প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে  তাদের প্রতি তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে (জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ আর আল্লাহর চাইতে বেশী ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে, কেনা বেছা করছো সে জন্য আনন্দ করো এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্যআল্লাহর দিকে বার বার প্রত্যাগমনকারী, তার ইবাদত কারী,তার প্রশংসা বাণী উচ্চারণ কারী, তার সামনে রুকুকারী ও সেজদাকারী, সৎ কাজের আদেশ কারী, অসৎ কাজ থেকে বিরতকারী এবং আল্লাহর সীমা সংরক্ষণকারী (সেই সব মুমিন হয়ে থাকে যারা আল্লাহর সাথে কেনা বেচার সওদা করে) আর হে নবী! এ মুমিনদেরকে সুখবর দাও! [সূরা তাওবাহ : ১১১ – ১১২]।

৩. নাম করণ (নাম করণের কারণ) :
এ সূরাটির দুটি নামে পরিচিত : আত্ তাওবাহ ও আল বারাআতু তাওবা নাম করনের কারণ, এ সূরার ১১৮ নং আয়াতে কতিপয় ঈমানদারের গোনাহ মাফ করে তাওবা বতবুল করার কথ বলা হয়েছে আর এর শুরুতে মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষনা করা হয়েছে বলে একে বারায়াত (অর্থাৎ সম্পর্কচ্ছেদ) নামে অভিহিত করা হয়েছে

সূরার শুরুতে বিস্মিল্লাহ না লেখার কারণঃ
ক.এটা যখন সংকলন করা হয় তখন সাহাবীদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয় কেহ কেহ বলেন এই সূরা আনফালের অংশ অথবা কেহ কেহ বলেন আলাদা সূরা
খ. বিস্মিল্লাহ্ হলো রহমত কামনা ও নিরাপত্তার জন্য, আর এ সূরার মধ্যে কাফের মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা হয়েছে, তাই বিসমিল্লাহ লেখা হয়নি
গ. ইমাম কায়েশী বলেণ- জিব্রাঈল (আ.) এই সূরা নাযিলের সময় বিসমিল্লাহ নিয়ে আসেন নাই তাই
ঘ. ইমাম রাযী বলেন, নবী করিম (সা:) নিজেই এর শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখেননি, কাজেই সাহাবা কেরাম ও লেখেননি এবং পরবর্তী লোকেরা ও এ রীতি অনুসরণ অব্যাহত রেখেছেনপবিত্র কুরআন যে নবী (সা:) থেকে হুবুহু ও সামান্যতম পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়াই গ্রহন করা হয়েছিল এবং যে ভাবে তিনি দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই তাকে সংরক্ষন করার জন্য যে সর্বোচ্ছ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে এটি তার একটি প্রমাণ

৪. অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট ও ঐতিহাসিক পটভূমিঃ
এ সূরা ৩টি ভাষনে নাযিল হয়
১ম ভাষণঃ ১ম হতে ৫ম রুকুর শেষ পর্যন্ত এ অংশ ৯ম হিজরীর যিলক্বদ মাসে নাযিল হয়
২য় ভাষণঃ ৬ষ্ঠ রুকু থেকে ৯ম রুকুর শেষ পর্যন্ত ৯ম হিজরীর রজব মাসে নাযিল হয়
৩য় ভাষণঃ ১০ম রুকু থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত তাবুক যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তন কালে অবতীর্ণ হয়

৫. দারসের আলোচ্য বিষয়ঃ
 বিধর্মীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে (১ম রুকু)
 তাবুক যুদ্ধের অভিযান (৬ষ্ঠ-১০ম রুকু)
 মুনাফিকদের পরিণাম ও পরলৌকিক শাস্তি। (৪২-৪৩,৪৭-৫৯,৬১-৬৮,৭৪-৯০,৯৩-৯৮,১০১,১০৭-১১০,১২৪ ও ১২৭ আয়াত)
 মসজিদে জেরার নির্মাণের পরিণাম ও উহা ধ্বংস করার নির্দেশ [১০৮ নং আয়াত]
 শহীদের মর্যাদা, মাহাত্ম সৎপথে অর্থ ব্যয় এর শুভপরিণতি (১৪তম রুকু)

৬. অবতীর্ণের পেক্ষাপট / আলোচ্য আয়াতগুলোর শানে নুযুলঃ
অধিকাংশ মুফাস্সিরের মতে এ আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে বায়আতে আকাবায় অংশগ্রহনকারী লোকদের ব্যাপারে এ বায়আত নেয়া হয়েছিল মক্কায় মদীনার আনসারদের থেকে তাই এই সূরাটি মাদানী হওয়া সত্ত্বে ও এ আয়াতগুলোকে মাক্কী বলা হয়েছে

 আকাবার বায়আতের পরিচিতিঃ
আকাবাহ : এখানে আকাবা বলতে বোঝায় মিনার জমরায়ে আকাবার সাথে মিলিত পর্বতাংশকে এখানে মদীনা থেকে আগত আনসারগণের তিন দফায় বায়আত নেয়া হয়

ক. ১ম দফা নেয়া হয় নবুয়তের একাদশ বছরে, তখন মোট ৬ জন লোক ইসলাম গ্রহন করে মদীনায় ফিরে যায় এতে মদীনার ঘরে ঘরে ইসলাম ও নবী করীম (সা.) এর সীরাত চর্চা শুরু হয়

খ. ২য় দফায় পরবর্তী বছর হজ্জ্বের মৌসুমে পূর্বের ৫ জন সহ মোট ১২ জন নবী করিম (স.) এর হাতে বায়আত গ্রহন করে আর এভাবে মদীনায় মুসলমানের সংখ্যা বাড়তে থাকে (৪০ জনের ও বেশী) ফলে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নবী করিম (স.) হযরত মুসআব বিন উমাইর (রা:) কে কুরআন তালিমের জন্য প্রেরণ করেন

গ. ৩য় দফায় নবুয়তের ত্রয়োদশ বছর ৭০ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা সহ ৩য় ও সর্বশেষ বায়আত এ আকাবায় অনুষ্ঠিত হয় সাধারণত একেই বায়আতে আকাবা বলা হয়

৭. ব্যাখ্যা / নির্দেশনা / আনুসাঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ
আয়াত নং : ১১১
ক. ১১১ নং আয়াতটি-ই জিহাদ সংক্রান্ত ১ম আয়াত কারন মুহাম্মদ (স.) মক্কায় অবস্থানকালে এ পর্যন্ত জিহাদ সংক্রান্ত কোন হুকুম নাযিল হয়নি
খ. জিহাদ অর্থ : প্রচেষ্টা করা, বাস্তবায়ন করা
গ. জিহাদের সংজ্ঞা : আল্লাহর দেয়া জান-প্রাণ ও মাল দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা
ঘ. জিহাদের স্তর : ৫ টি-
     ১. দাওয়াত ইলাল্লাহ
     ২. শাহাদাৎ আলান্ নাস
     ৩. কিতাল ফি-সাবিলিল্লাহ
     ৪. আমল বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকার
     ৫. ইক্বামতে দ্বীন যেমন- আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেন :
تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
তোমরা আল্লাহ ও রাসুল (সা.) এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবন বাজি রেখে জিহাদ করবে এটাই তোমাদের জন্য উত্তম ; যদি তোমরা বুঝতে পার। [আস্ সফ : ১১]
ঙ. জিহাদের সফলতা:
চ. আখেরাতের সফলতা: আল্লাহ বলেন :
فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَابِالْآخِرَةِ ۚ وَمَن يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمً
“(এ সব লোকদের জেনে রাখা উচিত যে) আল্ল¬াহর পথে লড়াই করা সে সব লোকদেরই কর্তব্য, যারা পরকালের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিক্রি করে দেয় যারা আল্ল¬াহর পথে লড়াই করবে ও নিহত হবে কিংবা বিজয়ী হবে, অচিরেই তাকে আমি বিরাট পুরষ্কার দান করব। [সূরানিসা : ৭৪]
ï يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
আল্লাহ তোমাদের সব গুণাহ মাফ করে দিবেন এবং তোমাদের এমন বাগানে প্রবেশ করাবেন যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাদ্বারা বহে চলবে আর চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে সর্বোত্তম ঘর দান করবেন এটাই বড় সফলতা। [আছ্ সফ : ১২]

ছ. তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করা হবে যার নেয়ামত সমূহ অশেষ ও চিরন্তন। (আছ্ সফ : ১২-১৩)

 শহীদের মর্যাদা :
 প্রথম রক্তপাতেই তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে
 জান্নাতে তার স্থান তাকে দেখানো হবে (কবরে)
 কবরের আযাব থেকে তাকে রক্ষা করা হবে
কবরে বড় বিপদ আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে
 হাশরের ময়দানে তার মাথায় একটা আকর্ষনীয় মূকুট পড়ানো হবে
 তাকে তার ৭০ জন আত্মীয়ের শাফায়াতের অনুমতি দেয়া হবে
  
বাইয়াত পরিচিতিঃ
আভিধানিক অর্থ : ক্রয়- বিক্রয়, লেন-দেন, চুক্তি, আনুগত্যের শপথ, অঙ্গীকার, নেতৃত্ব মেনে নেয়া পরিভাষায় : আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিজের জান ও মালকে ইসলামী সংগঠনের দায়িত্বশীলের নিকট আনুগত্যের শপথের মাধ্যমে আল্লাহর পথে সপে দেয়ার ওয়াদা বা  প্রতিশ্রুতির নাম বাইয়াত যেমন আল্লাহ তাআলা সূরা ফাতাহ-এর ১০ ও ১৮ নং আয়াতে ইরশাদ করেন :
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ فَمَنْ نَكَثَ فَإِنَّمَا يَنْكُثُ عَلَى نَفْسِهِ وَمَنْ أَوْفَى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
অর্থ : যারা আপনার বায়আত গ্রহণ করে তারা তো আল্লাহ্ তাআলারই বায়আত গ্রহণ করে আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর সুতরাং যে ওটা ভঙ্গ করে ওটা ভঙ্গ করবার পরিণাম তারই উপর বর্তাবে এবং যে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার পূর্ণ করে তিনি তাকে মহা প্রতিদান দিবেন। [সূরা আল-ফাতাহ্ : ১০]

لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنْزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا
অর্থ : আল্লাহ্ তাআলা মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা বৃক্ষতলে আপনার নিকট বায়আত গ্রহণ করেছে, তিনি তাদের অন্তরে যা ছিল তা অবগত হলেন তাই তাদেরকে তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদেরকে বিনিময় দিলেন আসন্ন বিজয়। [সূরা আল-ফাতাহ্ : ১০]

 বায়আতের ব্যাপক অর্থঃ
 আল্লাহর সাথে জান মালের চুক্তি আত্ তাওবা : ১১
 আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশে শপথ। -
 সকল ধরনের হারাম বা নিষেধকৃত কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চুক্তি। - [মুমতাহিনা : ১২]
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَنْ لَا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ 
অর্থ : হে নবী, ঈমানদার নারীগণ যখন তোমার কাছে বাইয়াত গ্রহণরে জন্য আসে এবং এ র্মমে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তারা আল্লাহর  সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, যিনা করবে না, নজিদেরে সন্তানদরে হত্যা করবে না সন্তান সর্ম্পকে কোন অপবাদ তৈরী করে আনবে না এবং কোন ভাল কাজে তোমার অবাধ্য হবে না তাহলে তাদরে থেকে বাইয়াত গ্রহণ করো এবং তাদরে মাগফিরাতের জন্য দোয়া করো নিশ্চয়ই আল্লাহর ক্ষমাশীল ও মহেরেবান। [সূরা মুমতাহিনা : ১২]

 বাইয়াতের গুরুত্বঃ
 নফ্স বা প্রবৃত্তি
 ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি
 ইবলিশ
 রাসূল (স.) বলেছেন- যে ব্যক্তি বাইয়াত ছাড়া মারা যাবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু। [সহীহ মুসলিম]

 বাইয়াতের ফজিলত:
 আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা বাস্তবায়ন এবং দুনিয়ার জীবনের চেয়ে পরকালের জীবনকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য। [আন-নিসা : ৭৪]
 আল্লাহর মাগফিরাত। [আল ইমরান : ১৩৩, হাদীদ : ১১৬]
 সর্বোচ্চ ঈমানের অধিকারী হওয়া। [আল ইমরান : ১০২]
 পরকালীন জীবনে নিশ্চিত সফলতার গ্যারান্টি। [সূরা আলা : ১৪, শাম্স : ৯]
 জাহান্নামের আগুন থেকে বাচার জন্য। [আস্ সফ : ৯, শামস : -৯]

 কার নিকট বায়য়াত করতে হবে / কার কাছে বায়আত করতে হবে ঃ
 আল্লাহর নিকট
 রাসূল (সা.) এর নিকট
 রাসূলের (সা.) এর অবর্তমানে আমীর তথা ইসলামী সংগঠনের নিকট

বায়আতের অবস্থাঃ
 ৬ষ্ঠ হিজরীতে হুদায়বিয়া নামক স্থানে সাহাবীরা রাসূল (সা.) এর হাতে বাবলা গাছের নীচে হযরত ওসমান (রা:) হত্যার সংবাদে যে বাইয়াত গ্রহন করেন, তাকে বাইয়াতুর রিদওয়ান বলা হয়
 রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের পরে খোলাফায়ে রাশেদীনের হাতে মুসলিম মিল্লাতের বায়আত গ্রহন মুসলিম জাতির জন্য বাস্তব দৃষ্টান্ত

 বাইয়াত পরিহার করার পরিণামঃ
 পরকালে পীড়াদায়ক শাস্তি। [বনী ইসরাঈল : ৩৪, আন্ নাহ্ল : ৯১]
 জাহেলিয়াতের মৃত্যু
 কিয়ামতের ময়দানে অপমান জনক চিহ্ন দ্বারা চিহ্নিত করবেন

 মৌলিকভাবে তিনটি কথা উল্লেখযোগ্যঃ
সূরা আত্ তাওবার ১১১ নং আয়াতে মৌলিকভাবে তিনটি কথা উল্লেখযোগ্য। সেগুলো হল :

প্রথমতঃ আল্লাহর সাথে মুমিনদের ক্রয়-ব্ক্রিয়ের চুক্তি
দ্বিতীয়তঃ চুক্তি সম্পাদন করা মুমিনদের কাজ আর সেটা হচ্ছে জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ যার ধরন হলো মরবে ও মারবে। [সূরা তাওবা : ৪১, আন নিসা :৭১]

তৃতীয়তঃ মুমিনগণ আল্লাহর সাথে যে বায়আত বা চুক্তি সম্পাদন করেছে তাদের জন্য সুসংবাদ এজন্যই যে, আল্লাহর এ জান্নাতের ওয়াদা সঠিক এবং যুক্তিযুক্ত আর আল্লাহর চাইতে অধিক প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী কেউ নেই

 ১১২ নং আয়াতের ব্যাখ্যাঃ
১১২ নং আয়াতে বায়আত গ্রহণকারী মুমিনদের ৮ টি গুনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এখানে ১ম সাতটি গুণের সার সংক্ষেপ হলো ৮ম গুণ
ক. اَلتَّائِبُونَ (আত্ তায়িবুনা) : তাওবাকারীগণ অর্থাৎ যারা অপরাধ করার পর অনুতপ্ত হয়ে কৃত অপরাদের ক্ষমা চেয়ে তা আর না করার ওয়াদা করে। [সূরা আল ইমরান- ৯০,১৩৫; নিসা- ১৭,১১০; আন আম- ৫৪; আরাফ-১৫৩; মুমিন-৩; আস শূরা- ২৫; নাহল-১১৯]
খ. اَلْعَابِدُونَ (আল আবিদুনা) : ইবাদতকারীগণ
গ. اَلْحَامِدُونَ (আল-হামিদুনা) : প্রশংসাকারীগণ, শুকরিয়াকারীগণ অর্থাৎ যারা বিপদে-মুসিবতে, সুখে-দুখে, সবসময় আল্লাহর পশংসা করে সূরা নসর-৩
ঘ. اَلسَّائِحُونَ (আছ্ ছায়িহুনা) : পরিভ্রমণকারীগণ কারো কারো মতে রোজা পালনকারীগণ এখানে ইসলামের জন্য, জিহাদের জন্য ও হালাল রুজির জন্য ভ্রমন ও হতে পারে ইসলাম পূর্ব যুগে  খ্রীষ্ট ধর্মে দেশ ভ্রমণকে ইবাদত মনে করা হতো ইসলাম ধর্মে একে বৈরাগ্যবাদ বলে অভিহিত করে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে এবং এর পরিবর্তে রোযা পালনকে এর স্থলাভিসিক্ত করা হয়েছে কারন দেশ ভ্রমনের উদ্দেশ্য সংসার ত্যাগ অথচ রোযা এমন এক এবাদত, যা পালন করতে গিয়ে যাবতীয় পার্থিব বাসনা ত্যাগ করতে হয় এর ভিত্তিতে কতিপয় বণর্নাকরী জিহাদকে ও দেশ ভ্রমনের অনুরূপ বলা হয় রাসূল (স.) বলেছেন- আমার উম্মতের দেশ ভ্রমণ হলো জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ। [ইবনে মাজা ও বায়হাকী]
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, কুরআন মাজীদে ব্যবহ্নত সায়িহুন অর্থ রোযাদারইকরামা (রা:) এ শব্দের ব্যাখ্যায় বলেন যে, এরা হলো দ্বীনের শিক্ষার্থী, যারা এলম হাসিলের জন্য ঘর-বাড়ী ছেড়ে বের পয়ে পড়ে
ঙ. اَلرَّاكِعُونَ السَّاجِدُونَ (র্আ রাকিয়ূনাস সাজিদুনা) : রুকুকারী ও সিজদাকারীগণ অর্থাৎ যারা নামাজ কায়েম করে যেমন- সূরা হজ্জ: ৭৭, লোকমান: ১৭, আন কাবুত: ৪৫
চ. اَلْآَمِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ (আল আমীরুনা বিল মারুফ) : সৎ কাজের আদেশ দানকারী এবং ভালো কাজের নির্দেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ কারী
ছ. وَالنَّاهُونَ عَنِ الْمُنْكَرِ  (আন্ নাহু না আনীল মুনকার) : মন্দ ও খারাপ কাজের বাধাদান কারী
জ. وَالْحَافِظُونَ لِحُدُودِ اللَّهِ  (আল হাফিজুনা লি-হুদুদিল্লাহ) : আল্লাহর সীমা হিফাজত কারী, সংরক্ষনকারীগণ, আল্লাহর নিষেধ যথাযথভাবে পালনকারীগণ

প্রথম সাতটি গুণের মধ্যে যে তফসিল রয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত সার কথা হলো যে, এরা নিজেদের প্রতিটি কর্ম ও কথায় আল্লাহর নির্ধারিত তথা শরীয়তের হুকুমের অনুগত ও হেফাজতকারী

৭. শিক্ষা / উপকারিতাঃ
১. আল্লাহ্ তাআলা মুমিনদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন
২. আল্লাহর পথে জিহাদ করতে হবে, মরলে শহীদ বাচলে গাজী
৩. জিহাদের বিনিময়ে জান্নাত এটা আল্লাহর পাকাপোক্ত ওয়াদা
৪. আল্লাহর পথে জিহাদ করলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গায় সফলতা লাভ করা যায়
৫. মুমিনদের জীবনের একমাত্র কামনা হওয়া উচিত আল্লাহর পথে জিহাদ
৬. মুমিনের যে গুণগুলোর কথা বলা হয়েছে এগুলো অর্জন করে পুরোপুরি নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা

৮. উপসংহার / যবণিকা / সমপনীঃ
পরিশেষে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করত; জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে ইসলামের যথাযথ বাস্তবায়ন পূর্বক শয়তানের ও মানবরূপী শয়তানের অনুরসরণ থেকে সকল প্রকার ধোঁকা ও প্রবঞ্চনামুক্ত হয়ে চির অশান্তির স্থান জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা ও চির শান্তির স্থান জান্নাত লাভের জন্য মহান আল্লাহ আমাকে, সাংঘটনিক কর্মী ভাই ও তাওহীদি জনতাকে তাওফীত দান করুন, আমীন

৯. গ্রন্থপঞ্জি / নির্ঘন্ট / সহায়ক গ্রন্থাবলীঃ
১. তাফসীর তাফহীমুল কুরআন’. আল্লামা সায়্যিদ আবুল আলা মাওদূদী রা.
২. তাফসীর ইবনে কাছীর’. আল্লামা আবুল ফিদা ইবনে কাছীর রা.
৩. তাফসীর মাআরিফুল কুরআন ইংরেজি’. জাষ্টিস তাক্বী উছমানী
৪. বাংলা তাফসীর কুরআনুল কারীম’. প্রফেসর ড. মুজিবুর রহমান
৫. ইসলাম ও রাজনীতি, অধ্যাপক গোলাম আযম রা.
৬. অন্যান্য সহায়ক গ্রন্থাবলী

1 comment:

  1. আসসালামুআলাইকুম এক কথায়অসাধারণ

    ReplyDelete