Saturday, 30 November 2019

শিশুদের প্রহার করার পরিবর্তে আদর-সোহাগ করা আবশ্যকঃ [পর্ব : দুই]

শিশুদের প্রহার করার পরিবর্তে আদর-সোহাগ করা আবশ্যকঃ
এক নজরে শিশুদের শিশুদের শিক্ষাদান পদ্ধতি : [পর্ব : দুই]



০১. শিশুদের সর্ব প্রথম যে শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে তাহলো আল-কুরআনের শিক্ষা। কেননা কুরআনের শিক্ষা ব্যতীত কেউ প্রকৃত শিক্ষিত হওয়ার দাবী করতে পারেনা।

০২. যেহেতু শিশুদের মন-মানসিকতা ও রুচি ভিন্ন, সেহেতু তাদেরকে ভিন্ন আঙ্গিকে, তাদের রুচিসম্মত অভিন্ন পদ্ধতিতে শিক্ষা দিতে হবে।

০৩. শিশুদের শর‘য়ী কারণ ব্যতীত অহেতুক প্রহার করা যাবে না।

০৪. শিশুদের মন-মানসিকতায় প্রচন্ড আঘাত ও ক্ষত সৃষ্টি করে এমন ধমক দেওয়া যাবেনা।

০৫. আদর-সোহাগ, স্নেহ-মমতা ও ভালবাসা, মাতৃ ও পিতৃত্ব সূলভ যত্নসহকারে লালন-পালনের মত করে শিক্ষাদান করতে হবে।

০৬. হতাশ ও নৈরাশ নিরাশ করার পরিবর্তে আশা-আকাঙ্খা ও মনোবল দৃঢ়-মজবুত হয় এমন কথা-কাজ ও বাণী শিক্ষা দিতে হবে।

০৭. শিশুদের মন কাদা ও উর্ভর মাটির ন্যায়। তাই তাদের কচি-কোমল হৃদয়ে তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ), ইসলামের সুমহান আচরণবিধি, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, লেন-দেন পদ্ধতি, সামাজিক ও ধর্মীয় নীতিমালা সুন্দর সহজ ও সাবলিলভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে বীজ বপন করতে হবে।

০৮. জৈনক ইসলামিক চিন্তাবিদ বলেন :
   ক. শিক্ষাদাও শিশুদের কেননা তাদের হৃদয় কাদা ও উর্ভর মাটির ন্যায় সবকিছু গ্রহণের উপযোগি।
   খ. সহযোগি বানাও বা সহযোগিতা নাও যুবকদের কেননা তারা সর্বকাজে বাকপটু ও কাজেরকর্তাও বটে।
   গ. তাল মিলাও বা পার্শ্ব এড়িয়ে চল বৃদ্ধদের কেননা তারা তোমার কথা সহজে মেনে নিবেনা। [সূরা ফুরক্বান : ৬৪]।

০৯. শাইখুল আসার আল্লাম নাসিরদ্দীন আলবানী (রাহি.) বলেন : 
শিশুদের প্রহার করা অবৈধ, তাদের আদর করা আবশ্যক। [ফাতাওয়া জাদ্দাহ ২৬]।

১০. শিশুদের সালাত শিক্ষাদানের গুরুত্ব, মৃদু প্রহার ও বিছানা পৃথকের ব্যাপারে গুরুত্ব :
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مُرُوْا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِيْنَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِيْنَ وَفَرِّقُوْا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ
আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে তাদেরকে সলাতের জন্য নির্দেশ দাওযখন তাদের বয়স দশ বছর হয়ে যাবে তখন (সলাত আদায় না করলে) এজন্য তাদেরকে মারবে এবং তাদের ঘুমের বিছানা আলাদা করে দিবে[হাসান সহীহ ; আলবানী। সুনান আবু দাউদ (তাহক্বীক্ব) ৪৯৫, আহমাদ ৬৭৫৬, হাকিম (১/১৯৭), বায়হাক্বী (৩/৮৪), রিয়াদুস স্বলেহীন ৩০১]।

১১. করণীয়ঃ
সুতরাং শিশুরা আমাদের উপর বা প্রতি মহামহিম আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। এ আমানতের যথাযথ সংরক্ষণ, সদ্ব্যবহার, প্রকৃত করণীয় সম্পর্কে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রেখে সম্মুখপানে অগ্রসর হতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের সকলকে সেই তাওফীক দান করুন, আমীন।

লেকক, আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
শিক্ষক, ইনসাইট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা, ঢাকা।

