Saturday, 11 May 2019

রামাদান মাসে ‘উমরাহ আদায় করা রাসূল (সা)-এর সাথে হাজ্জ বা উমরাহ আদায় করার সমানঃ


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
রামাদান মাসে উমরাহ আদায় করা রাসূল (সা)-এর সাথে 
হাজ্জ বা উমরাহ আদায় করার সমানঃ
আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
 

১. ভূমিকাঃ
الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله – وعلى آله وأصحابه ومن ولى أما بعد - قال الله تعالى : ﴿وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ﴾
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন : আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ও উমরাহ পূর্ণভাবে সম্পাদন কর[সূরা বাক্বারা : ১৯৬] অর্থাৎ হজ্জ ও উমরার ইহরাম বেঁধে নেওয়ার পর তা পূর্ণ করা ওয়াজিব, যদিও তা (হজ্জ ও উমরাহ) নফল হয়[আইসারুত তাফাসীর]

وقال حبيب المصطفى عليه الصلاة والسلام : الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ
আল্লাহর প্রিয় বন্ধু মস্তফা () বলেছেনঃ এক উমরাহর পর আর এক উমরাহ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারাআর জান্নাতই হলো হাজ্জে মাবরূরের প্রতিদান[সহীহ বখারী ১৭৭৩ (তা. প্র), মুসলিম ১৩৪৯, আহমাদ ৯৯৫৫ (আ প্র) ১৬৪৭, (ই ফা) ১৬৫৫]

২. পরিচিতিঃ
العمرة (উমরাহ) অর্থ : কোনো স্থান যিয়ারত করাইসলামী শরীআতের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বছরের যে কোনো সময় মসজিদুল হারামে গমন করে নির্দিষ্ট কিছু কর্মকা- সম্পাদন করাকে উমরাহ বলা হয়

৩. উমরাহ-এর আহকাম সমূহঃ
৩/১. উমরাহ-এর রুকন তিনটিযথা :
          ক. ইহরাম বাধা
          খ. তাওয়াফ করা
          গ. সাঈ করা

৩/২. উমরাহ-এর ওয়াজিব দুইটিযথা :
ক. মীক্বাত থেকে ইহরাম বাধা
খ. মাথা মুন্ডন করা

৩/৩. উমরাহ-এর সুন্নাহ / মুস্তাহাব চারটিযথা :
ক. গোসল করা
খ. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা
গ. ইহরাম বাধার পূর্বে আতর ব্যবহার করা
ঘ. ইহরাম বাধার পূর্বে পুরুষের জন্য সেলাইবিহীন লুঙ্গি ও চাদর এবং পায়ে সেন্ডেল পরিধান করা

৩/৪. ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহঃ
ক. এমন কাপড় দিয়ে পুরুষের মাথা ঢেকে রাখা যা মাথার সাথে লেগে থাকে[বুখারী ও মুসলিম]
খ. পুরুষের ক্ষেত্রে সেলাই-করা পোশাক পরা[বুখারী ও মুসলিম]
গ. স্থলজ জন্তু শিকার ও হত্যা করা[সূরা মায়িদাহ : ৯৫ ও ৯৬]
ঘ. চুল মুন্ডানো, কাটা অথবা উপড়ে ফেলা[সূরা বাক্বারা : ১৯৭]
ঙ. হাত ও পায়ের নখ কাটা
চ. শরীর ও কাপড়ে সুগন্ধি লাগানো[বুখারী ও মুসলিম]
ছ. বিবাহের আক্দ করা[মুসলিম]
জ. স্বামী-স্ত্রীর মিলন[সরা বাক্বারা : ১৯৭]
ঝ. স্বামী-স্ত্রীর মিলন ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে যৌন কর্ম করাযেমন স্পর্শ, চুম্বন ইত্যাদি 

৪. উমরাহ-এর গুরুত্বঃ
উমরাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাতউমরাহ আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার পক্ষ থেকে মহা নিআমত, অনুকম্পা, দয়া, যা দ্বারা নেকীর পাল্লা হয় ভারী, যার দ্বারা মানুষ হয় নিস্পাপবছরের যে কোন সময় উমরাহ আদায় করা যায় তবে সর্বোত্তম হলো রামাদান মাসে উমরাহ করাকেননা সুভাগ্যবান তারাই যারা উমরাহ আদায় করতে পারেন

