Friday, 20 September 2019

কন্যা সন্তান সৌভাগ্যের পরশমনী ও বরকতের প্রতীকঃ


কন্যা সন্তান সৌভাগ্যের পরশমনী ও বরকতের প্রতীকঃ
আব্দুস সালাম হুসাইন আলী

কন্যা শিশুর জন্মে আনন্দ ও খুশি উদযাপন করা উচিতকারণ, বিশ্বনবী (সা.) কন্যা সন্তানের ব্যাপারে সুসংবাদ ও ফযীলত ঘোষণা করেছেন :

০১. আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যার দুটি কন্যা আছে আর সে উত্তমভাবে তাদের ভরণ-পোষণ করল এবং উপযুক্ত হওয়ার পর ভালো পাত্রের কাছে বিবাহের ব্যবস্থা করল, আমি ও সে জান্নাতে এভাবে প্রবেশ করব, যেভাবে এ দুটি আঙ্গুল মিলে আছেএকথা বলে তিনি ডান হাতের শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে দেখালেন’ [সহিহ ইবনে হিব্বান : ২০৪৩]।

০২. অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ‘যার তিনটি কন্যা আছে, অথবা দুটি কন্যা আছে এবং সে তাদের সাথে উত্তমভাবে জীবন অতিবাহিত করেতাদের হকসমূহ আদায়ের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে বিনিময় স্বরূপ জান্নাত দান করবেন’ [তিরমিজি : ১৯৮৮]

উল্লেখিত হাদিস থেকে তিনটি বিষয় প্রতিয়মাণ হয়
০১. কন্যা সন্তান লালন-পালনের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দেবেন
০২. তার উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন
০৩. জান্নাতে সে প্রিয়নবী (সা.) এর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হবে

ক্যাসিনো কি, এখানে কি হয়? বাংলাদেশে নিষিদ্ধ কেন?


ক্যাসিনো কি, এখানে কি হয়? বাংলাদেশে নিষিদ্ধ কেন?

সংগ্রহে : আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
 
প্রায় দুই হাজার বছর আগে জুয়া খেলার উত্থানশুরুর দিকে অনিয়ন্ত্রিত জুয়ার আসরের কারণেই ক্যাসিনোর উৎপত্তিবর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জুয়ার আসরে চলে ক্যাসিনোর রমরমা ব্যবসাউড়ানো হয় হাজার হাজার কোটি টাকাবিশ্বজুড়ে রয়েছে এমন অসংখ্য ক্যাসিনো যেখানে জুয়ার নেশায় মেতে থাকেন জুয়াড়িরাআমেরিকা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, নেপালসহ অসংখ্য দেশে গড়ে উঠেছে এই টাকা উড়ানোর আসরঅনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি খেলার ছলে মনোরঞ্জনের জন্য এসব ক্যাসিনোতে এসে থাকেন

ক্যাসিনোর ইতিহাস
এখন পর্যন্ত ক্যাসিনো সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানা সম্ভব হয় নিকারণ ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, পৃথিবীর শুরু থেকেই বাজি বা জুয়া খেলার প্রচলন ছিলআর বর্তমানে সকল দেশেই কম বেশি এর প্রচলন আছে

ইউরোপের ইতিহাসে ক্যাসিনো
তবে ইউরোপের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইতালিতে সর্বপ্রথম ১৬৩৮ সালে ভেনিস শহরে রীডোট্ট নামে এক ক্যাসিনো তৈরি করা হয়েছিলোওই সময়কার জ্ঞানী লোকদের পরামর্শে এটি তৈরি করা হয়আর এর উদ্দেশ্য ছিলো কার্নিভাল সিজনে সচারাচার হওয়া জুয়াকে নিয়ন্ত্রণ করাতবে সামাজিক অবক্ষয়ের কথা ভেবে ১৭৭৪ সালে সেই শহরের প্রধান এটিকে বন্ধ করে দেয়

আমেরিকার ইতিহাসে ক্যাসিনো
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বপ্রথম ক্যাসিনোর নাম স্যালুন্সযদিও এটি তৈরি করা হয়েছিল পর্যটকদের আকর্ষণের জন্যএখানে তারা জুয়ার সঙ্গে সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, ড্রিংকস করার সুযোগ পেততবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে স্যান ফ্রান্সিকো, নিউ অরলিন্স, সেন্ট লুইস ও শিকাগোর মত শহরেযা বিশ শতকের দিকে আমেরিকায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে 

১৯৩১ সালে আমেরিকার নেভাদা রাজ্যে সর্বপ্রথম সরকার অনুমোদিত ক্যাসিনো গড়ে ওঠেবর্তমানে আটলান্টিক সিটি আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাসিনো শহরবর্তমানে ক্যাসিনোর কথা উঠলে শুরুতেই আসবে সিন সিটি লাসভেগাসের কথাপৃথিবীর সবচেয়ে বড় জুয়ার আসরটি এখানেই বসে থাকে 

তবে লাসভেগাস ছাড়াও বিভিন্ন দেশেও নাম না জানা অনেক জুয়ার আসর রয়েছেকিন্তু টিভি-সিনেমায় দেখা যায়, লাস ভেগাসের ক্যাসিনোর তুলনায় সিঙ্গাপুরের ক্যাসিনোগুলো অনেক ভদ্র প্রকৃতির 

ইদানীং এশিয়ার কয়েকটি দেশ এসব জুয়া খেলায় এগিয়েএশিয়ার ক্যাসিনোগুলো চুটিয়ে ব্যবসা করছেএসব জায়গায় হরহামেশাই চলে জুয়ার বড় বড় দানএশিয়া মহাদেশের নেপাল, ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এসব জুয়ার আসরে এগিয়েবালক থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সীদের দেখা মিলে এসব ক্যাসিনোতেকোটি কোটি টাকা ওড়াতে আর মনোরঞ্জন করতে তারা এখানে আসে