Tuesday, 26 November 2019

সন্তানের উপর ‘মা’র সম্মান-অধিকার, দায়িত্ব-কর্তব্য ও করণীয়ঃ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সন্তানের উপর ‘মা’র সম্মান-অধিকার, দায়িত্ব-কর্তব্য ও করণীয়ঃ
আব্দুস সালাম হুসাইন আলী

০১. যবণিকা :
মা : হচ্ছেন পূর্ণাঙ্গ নারী, যিনি গর্ভধারণ, সন্তানের জন্ম তথা সন্তানকে বড় করে তোলেন - তিনিই অভিভাবকের ভূমিকা পালনে সক্ষম ও মা হিসেবে সর্বত্র পরিচিতপ্রকৃতিগকভাবে একজন নারী বা মহিলাই সন্তানকে জন্ম দেয়ার অধিকারীনিগর্ভধারণের ন্যায় জটিল এবং মায়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অবস্থানে থেকে এ সংজ্ঞাটি বিশ্বজনীন গৃহীত হয়েছেতার বিপরীত লিঙ্গ পুরুষ হচ্ছেন বাবা

০২. মা : পৃথিবীতে এক অক্ষরের সর্বকনিষ্ঠ শব্দ :
কিন্তু পরম আদর-যত্ন, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, পর্বতসম ধৈর্য্যের পরকাষ্ঠায় সর্ব উর্ধ্বে তার অবদান পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান মায়ের কোলসবচেয়ে মধুর নাম মানিঃস্বার্থ ভালোবাসার নাম মাঅনেকেই মায়ের মতো হতে পারে কিন্তু শুধু একজনই মা হতে পারেনপ্রসবের কী ব্যথা, মা জানে সে কথা এই ছড়াতে মা হওয়ার অবর্ণনীয় কষ্টের কথা উঠে আসেকিছু ব্যথা আছে সমব্যথী হলেও শতভাগ অনুভব করা যায় নাএকথা সত্যি যে, সন্তান ধারণ, জন্মদান কিংবা লালন পালনের সাথে একজন মায়ের শারীরিক বেদনার ইতিহাস আছেআবার মাহওয়ার সুখ-তৃপ্তি-গর্বও আনন্দের মতো এই বেদনার সাথে স্বর্ণলতার মতো জড়িয়ে আছেনিঃসন্দেহে প্রতিটি মাই বলবেন সন্তানআল্লাহর দেয়া সেরা উপহারআর প্রতিটি সন্তানই স্বীকার করবেন আল্লাহর দেয়া সেরা নিয়ামত মা

মা একজন অসম্ভব গুণবতী নারী মাসৎ, সামাজিক, ধার্মিক, সৌখিন ও কর্মঠ মানুষের উদাহরণ মামজার ব্যাপার, চারিত্রিম মাধুর্যে তিনি তুলনাহীনাযিনি জীবনযাপনে ব্যতিক্রমচিন্তা-ভাবনা ও সময়ের ব্যাপারে বেশি অগ্রগামীঅনেক মায়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশি নেইকিন্তু সন্তানদের উচ্চশিক্ষা অর্জনে তাঁর সহযোগিতা মুখ্য ভূমিকা পালন করেনযে সময়ে অধিকাংশ মা সংসার কাজে পারদর্শী করার জন্য মেয়েদের গেরস্থালী কাজ শিখতে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন সেই সময়ে অনেক মা চান তার প্রতিটি সন্তান সুশিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত হোকতাদের কর্মক্ষেত্রেও সফলতার গল্প তৈরি হোকসন্তানদের লেখাপড়ার জন্য মা সবসময় কড়া নজর রাখেনমা সর্বদা সন্তানকে বলেন, ‘তুই বা তুমি জোড়ে পড়বে বা পড়, আমি রান্নাঘের থেকে যেন আওয়াজ শুনতে পাই’মা মানে অসম্ভব এক মায়াবতী নারীসন্তান পেটভরে খেলে যার নিজেরই পেট ভরে যায়

মা এক অক্ষরের শব্দ ছোট এই শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে পৃথিবীর সব মায়া মমতা আর ভালবাসা মায়ের তুলনা শুধুই মা মা শুধু নিজের সন্তানের নয় সবার মাঝে বিলাতে পারেন নিঃস্বার্থ ভালবাসা মায়ের মতো এত মধুর ডাক পৃথিবীর অভিধানে দ্বিতীয়টি আর কোথাও নাই মা যেন ভালবাসার এক বিশাল আঁকাশ, অথৈ সাগর তাই সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মা সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত প্রেমময়ী এক নাম মা এর তুলনা শুধু মামায়ের ভালবাসার জায়গাটি কেউ কখনো নিতে পারে না"মা" যিনি আজ শত কষ্টের মাঝেও সন্তানকে বাচাবে বলে বুকে আগলে রেখে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম কর, কিন্তু আমরা সেই সন্তানরাই বড় হয়ে মাকে অবহেলা করি, গালিগালাজ করি, খোজখবর করি না, অনেকে বা রেখে আসি বৃদ্ধাশ্রমে।।।

