Friday, 27 April 2018

পহেলা এপ্রিল এক রক্ত ঝরা ট্রাজেডি; স্পেনের ইতিহাস পর্যলোচনাঃ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
পহেলা এপ্রিল, এক রক্ত ঝরা ট্রাজেডি
স্পেনের ইতিহাস পর্যলোচনা
রচনা, সংগ্রহ ও সঞ্চয়নে :  মুফতি আব্দুস সালাম হুসাইন আলী


১. অবতরণিকা
সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী গার্ডস্টোন বলেছিলেন, মুসলমানদেরকে ধ্বংস করার দুইটি প্রক্রিয়া রয়েছে। (১) তাদের কাছ থেকে কুরআনকে কেড়ে নিতে হবে, কিন্তু তা সম্ভব নয়। (২) তারা যেন কুরআনের প্রতি ভালবাসা হারিয়ে ফেলে সেই কাজ করতে হবে কৌশলে, আর তা হবে বেশী কার্যকরীদুঃখজনক হলেও সত্য মুসলমানরা কুরআন থেকে দূরে সরে গেছে১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল গ্রানাডা ট্রাজেডির পাঁচশ বছর উদযাপন উপলক্ষে স্পেনে আড়ম্বরপূর্ণ হোল্ড মেরি ফান্ড বৈঠকে বিশ্বখ্রীষ্টান সম্প্রদায় নতুন করে শপথ নেয় একচ্ছত্র খ্রীষ্টান বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করারতারা সিদ্ধান্ত নেয়, বিশ্বের কোথাও মুসলমানদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিবে না১৪৯২ সালে গ্রানাডা ট্যাজেডি সংঘটিত হয় স্পেনের গ্রানাডায়খ্রীষ্টানগণ তখন ইসলামের বিরুদ্ধে যে ক্রুসেড বা ধর্ম যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলক্রুশের নামে তারা শপথ নিয়ে যুদ্ধে যেত তাই এটাকে বলা হয় ক্রুসেডযার মূলনীতি ছিল পৃথিবীর বুক থেকে ইসলামের নাম নিশানা মুছে ফেলাকিন্তু আজও পৃথিবীতে ইসলামের সুমহান আদর্শ আছে, আদর্শের ধারক বাহকেরা আছে- অতীতেও ছিল, ইনশা-আল্লাহ ভবিষ্যতেও থাকবে

২. এপ্রিল ফুল নাকি ট্রাজেডি দিবসঃ
এপ্রিল ফুল : এপ্রিল ফুল শব্দটা ইংরেজিএর অর্থ এপ্রিলের বোকাএপ্রিল ফুল ইতিহাসের এক হৃদয় বিদারক ঘটনা১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল রাজা ফার্ডিনান্ডের ঘৃণ্যতম প্রতারণার মাধ্যমে স্পেনের রাজধানীতে খ্রীষ্টানদের সম্মিলিত বাহিনী অসংখ্য মুসলমান নারী- পুরুষকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিলবিশ্ব খ্রীষ্টান সম্প্রদায় তাদের রচিত প্রতারণাকে স্মরণ করে রাখতে এই দিনকে এপ্রিলের ফুল হিসেবে সাড়ম্বরে পালন করে থাকেমুসলমানদের লজ্জা দেওয়া ও ইসলামকে হেয় করার জন্য মূলত এই দিবসটি প্রতি বছর পালন করা হয়অনেক অজ্ঞ মুসলিমরাও বিশ্ব বোকা দিবস হিসেবে এই দিনে পরস্পরকে ধোঁকা দিয়ে মজা পায়মুসলিমদের বোকা বানানোর এ দিনটিকে স্মরণীয় করতে আসল ঘটনা বেমালুম চাপা দিয়ে ১৫০০ সালের ১ এপ্রিল থেকে খ্রিস্টান জগতে এ দিনটিকে হাসি, ঠাট্টা এবং মিথ্যা প্রেম দেয়া-নেয়ার দিন হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করে আসছে

৩. ট্রাজেডি দিবসঃ
১ এপ্রিল ঐতিহাসিক গ্রানাডা ট্রাজেডি দিবসপ্রতারক ফার্ডিনেন্ড ও ইসাবেলা স্পেনের মুসলমানদেরকে মসজিদে আশ্রয় নিতে কিংবা মরোক্কো যেতে চাইলে খৃষ্টান জাহাজে উঠতে বলেনকিছু সংখ্যক মুসলমান আগেই মরক্কো সফর করেছিলসরল মনা মুসলমানেরা যখন মসজিদে এবং জাহাজে আশ্রয় গ্রহণ করলো তখন মসজিদের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে এবং জাহাজকে সমুদ্রে ভাসিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হলোপৃথিবীর মানচিত্র থেকে একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের নাম মুছে ফেলে নতুন করে যোগ হয় এক খ্রিষ্টান রাষ্ট্রেরফলে স্পেন হয়ে আছে মুসলিম উম্মাহর শোকের স্মারকপ্রতারণা, হাসি তামাশাচ্ছলে ১লা এপ্রিল উদযাপিত হলেও এটি মূলতঃ মুসলমানদের জন্য এক ট্র্যাজেডির দিন আর সারা বিশ্বের মানুষের মানবতা লংঘনের দিন