নেপালের কাঠমান্ডু
এশীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় জুয়ার আসরগুলো বসে নেপালের কাঠমান্ডুতেহিমালয়ের দেশটিতে ক্যাসিনোর জন্য বিশ্বজোড়া খ্যাতি রয়েছেএসব জুয়ার আসরে সবচেয়ে বেশি জুয়ায় মাতে ভিনদেশি পর্যটকরাএখানে রয়েছে নামকরা ছয়টি ক্যাসিনোনেপাল ক্যাসিনোস, ক্যাসিনো ইন নেপাল, ক্যাসিনো সিয়াংগ্রি, ক্যাসিনো অ্যান্না, ক্যাসিনো এভারেস্ট ও ক্যাসিনো রয়েল এখানকার জনপ্রিয় ক্যাসিনোগুলোর মধ্যে অন্যতমএসব জুয়ার আসরে মজার খেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- পোকার (জুজু খেলা), বাক্কারাট (বাজি ধরে তাস খেলা), রুলেট, পন্টুন, ফ্লাশ, বিট, ডিলার, ব্লাকজ্যাক এবং কার্ডস্লট মেশিনের খেলাযেসবের পিছনে ওড়ানো হয় কোটি কোটি ডলার২৪ ঘণ্টা ধরেই চলে এসব জুয়ার আসরঅনেকে এক রাতেই রাজ্যের রাজা বনে যান, আবার অনেকেই হয়ে যান রাস্তার ফকিরএখানকার প্রতিটি ক্যাসিনোতে আগ্রহীরা পরিবার-বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসেনরাতভর জুয়া খেলার পাশাপাশি মদের নেশায় মেতে ওঠেন জুয়াড়িরা 

দ্য ভ্যালেন্তিয়ান ম্যাকাও
বিশ্বে যত ক্যাসিনো রয়েছে দ্য ভ্যালেন্তিয়ান তার মধ্যে অন্যতমচীনের এই ক্যাসিনোটি জুয়াড়িদের প্রধান আকর্ষণআকর্ষণীয় এই ক্যাসিনোটি ভিতর এবং বাহির দুদিক থেকেই দেখতে অপরূপপ্রতি রাতে এখানে চলে নানা ধরনের রোমাঞ্চকর আয়োজনএটি শুধু ক্যাসিনোই নয় বরং একটি পাঁচতারকা মানের হোটেলওক্যাসিনো পুরো হোটেলটির রূপ পাল্টে দিয়েছে 
 
ফক্সউডস রিসোর্ট ক্যাসিনো
যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাটের এই ক্যাসিনোটি বিশ্বজুড়ে সমাদৃতবহু সেলিব্রেটি তাদের বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সেখানে যানসারা রাত জুয়া খেলার পাশাপাশি এখানে চলে জমজমাট আড্ডাকানেক্টিকাটের এই ফক্সউড রিসোর্ট ক্যাসিনো পৃথিবীজুড়ে জুয়াড়িদের অন্যতম পছন্দের জায়গাক্যাসিনোখ্যাত এই হোটেলটিতে ৩৮০টিরও বেশি জুয়ার টেবিলে প্রতিদিন চলে ব্ল্যাকজ্যাক, রুলেট, জুজু ইত্যাদি মজার মজার খেলাহাজার হাজার জুয়াড়ির সমাগম ঘটে এই ক্যাসিনোতে এবং চলে কোটি কোটি টাকার জুয়ার আসরএখানে আরও রয়েছে অল্প বয়স্কদের জন্য চমকপ্রদ সব বিনোদনের ব্যবস্থা

এমজিএম গ্র্যান্ড ক্যাসিনো
লাসভেগাসে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম হোটেলে অবস্থিত এই ক্যাসিনো১ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মিত এই ক্যাসিনোর গেমিং জোনএটিই সিন সিটির সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো ফ্লোরএখানে প্রতিদিন ১৩৯টি টেবিলে পোকারসহ বিভিন্ন রকমের জুয়ার আসর বসেআরও রয়েছে ভিডিও জুজু, প্রোগ্রেসিভ স্লট ও মাল্টি গেম মেমিনসহ জুয়া খেলার নানা উপকরণসারা পৃথিবী থেকে ধনকুবেররা আসেন এই ক্যাসিনোতেএখানে ১ ডলার থেকে ১০০০ ডলার পর্যন্ত বাজি ধরা যায়আবার কেউ কেউ ৫ লাখ ডলার পর্যন্ত প্লে আউট করে থাকে 

বেল্লাজিও
লাসভেগাসের আরেকটি চমৎকার ক্যাসিনো বেল্লাজিওনান্দনিক লোকেশনে অবস্থিত এই ক্যাসিনোটি এমজিএম রিসোর্ট মালিকাধীনএখানে রয়েছে একটি বিখ্যাত ফোয়ারাযার আশপাশে ওশেইন ১১, দ্য হ্যাংওভার অ্যান্ড টোয়েন্টি ওয়ান, গ্লামারসের মতো আলোচিত মুভির শুটিং হয়েছেএখানে হাই টেবিল লিমিট সুবিধা থাকায় প্রফেশনাল জুয়াড়িরা এই ক্যাসিনোতে বেশি ভিড় জমানবিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত জুয়াড়িরা এখানে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ডলার থেকে ৮ হাজার ডলার পর্যন্ত জুয়ার বাজি ধরতে পারেনমাঝে মাঝে গেমিং পটস এক মিলিয়ন ডলারও ছাড়িয়ে যায়