৩. ‘মা’ সম্পর্কে কুরআন, হাদিস ও গুণীজনের বিজ্ঞবচন / অবিস্মরণীয় বাণী চিরন্তণীঃ
/. সন্তানের জন্য মা আল্লাহর দেয়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত ও সেরা উপহার তাই তার সেবা-যত্ন, সদ্ব্যবহার ও বরণ-পোষণ করা ফরয :
মা তার সন্তানের জন্য কি পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করেন তা কল্পনা করাও দুঃসাধ্যসন্তানের জন্য মা আল্লাহর দেয়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত ও সেরা উপহার তাই তার সেবা-যত্ন, সদ্ব্যবহার ও বরণ-পোষণ করা ফরয করেছেনআল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَقَضٰى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوٓا إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِالْوٰلِدَيْنِ إِحْسٰنًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا ۚ وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِى صَغِيرًا ۚ رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِى نُفُوسِكُمْ ۚ إِن تَكُونُوا صٰلِحِينَ فَإِنَّهُۥ كَانَ لِلْأَوّٰبِينَ غَفُورًا
তোমার রাব্ব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদাত করবেনা এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলনা এবং তাদেরকে ভৎর্সনা করনা; তাদের সাথে কথা বল সম্মানসূচক নম্রভাবে অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থাক এবং বলঃ হে আমার রাব্ব! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে লালন পালন করেছিলেনতোমাদের রাব্ব তোমাদের অন্তরে যা আছে তা ভাল জানেন; তোমরা যদি সৎ কর্মপরায়ণ হও তাহলে তিনি তাদের (আল্লাহ অভিমুখীদের) প্রতি ক্ষমাশীল[সূরা বানী ইস্রাঈল : ২৩ ২৫]

/. কুরআনের বাণী :
৩/২/ক. ‘মা সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরেসুতরাং আল্লাহর প্রতি আমার প্রতি ও মাতাপিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।’ [সূরা লুক্বমান : ১৪]।

৩/২/. ‘মানুষকে তাদের মাতা-পিতার প্রতি সদয় ও সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দেযা হয়েছেতার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সাথে, প্রসব করে কষ্টের সাথে, তার গর্ভধারণ ও দুধ ছাড়ানোর সময়কাল ত্রিশ মাস[সূরা আহক্বাফ : ১৫]

৩/২/. আল কুরআনে বলা হয়েছে আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছিযদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো নাআমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তনঅতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে[সূরা আনকাবুত : ৮]


৩/৩. হাদিসের বাণী :
৩/৩/ক. সর্বাধিক ভাল ও উত্তম ব্যবহার পাওয়া যোগ্য কে?
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ  قَالَ، جَاءَ رَجُلٌ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ يَارَسُوْلَ اللهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِيْ؟ قَالَ : أُمُّكَ، قَالَ : ثُمَّ مَنْ؟  قَالَ : أُمُّكَ،  قَالَ : ثُمَّ مَنْ؟  قَالَ : أُمُّكَ،  قَالَ : ثُمَّ مَنْ؟  قَالَ : أَبُوكَ
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.)-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করল : আমার পক্ষ থেকে সর্বাধিক ভাল ও উত্তম ব্যবহার পাওয়া যোগ্য কে? রাসূল (সা.) বললেন : তোমার মাতা। অতঃপর জিজ্ঞেস করল তারপর কে? রাসূল (সা.) বললেন : তোমার মাতা। অতঃপর জিজ্ঞেস করল তারপর কে? রাসূল (সা.) বললেন : তোমার মাতা। অতঃপর জিজ্ঞেস করল তারপর কে? রাসূল (সা.) বললেন : তোমার পিতা। [সহিহ। সহি বুখারী ৫৯৭১, সহিহ মুসলিম ২৫৪৮, ইবনু মাযাহ ২৭০৬]।

৩/৩/খ. পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
عَنْ عَبْدِ اَللَّهِ بْنِ عُمَرَ ‏رَضِيَ اَللَّهُ عَنْهُمَا‏ عَنْ اَلنَّبِيِّ ‏صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : رِضَا اللهِ فِيْ رِضَا الْوَالِدَيْنِ، وَسَخَطُ اللهِ فِيْ سَخَطِ اَلْوَالِدَيْنِ
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন : পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। [সহিহ হাসান। আদাবুল মুফরাদ ১৫০০, হাকিম ১৯১৬, তিরমিযি ১৯০০, ইবনু হিব্বান ২০২৬]।