৫. উমরাহ -এর ফযীলত ও তাৎপর্যঃ
ক. আল্লাহর প্রিয় বন্ধু মস্তফা () বলেছেনঃ এক উমরাহর পর আর এক উমরাহ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারাআর জান্নাতই হলো হাজ্জে মাবরূরের প্রতিদান[সহীহ বখারী ১৭৭৩ (তা. প্র), মুসলিম ১৩৪৯, আহমাদ ৯৯৫৫ (আ প্র) ১৬৪৭, (ই ফা) ১৬৫৫]

খ. আল্লাহর রাসূল () বলেছেন : تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ তোমরা হাজ্জ ও উমরাহ পরপর একত্রে আদায় করকেননা, এ হাজ্জ ও উমরা দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে দেয়, লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা যেমনভাবে হাপরের আগুনে দূর হয়[হাদীসটি ; হাসান সহীহ, তিরমিজী ৮১০, ইবনু মাজাহ ২৮৮৭, নাসাঈ ২৬৩০, ২৬৩১, আহমাদ ; ৩৬৬৯]

গ. আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন : إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَনিশ্চয় মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা বক্কায় (মক্কায়) অবস্থিততা বরকতময় ও বিশ্বজগতের জন্য পথের দিশারী[সূরা আল-ইমরান : ৯৬]

ঘ. আল্লাহর রাসূল () বলেছেন : الْحُجَّاجُ وَالْعُمَّارُ وَفْدُ اللَّهِ إِنْ دَعَوْهُ أَجَابَهُمْ وَإِنِ اسْتَغْفَرُوهُ غَفَرَ لَهُمْহজ্জযাত্রীগণ ও উমরার যাত্রীগণ আল্লাহর প্রতিনিধিদলতারা তাঁর নিকট দুআ করলে তিনি তাদের দুআ কবুল করেন এবং তাঁর নিকট মাফ চাইলে তিনি তাদের ক্ষমা করেন[সুনান ইবনু মাযাহ ২৮৯২, নাসায়ী ২৬২৫, ৩০৭০, আত-তালীকুর রাগীব ২/১০৮, ১০৯, মিশকাত ৩৫৩৬তাহকীক আলবানীঃ যইফ]

চ. রামাদানে উমরাহ আদায় করা অধিক সাওয়াব : রাসূল () বলেছেন : عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً مَعِيরমাযান মাসে একটি উমরাহ আদায় করা আমার সাথে একটি হাজ্জ আদায় করার সমান[সহীহ বুখারী ১৮৬৩]

ঙ. উমরার যাত্রীগণ যখন কাবা ঘর তাওয়াফ করবেন, প্রতিটি কদমে তার জন্য সাওয়ব লেখা হবে, গুনাহ মাফ করা হবে, সম্মান বৃদ্ধি করা হবেউমরায় কাবা ঘর তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া সায়ী করা, যমযমের পানী পান করা, কাবা ঘরে সালাত পড়লে প্রতি ওয়াক্ত সালাতের বিনিম হবে এক লক্ষগুন বেশি

৬. হজ ও উমরাহ কবুলের শর্তঃ
হজ ও উমরাহ হচ্ছে মহান আল্লাহর ইবাদাতছোট বড় সকল ইবাদাতেরই দুটো গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে, যেন তা আল্লাহর কাছে কবুল হয় এবং এ দ্বারা আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের যে বাসনা রাখেন তা লাভ করতে পারেন

প্রথম শর্ত : ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই খালেছ হতে হবে
এতে মুসলিম আল্লাহর সাথে তাঁর সৃষ্টির কাউকেই শরীক করবে নাহাদীসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন : أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِى غَيْرِى تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُশরীকদের মধ্যে আমিই শির্ক থেকে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষীযে ব্যক্তিই এমন কোনো কাজ করে যাতে সে আমার সাথে অন্যকে শরীক করে ফেলে, আমি তাকে ও তার শির্ককে পরিত্যাগ করি[সহীহ মুসলিম : ২৯৮৫] এর অর্থ হলো আল্লাহর সাথে নিয়তে কাউকে শরীক করা অবস্থায় আল্লাহ তার বান্দার আমল কবুল করেন নাএরই অন্তর্গত হলো ঐ ব্যক্তি যে ইবাদাত পালন করে এই উদ্দেশ্যে যে, তাকে মানুষ হাজী বা উমরাকারী হিসাবে দেখবে কিংবা মানুষের কাছে সে তা শ্রবণ করবেএ সবই আমল বিনষ্টকারী