দ্য ভ্যালেন্তিনো রিসোর্ট হোটেল ক্যাসিনো
ক্যাসিনো বললেই লাসভেগাসের দ্য ভ্যালেন্তিনো রিসোর্ট হোটেল ক্যাসিনোর কথা মনে আসে সবার আগেএই বিলাসবহুল হোটেল এবং ক্যাসিনোটি বিশ্বেজোড়া বিখ্যাতপুরো হোটেলটির মালিক এবং পরিচালক লাসভেগাস করপোরেশনযার হেড কোয়ার্টারও হোটেলটির ভিতরেই অবস্থিতএর মধ্যে আরও রয়েছে স্টান্ড এক্সপো কনভেশন সেন্টার, দ্য পাল্লাজো হোটেল এবং ক্যাসিনো রিসোর্টবলা যায়, একের ভিতর সব কিছুএই হোটেলটি বিশ্বের অন্যতম বড় হোটেল এবং ক্যাসিনোএখানে আগত অতিথিদের জন্য রয়েছে ৪০৪৯টি বিলাসবহুল স্যুট এবং ৪০৫৯টি হোটেল রুমএ ছাড়াও ১২ হাজার বর্গফুটের বিশালাকার ক্যাসিনোটি জুয়াড়িদের পছন্দের শীর্ষে 

রিও অল স্যুট হোটেল অ্যান্ড ক্যাসিনো
রিও নাম শুনলেই ব্রাজিলের কথা মনে হওয়ার কথাআসলে এটি সেই রিও নয়, এই হোটেল-ক্যাসিনোটি বিশ্বের ধনকুবেরদের অবসর সময় কাটানোর আরেকটি জায়গারিও অল স্যুট হোটেল অ্যান্ড ক্যাসিনোর মালিক সিজার্স এন্টারটেইনমেন্ট করপোরেশনএই ক্যাসিনোটি জুয়াড়িদের কাছে দ্য রিওনামেই বেশি পরিচিতএটি লাসভেগাসের অন্যমত আকর্ষণীয় হোটেলব্রাজিলের চমৎকার শহর রিও নামানুসারে এই হোটেলটির ক্যাসিনো নাম দেওয়া হয় রিওপুরো হোটেলটির ডিজাইন আর নকশায় প্রাধান্য পেয়েছে ব্রাজিলের সংস্কৃতি

এশিয়া প্যাসিফিক জোনে আরও ১৭ ক্যাসিনো
জুয়া শিল্পের প্রসার খুব দ্রুত ঘটছেএক্ষেত্রে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকাগুলো এবং এর আশপাশের জায়গাগুলোই ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের জন্য বেশি পছন্দের

তাই ২০২০ সালের মধ্যেই ক্যাসিনো শিল্পে যোগ হচ্ছে আরও ১৭টি নতুন বিলাসবহুল ক্যাসিনোযার মধ্যে ছয়টি ক্যাসিনোর হোস্টিং করবে সবচেয়ে বড় গ্যামব্লিং হাব ম্যাকাওআরও তিনটি ক্যাসিনো শুরু হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া ও নিউজিল্যান্ডেঅস্ট্রেলিয়া ও ফিলিপাইনে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি ক্যাসিনো

দক্ষিণ কোরিয়া এবং ফিলিপাইন ক্যাসিনো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহী এবং আগামী পাঁচ বছরে নতুন কয়েকটি ক্যাসিনো চালু করবেমেইনল্যান্ড চায়না অন্যতম বৃহৎ জুয়ার মার্কেটফলে জুয়াড়িরা পার্শ্ববর্তী দেশ যেমন ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইনে জুয়া শিল্পের প্রসারে বেশি আগ্রহী

বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্যাসিনো
বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশআর ইসলামে জুয়া সম্পূর্ণ হারাম ও নিষিদ্ধতবে জুয়া বাংলাদেশের একটি অতিপরিচিত শব্দঅলিতে গলিতে চোখ মেলে তাকালেই এর দেখা মিলেতবে বেশ কয়েক বছর আগে এটা এতোটা খোলামেলা ছিলো নাকিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গুঞ্জন আসে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আনুষ্ঠানিক ক্যাসিনো-এর খোঁজ পাওয়া যায়বিষয়টি জানতে পেরে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং প্রশাসনিক তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দেন

সম্প্রতি র‍্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়ংমেন্স ক্লাব, শাহজাহানপুরের মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও বনানীতে কয়েকটি ক্যাসিনোর সন্ধান পাওয়া যায়র‍্যাব-১ এর সূত্র মতে, এগুলো পরিচালনা করেন রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কিছু নেতাএ সময়ে বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়
র‍্যাবের মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫০টিরও বেশি ক্যাসিনো রয়েছেযেখানে জুয়ার পাশাপাশি নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে থাকেপ্রশাসন এদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন

ক্যাসিনোতে কারা যায়?
এ কথা আর বেশি বিশ্লেষণ করার দরকার হয় না যে, ক্যাসিনোতে কারা যায়ধনী বা টাকাওয়ালারাই এর মূল গ্রাহকবিশেষ করে, ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী গ্রাহকই বেশি হয়ে থাকে

তবে উন্নত দেশগুলোর প্রেক্ষাপটে ক্যাসিনোতে যাওয়ার জন্য কোন বাধা নিষেধ থাকে নাএগুলো সরকার অনুমোদিত হয়ে থাকেনআর সেখানে প্রায় সকল বারের সাথেই ছোট-খাটো ক্যাসিনো থাকে