৩/৩/গ. মাতা-পিতাকে কষ্ট দেয়া বা অবাধ্য হওয়া কবীরা গুণাহ :
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ أَبِيْ بَكْرَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ؟ قَالُوْا بَلٰى يَا رَسُوْلَ اللهِ، قَالَ : اَلْإِشْرَاكُ بِاللهِ وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ
আব্দুর রহমান ইবনু আবু বকরা (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন : আমি কি তোমাদেরকে বড় গুণাহ সম্পর্কে অবগত করাব না? আমরা সকলেই বললাম, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল (সা.)। অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন : আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং মাতা-পিতাকে কষ্ট দেয়া বা অবাধ্য হওয়া। [ সহিহ বুখারী ৬২৭৩, তিরমিযী ৩০১৯]।

৩/৩/ঘ. পিতা-মাতার সেবার ফযিলত :
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, এমন কোন মুসলিম নেই যার মুসলিম পিতা-মাতা রয়েছেন এবং প্রত্যুষে সে তাঁদের কুশলবার্তা জিজ্ঞেস করে অথচ আল্লাহ তার জন্য বেহেশতের একটি দরজা খুলেনা দেনআর যদি একজন থাকে তবে একটি দরজাআর যদি সেই ব্যক্তি পিতা-মাতার মধ্যে কোন একজনকে অসন্তুষ্ট করে, তবে যতক্ষণপর্যন্ত সে (সন্তান) তাকে (পিতা / মাতা) সন্তুষ্ট করে, ততক্ষণপর্যন্ত আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হন নাজিজ্ঞেস করা হলো, যদি সন্তানের উপর পিতা-মাতা যুলুম করেন তবুও কি? বললেন, হ্যাঁ, পিতা-মাতা যদি সন্তানেরউপর যুলুম করেন, তবুও[আল-আদাবুল মুফরাদ হা/নং ০৭]

৩/৩/ঙ. সদাচারের প্রতিদান :
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, আমি ঘুমিয়ে ছিলামস্বপ্নে দেখলাম, জান্নাতে প্রবেশ করেছিসেখানে কোন পাঠকের পড়ার আওয়াজ শুনতে পেলামআমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তারা (ফেরেশতা) বললেন, ইনি হারেছা ইবনে নোমানতখন রাসূল (সা.) বললেন, এমনই হয় সেবা ও সদাচারের প্রতিদান, এমনই হয় সেবা ও সদাচারের বিনিময়তিনি ছিলেন তার মায়ের প্রতি সর্বাধিক সদ্ব্যবহারকারী[মুসনাদে আহমদ হা/নং ২৫১৮২,  সুনানে নাসায়ী কুবরা হা/নং ৮২৩৩, সহীহ ইবনে হিববান হা/নং ৭০১৪]

৩/৩/চ. সন্তানের উপর পিতা-মাতার হক :
আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সন্তানের উপর পিতা-মাতার কী হক রয়েছে? তিনি বললেন, তারাই তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম। (অর্থাৎ তাদের সাথে সদাচরণ করা এবং তাদের অবাধ্য না হওয়া তোমার জান্নাত লাভ অবশ্যম্ভাবী করবেপক্ষান্তরে তাদের সাথে অসদাচরণ এবং অবাধ্যতা তোমার জাহান্নামের পরিণতি অবধারিত করবে।) [সুনানে ইবনে মাজাহ হা/নং ৩৬৬২]

৩/৩/ছ. বৃদ্ধ পিতা মাতার খেদমত না করার শাস্তি
আবু হুরায়রা (রা. ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক! ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক! ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক! জিজ্ঞাসা করা হল, কোন ব্যক্তি ইয়া রাসূল আল্লাহ? উত্তরে বললেন, যে তার বৃদ্ধ পিতা মাতাকে পেল অথবা তাদের একজনকে পেল কিন্তু তাদের খেদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না[সহিহ মুসলিম ২/৩১৪, তারগীব ৩/২১৮, মিশকাত ৪১৮]