দ্বিতীয় শর্ত: ইবাদাত পালনে নবী ()-এর অনুসরণ
আল্লাহ যত ইবাদাতের নির্দেশ আমাদেরকে প্রদান করেছেন, তিনি সেসব কিছুরই বর্ণনা ও পদ্ধতি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেনআল্লাহর মহান গ্রন্থ ও রাসূল ()-এর সুন্নায় এটাই আমরা পেয়ে থাকিইসলামে যে ইবাদাতই আপনি দেখুন না কেন, তা আদায়ের একটি পদ্ধতি রয়েছেঅতএব সালাতের যেমন একটি বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে, তেমনি রয়েছে যাকাতেরওএকইভাবে রমযানের রোযা, হজ ও সকল প্রকার ইবাদাত পালনেরও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে

নবী () হজের আমল সমূহ পালন করতেন এবং বলতেন : خُذُوا عَنِّى مَنَاسِكَكُمআমার কাছ থেকে তোমরা তোমাদের হজের আমল গ্রহণ কর[সহীহ মুসলিম : ১২৯৭] অর্থাৎ দেখ আমি হজ ও উমরার কি কি আমল করছি এবং সেগুলো পালনে আমার অনুকরণ করতিনি সে সকল অতিরঞ্জন থেকে সতর্ক করেছেন, যা আল্লাহ শরীআত সিদ্ধ করেননি এবং তিনি নিজেও অনুমোদন দেন নি

রাসূল () বলেছেন : مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدযে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল যে কাজে আমাদের নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত[সহীহ বুখারী : ২৬৯৭, সহীহ মুসলিম : ১৭১৮] অর্থাৎ যে এমন কোনো পন্থা ও ইবাদাত আনয়ন করে যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল () অনুমোদন করেননি, তার সে পন্থা ও ইবাদাত প্রত্যাখ্যাত ও অগ্রহণযোগ্য

৭. কুরআন ও হাদীসের আলোকে উমরা করার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতিঃ
৭/১. মীকাতে পৌছে উমরাকারীর জন্য মুস্তাহাব হলো গোসল করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া, অনুরূপভাবে উমরা আদায়কারী মহিলাও গোসল করবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হবে, যদিও এ সময় তার হায়েয বা নেফাস থাকেহায়েয বা নেফাস ওয়ালা মহিলা ইহরাম বাঁধতে পারবে তবে সে তার হায়েয বা নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া ও গোসল না করা পর্যন্ত বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে নাউমরা কারী পুরুষ গায়ে সুগন্ধি লাগাবে, তবে তার ইহরামের কাপড়ে নয়যদি মীক্কাতে পৌছার পর গোসল করা সম্ভব না হয় তবে তাতে দোষের কিছু নেইঅনুরূপভাবে যদি সম্ভব হয় মক্কায় পৌছার পর তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে আবার গোছল করে নেয়া মুস্তাহাব

৭/২. পুরুষ যাবতীয় সিলাইযুক্ত কাপড় (যেমন জামা, পাজামা, গেন্জী ইত্যাদী যা পোষাকের আকারে তৈরী তা) পরা থেকে বিরত থাকবেএকটি লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করবে, তার মাথা খোলা রাখবেতবে ইহরামের কাপড় দুটি সাদা ও পরিষ্কার হওয়া মুস্তাহাবতবে মহিলা তার সাধারণ পোষাকেই ইহরাম বাঁধবে, লক্ষ্য রাখবে যাতে কোনো প্রকার চাকচিক্য ও প্রসিদ্ধি লাভ করে এ রকম পোষাক না হয়

৭/৩. তারপর উমরার কাজে ঢুকার জন্য মনে মনে নিয়্যত (দৃঢ় সংকল্প) করবেন, আর মুখে উচ্চারণ করে বলবেনঃ  لَبَّيْكَ عُمْرَةً ‘‘লাব্বাইকা উমরাতান’’অর্থাৎ : আমি উমরাহ আদায়ের জন্য তোমার দরবারে উপস্থিত হলামঅথবা বলবেঃ اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ عُمْرَةً ‘‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান’’অর্থাৎ : হে আল্লাহ আমি উমরাহ আদায়ের জন্য তোমার দরবারে উপস্থিত হলাম