শপিং শেষে একটু রিফ্রেশমেন্ট-এর জন্য কিংবা সময় কাটাতে অনেকেই ক্যাসিনোতে গিয়ে থাকেনকিন্তু এটা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য, যারা নিয়মিত সেখানে যান এবং নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়েননিয়মিত ভরা পকেট নিয়ে ক্যাসিনোতে গিয়ে পকেট খালি করে বাসায় ফেরা লোকজনই হচ্ছে আসল জুয়াড়ি

কিভাবে সম্পন্ন হয়?
ক্যাসিনোতে এর গ্রাহকরা তাদের পছন্দমতো বিভিন্ন খেলার সুযোগ পায়তবে যে যেই বিষয়ে পারদর্শী হয় সে সেটি খেলার চেষ্টা করে থাকেবিশেষ করে ব্ল্যাকজ্যাক, ভিডিও পোকার, ব্রাক্যারেট, ক্রাপ ও রুলেট নামক খেলাগুলোই গ্রাহকরা বেশি খেলে থাকেন

এখানে কিছু কিছু খেলায় গাণিতিকভাবে খেলোয়াড়ের পক্ষে কিছু যুক্তি দেখায় যে, তার জেতার সম্ভাবনা আছেমূলত এটাই একজন খেলোয়াড়কে তার খেলার মধ্যে বেশি সময় ধরে রাখেকারণ সে ধরে নেয় যে, তার জেতার সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি

কিছু কিছু খেলায় গ্রাহকরা সরাসরি একে অপরের বিপক্ষে বাজি ধরার সুযোগ পায় এবং ক্যাসিনো হাউজ এখান থেকে কিছু কমিশন নেয়একে র‍্যাক বলা হয়ে থাকেএছাড়া গ্রাহকদের আগ্রহী করতে ক্যাসিনোর পক্ষ থেকে নানা অফার দেওয়া হয়ে থাকে

ক্যাসিনোতে যাওয়া কি ক্ষতিকর?
আসলে ক্যাসিনোতে পরিবেশটা এমনভাবে সাজানো থাকে যে আপনি একবার সেখানে প্রবেশ করলে আপনাকে শুধু টাকা উড়াতেই মন চাইবেসোজা কথায় বললে, ধনী থেকে ফকির হওয়ার সহজ উপায় হচ্ছে নিয়মিত ক্যাসিনোতে যাওয়াআপনি চাইলে দুধ অথবা মদ, যেটা ইচ্ছা সেটা খেতে পারেনকোনটা নিবেন সেটা আপনার বিষয়জেনে শুনে মদ পান করলে কে কি করবে

এটা থেকে বাঁচার উপায়
আমাদের যুব সমাজ দিন দিন নানা অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছেযা আমাদের সমাজ তথা জাতিকে ঠেলে দিচ্ছে এক মহাদুর্যোগের দিকেসময় থাকতে নিজে সচেতন হোন অন্যকে সচেতন করুনআপনার সন্তানের দিকে নজর রাখুনতাদের সময় দিন

কোথাও এমন কর্মকাণ্ড নজরে আসলে প্রশাসনকে জানানপারলে নিজে প্রতিবাদ করুনআর আপনি যদি এই সকল জায়গায় আসা যাওয়া করেন, তাহলে তা আজই বাদ দিনকারণ আজ আপনি যাচ্ছেন দুই দিন পর আপনাকে দেখে আপনার সন্তানও আপনার দেখানো পথেই হাঁটবে

সঠিক উপায়ে আয় করুন, বাজে কাজে ব্যয় করতে মন চাইবে নানিজের জন্য প্রয়োজনীয় পানির বালতি যদি নিজে বহন করেন তাহলে বুজতে পারবেন প্রতি ফোটা পানি কতটা দামিতবে দিনের আলোতে বসে জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলো উপভোগ করতে চাইলে সেটা ভিন্ন কথা 

তথ্যসূত্র : একুশে টেলিভিশন, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং –এর প্রতিবেদন।

Thursday, 12 September 2019

জুম‘আর দিন (শুক্রবারে) বা বিশেষ কোন দিন মারা গেলে কবরের শাস্তি মাফ করা হবে কী?


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
জুমআর দিন (শুক্রবারে) বা বিশেষ কোন দিন মারা গেলে কবরের শাস্তি মাফ করা হবে কী?
সংগ্রহে : আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
الحمد لله الذي هدانا إلى الإسلام – والصلاة والسلام على محمد صلى الله عليه وسلم – أما بعد!
 

০১. প্রারম্ভিকাঃ
লোক সমাজে বহুল প্রচলিত ও ব্যাপকভাবে প্রচারিত, কথিত রয়েছে যে, জুমুআর দিনে মৃত্যু বরণ করলে কবরের আযাব (শাস্তি) মাফ করে দেওয়া হয়। একারণেই যে কোনো ফাসেক-ফাজের, সুদখোর, ঘুষ-খোর মোটকথা যত বড় অপরাধীই হোক-না কেন, শুক্রবার দিনে অথবা রাতে মৃত্যু বরণ করলে সাধারণ মানুষ দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করে যে, মৃত ব্যক্তির কবরে কোনো আযাব হবে না; আর এ ধারা অব্যহত থাকবে কিয়ামত পর্যন্তএর ব্যতিক্রমে কেউ বিশ্বাস করে না আসুন জেনে নিই এসবের বাস্তবতা কতটুকু?