৩/৪. গুণীজনের বিজ্ঞবচন / অবিস্মরণীয় বাণী চিরন্তণীঃ
মা হল পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই অকৃত্রিম ভালোবাসা- হুমায়ূন আহমেদ।
মায়ের শিক্ষাই শিশুর ভবিষ্যতের বুনিয়াদ, মা-ই হচ্ছেন শিশুর সর্বোৎকৃষ্ট বিদ্যাপীঠ- জৈনক গবেষক
গৃহ হচ্ছে সন্তানের প্রাথমিক বিদ্যালয়, মা হচ্ছেন প্রধান শিক্ষক- জৈনক গবেষক
মা এমন এক ব্যাংক যেখানে আমরা জমা রাখি যত, সেখান থেকে নিতে থাকি আজীবন, কিন্তু তবুও বলি মা আমার মূল টাকা কিন্তু রয়েগেছে এখনও- জৈনক গবেষক
দুনিয়ায় সবকিছু বদলাতে পারে কিন্তু মায়ের ভালোবাসা কখনোই বদলাতে পারেনা- জৈনক গবেষক
 যার মা আছে সে কখনোই গরিব নয়- জৈনক গবেষক
 সন্তানেরা ধাঁরালো চাকুর মতো, তারা না চাইলেও মায়েদের কষ্ট দেয় আর মায়েরা তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত সন্তানের পাশে থাকে- জৈনক গবেষক
সময় থাকতে মাকে ভালোবাসুন, তাঁকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং মায়ের ইচ্ছাকে পূরণ করুন- জৈনক গবেষক
প্রতিটা মা মনে করেন, তাদের সন্তানই সেরা- জৈনক গবেষক
মা আমার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, তিনি এমন শিক্ষক যার সমবেদনা আছে, ভালোবাসা আছে এবং যার কোন ভয় নেইভালোবাসায় যদি কোন সুগন্ধী ফুল থাকে, তাহলে আমার মা হচ্ছে ভালোবাসার সেই সুগন্ধী ফুল- স্টীভ ওয়ান্ডার
আমি যাই হই না কেন বা যা হওয়ার আশা করি না কেন, আমি সর্বদাই আমার মায়ের কাছে ঋণী - আব্রাহাম লিঙ্কন

০৪. মায়ের স্থান কেন বৃদ্ধাশ্রম?
মার আদর-যত্ন সন্তানের জন্য পরম সৌভাগ্যসন্তানের কাছে মাঅতুলনীয় এক মহা সম্পদ ও খনিজ পদার্থ সন্তানের জন্য মায়ের গভীর ভালোবাসা, জীবন-যাপনে মায়ের সান্নিধ্য অবধারিতপ্রাত্যহিক জীবনে মায়ের আদর-যত্ন অনিবার্য ধ্রুব সত্যসন্তানের সাথে মা কিংবা মায়ের সবকিছুতেই সন্তান যে মা একটি সংসারকে জিরো থেকে হিরোতে পরিণত করলেনপরম আদর-যত্ন, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, পর্বতসম ধৈর্য্যের পরকাষ্ঠায় সর্ব উর্ধ্বে অবদান রাখলেননিজে অভুক্ত থেকে সন্তানের মুখে হাঁসি ফুটিয়েছেননিজেরা ছিড়া-ফাঁটা জামা পরিধান করে সন্তানকে ভাল-সুন্দর জামা কিনে দিয়েছেনসেই জনম দুঃখিনী ও হতভাগিনী মার থাকার স্থান কেন বৃদ্ধাশ্রমে? ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবোধের কারণে মানুষ মাত্রই পরনির্ভরশীলতা এড়িয়ে চলতে চায়আবার তিল তিল করে গড়ে তোলা নিজের স্বপ্নের বাসভূমিকে ছেড়ে খুব কম মানুষই দূরে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেযে বাসভূমিতে তার হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষদের সব স্মৃতি ধূলোকণার মতো বাতাসে ভাসতে থাকে !! অথচ তাকে বাধ্য করা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণ যাদের কাছে সৌখিনতা ছিল না অথচ সন্তানরা কেন সৌখিনতা বেছে নিল? এতদ্বসত্বেও মা মাতৃসুলভ মমতায় দুঃখ ও অভিযোগ-অনুযোগের পরিবর্তে সন্তানকে সেইভ করে বলেন, সন্তান বউ-পোলা, নাতিদের পালতেই কষ্ট, আমাগো খোঁজ নেবে কেমনে?’আমি শুধু প্রশ্নবিদ্ধ হইভালোবাসা প্রকাশের সাথে আর্থিক সঙ্গতি কি নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট? সন্তান কখন মায়ের তীব্র সংকট ও অভাব অনুভব করে? যখন সন্তান সিমাহীন দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতনের সম্মুখীন হয়