অন্য কারো জন্য উমরা করতে চাইলে (যদি আপনি পূর্বে আপনার উমরা আদায় করে থাকেন তবে) উচ্চারণ করবেন:  اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ عُمْرَةً مِنْ فُلانٍ ‘‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান মিন পুলান’’ অর্থাৎ : ‘‘হে আল্লাহ আমি অমুকের (তার নাম ধরে) পক্ষ হতে উমরাহ পালনের জন্য হাজির’’

তারপর রাসূল () এর তালবিয়া পাঠ করবেন আর তা হলোঃ لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ (লাববাইকা আল্লাহুম্মা লাববাইক, লাববাইকা লা শারীকা লাকা লাববাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকা লাক।) অর্থাৎ উমরাহের জন্য আমি তোমার দরবারে হাজিরহে আল্লাহ্ ! আমি তোমার দরবারে হাজির, আমি তোমার দ্বারে উপস্থিত, তোমার কোন অংশীদার নেই, তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছিসর্বপ্রকার প্রশংসা ও নেয়ামতের সামগ্রী সবই তোমার, তোমারই রাজত্ব, তোমার কোন অংশীদার নেই

উল্লেখিত দুআ পুরুষ লোকেরা মুখে জোরে উচ্চারণ করবে, আর স্ত্রীলোকেরা চুপে চুপে বলবেঅতঃপর অধিক মাত্রায় তালবিয়া পড়বেন এবং দু, যিকর- ইস্তেগফার করবেনপবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর সম্ভব হলে গোসল করবেন, তারপর মসজিদে হারামে ঢুকার সময়ে ডান পা দিয়ে ঢুকবেন এবং মসজিদে ঢুকার দুআ পড়বেন, আর তা হলো : بِسْمِ اللهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلى رَسُوْلِ اللهِ، أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، اللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ (বিসমিল্লাহি ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আউযুবিল্লাহিল আযীম ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম ওয়া সুলতানিহিল কাদীমি মিনাশ শায়তানির রাজীমআল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিক।) অর্থাৎ : ‘‘আল্লাহর নামে, আর তার রাসূল () এর উপর দুরুদ পাঠ করছি, আমি বিতাড়িত শয়তান হতে মহান আল্লাহর কাছে তার সম্মানিত চেহারার, এবং তাঁর অনাদি ক্ষমতার ওসীলায় আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আল্লাহ তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দ্বারগুলো উম্মুক্ত করে দাও’’

৭/৪. তারপর যখন কাবার কাছে পৌঁছবেন তখনি তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবেনহাজরে আসওয়াদের কাছে যাওয়ার পর তার দিকে ফিরবেন, সম্ভব হলে ডান হাত দিয়ে তা স্পর্শ করবেন, এবং চুমু খাবেন, ভীড় করে মানুষকে কষ্ট দিবেন নাহাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার সময়ে বলবেনঃ بِسْمِ اللهِ، وَاللهُ أَكْبَرُ (বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার) অথবা বলবেনঃ اللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) যদি হাজরে আসওয়াদ চুমু দেয়া কষ্টকর হয় তা হলে হাত অথবা লাঠি দিয়ে স্পর্শ করার পর যে বস্তু দিয়ে স্পর্শ করেছেন তাতে চুমু খাবেন, আর যদি স্পর্শ করাও কষ্টকর হয় তবে হাজারে আসওয়াদের দিকে ইশারা করবেন এবং বলবেনঃ اللهُ أَكْبَرُ (আল্লাাহু আকবার) তবে এ অবস্থায় হাত বা যা দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন তাতে চুমু খাবেন নামনে রাখবেন, তাওয়াফ শুদ্ধ হবার জন্য শর্ত হলোঃ ছোট বড় সর্ব প্রকার নাপাকী হতে পবিত্র অবস্থায় থাকা, কেননা তাওয়াফ নামাজের মত, শুধুমাত্র তাওয়াফের সময় কথা বলার অনুমতি আছে