০২. বহুল প্রচলিত ও ব্যাপক প্রচারিত, কথিত কথার ভিত্তি স্বরূপ কেউ কেউ এ হাদীসকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন। যথা :
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন :
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوْ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ إِلَّا وَقَاهُ اللهُ فِتْنَةَ الْقَبْرِ
কোন মুসলমান জুমুআর দিনে অথবা রাতে মৃত্যু বরণ করলে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে কবরের ফিৎনা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন’। [মুসনাদে আহমদ হা/নং ৬৫৮২, তিরমিযি হা/নং 1074]।

০৩. বিবেকের প্রশ্ন :
উপরোক্ত হাদীসের আলোকে পর্যালোর মাধ্যমে আমরা বাস্তবতার নিরিখে সমাধানে আসব ইনশা-আল্লাহ। বাস্তবেই কি জুমুআর দিনে অথবা রাতে মৃত্যু বরণ করলে কবরের আযাব মাফ হয়ে যায়? উপরিউক্ত হাদিসটি কোন পর্যায়ের? হাদিসটি কি সহিহ? বিষয়টি একটি পর্যালোচনার দাবী রাখেপ্রথমেই আমরা হাদিসটি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো এরপর একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ

০৪. হাদীসের পর্যালোচনা :
হাদিসটি ইমাম তিরমিযি (রহঃ) নিম্নোক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন :
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، وَأَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ، قَالَا: حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْن أَبِي هِلَالٍ، عَنْ رَبِيعَةَ بْنِ سَيْفٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو
ইমাম তিরমিযি (রহঃ) বলেনে : হাদিসটি গরিবএটি এমন একটি হাদিস যার সনদ মুত্তাসিল নয়রাবিয়া ইবনে সাইফ (সরাসরি) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে শুনেছেন বলে আমাদের জানা নেইইমাম তিরমিযি (রহঃ)-এর কথা থেকে বুঝা গেল যে, হাদিসটি মুত্তাসিল নয় অর্থাৎ এর সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছেরাবিয়া এবং আব্দুল্লাহ এর মধ্যে কোনো রাবী বাদ পড়েছেকিন্তু রাবিয়া এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর মাঝে বাদ পড়া সেই রাবী কে?

বিষয়টির বিস্তারিত বিবরণ শরহু মুশকিলিল আসার (1/250) এ ইমাম তাহাবী (রহঃ)-এর একটি রেওয়ায়েতে এসেছেতাঁর রেওয়ায়েতে রাবিয়া এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর মধ্যখানে তিনজন রাবির কথা এসেছেএরা হচ্ছেন, আব্দুর রহমান ইবনে ক্বাহযাম, ইয়ায ইবনে উকবা, সদফ’-এর এক ব্যক্তি

ইয়ায ইবনে উকবা একজন্ তাবেয়ী ছিলেন। (রিয়াযুন নুফুস, আবু বকর আব্দুল্লা ইবনে মুহাম্মদ আল মালেকী, পৃষ্ঠা 132) আর ইবনে ক্বাহযাম সম্পর্কে শায়েখ শুআইব আল আরনাউত (রহঃ) বলেন, তিনি মাজহুলুল হালইবনে মাকুলা তার আল ইকমাল: 7/101-102 এর উল্লেখ করেছেনআর সদফী সম্পর্কে বলেন, লোকটি মুবহাম (অস্পষ্ট)[মুসনাদে আহমদ: 11/150]।

অবশ্য আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের হাদিসটি উপরিউক্ত সনদ ছাড়াও ভিন্ন সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে যেমন মুসনাদেন আহমদে 11/225 নিম্নোক্ত সনদে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে :
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ أَبِي الْعَبَّاسِ حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ حَدَّثَنِي مُعَاوِيَةُ بْنُ سَعِيدٍ التُّجِيبِيُّ سَمِعْتُ أَبَا قَبِيلٍ الْمِصْرِيَّ يَقُولُ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَاتَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوْ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ وُقِيَ فِتْنَةَ الْقَبْرِ
সনদের রাবি مُعَاوِيَةُ بْنُ سَعِيدٍ التُّجِيبِيُّ ইবনে হিব্বান ছাড়া কেউ তাঁর তাওসিক করেন নিأَبو قَبِيلٍ الْمِصْرِيَّ কে হাফেজ ইবেন হাজার রহ. তাঁর তাজিলুল মানফাআহ গ্রন্থে দুর্বল বলেছেন

হাদিসটি ইমাম বাইহাকি (রহঃ) তাঁর ইসবাতু আযাবিল কাবর গ্রন্থে (82) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে নিম্নোক্ত সনদে মওকুফান অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের বক্তব্য হিসেবে বর্ণিত হয়েছে
 أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ، وَأَبُو سَعِيدٍ قَالا: ثَنَا أَبُو الْعَبَّاسِ، نَا مُحَمَّدٌ، نَا عُثْمَانُ بْنُ صَالِحٍ، ثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ سِنَانِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الصَّدَفِيِّ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، كَانَ يَقُولُ: " مَنْ تُوُفِّيَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوْ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ وُقِيَ الْفَتَّانَ ". وَرُوِيَ ذَلِكَ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ مَرْفُوعًا
এছাড়াও আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের উপরিউক্ত হাদিসটির শাহিদ তথা সমার্থক আরো কয়েকটি হাদিস রয়েছে:
০১. আনাস (রাঃ)-এর হাদিস : হাদিসটি মুসনাদে আবু ইয়ালাতে নিম্নোক্ত সনদে বর্ণিত হয়েছে : 

حَدَّثَنَا أَبُو مَعْمَرٍ إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ وَاقِدِ بْنِ سَلامَةَ، عَنْ يَزِيدَ الرَّقَاشِيِّ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: " مَنْ مَاتَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وُقِيَ عَذَابَ الْقَبْر
সনদের রাবি ওয়াকিদ ইবনে সালামাহ এবং ইয়াযিদ আর রাকাশি দুজনই দুর্বল রাবী