০৫. জনম দুঃখিনী ও হতভাগিনী এক মা কর্তৃক তার পুত্রের কাছে লেখা আবেগময় হৃদয় বিদারক ও লোমহর্ষক চিঠি :
মা মারা যাওয়ার কিছু দিন পর, মায়ের ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে মায়ের হাতের লেখা একটি চিঠি পায় তার একমাত্র ছেলে চিঠিতে লেখা ছিল : খোকা, এই চিঠি যখন তোর হাতে পড়বে তখন আমি তোর কাছ থেকে অনেক দুরে চলে যাবো, যেখান থেকে কেউ কোনো দিন ফিরে আসে না। খোকা, তোর অনেক কথাই মনে নেই, তাই এই চিঠিতে লিখে গেলাম তোর মনে না থাকা সেই কথা গুলি

খোকা, তুই যখন ছোট্ট ছিলি একবার তোর জ্বর এসেছিলো, আমি তিন রাত ঘুমাতে পারিনি তোকে বুকে নিয়ে বসে ছিলাম,কারন তোকে বিছানায় শোয়ালেই তুই কেঁদে উঠতি তোর বাবা আমাকে বলেছিলো তোকে শুইয়ে রাখতে কিন্তু আমি পারিনি! সে জন্য আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছিলো তোর বাবা তোকে যখন রাতে বিছানায় শোয়াতাম, তুই প্রশ্রাব করে বার বার বিছানা ভিজিয়ে ফেলতি তখন আমি তোকে আবার শুকনো জায়গায় শোয়াতাম আর আমি তোর প্রশ্রাবে ভেজা জায়গায় শুয়ে থাকতামতোর বাবা যখন মারা গেলো, তখন অনেক কষ্টে আমাকে সংসারটা চালাতে হয়েছিলো, একটা ডিম ভেজে দুই টুকরো করে তোকে দু'বেলায় দিতাম, এমনও দিন গেছে শুধু লবন দিয়ে ভাত খেয়েছি আমি, কিন্তু তোকে বুঝতে দেই নাই আমিএকদিন রান্না করার মতো কোনো চাল ছিলো না ঘরে, তখন কোনো উপায় না পেয়ে একবাড়িতে কাজ করে কিছু চাল এনে ভাত রেঁধে খাইয়েছিলাম তোকে

হয়তো তুই ভুলে গেছিস, যখন তোর এস এস সি পরিক্ষার ফি দিতে পারছিলাম না তখন তোর বাবার দেয়া শেষ স্মৃতি নাকফুলটা বিক্রি করে দিয়েছিলাম, আরো অনেক কথা আছে যা লিখতে গেলে হয়তো খাতা শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু লেখা শেষ হবে নাভাবছিস এতো কথা তোকে কেন লিখে গেলাম,,, খোকা তুই যখন বড়ো হলি একটা ভালো চাকরি পেলি,, এর কিছুদিন পরে বিয়ে করলি, তখন আমি তোদের নিয়ে ভালোই ছিলাম

মনে আছে খোকা? একদিন ঘর থেকে কিছু টাকা চুরি হলো, সেদিন তুই আমাকে জিগ্যেস করেছিলি আমি তোর টাকার ব্যাপারে কিছু জানি কি না, তুই আমাকে সরাসরি কিছু না বললেও আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুই আমাকে চোর ভেবেছিলিএর কিছুদিন পর তুই আমাকে চোরের অপবাদ দিয়ে অন্য একটি ঘরে রেখে দিলিখোকা আমার সেই ঘরটিতে থাকতে অনেক ভয় করতো, কারন ঘরটি তোদের কাছ থেকে অনেক দুরে ছিলো, খোকা তোকে একদিন বলেও ছিলাম আমার একা একা থাকতে ভয় লাগে, তুই বলেছিলি মরন আসলে যে কোনো যায়গায় আসবে

আমার হাঁটুর ব্যাথাটা বেড়ে ছিলো তাই তোকে বলেছিলাম খোকা, আমাকে কিছু ঔষদ কিনে দিবি,তুই বলেছিলি এই বয়সে ঔষধ খাওয়া লাগে না, এমনি এমনি ঠিক হয়ে যাবেখোকা বিছানা থেকে উঠতে পারতাম না, শরীরে ফোসকা পড়ে গিয়েছিলো শরীর থেকে পঁচা গন্ধ আসতো, কতো দিন যে স্নান করিনি তা ঠিক বলতে পারবো না, খোকা তোর ঘরটা ছিলো আমার ঘরের থেকে অনেক দুরে,কখন আশিস কখন চলে যাস আমি কিছুই দেখতে পারতাম না,তবুও পথের দিকে তাকিয়ে থাকতাম খোকা, তুই যখন ছোট ছিলি আমি খেতে বসলে তোকে কোলে নিয়ে খেতে বসতাম, তবুও কখনো তোকে চোখের আড়াল হতে দিতাম নাখোকা, যখন তুই আমার কোলে পায়খানা করে দিতি,তোর পায়খানা পরিস্কার করতে আমার একটুও ঘৃনা লাগতো না,কিন্তু তুই যখন আমার কাছে আসতি তখন নাকে রুমাল দিয়ে আসতি,ক্যানোরে খোকা আমার শরীর দিয়ে গন্ধ আসতো বলে? এক কাপড়ে আমাকে কতো মাস যে থাকতে হয়েছে তা আমি ঠিক বলতে পারবো নারে