৭/৫. তাওয়াফ করার সময় আল্লহর ঘর কাবাকে বাম পার্শ্বে রাখবেন, এবং সাত চক্কর কাবার চারদিকে তাওয়াফ করবেনযখন রুকনে ইয়ামানীর কাছে আসবেন তখন যদি সম্ভব হয় তা ডান হাতে স্পর্শ করবেনকিন্তু রুকনে ইয়ামানীকে চুমু খাবেন নাযদি রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তবে ছেড়ে সামনে চলে যাবেন এবং তাওয়াফ করতে থাকবেন, কোন প্রকার ইশারা বা তাকবীর দিবেন নাকেননা রাসূল () থেকে তা বর্ণিত হয়নিকিন্তু হাজারে আসওয়াদের নিকট যখনই পৌঁছবেন তখনি তা স্পর্শ করবেন এবং চুমু খাবেন, এবং তাকবির বলবেন, (যেমনটি পূর্বে বর্ণিত হয়েছে), যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তবে সে দিকে ইশারা করবেন এবং তাকবীর বলবেনএ তাওয়াফের মধ্যে পুরুষদের জন্য সুন্নাত হলো এদতেবাকরা অর্থাৎ গায়ের চাদরের মধ্যভাগকে ডান বোগলের নীচে দিয়ে দুপার্শ্বকে বাম কাঁধের উপর রাখাতাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করাও পুরুষদের জন্য সুন্নাতরমল হলো ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটা

তাওয়াফ কালীন সময়ে সুনির্দিষ্ট কোন দুআ বা জিকির নেই, প্রত্যেক চক্করেই ইচ্ছামত শরীয়তসম্মত যিকর ও দুআ পাঠ করা  মুস্তাহাবতবে তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করের মধ্যে রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদের মধ্যবর্তীস্থানে নিম্নলিখিত দুআ পড়া সুন্নাত: ﴿رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا   عَذَابَ النَّارِ﴾ (রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযাবান-নার)অর্থাৎ হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুনআর দোযখের অগ্নি থেকে আমাদের বাঁচান[সূরা বাক্বারাহ্: ২০১]


৭/৭. তারপর সাফা পাহাড়ের কাছে যাবেন এবং এর উপর আরোহণ করবেন অথবা এর নিচে দাঁড়াবেন, তবে যদি সম্ভব হয় পাহাড়ের কিয়দংশে উঠা উত্তমআর প্রথম চক্করের শুরুতে আল্লাহর এ বাণী পাঠ করুন : ﴿إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ﴾ (ইন্নাচ্ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআ-ইরিল্লাহ)অর্থাৎ নিশ্চয়ই সাফা এবং মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত[সূরা বাক্বারাহ : ১৫৮] এরপর কাবাকে সামনে রেখে প্রার্থনাকারীর ন্যায় দুহাত উর্ধে তুলে আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা করে তিনবার তাকবীর পড়ুন (আল্লাহু আকবার বলুন)তিনবার করে দুআ করা হচ্ছে সুন্নাতঅতঃপর তিনবার নিম্নোক্ত দুআ পড়ুন : لاَ إِلهَ إِلا اللهُ وَحْدَه لا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَه الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْر لا إِلهَ إِلا الله وَحْدَه أَنْجَزَ وَعْدَه وَنَصَر عَبْدَه وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَه (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর, লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাছারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহজাবা ওয়াহদাহু।) অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেইতাঁর কোন শরীক নেইসমস্ত রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরইতিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমানএকমাত্র আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেইতিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে বিজয় দিয়েছেন এবং তিনি একাই শত্রুকে পরাজিত করেছেন