০২. জাবির (রাঃ)-এর এর হাদিস :  হাদিসটি হিলইয়াতুল আউলিয়া গ্রন্থে 3/155 নিম্নোক্ত সনদে বর্ণিত হয়েছে :

حدثنا عبد الرحمن بن العباس الوراق ثنا أحمد بن داود السجستاني ثنا الحسن بن سوار أبو العلاء ثنا عمر بن موسى بن الوجيه عن محمد بن المنكدر عن جابر قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من مات يوم الجمعة أو ليلة الجمعة أجير من عذاب القبر وجاء يوم القيامة عليه طابع الشهداء
হাদিসের সনদে উমর ইবনে মুসা নামক রাবী, হাদিস জাল করার অভিযোগে অভিযুক্ত[বিস্তারিত দেখুন, লিসানুল মিযান: 6/148]।

প্রশ্ন হলো উপরিউক্ত তাখরিজকে সামনে রেখে আমরা কোন সিদ্ধান্তে উপনিত হবো? হাদিসটি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে এবং এর কয়েকটি শাওয়াহিদ তথা সমার্থক হাদিস থাকার কারণে এটাকে সহিহ কিংবা হাসান বলবো? নাকি একথা বলবো যে, যদিও অনেক সনদ এবং শাওয়াহিদ রয়েছে কিন্তু এই সকল সনদ এবং শাওয়াহিদগুলো এই পর্যায়ের নয় যে সবগুলো মিলে হাদিসটি হাসান কিংবা সহিহের পর্যায়ে পৌঁছে যাবে?

০৫. মুহাদ্দিসীনে কেরামের মতানৈক্য :
কেউ কেউ বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে এটাকে হাসান কিংবা সহিহ মনে করেনযেমন মুনযিরি রহ. তাঁর আততারগী: (পৃ. 1286) গ্রন্থে সুয়তি রহ. আল জামিউস সগির গ্রন্থে (ফয়জুল কাদির 5/499) হাদিসটিকে হাসান বলেছেনএছাড়াও সমসাময়িক আলেমদের মধ্যে শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. তাঁর আহকামুল জানাইয গ্রন্থে পৃ. 50 হাদিসটিকে হাসান অথবা সহিহ বলেছেন এর বিপরিত অনেক মুহাদ্দিস উক্ত হাদিসকে সহিহ মনে করেন নাযেমন:

০১. ইমাম তাহাবি (রহঃ) তিনি তাঁর শরহু মুশকিলিল আসার গ্রন্থে (1/250) প্রথমে হযরত আয়েশা রা. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত হাদিস- إنَّ لِلْقَبْرِ لَضَغْطَةً لَوْ كَانَ أَحَدٌ نَاجِيًا مِنْهَا، نَجَا مِنْهَا سَعْدُ بْنُ مُعَاذٍ উল্লেখ করেনএরপর বলেন, কেউ কেউ বলেন, এই হাদিসটি কি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত হাদিস مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ فِي يَوْمِ الْجُمُعَةِ، أَوْ لَيْلَةِ الْجُمُعَةِ إِلا بَرِئَ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ এর বিরোধী হয়ে গেলএরপর তিনি আব্দুল্লাহ ইবন আমরের হাদিসের সনদের দুর্বলতা তুলে ধরে বলেন, এর দ্বারা (এই আলোচনার মাধ্যমে) হাদিসের সনদ যে সঠিক নয়, এসম্পর্কে আমরা অবগতি লাভ করতে পারলামআরো জানতে পারলাম যে তাঁর (রাবিয়া, হাদিসের রাবি) জন্য এমন কোনো কিছু রেওয়ায়েত করা বৈধ নয় যার মধ্যে আয়েশার হাদিস অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (অর্থাৎ রাবিয়ার জন্যে এমন কিছু বর্ণনা করা বৈধ নয় যা হযরত আয়েশা রা. এর পূর্বোক্ত হাদিসের বিরোধী হয়ইমাম তাহাবি রহ. এর কথার সারাংশ হচ্ছে-জুমুঅা বারে মৃত্যুর ফযিলত সংক্রান্ত হাদিসটি অায়েশা রা. এর হাদিসের বিরোধী হওয়ার কারণে এটি গ্রহণযোগ্য নয় 

০২. হাফেয যাহাবি (রহঃ) তিনি তাঁর মিযানুল ইতিদাল গ্রন্থে (7/81) এটিকে মুনকার তথা আপত্তিজনক (এমন হাদিস যা ফাযায়েলের ক্ষেত্রেও গ্রহণযোগ্য নয়) বলেছেন

০৩. আল্লামা কাশমিরি (রহঃ) তিনি তিরমিযির ব্যাখ্যা গ্রন্থ আল আরফুশ শাযী 2/351 তে বলেন : ما صح الحديث في فضل موت يوم الجعة জুমুআর দিনে মৃত্য বরণের ফযিলত-সংক্রান্ত হাদিস সঠিক নয়

০৪. সমসামিয়ক আলেম শায়খ শুআইব আল আরনাউত (রহঃ) মুসনাদে আহমদ (11/150)-এর টীকায় আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের হাদিসের শাওয়াহিদ তথা সমার্থক কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করে বলেন, এসকল শাওয়াহিদ হাদিসকে শক্তিশালি করার যোগ্যতা রাখে নাশায়খ আলবানী তাঁর আল জানাইয গ্রন্থে (পৃ. 35) মুকারকপুরির তুহফাতুল আহওয়াযী এর অনুসরণে হাদিসটিকে হাসান কিংবা সহিহ বলে ভুল করেছেন

০৬. আলোচনার সমাধান :
উপরিউক্ত আলোচনায় দেখা গেলো হাদিসটি সহিহ কি সহিহ নয়, এ ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কেরাম একমত নয়তাহলে বিষয়টি সমাধান কীভাবে হবে? যেসকল মুহাদ্দিস হাদিসটিকে হাসান কিংবা সহিহ মনে করেন, তাদের মতানুযায়ী কি একথা বলবো, হাদিসটি যেহেতু সহিহ, সুতরাং একথা প্রমাণিত হয়ে গেল যে, শুক্রবারে মৃত্যু বরণ করলে কবরের আযাব মাফ হয়ে যাবেনাকি যে সকল মুহাদ্দিস উক্ত হাদিসটিকে সহিহ এবং গ্রহণযোগ্য মনে করেন না তাদের কথানুযায়ী বলবো যে হাদিসটি গ্রহণযোগ্য নয়; সুতরাং শুক্রবারে মৃত্যু বরণ করলে কবরের আযাব মাফ হয়ে যায়, এমন কথা ভিত্তিহীন?
কি সিদ্ধান্তে উপনিত হবো? এবিষয়ে সমাধানে পৌঁছার জন্য কয়েকটি বিষয় জানা প্রয়োজন:

ক. কবরের আযাব সত্যকুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিতএই আযাব থেকে মুক্তির প্রথম শর্ত ঈমানদ্বিতীয় শর্ত ঈমানের দাবি অনুযায়ী জীবন যাপন, বিশেষত যেসব গুনাহর কারণে কবরে আযাবের কথা বর্ণিত হয়েছে তা থেকে সর্বোতভাবে বেঁচে থাকা এবং যেসব আমলের দ্বারা কবরের আযাব থেকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি বর্ণিত হয়েছে সেসব আমল গুরুত্বসহকারে করাআর কবর ও আখিরাতকে সর্বোচ্চ সুন্দর বানানোর চেষ্টায় সর্বদা নিয়োজিত থাকা উচিত 

খ. আল্লাহ তাআলা পরকালে নাজাত এবং শাস্তি থেকে মুক্তির বিষয়টি আমলের সাথে সম্পৃক্ত করেছেনবিশেষ কোনো দিনে বা রাতে মৃত্যুর সাথে সম্পৃক্ত করেন নিতাছাড়া এটি একটি গায়রে এখতিয়ারি ফেসুতরাং এর সাথে আযাবে কবর মাফ হওয়ার বিষয়টি বাহ্যত অযৌক্তিক

গ. যদি বিশেষ কোনো দিনে মৃত্যু বরণ করা ফযিলতপূর্ণ হয়ে থাকে এবং একারণেই আযাবে কবর মাফ হয়ে থাকে তবে সেই দিনটি সোমবার হওয়াই বেশি যুক্তিসংগতকেননা সোমবার এমন একটি দিন, সহিহ হাদিসের আলোকে যে দিন আল্লাহ তাআলা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন, যেদিন জান্নাতের দরজাসমূহ খোলে দেওয়া হয় সহিহ মুসলিমে (2566) হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সোমবার এবং বৃহস্পতিবারে জান্নাতে দরজাসমূহ খোলে দেওয়া হয়, অত:পর মুশরিক ব্যতীত সকল বান্দাকেই ক্ষমা করে দেওয়া হয়তবে ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয় না যার অপর ভাইয়ের সাথে বিদ্বেষ রয়েছে...

সোমবার এমন একটি দিন যেদিন আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুবরণ করেছেনআল্লাহর রাসুলের সাহাবিগণও শুক্রবারে মৃত্যুর কামনা করতেনকিন্তু আমরা একটি হাদিস কিংবা আছারেও একথা পাই নি যে আল্লাহর রাসুলের একজন সাহাবিও শুক্রবারে মৃত্যুর কামনা করেছেন; অথচ ঐসকল সাহাবায়ে সব সময় আল্লাহর ভয়ে কম্পমান থাকতেন এবং জাহান্নাম এবং কবরের শাস্তি থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় সেই চিন্তায় বিভোর থাকতেনযদি এতো সহজে আযাবে কবর থেকে মুক্তি পাওয়া যেত, তাহলে সেই কামনা তারা করতেনকিন্তু কেউ-ই শুক্রবারে মৃত্যুর কামনা করেন নিবরং এর বিপরিত আমরা দেখি আল্লাহর রাসুলের সবচেয়ে প্রিয় সাহাবি হযরত আবু বকর রা. আল্লাহর রাসুলের মৃত্যুর দিন অর্থাৎ সোমবারে মৃত্যুর কামনা করেছেনহয়েছেও তাইদেখুন, সহিহ বুখারি, হাদিস 3/252

ঘ. ইমাম তাহাবি রহ. জুমুআর দিনে মৃত্যু বরণের ফযিলত-সংক্রান্ত হাদিসটিকে হযতর আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হাদিস-
لِلْقَبْرِ ضَغْطَةٌ لَوْ نَجَا مِنْهَا أَحَدٌ، لَنَجَا مِنْهَا سَعْدُ بْنُ مُعَاذٍ
কবরের একটি চাপ রয়েছেকারো পক্ষে যদি সেই চাপ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হতো, তাহলে অবশ্যই সাদ ইবেন মুআয সেই চাঁপ থেকে বাঁচতেন এই হাদিসের বিরোধী মনে করেনআর এই হাদিসের কারণেই তিনি জুমুআর ফযিলত-সংক্রান্ত হাদিসকে সহিহ মনে করেন

যাগতা হচ্ছে : কবরের দুপাশ মৃত ব্যক্তির শরিরের সাথে মিলে যাওয়া সাদ ইবনে মুআযের আযাবের কারণ কি? এসম্পর্কে হাকিম তিরমিযি রহ. বলেন, প্রত্যেকের কিছু-না কিছু গোনাহ তো আছেইতাই কবরের এই যাগতা তথা চাপের মাধ্যমে সেই অপরাধ মাফ হয়এটি হবে অপরাধের প্রতিদান হিসেবেঠিক তেমনিভাবেই হযরত সাদ ইবনে মুআযেরও কবরের চাপ হয়েছে, প্রশ্রাব থেকে বেঁচে থাকার মধ্যে ত্রুটির কারণেদেখুন, শরহুস সুয়ুতী আলান নাসায়ী, বাব, যাম্মাতুল কাবরি ওয়া আযাবুহু

০৭. লক্ষ্য করুনঃ
সাদ ইবনে মুআযের মতো সাহাবি, সুনানে নাসায়ি (2055) এর বর্ণনা অনুযায়ী যার মৃত্যুতে আরশ কেঁপেছে, আসমানের দরজাসমূহ খোলে দেওয়া হয়েছে, সত্তর হাজার ফেরেশতা যার জানাযায় শরিক হয়েছেন; সহিহ ইবনে হিব্বানের বর্ণনা অনুযায়ী (3112) যার সম্পর্কে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- কারো পক্ষে যদি কবরের চাপ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হতো, তাহলে অবশ্যই সাদ ইবেন মুআয তা থেকে বাঁচতেন; এমন সাহাবিও যখন কবরের আযাব থেকে মুক্তি থেকে পান নি; সুতরাং যে লোকটি সারাটি জীবন সুদ, ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, এবং নেশার মধ্যে কাটিয়েছে, যেই লোকটি সারাটি জীবন হারামের উপর কাটিয়েছে; শুধু একটি গায়রে এখতিয়ারি (অনিচ্ছাকৃত) আমল অর্থাৎ শুক্রবারে মৃত্যুর কারণে আযাবে কবর থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে, বিষয়টি কি যৌক্তিক মনে হয়?

ঙ. গোনাহগারের জন্য কবরের আযাবের বিষয়টি কুরআন হাদিসের অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিতসুতরাং এর বিপরিত কারো জন্য যদি আযাবে কবর মাফ হওয়ার দাবী করতে হয় তাহলে এর স্বপক্ষে অকাট্য দলিল থাকতে হবেএসম্পর্কে মোল্লা আলী কারী রহ. এর বক্তব্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যতিনি ফিকহুল আকবারের ব্যাখ্যা গ্রন্থে আবু মুয়িনের রমযান এবং শুক্রবারে কবরের আযাব মাফ সংক্রান্ত আলোচনাটি উল্লেখ করে বলেন : এটা সুস্পষ্ট বিষয় যে আকিদার ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য হল, ইয়াকিনি তথা সুনিশ্চিত দলিলহাদিসে আহাদ (যে হাদিসটি মুতাওয়াতির পর্যায় পৌঁছায়নি) যদি প্রমাণিত হয় তবে তা জন্নি তথা সুনিশ্চিত দলিল নয়তবে হাদিসটি যদি একাধিক সনদের কারনে মুতাওতিরে মানবি (এমন দলিল যা এত সুত্রে বর্ণিত হয়েছে যে যাকে যৌক্তির নিরিখে মিথ্যা বলা অসম্ভব হয়) হয় তখন সেটা কাতয়ী (সুদৃঢ় দলিল) হয়ে যাবে[মিনাহুর রওদিল আযহার ফি শরহে ফিকহুল আকবার-২৯৫-২৯৬]

উপরর্যুক্ত দীর্ঘ অালোচনার ভিত্তিতে বলতে চাই, শুক্রবারে মৃত্যু বরণ করলে কিয়ামত পর্যন্ত কবরের অাযাব মাফ হয়ে যাবে (যেমনটি লোকমুখে প্রসিদ্ধ) একথা বলার কোনো সুযোগ নেই হ্যাঁ, শুক্রবারে মৃত্যু বরণের ফযিলত সংক্রান্ত হাদিসটি যেহেতু বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত তাই যতদূর মনে হয়, হাদিসটি হাসান পর্যায়ে পৌঁছে যায়তাই উক্ত হাদিসের আলোকে এতটুকু বলা যেতে পারে যে, শুক্রবারে মৃত্যু হলে শুধু ঐ দিন কবরে আযাব হবে না। (হয়তো ঐ দিনের বিশেষ ফযিলতের কারণে) কিন্তু এই হাদিস থেকে একথা কোনো ক্রমেই বলা যায় না যে, শুক্রবারে মৃত্যু বরণ করলে কিয়ামত পর্যন্ত আযাব মাফ হয়ে যায়! অথচ মানুষের বিশ্বাস এমনি[ওয়াল্লাহু আলাম]।

একথার কোনোই ভিত্তি নেইমুল্লা আলী কারী (রহঃ) তাঁর মিনাহুর রওদিল আযহার ফি শরহে ফিকহুল আকবার (পৃ. ২৯৫-২৯৬) এ একথাটিই বলেছেনতিনি বলেন : ثبت في الجملة ان من مات يوم الجمعة او ليلة الجمعة يرفع العذاب عنه الا أنه لا يعود اليه الي يوم القيامة فلا اعرف له اصلا  জুমার দিনে বা জুমার রাতে যে মারা যাবে তার থেকে কবরের আজাব উঠিয়ে নেওয়া হবে, এটা মোটামুটি প্রমাণিততবে কিয়ামত পর্যন্ত আর (আজাব) ফিরে আসবে না একথার কোন ভিত্তি আমার জানা নেই

০৮. উপসংহার :
আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আমাদের সকলের কবরের আযাব থেকে মুক্তি দান করুন, আমিন