খোকা, তুই যখন অনেক দিন পর একবার আমাকে দেখতে এসেছিলি আমার খুব ইচ্ছে ছিলো তোকে বুকে জড়িয়ে ধরি কিন্তু খোকা পারিনি তোকে বুকে জড়িয়ে ধরতে,কারণ, আমার শরীরে তো অনেক ময়লা ছিলো, তাতে যদি তোর দামি সার্ট প্যান্ট নষ্ট হয়ে যায় এই ভয়েতে তোকে বুকে নিতে পারিনি সেদিনখোকা কখনো আমাকে একবারও জিগ্যেস করিসনি, মা তোমার কিছু খেতে মন চায়,খাওয়ার কথা থাক,, কতদিন যে তোর মুখে মা ডাক শুনিনি,তাও ঠিক বলতে পারবো না খোকা, আমার কি অপরাধ ছিলো,যে আমাকে তোর কাছ থেকে অনেক দুরে রাখলিখোকা, তুই কি পারতিনা আমাকে তোর কাছে রাখতে? খোকা তুই কি পারতি না,, আমাকে একটা কাপড় কিনে দিতে? খোকা, তুই কি পারতি না,, আমাকে একটা ডাক্তার দেখাতে? আমাকে একটা ডাক্তার দেখালে হয়তো এই পৃথিবীতে আরো কিছুদিন থাকতে পারতাম

খোকা, কোনো মা তার সন্তানের কাছে পেট ভরে খেতে চায় না, শুধু মন ভরে ‘মা’ ডাক শুনতে চায়যা তুই কখনোই বুঝতে চাসনিখোকা তোকে একটি শেষ অনুরোধ করছি, আমার এই চিঠিটা তোর সন্তানদের পড়ে শোনাবি, কারণ, তুই বৃদ্ধ হলে তোর সাথে তোর সন্তানেরা যাতে এরকমটি আর না করে