অতঃপর সাফা হতে নেমে মারওয়ার দিকে যাবেনসায়ীকালীন সময়ে পুরুষগণ দুসবুজ আলোর মধ্যবর্তী স্থানে দ্রুত চলবেন এবং এর আগে ও পরে স্বাভাবিকভাবে চলবেনমহিলাগণ কোথাও দ্রুত চলবেননা, কারণ মহিলাগণ পর্দা করবেন, দ্রুত হাঁটা মহিলাদের পর্দার বিপরীতএরপর যখন মারওয়ার কাছে যাবেন, তখন তার উপর আরোহণ করবেন অথবা নিচে দাঁড়াবেন এবং আল্লাহ্র প্রশংসা জ্ঞাপন করবেন এবং সাফায় যেমনটি করেছেন এখানেও তেমনটি করবেনঅর্থাৎ মারওয়ার উপরে উঠার পরে কাবাকে সামনে রেখে প্রার্থনাকারীর ন্যায় দুহাত উর্ধে তুলে আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা করে তিনবার (আল্লাহু আকবার) তাকবীর উচ্চারণ করবেনঅতঃপর তিনবার নিম্নোক্ত দোআ পড়বেন : لاَ إِلهَ إِلا اللهُ وَحْدَه لا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَه الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْر لا إِلهَ إِلا الله وَحْدَه أَنْجَزَ وَعْدَه وَنَصَر عَبْدَه وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَه (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর, লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাছারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহজাবা ওয়াহদাহু।) অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেইতাঁর কোন শরীক নেইসমস্ত রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরইতিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমানএকমাত্র আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেইতিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে বিজয় দিয়েছেন এবং তিনি একাই শত্রুকে পরাজিত করেছেন

সাফার মত মারওয়া ও বেশী বেশী করে দুআ করার স্থানযাবতীয় দুআই এখানে করতে পারেনতবে এখানে প্রথমে বর্ণিত কুরআনের আয়াতটুকু পাঠ করবেন না, কেননা করআনের আয়াতটুকু রাসূল () কে অনুসরণ করে শুধুমাত্র সাফা পাহাড়ে উঠার সময়ে পড়তে হয়তারপর মারওয়া থেকে নামবেন, এবং যেখানে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটার সেখানে স্বাভাবিকভাবে হাঁটবেন, আর যেখানে দ্রুত চলার সেখানে দ্রুত চলবেনএভাবে সাফা পাহাড়ে পৌঁছবেনএভাবে সাতবার সায়ী করবেনসাফা থেকে মারওয়া যাওয়া এক চক্কর, আবার মারওয়া থেকে সাফা পাহাড়ে আসা আরেক চক্কর, তাওয়াফের মত যদি কেউ কোন কিছুর উপর উঠে সায়ী করে তবে তাতেও দোষ নেই, বিশেষ করে যখন তার প্রয়োজন হবেতাওয়াফের মত সায়ীর জন্যও কোন নির্দিষ্ট ওয়াজিব যিক্র নেইবরং যে কোন যিক্র, দুআ ও কুরআন তিলাওয়াতের যা তার জন্য সহজসাধ্য হবে, তাই পাঠ করতে পারবেনতবে এ ব্যাপারে নবী () থেকে যেসব যিক্র ও দুআ সাব্যস্ত রয়েছে, তার প্রতি লক্ষ্য রাখা মুস্তাহাবঅনুরূপভাবে যাবতীয় নাপাকী হতে পবিত্র হওয়াও মুস্তাহাবতবে যদি কেউ অপবিত্র অবস্থায়ও সায়ী করে তার সায়ী শুদ্ধ হবে, কোন অসুবিধা নেই 

৭/৮. সাঈ পূর্ণ করে মাথার চুল হলক করবেন (কামাবেন) অথবা ছোট করে ছেঁটে নেবেনতবে কামানো উত্তমযদি হজ্বের আগে আপনি মক্কা এসে থাকেন এবং হজ্বের বেশী দিন বাকী না থাকে তবে উত্তম হল উমরাহের পর চুল ছোট করে ছাঁটা যাতে হজ্জের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার সময় হলক করতে পারেনখেয়াল রাখবেন আপনার চুল কাটা বা ছাঁটা যাই করেননা কেন সম্পূর্ণ মাথা থেকে হতে হবেসামান্য কিছু কাটলে বা ছাঁটলে হবেনাএটা পুরুষের ক্ষেত্রেমহিলাগণ তাদের চুল একত্র করে চুলের অগ্রভাগ থেকে এক আঙুলের অগ্রভাগ পরিমাণ কাটবেনএভাবে আপনার উমরাহ্ পূর্ণ হয়ে যাবে এবং ইহরামের কারণে ইতিপূর্বে যা হারাম ছিল, এক্ষণে তা হালাল হয়ে যাবেআল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রদর্শিত নিয়মমত ইবাদাত করার তৌফিক দিন

৮. উপসংহানরঃ
মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আমাদের সকলকে ভালভাবে উমরাহ আদায় করার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন