Friday, 27 April 2018

এপ্রিল ফুল, চাপাপড়া ইতিহাস ; গ্রানাডা ট্রাজেডি দিবস


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
এপ্রিলফুল, চাপাপড়া ইতিহাস; গ্রানাডা ট্রাজেডি দিবস
রচনা, সংগ্রহ ও সঞ্চয়নে : মুফতি আব্দুস সালাম হুসাইন আলী 


০১. অবতরণিকাঃ
সমস্ত প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীন ও প্রতিপালক, সর্বময় ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিপতী আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি, মুমিনকে দুঃখ-কষ্ট দেওয়া, সন্দেহ ও কু-ধারণা করা, হেয় প্রতিপন্ন, তুচ্ছ-তাচ্ছিছল্য ও ঠাট্ট্রা-বিদ্রুপ করা ও মন্দ নামে ডাকা, মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা অপবাদ বা সাক্ষ্য দেওয়া, জালিয়াতি, ধোকা,  প্রতারণকে হারাম করেছেন দুরূদ সালাম ও শান্তি বর্ষিত হউক সর্বকালের, সর্বযুগের সর্ব শ্রেষ্ট মহামানব মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবাসহ সকল আপামোর জণসাধরণ মুসলিমগণের প্রতিও

হাটি হাটি পা পা করে আমাদের ধারপ্রান্তে উপণিত হয় বৎসর পরিক্রমান্তে পহেলা এপ্রিল অথচ আমরা সেই দিনের ইতিহাস জানিনা, কেননা তা ইয়াহুদী ও নাসারাদের কালো চক্রান্তের ভেড়াজালে চাপা পড়ে আছে সেই ইতিহাস আসুন তাহলে উদঘাটন করি সেই অজানা-অচেনা কালো ইতিহাস

০২. পরিচিতিঃ
পহেলা এপ্রিল ঐতিহাসিক গ্রানাডা ট্রাজেডি দিবস খ্রীষ্টজগতে দিনটি আনন্দ-স্ফুর্তি, বিজয় ও তামাশার হলেও মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্বের তামাম মানবতাবাদীদের জন্য দিনটি খুবই কালো ট্রাজেডি ও বেদনা-বেদূর ১৪৯২ ইং সানের এই দিনে বিশ্ব মানবতা ও সভ্যতা বিরোধী খ্রীষ্টবাহিনী নজিরবিহীন প্রতারণা করে অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ, শিশু, আবাল বৃদ্ধ-বণিতাদের মসজিদে অবরুদ্ধ করে খ্রীষ্টান শক্তি প্রতারণার ফাঁদ পেতে মসজিদে সাত লাখ মুসলমানকে ঢুকিয়ে অগ্নিকান্ডে পুঁড়িয়ে ও কামান দাঁগিয়ে নির্মমভাবে গণহত্যা চালিয়ে ছিল পবিত্র স্থান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদে তালাবদ্ধ অবস্থায় নারী-পুরুষ ও শিশুকে জীবন্ত পুঁড়িয়ে ফেলার এ দৃশ্য, লোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই

০৩. ঘটনার সূত্রপাতঃ
ইহ-লৌকিক ও পর-লৌকিকের চির শান্তি ও কল্যাণের মশালবাহী, সত্য ন্যায়ের অগ্রদূত সর্ব কালের, সর্ব যুগের, সর্ব শ্রেষ্ঠ মহানবী ; মুহাম্মাদ (সা.) -এর মক্কা বিজয়ের পর শাশ্বত, সৌন্দরর্যময় ও কল্যাণে আকৃষ্ঠ হয়ে বিশ্বের দেশে দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় কায়েম হতে থাকে এই মুক্তি ও কল্যাণের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের মাটিতেও এরই ধারাবাহিকতায় অষ্টম শতাব্দির শুরতে অত্যচারী ও সৈরশাসক রাজা রডারিকের দুঃশাসনে অতিষ্ঠিত জনগণকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অন্ধকারাচ্ছন্ন, পশ্চাৎপদ ইউরোপের মুক্তিদাতা হিসেবে সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ’-এর নেতৃত্বে মুসলমানেরা স্পেন জয় করে এই ইসলামী শাসনের সুফল ইউরোপ ভোগ করে দীর্ঘ আটশত বছর দলে দলে ইসলাম গ্রহন করে স্পেনকে বানিয়েছিল ইসলামের শক্ত ও দুর্ভেধ্য ঘাঁটি অপরদিকে ইউরোপ মুসলিমদের সভ্যতার আলোকরস্মী ও জ্যোতিতে প্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায় স্পেনের ইতিহাসের এই স্বর্ণালী সময়ের স্বাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে গ্রনাডা, আল-হামরা, কর্ডোভা, সেভিল, টলোভো

তবে ইতিহাসের চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে এক সময় মুসলমানদের শাসন ক্ষমতা কমে আসতে থাকে কতেক মুসলিম নামধারী, মুসলিম ছদ্মবেশী শাসকসহ নেতৃত্বস্থানীয়দের অনেকেই সীমাহীন ভোগবিলাস ব্যসনে, নৈতিক অবক্ষয় ও আত্মকলহের সুযোগে খ্রীষ্টীয় সাম্প্রদায়িক রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও রাণী ইসাবেলার নেতৃত্বে সম্মিলিত খ্রীষ্টীয় শক্তি মুসলিম শাসক আবু আব্দুল্লাহর কাছ থেকে গ্রানাডা দখলের জন্য শহরটির সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় উস্কানীমূলক হামলা চালায় এই হামলার জবাবে গ্রানাডাবাসী প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহন করে গ্রানাডাবাসীর এই প্রস্তুতিতে খ্রীষ্টীয় বাহিনী ভড়কে যায় সম্মুখ সমরে মুসলমানদেরকে কোন শক্তিই পরাজিত করতে পারেনি তাই ধূর্ত ফার্ডিন্যান্ড সম্মুখ সমরে না যেয়ে গ্রানাডা সীমান্ত অবরোধ করে অবস্থান নেয় শহরটির প্রধান শস্য কেন্দ্র ভেগা উপত্যকার সকল ফসলের ক্ষেতে আগুন জ্বালিয়ে গ্রানাডাবাসীর উপর চাপিয়ে দেয় ভয়াল দূর্ভিক্ষ অবরোধকারী খ্রীষ্টশক্তি দূর্ভিক্ষতাড়িত ক্ষুদাক্লিষ্ঠ গ্রানাডাবাসীর উপর বিভিন্ন সময়ে চালাতে থাকে অতর্কিত হামলা তবু গ্রানাডার মুসলিম জনগণ শহর পরিত্যাগ না করায় মতলববাজ ফ্যাসিষ্ট ফ্যার্ডিণ্যান্ড ঘোষণা দেয় যে, যদি মুসলামনরা রাজধানী গ্রানাডার প্রবেশধার খুলে দিয়ে নিরস্ত্র হয়ে মসজিদে অবস্থান নেয় তাহলে গ্রানাডাবাসীর উপর কোন অত্যাচার, পাপাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন ও রক্তপাত করা হবেনা

সে দিনটি ছিল ১৪৯২ সালের পহেলা এপ্রিল দূর্ভিক্ষতাড়িত, ক্ষুদাক্লিষ্ঠ গ্রানাডাবাসী সে দিন খ্রীষ্ঠান রাজার কথা বিশ্বাস করে রক্তপাত এরাতে মসজিদে অবস্থায় নেয় কিন্তু হায় আফসোস! বেঈমান প্রতারক ফ্যাসিষ্ট খ্রীষ্ঠান দস্যুরা গ্রানাডা নগরীতে প্রবেশ করে মসজিদের সব দরজা বন্ধ করে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় দাউ দাউ আগুনের লেলিহান শিখায় মসজিদে আশ্রিত মুসলমান নারী-পুরুষ, শিশু, আবাল বৃদ্ধ-বণিতা জীবন্ত ভষ্মিভূত হয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায় মাত্র একদিনে সাত লাখ মানুষের গণহত্যা পৃথিবীতে আর ঘটেনি ফ্যার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার বাহিনী নগরীর প্রতিটি ঘরে ঘরে লুন্ঠন চালায় মুসলিম সভ্যতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র গ্রানাডায় গড়ে তোলা অসংখ্য লাউব্রেরীর কুরআন, হাদীস ও অন্যান্য বইগুলো নগরির পাহাড়ি নদীতে ছুঁড়ে ফেলা হয় বইয়ের স্তপে নদীর স্রোত ও প্রবাহ বন্ধ হয়ে বদলে যায় মসজিদের প্রজ্জলিত অগ্নিশিখায় দগ্ধ অসহায় মুসলমানদের আত্মচিৎকারে যখন আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠেছিল তখন উল্লাসিত খ্রীষ্ঠান রাজা ফ্যাসিষ্ট ফ্যার্ডিন্যান্ড বরবর আনন্দে চিৎকার করে বলতে থাকে মুসলমান তোরা হলে এপ্রিলের বোকা’ (April Fool / এপ্রিলফুল)

এরপর শত শত বছর ধরে খ্রীষ্ঠান তথা পশ্চিমা দেশগুলো বা দেশসমূহের খ্রীষ্ঠানজনগণ পহেলা এপ্রিল তারিখে পরস্পরকে বোকা বানানোর মাধ্যমে April Fool পালন করে আসছে এই April Fool রেওয়াজের মাধ্যমে খ্রীষ্ঠানরা শুধু গ্রানাডার ট্রাজেডি তথা মুসলিম গণহত্যা বার্ষিকী উদযাপনের উৎসবই পালন করছে না সেই সাথে শত শত বছরের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছঁড়িয়ে দিচ্ছে মুসলিম বিদ্ধেষী সাম্প্রদায়িক উস্কানি পশ্চাত্ব খ্রীষ্টজগতের বরবরতার এখানেই শেষ নেই বিগত ১৯৯৩ ইং সনের পহেলা এপ্রিল বিশ্বোর শীর্ষস্থানীয় নেতারা গ্রানাডা ট্রাজেডির পাঁচশত বার্ষিকী পূর্তী উপলক্ষ্যে স্পেনে এক সভায় মিলিত হয় এই সভায় একচ্ছত্র খ্রীষ্ট্রীয় বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করতে উৎকট সাম্প্রদায়িক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয় সভায় বিশ্বব্যাপী মুসলিম জাগরণ প্রতিহত করতে বিভিন্ন কর্মসূচী গৃহীত হয় গড়ে তোলা হয় হলি মেরী ফান্ড খ্রীষ্টীয় দেশগুলো এই ফান্ডে নিয়মিত মাসিক চাঁদা জমা তরে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করতে গড়ে তুলছে অর্থনৈতিক বোমা আর আল-বেনিয়া, ফিলিস্তিন, মিন্দানাও, আরাকান (বারমা), ইন্দোনেশিয়া, কাশ্মির, বলকান, সিংকিয়া, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, লেবানন, ইয়ামান, লিবিয়া, কাতার, সুদান ও চীনসহ বর্সত্রই মুসলমানদের উপর চলছে একতরফা নির্যাতন-নিপীড়নের ষ্টীমরোলার ও অতর্কিত হামলা।

০৪. আমাদের অনুভূতিঃ
কিন্তু আফসোসের বিষয়! কতিপয় মুসলমান তাদের মর্মদন্তু ইতিহাসের বেদানার্ত কালো অধ্যায় রক্তদহনের কথা না জেনে এই আত্মবিনাসী দিনে আধুনিক অজ্ঞতার নামে মহা দোমধামে পালন করছে April Fool সংস্কৃতি মুসলিম জাতিসত্তা উৎখাতের এই বিশ্বব্যাপী চক্রান্তে জড়িত হয়ে পড়ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি, দল, এন.জি.ও এবং কতেক মহল বিশেষ ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে একশ্রেণির বিপদগামী যুবক আত্মঘাতি বোমা ফাটিয়ে ইসলামকে কুলশিত করছে ইসলামে সন্ত্রাসের কোন অবকাশ নেই আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রেই কুরআনের অবমাননা করা হচ্ছে ইসলামী শিক্ষার ও ব্যক্তিত্বের হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে ইসলাম প্রিয়দের উপর চালানো হচ্ছে জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও ভয়াল নিপীড়ন নিরেট-নির্ভেজালভাবে সহীহ আক্বীদা পোষণ ও সহীহ হাদীছের আলোকে আমলকারীদের উপর নির্যাতনসহ তাদের সহীহ আমলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মুসলিম স্থাপনা ও ধর্মীয় স্থানগুলোতে হামলা করে ভাংচুর করা হচ্ছে। ইসলামী অনুষ্ঠানগুলোতে নিষেজ্ঞা জারি করা হচ্ছে মসজিদ-মাদরাসা বন্ধের অপতৎপরতা করা হচ্ছে নানান কারণ ও অজুহাতে ইসলামী এন.জি.ও বা সংস্থাসমূহ ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এসবই হচ্ছে খ্রীষ্টীয় ইন্ধনে এখানেই শেষ নই পশ্চিমা সংস্কৃতিতে অনুপ্রানিত হয়ে মুসলিমদেরকে April Fool পালনের উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। যা ফার্ডিন্যান্ড ও রাণী ইসাবেলার কন্ঠই ধ্বনিত হওয়ার অশ্বনি সংকেত নই-কি?

০৫. উপসংহারঃ
আমরা ১৯৯২ ইং সনের পহেলা এপ্রিলের খ্রীষ্টীয় বরবর শক্তির মুসলিম গণহত্যার জন্য বর্তমান বিশ্ব খ্রীস্টীয় ভ্যাটিক্যান ও পোপকে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা ও দুঃখ প্রকাশসহ ক্ষতিপূরণের আহ্বান যানাচ্ছি আর ক্রুসেড নয়, আর নয় গণহত্যা বিশ্বের নব্য ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলাদের বিরুদ্ধে বিবেকবান মহলকে সময়োচিত ভূমিকা পালন করতে হবে খুলে দিতে হবে বরবরদের মুখোশ মানবতা ও সভ্যতা বিরুধী ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে শান্তিকামী ও মানবতাবাদী বিশ্বকে সোচ্চার হতে হবে বিশ্ব শান্তি ও কল্যাণের জন্য আবার পূণরায় জেগে উঠতে হবে মুসলমানদের গোঁড়ামী, সংকীর্ণতা, হীনতা-দীনতা ও কৃপণতা পরিহার করে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা, সহীহ আক্বীদা পোষণ, রাসূল (সা)-এর সহীহ হাদীছের আমল করা এবং উদারতা, হৃদয়ের প্রশস্ততা ও অপরকে প্রধান্যসহ ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতে হবে যেই আহ্বান উচারিত হচ্ছে কবির ভাষায় :
                ‘‘বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা, শির উঁচু কর মুসলমান
               দাওয়াত এসেছে নয়া জামানার, ভাঙ্গা কেল্লায় ওরে নিশান’’
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে উপরোক্ত আলোচনার উপর আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন

০৬. তথ্যসূত্রঃ
  * আল-মাউসুআতুল ইসলামী / الموسوعة الإسلامي       
  * সংক্ষীপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ  
  * মাকতাবাতুশ শামেলা / المكتبة الشاملة

No comments:

Post a Comment