আল্লাহ ভালো রাখুন
ইতি
তোর জনমদুঃখিনী ও হতভাগিনী মা

৬. মা সম্পর্কে বাংলাদেশের জাতিয় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা :
৬/১. ‘মা’ ; কাজী নজরুল ইসলাম
[ক. অংশ]
যেখানেতে দেখি যাহা, মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই
মায়ের মতন এত, আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!
হেরিলে মায়ের মুখ, দূরে যায় সব দুখ
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান
মায়ের শীতল কোলে, সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান
কত করি উৎপাত, আবদার দিন রাত
সব সন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!
আমাদের মুখ চেয়ে, নিজে রন নাহি খেয়ে
শত দোষী তবু মা তো তাজে না
ছিনু খোকা এতটুকু, একটুতে ছোট বুক
যখন ভাঙিয়া যেতো, মা-ই সে তখন
বুকে করে নিশিদিন, আরাম-বিরাম-হীন
দোলা দেয় শুধাতেন, ‘কি হোলো খোকন?’
আহা সে কতই রাতি, শিয়রে জ্বালায়ে বাতি
একটু আসুখ হলে জাগেন মাতা,
সব-কিছু ভুলে গিয়ে, কেবল আমায়ের নিয়ে
কত আকুলতা যেন জাগন্মাতা
যখন জন্ম নিনু, কত আসহায় ছিনু
কাঁদা ছাড়া নাহি জানিতাম কোন কিছু,
ওঠা বসা দূরে থাক-মুখে নাহি ছিল বাক
চাহনি ফিরিত শুধু আর পিছু পিছু
তখন সে মা আমার, চুমু খেয়ে বারবার
চাপিতেন বুকে, শুধু একটি চাওয়ায়
বুঝিয়া নিতেন যত, আমার কি ব্যথা হোতো
বল কে ওমন স্নেহে বুকটি ছাওয়ায়
[খ. অংশ]
তারপর কত দুখে, আমারে ধরিয়া বুকে
করিয়া তুলেছে মাতা দেখো কত বড়,
কত না সে সুন্দর, এ দেহে এ অন্তর
সব মোর ভাই বোন হেথা যত পড়
পাঠশালা হতে যবে, ঘরে ফিরি যাব সবে
কত না আদরে কোলে তুলিনেবে মাতা,
খাবার ধরিয়া মুখে, শুধাবেন কত সুখে
কত আজ লেখা হোলো, পড়া কত পাতা?’
পড়া লেখা ভাল হলে, দেখেছ সে কত ছলে
ঘরে ঘরে মা আমার কত নাম করে
বলে, ‘মোর খোকামনি! হীরা-মানিকের খনি,
এমনটি নাই কারো!শুনে বুক ভরে
গাটি গরম হলে, মা সে চোখের জলে
ভেসে বলে, ‘ওরে যাদু কি হয়েছে বল
কত দেবতার থানে’, পীরে মা মানত মানে-
মাতা ছাড়া নাই কারো চোখে এত জল
যখন ঘুমায়ে থাকি, জাগে রে কাহার আঁখি
আমার শিয়রে, আহা কিসে হবে ঘুম
তাই কত ছড়া গানে, ঘুম-পাড়ানীরে আনে,
বলে, ‘ঘুম! দিয়ে যা রে খুকু-চোখে চুম
দিবানিশি ভাবনা, কিসে ক্লেশ পাব না,
কিসে সে মানুষ হব, বড় হব কিসে;
বুক ভরে ওঠে মা, ছেলেরি গরবে তাঁর,
সব দুখ হয় মায়ের আশিসে
আয় তবে ভাই বোন, আয় সবে আয় শোন
গাই গান, পদধূলি শিরে লয়ে মা;
মার বড় কেহ নাই-কেউ নাই কেউ নাই!
নত করি বল সবে মা আমার! মা আমার!

৬/২. ‘মা’ ; সংগ্রহে : আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
[খ. অনুবাদ অংশ]
মা
মা, রেস্টুরেন্ট ; যখন আমি ক্ষুধার্থ।
মা, হাসপাতাল ; যখন আমি অসুস্থ
মা, উৎসব-অনুষ্ঠান যখন আমি উৎফুল্ল-আনন্দিত
মা, এলার্মঘড়ি ; যখন ঘুমন্ত
মা, আকাসের গর্জণ ; যখন আমি অনুপস্থিত
আপনি কি তাহার চেয়ে ভালকর্মকারিণী কাউকে দেখেছেন?
হে আল্লাহ! আমার মা এবং সকলের মাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ 
স্থানে বাড়ি দান করুন
[ক. আরবি অংশ]
الأم
مطعم إذا جعت
مستشفى إذا مرضت
حفلة إذا فرحت
منبه إذا نمت
دعوات سماوية إذا غبت
فهل ترى بها أحسنت؟
اللهم اجعل أمى وأمهاتكم فى أعلى منزله فى الجنة

০৭. শিক্ষনীয় বিয়ষ :
. মা-কে সম্মান করা, সেবা-যত্ন করা, বরণ-পোষণ বহন করা ফরয
. মার ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক সকল অধিকার প্রদাণ করা সন্তানের ঈমানী ও নৈতিক দায়িত্ব।
গ. মার মনে কষ্ট দেয়া হারাম ও কবীরা গুণাহ।
ঘ. মার সাথে খারাপ আচরণকারীদের জন্য উচিত হলো মার নিকট ক্ষমা প্রার্থণা করা এবং আল্লাহর নিকট তাওবাহ করা।

০৮. উপসংহার :
পৃথিবীতে সন্তান আগমনের, লালন-পালন, স্নেহ-যত্ন, নিঃস্বার্থ আদর-সোহাগ ও ভালবাসার এবং সর্বাবস্থায় সন্তানের কল্যাণকামিনী হলেন মা জননী। সন্তানের উপর মার দায়িত্ব-কর্তব্য ও করণীয় অপরিসীম। মানবীয় অধিকার প্রদানে মাকে সর্ববস্থায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। মার মনে কষ্ঠ দেয়া যাবে না। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আমাদেরকে মার সন্তষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন, আমীন।

৯. তথ্যসূত্র :
১. পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ভার্চুওয়াল গ্রন্থাগার ; মাকতাবাতুশ শামিলা, সুন্নাহ ডট কম।
২. উইকিপিডিয়া ; ইন্টারনেট ভিত্তিকমুক্ত বিশ্বকোষ]
৩. ভিবিন্ন সাময়িকী ও প্রবন্ধসমগ্র।