৪. পহেলা এপ্রিল ; রক্তাক্ত ইতিহাসঃ
১৫শ শতাব্দীর শেষের দিকেস্পেনে তখন মুসলমানদের শাসনশাসক বাদশাহ-হাসানআবু আব্দুল্লাহ তার ছেলেখ্রীষ্টানগণ বাদশাহর বিরুদ্ধে তার পুত্র আবু আব্দুল্লাহকে দিয়ে বিদ্রোহ করায়বাবাকে গদীচ্যুত করলে তাকে ক্ষমতায় বসানো হবে আশ্বাস পেয়ে পিতার বিরুদ্ধে সে বিদ্রোহ করেবাদশাহ হাসান ক্ষমতা ছেড়ে পলায়ন করেনআবু আব্দুল্লাহ ক্ষমতা গ্রহণ করার পর শুরু হয় স্পেনের মুসলমানদের পতনআবু আব্দুল্লাহর দুর্বল নেতৃত্ব, নৈতিক অবস্থান চিন্তা করে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও রানী ইসাবেলার যৌথ বাহিনী স্পেন আক্রমন করেআবু আব্দুল্লাহ আক্রমণ নিয়ে আলোচনার জন্য দরবারে বিশেষ সভার আয়োজন করেনফার্ডিন্যান্ড আবু আব্দুল্লাহকে আশ্বাস দিলো যে তারা যদি বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে তাদের জীবন দান করা হবেদুর্বল রাজা ও তার সভাসদগণ অতীতের চুক্তিভঙ্গের রেকর্ড ভুলে গিয়ে ফার্ডিন্যান্ডের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত  গ্রহণ করেঅনেক সাহসী সৈনিক আত্মসমর্পনের পরিবর্তে লড়াই করে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করলেও অন্য সকলে আত্মসমর্পনের পথে যায়ফলে সহজেই রাজা পঞ্চম ফার্ডিন্যান্ড গ্রানাডার রাজপথ সহ সমগ্র শহর দখল করে নেয়১৪৯১ সালের ২৪শে নভেম্বর মুসলিম বাহিনীর শেষ আশ্রয়স্থল রাজধানী গ্রানাডার দ্বারপ্রান্তে পৌছে যায় ফার্ডিন্যান্দ বাহিনীফার্ডিনান্দের শক্তির সামনে ছোট ছোট মুসলিম শাসকরা ছিল দুর্বল, বলা যেতে পারে প্রায় শক্তিহীনমুসলিম সেনাপতি মূসা আত্মসমর্পণের চেয়ে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করে প্রাণ বিসর্জন দেয়াকেই অধিক সম্মানজনক মনে করেছিলেনআবু আব্দুল্লাহ খ্রিস্টানদের কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রাণে রক্ষা পারেন বলে যে ধারণা করেছিলেন, শিগগিরই তা মিথ্যায় পর্যবসিত হয়প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ফার্ডিন্যান্দ বাহিনী শহর অবরোধ করে রাখেবিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যান কিছু মুসলিমমুসলিমদের ধর্মচ্যুত করার পায়তারা চলে ফার্ডিন্যান্দের আমলেমুসলিমদের আরবী পড়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়আরবীয় পোশাক পরা ছিল আইন পরিপন্থীবাধ্য করা হয় মুসলিমদের খ্রিস্টান স্কুলে ভর্তি হতেএতে যারা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করত, তাদের জন্য ছিল বিভিন্ন সুযোগ সুবিধামুসলিমদের জন্য বিশেষ পোশাক ছিল, যা দেখে যত্রতত্র তাদের অপদস্ত করা হত

ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার বাহিনী শুরু করে নৃশংস ও বর্বর পন্থায় হত্যাযজ্ঞ, লুন্ঠন ও ধর্ষনঅত্যাচারের মাত্রা সীমা অতিক্রম করলে অনেক মুসলিম বিদ্রোহ করেবিদ্রোহী এসব লোকজনকে হত্যা করার পাশাপাশি এক পর্যায়ে চরম এক নৃশংস কুট কৌশল গ্রহণ করে তারাশক্তিশালী খ্রিষ্টান বাহিনী মুসলমানদের ওপর দলবল তথা অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আক্রমন চালালে মুসলমানগ সকল শক্তি সামর্থ্য দিয়ে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও তাদের দলের লোকদের আক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়মুসলমান এবং খ্রিষ্টানদের সাথে চলা তুমুল সংঘর্ষ বন্ধ হচ্ছেনা দেখে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ঘোষনা কওে : হে মুসলমানগণ যদি তোমরা আমাদের আক্রমণ থেকে বাচঁতে চাও তাহলে আমাদের দুটি প্রস্তাব নির্ধিদ্বায় মেনে নাও। 

প্রস্তাবদ্বয় হচ্ছেঃ (১) যদি তোমরা অস্ত্র ত্যাগ করে স্পেন তথা গ্রানাডার সকল বড় বড় মসজিদে অবস্থান কর তাহলে তোমরা সকলে নিরাপদে থাকবে কেউ তোমাদের উপর আক্রমণ করবেনা। (২) যারা নৌজাহাজে আশ্রয় নিবে তাদেরকে নিরাপদের সাথে অন্য মুসলিম দেশে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হবেতাদের উপরও আমাদের কেউ আক্রমণ চালাবেনা

ইহুদি-খৃষ্ঠানদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য অসহায় মুসলিমগণ আল্লাহর উপর ভরসা করার কথা ভুলে গিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়সরল বিশ্বাসে, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় অসংখ্য মুসলিম আবাল-বৃদ্ধ বনিতার কেউ কেউ গ্রানাডার বড় বড় মসজিদে অস্ত্র ছাড়া আশ্রয় গ্রহণ করেন আবার কেউ কেউ সাগরের তীরে রাখা বড় বড়  লঞ্চে আশ্রয় নেন ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল মোতাবেক ৮৯৭ হিজরীর ১২ রবিউল আউয়াল মসজিদ গুলোতে মুসলমান নর-নারী ও শিশুরা নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কাঁদছে তখন রাতের আঁধারে মসজিদগুলো তালা লাগিয়ে দেয়া হয় এবং ভিতরে পেট্রোল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়আর যারা সাগর পাড়ি দিয়ে মরোক্কসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে চলে যাওয়ার জন্য সমুদ্রের তীরে রাখ লঞ্চে অবস্থান করলেন তখন তাদেরকে লঞ্চ ডুবিয়ে পানিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়সেদিন এক সাথে সাত লক্ষ মুসলমানদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়তিনদিন পর্যন্ত চলে হত্যার উত্সবসে দিন অসহায় নর-নারী ও শিশুদের বুক ফাটা আর্ত চিৎকারে পৃথিবীর বাতাস মুখরিত হয়েছিলমুসলমানদের রক্তে রক্তাক্ত হয়েছিল স্পেনের পুরো জমিনমুসলমানদের রক্তে সাগরের পানি থৈথৈ করছিল

এই গণহত্যার পরও যেসব মুসলমান আন্দালুসিয়ায় রয়ে গিয়েছিলেন, তাদের ফার্ডিনান্ডের ছেলে তৃতীয় ফিলিপ সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় সমুদ্রপথে নির্বাসিত করেনতাদের সংখ্যা ছিল পাঁচলাখেরও বেশিইতিহাস বলে, তাদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক লোকই জীবিত ছিলেনবিপুলসংখ্যক মানুষ সমুদ্রের গহিন অতলে হারিয়ে যান চিরদিনের জন্যএভাবেই মুসলিম আন্দালুসিয়া আধুনিক স্পেনের জন্ম দিয়ে ইতিহাসের দুঃখ হয়ে বেঁচে আছে৭১২ খ্রিস্টাব্দে এক মুসলিম সেনাপতি মূসা যে রাজ্যের পত্তন করেন ৭৮০ বছর পরে ১৪৯২ সালে ঐ নামের আরেক সেনাপতির হাতে একই রাজ্যের পতন ঘটেদাউ দাউ করা আগুন, নারী-পুরুষের আর্ত চিৎকার, নিরপরাধ মুসলমানের পুড়ে অঙ্গার হওয়া, পানিতে ডুবন্ত মানুষের মর্মান্তিকভাবে নিঃশব্দে মৃত্যু আর ফার্ডিন্যান্ড-ইসাবেলার হাসি একাকার হয়ে যায় ইউরোপের আকাশে-বাতাসেহত্যাপর্ব শেষ হওয়ার পরপর-ই লাশপোড়া গন্ধে অভিভূত মুসলমানদের দুশমন খ্রিষ্ঠ্রান রাজা ফার্ডিন্যান্ড আনন্দে আত্মহারা হয়ে তার স্ত্রী ইসাবেলাকে জড়িয়ে ধরে অট্টহাসি দিয়ে চিৎকার করে বলেছিল, হে মুসলমানগণ ! তোমরা কতইনা বোকামুসলমান তোমরা কতই না বোকা জাতিসেদিন যে ইউরোপে মুসলমানরা বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল এক রাতের পার্থক্যে সেই ইউরোপ থেকে ইসলাম উৎখাত হয়ে গিয়েছিল এমনকি এখনও পর্যন্ত সেই ইউরোপে ইসলাম আর বিজয়ী হতে পারেনিপুড়ে যাওয়া সুদৃশ্য মসজিদ গুলোকেও গীর্জা আর জাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়েছে। একদিন যে কর্ডোভা ও গ্রানাডার মসজিদগুলো থেকে পাঁচ ওয়াক্ত আযান ধ্বনিত হত, আন্দোলিত হত স্পেনের মুসলিমদের হৃদয়, আজ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে সব গীর্জার স্তম্ভ

৫. পহেলা এপ্রিল : ইতিহাস সম্পর্কে ভিন্নমতঃ
ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল এবং ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন বা বন্ধুদের উপহার প্রদানের দিন হিসেবে পালন করা শুরু করেছিলফ্রান্সই হলো প্রথম দেশ যে দেশে সরকারীভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেননতুন এই নিয়ম চালু হবার ফলে ১ এপ্রিলে বন্ধু-বান্ধবদের উপহার দেয়া নেয়ার প্রথাটিও বদল হয়ে চলে যায় ১জানুয়ারি বা নিউ ইয়ার উদযাপনের দিনটিতেকিন্তু অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে ১ এপ্রিলেই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকেকিন্তু বিপরীত ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর কালচারটি চালু করে দেয়রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টাইনের (২৮৮-৩৩৭ খ্রি. শাসনামলে হাসি-ঠাট্টা নিয়ে মেতে থাকে এমন একদল বোকা গোপাল ভাঁড়েরা সম্রাটকে কৌতুক করে বলেছিল, তারা রাজার চেয়ে ভাল ভাবে দেশ চালাতে পারবেরাজা তাদের কথায় বেশ পুলকিত হয়ে রাজা গোপাল ভাঁড়দের সর্দার কুগেলকে একদিনের জন্য বাদশাহ বানিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেনআর কুগেল সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যময় আইন জারি করে দিয়েছিল, প্রতিবছরের ১ এপ্রিল এইদিনে সবাই মিলে হাসি-তামাশা করবেসেই থেকেই আজকের এপ্রিল ফুল ডে

৬. পহেলা এপ্রিল, মানবতার মৃত্যুঃ
যখন গোটা ইউরোপের ক্রান্তিকাল চলছিল, মুসলিম রণক্ষেত্রে কমান্ডার প্রধান ছিলেন মূসা বিন নুসায়েরতিনি তখন দক্ষিণ মরেক্কো জয় করে কায়রোয়ানে অবস্থান করছিলতখন তার সাথে কাউন্টার রাজা জুলিয়ান সাক্ষাত করে মাজলুম মানবতাকে রক্ষা করার জন্য আহ্বান করেনমূসা বিন নুসায তার অধিনের সেনাপতি তারেক বিন যিয়াদের নেতৃত্বে ৭,০০০ (সাত হাজার) সৈন্যের একটি মুজাহিদ বাহিনি প্রেরণ করেনশুরু হয় খ্রিস্টানদের সাথে প্রচন্ড লড়াইমর্মস্পর্শী তাকবীর ধ্বনিতে মূখরিত হয় আকাশ বাতাসদীর্ঘ জিহাদের পর খ্রিস্টান বাহিনি পর্যদস্তু হয়একের পর এক স্পেনের সকল শহর করায়ত্ব হয় মুসলমানদেরসলিল সমাধি হয় জালিম শাসকের৭১১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার উমাইয়াা শাসনামলে ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের রাজত্বকালে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদের সৈন্যদল ভূমধ্যসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা পাড়ি দিয়ে রাজা রডরিককে পরাজিত করে স্পেন জয় করেনরাজা রডরিকের শাসনামল ছিল স্পেনের জন্যে এক দুঃস্বপ্নের কালজনগণ ছিল রডরিক ও গথ সম্প্রদায়ের উত্পীড়নের অসহায় শিকারমরণের আগে স্বাধীনতা ভোগের কোনো আশা তাদের ছিল নারডরিক পলায়নের সময় নিমজ্জিত হয়ে মারা যায় গুয়াডেল কুইভারের পানিতেএরপর জনগণের সহযোগিতায় মুসলমানরা একে একে অধিকার করলেন মালাগা, গ্রানাডা, কর্ডোভাঅল্প দিনেই অধিকৃত হলো থিয়োডমির শাসিত সমগ্র আলজিরিয়াসএদিকে আরেক সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর পূর্বদিকের সমুদ্র পথ ধরে ৭১২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে আবিষ্কার করেন সেভিল ও মেরিজতিনিও স্পেনের বিভিন্ন শহর অধিকার করে টলেডোতে গিয়ে মিলিত হলেন তারিকের সঙ্গেতারপর তারা এগিয়ে যান আরাগনের দিকেজয় করেন সারাগোসা, টারাগোনা, বার্সিলোনা এবং পিরেনিজ পর্বতমালা পর্যন্ত গোটা স্পেন

স্পেনে মুসলিম শাসন শুরুর পর সমগ্র ইউরোপে খুব দ্রুত ইসলাম ধর্মের বিকাশ লাভ করতে থাকেতারিক বিন যিয়াদের মৃত্যুর পরও স্পেনের জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি,অর্থনীতি, দর্শন, শিক্ষা-গবেষনা ও সভ্যতার উচ্চ শিখরে ছিলশিক্ষা-সাংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-বাণিজ্যে ইত্যাদির কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনিত হয়েছিল স্পেনমুসলিম শাসনের সময় স্পেনের রাজধানী ছিল গ্রানাডা এবং তার অপর প্রধান শহর ছিল হামরা প্রাসাদ, গ্রান্ড মসজিদ আজো মানুষদের কাছে বিস্ময়কর স্থাপত্যকর্ডোভায় গড়ে ওঠে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রসমূহবিশ্বের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে গড়ে ওঠে কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়সারা ইউরোপ থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা এসে এখানে জড়ো হয় মুসলিম জগতের সহায়তায় গড়ে ওঠা জ্ঞান-বিজ্ঞারে সাথে পরিচিত হওয়ার জন্যআজ যেমন লোকেরা হার্ভার্ড বা অক্সফোর্ডে যায়, তখন তারা যেত কর্ডোভায়এ বাতিঘর থেকে আলোকিত হয়েই আধুনিক ইউরোপের উদ্দীপক ঘটনা শিল্প বিপ¬বের নায়কেরা নিজ নিজ দেশে শিল্প গবেষণা ও উন্নয়নের রেনেসাঁর সূচনা করেনএভাবে মুসলিমদের সুশাসনে স্পেন হয়ে উঠে ইউরোপসহ সারা বিশ্বের সকল মানুষের জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র

মুসলমানদের আয়ত্ত্বাধীন ছিল গ্রানাডা, কর্ডোভা, সেভিল, জাভিতা সহ অসংখ্য অঞ্চল৮ম-১৫শ শতাব্দী, ৭১১ খ্রি. থেকে ১৪৯২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৮০০ বছরের শাসনামলে মুসলমান স্পেনকে পরিণত করেছিল জ্ঞান বিজ্ঞানের এক স্বর্গ রাজ্যেএ দীর্ঘ সময়ে মুসলমানেরা স্পেনের বর্বর চেহারা সম্পূর্ণ সভ্যতার আলোকে উদ্ভাসিত করেনতাদের ন্যায়-ইনসাফ আর ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে মানুষ দলে দলে আশ্রয় নেয় ইসলামের ছায়াতলেস্পেনের গ্রানাডায় বর্তমান যে লাইব্রেরীটি এই লাইব্রেরীর প্রায় ৬ লক্ষেরও অধিক বই সংগ্রহ করেছিল মুসলমানেরামুসলিম স্পেনে সাধারণ জনগণকে বই ধার দেয়ার জন্য লাইব্রেরী ছিলোবলা হয়ে থাকে যে শুধু স্পেনের খলিফার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতেই চলি¬শ হাজার গ্রন্থ ছিলোসে পরিমাণ গ্রন্থ তখন সারা ইউরোপেও ছিলো নাকোন কোন পশ্চিমা পন্ডিতের মতে - ইউরোপের সেরা লাইব্রেরীতে তখন বড়জোর কয়েক ডজন বাইবেল-সংক্রান্ত বই পাওয়া যেতোএটা সম্ভব হয়েছিল কারণ মুসলমানরা কাগজ তৈরির প্রযুক্তি চীনাদের কাছ থেকে লাভ করেছিলোমুসলমানদের চারশ বছর পর অমুসলিম ইউরোপীয়ানরা স্পেনের মুসলমানদের কাছ থেকে কাগজ তৈরি করা শিখেআধুনিক ইউরোপ যে সমস্ত আচার-আচরণ, রীতিনীতি বা সদগুণের জন্য বড়াই করে সেগুলো বহুলাংশে মুসলিম স্পেন থেকে আমদানি হয়েছেকূটনীতি, মুক্ত-বাণিজ্য, খোলা-সীমান্ত, শিক্ষা-গবেষণা, নৃতত্বের পদ্ধতি, আচরণ, ফ্যাশন, বিভিন্ন ধরণের ঔষধ, হাসপাতাল ইত্যাদি সবকিছু কর্ডোভা থেকে এসেছে

মুসলমান শাসন আমলে স্পেনের নাগরিকরা পেয়েছিল একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র, যেখানে নারীরা তাদের অধিকারের জন্য কোন আন্দোলন করতে হতোনা, নিন্মভিত্তরা খাবারের অভাবে ধুকে ধুকে মরতে হতোনা, ধনি-গরীবের কোন তারতম্য ছিলনা, জোড় করে ধর্মান্তরিত করণ নামক শব্দের সাথে কেউ পরিচিত ছিলনা, ন্যায় বিচারের জন্য বিচারকের দ্বারে দ্বারে কোন মানুষকে দৌড়াতে হতোনা, শিশু,নারী,বৃদ্ধদের অধিকার বিষয়ে কাউকে কথা বলতে হতো নাসর্বোপরি বিরাজ করছিল শান্তি এবং সুশাসনস্পেনের সুশাসনের প্রভাব যখন বাইরের রাষ্ট্রগুলোতে পড়তে লাগলো, ইউরোপীয় নাগরিকরা যখন ইসলামকে জানার সুযোগ পেল তখন টনক নড়ে উঠল কট্টরপন্থী খ্রিষ্টানদেরমুসলমানদের ধ্বংস করার পকিল্পনার অংশ হিসাবে স্পেন থেকে মুসলমানদেরকে চিরউৎখাত করার লক্ষ্যে হিংসুক খৃষ্টান গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে মরিয়া হয়ে উঠে

ইসলামকে ইউরোপ থেকে চিরতরে নির্বাসনে দেওয়ার জন্য নানা চক্রান্ত শুরু হয়খ্রিষ্টান পাদ্রীরা রাজা ফার্ডিনেন্ডকে পরামর্শ দেয় যে, মুসলমানদের ভিতর থেকে এমন কিছু মানুষকে খুঁজে বের করতে হবে যারা পার্থিব বিষয়ে খুবই চিন্তাশীলরাজা ফার্ডিনেন্ড তাই করল, সারা স্পেন থেকে কিছু মুসলিমকে খুঁজে বের করল যেখানে অনেক আলেমও ছিলরাজা এই সকল মুসলমানদের কিনে নিল এবং এই সংখ্যাটাকে আরো ভারী করার প্রয়াস অব্যাহত লাগলযে সকল মুসলমানদেরকে তারা কিনে নিয়েছে তাদেরকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয়তাদের কাজ ছিল মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার জন্য কিছু ধর্মীয় কাজ সৃষ্টি করা এবং বাদশাহ আবুল হাসানের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলাসেই সাথে তারা বিচক্ষণ মুসলিম আলেমদের অপহরণ করে হত্যা করতফার্ডিনেন্ডের পাতা ফাঁদে না বুঝেই পা ফেলল স্বয়ং বাদশাহ আবুল হাসানের পুত্র আবদুল¬াহ এবং ছোট রাণী তথা আবদুল¬াহর মাপর্তুগীজ রানী ইসাবেলা ও তার স্বামী রাজা ফার্ডিন্যান্ড মুসলিমদের হত্যা করার নিমিত্তে চক্রান্ত করলে অন্যান্য খৃষ্টান রাজারাও তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় হাত সম্প্রসারণ করেফার্ডিনেন্ডের গুপ্তচরেরা বাদশার পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করলএভাবে দেশ ব্যাপী প্রায় দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে চলা ষড়যন্ত্রে স্পেনের মুসলমাদের ঈমান বিনষ্ট হয়ে গেলস্পেনের সর্বশেষ নেতৃত্ব বাদশাহর ভাতিজা মুসা বিন আবি গাসসানকে গুম করে হত্যা করা হয়কিছু মধ্যম সারির আলেমরা যাদের ঈমান মজবুত ছিল তারা জণগনকে বুঝাতে চাইলেও ফার্ডিনেন্ডের ষড়যন্ত্র এত বেশী বিস্তৃত ছিলো যে সকলের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়

৭. স্পেনের ইতিহাস, একটি পর্যালোচনাঃ
একদিকে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদের স্পেন বিজয় করেছিলেনআরেকদিকে মুসলিম সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর পিরিনিজ পর্বতে দাঁড়িয়ে সমগ্র ইউরোপ জয়ের স্বপ্ন আঁকছিলেনআর স্পেন থেকে বিতাড়িত গথ সম্প্রদায়ের নেতারা পিরিনিজের ওপারে স্পেন পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা আঁটছিলেনতাদের সঙ্গে যুক্ত হন ইউরোপের খ্রিস্টান নেতারামুসলমানরা পিরেনিজ অতিক্রম করে ফ্রান্সের অনেক এলাকা জয় করেনকিন্তু অ্যাকুইটেনের রাজধানী টুলুর যুদ্ধে ভয়াবহতার সম্মুখীন হয়ে তারা বুঝতে পারলেন যে, অসির পরিবর্তে মসির যুদ্ধের মাধ্যমেই ইউরোপ জয় করা সহজতরএরপর মুসলমানদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও বিস্তারেতারা সেই যুদ্ধে সফল হন এবং প্রণিধানযোগ্য ইতিহাস তাদের বিজয়কে স্বীকৃতি দিয়েছেঅপরদিকে খ্রিস্টীয় শক্তি পুরনো পথ ধরেই হাঁটতে থাকে৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে মাসারার যুদ্ধের পর থেকে স্পেনের ওপর তাদের নানামুখী আগ্রাসন ও সন্ত্রাস চলতে থাকেফলে স্পেনের নিরাপত্তা হয়ে পড়ে হুমকির সম্মুখীনকিন্তু স্পেনের ভেতরে পচন ধরার প্রাথমিক সূত্রগুলো তৈরি হচ্ছিল ধীরে ধীরেসমাজের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক বোধ ও সচেতনতা ধীরে ধীরে হারাতে শুরু করছিলরাজনৈতিক নেতৃবর্গ রাষ্ট্রের শত্রু-মিত্র বিভাজনের কান্ডজ্ঞান থেকে সরে আসছিল দূরেএদিকে ইউরোপের আকাশে ক্রুসেডের গর্জন শোনা যাচ্ছেস্পেনের বিরুদ্ধে যে আক্রোশ কাজ করছিল সেটাই তিনশবছরে পরিপুষ্ট হয়ে ১০৯৭ সালে গোটা ইসলামী দুনিয়ার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে ভয়াবহ তুফানের মতো১০৯৮-এর জুনে এন্টিয়ক দখলের সাফল্যজনক কিন্তু নৃশংস ঘটনার মধ্য দিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠা এ তুফান ১২৫০ সালে অষ্টম ক্রুসেডের পরিসমাপ্তির পর স্পেনের দিকে মোড় ঘোরায়স্পেনে তখন সামাজিক সংহতি ভঙ্গুরখ্রিস্টান গোয়েন্দারা ইসলাম ধর্ম শিখে আলেম লেবাসে বিভিন্ন মসজিদে ইমামতিও করছেতাদের কাজ ছিলো স্পেনের সমাজ জীবনকে অস্থিতিশীল করে তোলা

১৪৬৯ সালে ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা স্পেনে মুসলিম সভ্যতার অস্তিত্বকে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য পরস্পর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন১৪৮৩ সালে ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী পাঠান মালাগা প্রদেশেযাদের প্রতি হুকুম ছিল শস্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে দেয়া, জলপাই ও দ্রাক্ষা গাছ কেটে ফেলা, সমৃদ্ধিশালী গ্রাম ধ্বংস করা, গবাদিপশু তুলে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদিসেই সময় মৃত্যু ঘটে স্পেনের শাসক আবুল হাসান আলীরশাসক হন আজজাগালএক পর্যায়ে প্রাণরক্ষা ও নিরাপত্তার অঙ্গীকারের ওপর নগরীর লোকেরা আত্মসমর্পণ করলেও নগরী জয় করেই ফার্ডিনান্ড চালান গণহত্যাদাস বানিয়ে ফেলেন জীবিত অধিবাসীদেরএরপর ফার্ডিনান্ড নতুন কোনো এলাকা বিজিত হলে বোয়াবদিলকে এর শাসক বানাবে বলে অঙ্গীকার করে৪ডিসেম্বর ১৪৮৯আক্রান্ত হয় বেজার নগরীআজজাগাল দৃঢ়ভাবে শত্রুদের প্রতিহত করলেনকিন্তু ফার্ডিনান্ডের কৌশলে খাদ্যাভাব ঘটে শহরেফলে শহরের অধিবাসী নিরাপত্তা ও প্রাণরক্ষার শর্তে আত্মসমর্পণ করেকিন্তু তাদের ওপর চলে নৃশংস নির্মমতাআজজাগাল রুখে দাঁড়ালে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং পরে করা হয় আফ্রিকায় নির্বাসিত

ডিসেম্বর ১৪৯১-এ গ্রানাডার আত্মসর্মপণের র্শত নির্ধারিত হলোবলা হলো : ছোট-বড় সব মুসলমানের জীবনের সর্ম্পূণ নিরাপত্তা দেয়া হবেতাদরে মুক্তভাবে র্ধম-র্কম করতে দেয়াা হবেতাদের মসজিদ, র্ধমীয় প্রতিষ্ঠান অক্ষত থাকবেতাদের আদব-কায়াদা, আচার-ব্যবহার, রাজনীতি, ভাষা ও পোশাক-পরিচ্ছদ অব্যাহত থাকবেতাদের নিজেদের আইনকানুন অনুযায়ী তাদরে প্রশাসকরা তাদের শাসন করবেন...আত্মসর্মপণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেন মুসা বিন আকিলতিনি বললেন, গ্রানাডাবাসী! এটা একটা প্রতারণাআমাদের অঙ্গারে পরিণত করার জ্বালানি কাঠ হচ্ছে এ অঙ্গীকারসুতরাং প্রতিরোধ! প্রতিরোধ!! কিন্তু গ্রানাডার দিন শেষ হয়ে আসছিল১৪৯২ সালে গ্রানাডাবাসী আত্মসর্মপণ করল

৮. স্পেনের ইতিহাস, মুসলিম উম্মাহর অনুপ্রেরণার অসাধারণ উৎসঃ
স্পেন জয়ের ঘটনাটি ঘটে ৭১১ খ্রিস্টাব্দেমুসলিম সেনাপতি তারেক বিন যিয়াদ ভূমধ্যসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা পাড়ি দিয়ে ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে রাজা রড্রিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেনরাজা রডরিকের শাসনামল ছিল স্পেনের জন্যে এক দুঃস্বপ্নের কালজনগণ ছিল রডরিক ও গথ সম্প্রদায়ের উত্পীড়নে অসহায় শিকারমরণের আগে স্বাধীনতা ভোগের কোনো আশা তাদের ছিল নাতারেকের অভিযানের ফলে মুক্তির পথ বেরুবে, এই ছিল সাধারণ মানুষের ভাবনাতারা তারেক বিন যিয়াদকে আর্শীবাদ হিসেবে গ্রহণ করল ৩০ এপ্রিল, ৭১১ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবাররডরিক পালায়নের সময় নিমজ্জিত হয়ে মারা যায় গুয়াডেল কুইভারের পানিতেএরপর জনগণের সহযোগিতায় মুসলমানরা একে একে অধিকার করলেন মালাগা, গ্রানাডা, র্কডোভাঅল্পদিনেই অধিকৃত হলো থিয়োাডমির শাসিত সমগ্র আলজিরিয়াসএদিকে আরেক সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর র্পূবদিকের সমুদ্র পথ ধরে ৭১২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে আবিষ্কার করেন সেভিল ও মেরিজতিনিও স্পেনের বিভিন্ন শহর অধিকার করে টলেডোতে গিয়ে মিলিত হলেন তারিকের সঙ্গেতারপর তারা এগিয়ে যান আরাগনের দিকেজয় করেন সারাগোসা, টারাগোনা, র্বাসেলোনা এবং পিরিনেজ র্পবতমালা র্পযন্ত গোটা স্পেন

তারেক বিন যিয়াদ ছিল মুসা বিন নুসাইর এর গোলামতারেক বিন যিয়াদ বর্বরদের সচেয়ে সম্ভ্রান্ত ও উত্তম বংশ ডেন্ডালে জন্মগ্রহণ করেনমুসা বিন নুসাইর তারিক বিন যিয়াদের বিচক্ষণতা, যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে পারদর্শীতা, সততা ,আরবী ভাষায় বাগ্মীতা অন্যান্য গুণাবলী দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলতারিক বিন যিয়াদের ইসলাম গ্রহণের পর তার এই নাম রেখেছিলেন মুসা বিন নুসাইরইতিনি তারিকের যোগ্যতা দেখে তাকে নায়েব সালার পদে আসীন করলেনঅবশেষে এই গোলাম পেয়ে গেলেন স্পেন অভিজানে সেনাপতির দায়িত্বতারেককে যে ফৌজ দেয়া হয়েছিল তার সংখ্যা ছিল সাত হাজারএর মাঝে কয়েকশ সোয়ারীও ছিলতাদেরকে টাংগের থেকে স্পেনে পৌঁছানোর জন্য বড় চারটি জাহাজ ব্যবহার করা হয়েছিলযখন জাহাজ নোঙ্গর তুলে নিল তখন তীরে সমবেত হাজার হাজার নর-নারী ও শিশু-কিশোর দু'হাত উপরে তুলে তাদের জন্য প্রাণ খুলে দুআ করছিলজাহাজের পালে হাওয়া লাগার পর তা দূরে চলে যেতে লাগলরমণীদের নয়নযুগলে অশ্রুর বান বয়ে গেলএ সাত হাজার ফৌজের অধিকাংশের ভাগ্যেই ছিল স্পেনে দাফনতারা আল¬াহর পয়গাম সমুদ্রের অপর পারে পৌঁছানোর জন্যে চিরতরে বিদায় হয়ে যাচ্ছিলসে ঐতিহাসিক তারিখটি ছিল,৭১১ খৃষ্টাব্দের ৯ই জুলাইজাহাজে আরোহণ করার কিছুক্ষণ পর তারিক বিন যিয়াদ ঘুমিয়ে পড়েন এবং গভীর রাতে স্বপ্নে তিনি রাসুল (সা) এর জিয়ারত লাভ করেনরাসুল (সা) আশ্বস্ত করে বলেন, “হে যিয়াদ! তুমি অগ্রসর হওচিন্তিত হইওনা, তুমিই কামিয়াবী লাভ করবেএই স্বপ্ন দেখে হযরত তারিক বিন যিয়াদ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে অগ্রসর হনতিনি যখন ঘুম থেকে জেগে মুজাহিদদেরকে এই সুসংবাদ দিলেন তখন মুজাহিদদের সাহস ও জজবা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়সমস্ত সৈন্য নিয়ে উপকূলের যেখানে জাহাজ ভিড়েছিল তার নাম ছিল কিপলী, পরবর্তিতে যা জাবালুত তারিক বা জিব্রাল্টার নামে প্রসিদ্ধ হয়

সম্পূর্ণ সেনাবাহিনী স্পেন উপকূলে নামার পর তারিক বিন যিয়াদ জাহাজের মাল্লাদের নির্দেশ দিলেন, "সব কটি জাহাজে আগুন লাগিয়ে দাও।" তার নির্দেশের পর সবকটি জাহাজে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হলতার এ নির্দেশ অনেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না তখন তারিক বিন যিয়াদ স্বহস্তে তরবারী উত্তোলন করে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেনসে ভাষণের সারমর্ম ছিল, 'হে বাহাদুর যুবক ভাইযয়েরা! এখন পিছু হটবার ও পলায়ন করার কোন সুযোগ নেইতোমাদের সম্মুখে দুশমন আর পশ্চাতে সমুদ্রনা পিছনে পলায়ন করতে পারবে না সামনেএখন তোমাদের সামনে বিজয়লাভ বা শাহাদতবরণ ছাড়া আর তৃতীয় কোন পথ অবশিষ্ট নেইআর সব দেশই আমাদের দেশ, কারণ এ সবই আমাদের আল্লাহর দেশ

তারেক বিন যিয়াদ তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে 'জাবালে ফাতাহ' বা জাবালে তারেক (জিব্রাল্টার) এর উপকূলে অবতরণ করেছিলেনসেখান থেকে সবুজ উপদ্বীপ পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় তিনি উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিরোধের সম্মুখীন না হয়ে জয় করেনকিন্তু তারপর রডারিক তার বিখ্যাত সেনাপতি থিওডমীরকে বিশাল এক সেনাবাহিনীসহ তারেকের মোকাবেলা করার জন্য প্রেরণ করেমুসলিম সেনাবাহিনীর সাথে থিওডমীরের পরপর অনেকগুলো লড়াই হয়আর প্রতিটি লড়াইয়ে সে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়এমনকি একাধারে পরাজয় বরণ করতে করতে সে সাহস হারায়তখন সে রডারিককে পত্রযোগে জানায় যে, " এমন এক জাতির আমি মুখোমুখী হয়েছি, যারা বড় বিস্ময়কর এক জাতিতারা আসমান থেকে নেমে এসেছে নাকি জমিন ফুঁড়ে উঠে এসেছে তা' আল্লাহই ভাল জানেনএখন আপনি নিজে অকুতোভয় সেনাদের সমন্বয়ে গঠিত বিশাল এক সেনাবাহিনী নিয়ে তাদেরকে প্রতিরোধ না করলে তাদের সাথে মোকাবেলা করা কোনভাবেই সম্ভবপর নয়।"

রডারিক তার সেনাপতির পত্র পেয়ে প্রায় একলাখ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী তৈরি করেন তারেকের সাথে মোকাবেলা করার জন্যএদিকে তারিক মুসা বিন নুসাইয়ের কাছে আরো সৈন্য চেয়ে পাঠিয়েছিলেনতার আবেদনের প্রেক্ষিতে মুসা বিন নুসাইর আরো পাঁচ হাজার সৈন্য প্রেরণ করেনফলে তারিকের মোট সৈন্য সংখ্যা বারো হাজারে উপনীত হয়লাক্কা প্রান্তরে উভয় বাহিনী লড়াইরের জন্য মুখোমুখী হলে তারেক বিন যিয়াদ এক ঐতিহাসিক ভাষণ দান করেন, যে ভাষণের প্রটিত শব্দ থেকে তারেক বিন যিয়াদের অবিচল সংকল্পউচ্চ সাহসিকতা এবং আত্মনিবেদনের সুতীব্র আবেগ প্রকাশ পেয়েছিলতারেকের মুজাহিদ সঙ্গীরা পূর্ব থেকেই জিহাদীন চেতনা ও শাহাদাতের বাসনায় উন্মত্ত ছিলতারেকের জ্বালাময়ী এ ভাষণ তাদের অন্তরে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেতারা দেহ-মনের কথা বিস্মৃত হয়ে লড়াই করেনএকাধারে আটদিন পর্যন্ত এ লড়াই অব্যাহত থাকেপরিশেষে মুসলমানগণ আল্লাহর সাহায্য লাভ করেন এবং বিজয় তাদের পদচুম্বন করেরডারিকের বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজয়বরণ করে পালিয়ে যায়রডারিক নিজেও ঐতিহাসিক এ লড়াইয়ে নিহত হয়কোন কোন বর্ণনায় জানা যায় যে, তারেক বিন যিয়াদ নিজেই তাকে হত্যা করেন, আর কোন কোন বর্ণনামতে তার শুন্য ঘোড়া সাগরতীরে পাওয়া যায়, যে কারণে অনুমান করা হয় যে, সে সাগরে ডুবে মারা গেছে

এ বিজয় মুসলমানদের জন্য সমগ্র ইউরোপের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়এ রপর মুসলমানগণ স্পেনের সমস্ত শহর পদানত করতে করতে সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকেতারা স্পেনের তৎকালীন রাজধানী টলেডো-কেও জয় করেনতারপরেও তাদের অগ্রাভিজান অব্যাহত থাকে এমনকি তারা ফ্রান্সের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পিরনীজ পর্বতমালার পাদদেশে পৌঁছে যায়ঐতিহাসিক গিবন লিখেছেন, "মুসা ইবনে নুসাইর একবার ফ্রান্সের এক পাহাড়ের চূড়ায় চড়ে পুরো ফ্রান্সকে পর্যবেক্ষন করে বললেন, তিনি আরব সৈন্যদের তার বাহিনীকে শামিল করে ইউরোপকে বিজয় করে কন্সট্যান্টিপোল পৌঁছবেন এবং সেখান হতে নিজ দেশ সিরিয়াতে প্রবেশ করবেন।" কিন্তু খলিফার নির্দেশে তাদের অগ্রাভিজান থামিয়ে দিতে হয়তা না হলে হয়ত আজ ইউরোপের ইতিহাস অন্যভাবে লিখতে হততাইতো ঐতিহাসিক গীবন লিখেছেন, "যদি ঐ মুসলমান জেনারেল সম্মুখে অগ্রসর হবার সুযোগ পেতেনতাহলে ইউরোপের স্কুলে ইঞ্জিলের পরিবর্তে কুরআন পড়ানো হতো এবং আল্লাহর একত্ববাদ ও মুহাম্মাদ (সা)-এর রিসালাতের সবক দেওয়া হতোআর আজকে রোমে পোপের পরিবর্তে শায়খুল ইসলামের হুকুম কার্যকর হতো।"

স্পেনে গিয়ে মুসলমানরা কর্ডোভায় একটি মসজিদ র্নিমান করেমসজিদটি দেখে সে সময় মুসলিমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতা-সংস্কৃতিতে কতটা উন্নত ছিল তা জানা যায়মসজিদটির আয়তন ৩৫১৫০ বর্গগজপ্রায় ৩৫০০ পিলার বিশিষ্ট এ মসজিদে সূর্যের তাপ প্রবেশের জন্য রয়েছে ৩৬৫ টি স্তম্ভ¢ যাতে প্রতিদিন মসজিদ আলোকিত হয়সারা স্পেনে তৈরি হয় হাজারো মসজিদশুধুমাত্র গ্রানাডা শহরেই ছিল ১৭০০ মসজিদকিন্তু আফসোস একসময় যেই মসজিদ আল¬াহু আকবর ধ্বনিতে মুখোরিত ছিলো সেই মসজিদেই আজ খ্রিষ্টানদের ঘন্টা বাজে সেখানে ওজু করতে দেয়া হয় নানামায তো দুরে থাক খালি পায়ে ঢোকা যায় না, জুতা পরে ঢোকতে হয়মুসলিমরাই সর্বপ্রথম খ্রিষ্টানদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষা দেয়, সেখানে তৈরি করে আল-মাদরাসা নামক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে খ্রিষ্টানরা শিক্ষা গ্রহণ করে যার বর্তমান নাম লা-মাদরাযা

৯. পহেলা এপ্রিল, শিক্ষনীয় দিকঃ
অন্যকে বোকা বানানো বিবেক বর্জিত: পহেলা এপ্রিল মুসলিম উম্মাহর শোকের দিনমানুষকে বোকা বানিয়ে মানুষের আনন্দ নয়: প্রতারণা, হাসি তামাশাচ্ছলে ১লা এপ্রিল উদযাপিত হলেও এটি মূলত: মুসলমানদের জন্য এক ট্র্যাজেডির দিনএটা শুধুই মুসলমানদের ট্রাজেডির দিন নয়এটা সারা বিশ্বের মানুষের মানবতা লংঘনের দিনতাই বিবেকবান মানুষ কখনো এই দিনে মানুষকে বোকা বানিয়ে মজা করতে পারেন নাঅসৎ ও অযোগ্য নেতৃত্ব জাতির অভিশাপ: মুসলিম শাসকদের অদুরদর্শী নেতৃত্ব, জনগনের অসচেতনতা ও অনৈক্যের ফলে বিশ্বের নানা প্রান্তে মুসলিম জাতিকে দিতে হয়েছে বড় বড় মাশুলএই মাশুলেরই একটি হচ্ছে গ্রানাডা ট্র্যাজেডি

শত্রুকে বিশ্বাস করতে নেই: মুসলমানরা সেদিন প্রতিবাদ না করে ফার্ডিন্যান্ডের কথা শুনে সরল বিশ্বাসে মসজিদে গিয়ে বসে থাকা এবং নির্মমভাবে খ্রিষ্টানদের হাতে নিহত ও পরাজিত হওয়ার কারণে খ্রিষ্টানরা পরবর্তীতে মুসলমানদের বোকা বলে আখ্যায়িত করতোএই ঘটনা এপ্রিল মাসের ১ তারিখ হওয়ার কারণে এবং মুসলমানদের লজ্জা দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী ১ এপ্রিল এপ্রিলের বোকা দিবস পালন করা হয়

জ্ঞান গবেষণায় শ্রেষ্টত্ব ছাড়া ক্ষমতা টিকেনা ; ইউরোপে মুসলমানরা প্রবেশ করেছিলেন স্পেনের দরজা দিয়েঐতিহাসিক রবার্ট ব্রিফল্ট দি ম্যাকিং অব হিউম্যানিটি গ্রন্থে মুসলমানদের এ প্রবেশকে অন্ধকার কক্ষের দরজা দিয়ে সূর্যের আলোর প্রবেশ বলে অভিহিত করেছেনকেন এই তুলনা? রবার্ট ব্রিফল্টের জবাব হলো যেহেতু স্পেনে মুসলমানদের আগমনের ফলে শুধু স্পেন নয়, বরং গোটা ইউরোপ মুক্তির পথ পেয়েছিল হাজার বছরের অন্ধকার থেকেসেই সময় জীবন্ত অবস্থায় মানুষ অমানুষিকতার অধীন ছিল, মৃত্যুর পর অনন্তড় নরকবাসের জন্য নির্ধারিত ছিল

শাসকেদের দুনিয়াদার ও বিলাসী হতে নেই: যে জাতি তরবারীর ছায়াতলে এ ভূমিতে তাকবীর ধ্বনীর ফোয়ারা উৎসারিত করেছিল, যে জাতি দীর্ঘ আটশ' বছর পর্যন্ত বিশ্ববাসীর নিকট থেকে নিজেদের দোর্দন্ডপ্রতাপের স্বীকৃতি আদায় করেছিল, তারা যখন বিলাসিতা, বাদ্য ও সঙ্গীতের তানে বিভোর হয়ে গাফলতের চিরনিদ্রায় শায়িত হল তখন এ স্বর্গভূমি তাদের হাতছাড়া হল আর সেখানে তাদের অস্তিত্বের কোন চিহ্ন সেখানে অক্ষত রইল না, যা হল অন্য আরেকটি ইতিহাস

১০. পহেলা এপ্রিল: আমাদের করণীয়ঃ
মানবতার অপমানে প্রতিাবাদী হওয়া : এপ্রিল ফুলের পেছনের গল্প হচ্ছে গ্রানাডা ট্রাজেডি যা এদিবসের পিছনের হৃদয়বিদারক ঘটনাএপ্রিল ফুল কোন মুসলমানের জন্যে আনন্দের দিন নয়বন্ধুদেরকে বোকা বানিয়ে মজা করার দিবস এটা নাকোন মুসলমান কেন মানবিকতা ও মনুষত্ববোধ সম্পন্ন কোন মানুষ পিছনের ঘটনা জানলে কখনোই আর এপ্রিল ফুল পালন করবে নাযে মতবাদেই বিশ্বাসী হউক না কেন মানুষ হিসেবে নিশ্চয়ই মানবতার অপমান কেউ মেনে নিতে পারবে না

১১. মানুষকে বোকা বানিয়ে আনন্দ নয় এবং ধোঁকা দেয়া নয়ঃ
পহেলা এপ্রিল ভোর থেকেই শুরু হয়ে যায় এপ্রিল ফুলের আমলসে দিন আমাদের দেশের স্কুল- কলেজ -ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীসহ অনেক তরুণ-তরুণীরা একে অন্যকে বিভিন্ন কলা-কৌশলে ধোঁকা দিয়ে বোকা সাজিয়ে হাসি তামাশা তথা আনন্দ উল¬াসে মেতে ওঠেসত্য কখা হচ্ছে যারা এ দিবস পালন করেন তাঁদের অনেকেই জানে না এপ্রিল ফুলের সঠিক ইতিহাসজানলে এপ্রিল ফুল পালন করতো না, আত্মা কেঁপে ওঠতো, ইহুদি-খ্রিষ্টান তথা পশ্চিমাদের প্রতি তাঁদের ঘৃণা জন্মাতো এবং সেই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আজও তাঁরা প্রয়াস চালাতো হযরত রাসুল সা: হাদিসে ইরশাদ করেন, “যে ব্যাক্তি কোন মুসলমানকে ধোঁকা দিবে সে আমার দল থেকে বিচ্ছিন্ন হবেঅর্থাৎ সে আমার দলের অন্তর্ভূক্ত না। -তিরমিযী

১২. অপসংস্কৃতিকে বর্জন করাঃ
এপ্রিল ফুল দিবসটির উৎপত্তি পাশ্চাত্যে হলেও এর বিস্তৃত এখন দেশে দেশেপশ্চিমা সমাজে এ সংস্কৃতির চর্চা ব্যাপকঅত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এদিনে নির্মম কৌতুকও করা হয়যেমন, কারো পিতামাতা বা স্ত্রীর ও বন্ধুর মৃত্যুর সংবাদ পরিবেশন করে কৌতুক করা হয়সাদা কাগজ খামে ভর্তি করে বা স্বাক্ষর ছাড়া শূন্য চেক বন্ধুর কাছে পাঠিয়েও কৌতুক করা হয়বিধর্মীদের অনুকরণ না করা: ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ সমগ্র বিশ্বে বোকা বানানোর এই দিবস পালিত হয়এ দিবস উপলক্ষে এপ্রিল ফুলস্ ডে সম্বন্ধীয় বিশেষ কার্ড ও নিমন্ত্রণপত্র বের হয় পশ্চিমা দেশগুলোতেখরচ করা হয় হাজার হাজার ডলারপশ্চিমা দেশের মতো আমাদের দেশেও এপ্রিল ফুলের প্রচলন আছেশহর কিংবা গ্রামে সব জায়গাতেই এ দিনে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে অনেক ঠাট্টা মসকরা এবং হৃদয়গ্রাহী রসিকতা চলেএপ্রিল ফুল বাংলাদেশের বা প্রাচ্যের কোন উৎসব বা আনন্দের দিন নয়বাংলাদেশসহ এ মহাদেশে দিনটির প্রচলন হয় ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পরিণামেব্রিটিশরা আমাদের প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছিলঅন্য অনেক কিছুর মতো ইংরেজরা এ দেশে তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির নানা বিষয় চালু করেএর একটি দৃষ্টান্ত, এপ্রিলের ১ তারিখে এপ্রিল ফুল ডে চালু করা

১৩. সত্যিকার ইতিহাস জানা ও সচেতনতাঃ
ইতিহাস সাক্ষী দেয়, যখন খ্রিস্টানদের সম্মিলিত বাহিনী মুসলমানদের নির্বিচারে হতাযজ্ঞ করছিল, তখনও মুসলমান রাজা-বাদশাদের হেরেমগুলো মদ আর নর্তকি দ্বারা ভরপুর ছিল, আর তারা এসগুলো নিয়ে মত্ত ছিলনেতৃত্বহীন নিরীহ অপ্রস্তুত মুসলমানেরা বুকভরা আশায় নিয়ে রাজধানী গ্রানাডায় গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেকিন্তু তাদের হতাশা ছাড়া আর কিছুই ছিল নাকারণ, যারা তাদের নেতৃত্ব দিবে, তাদের ঈমান আমল আগেই বিলীন হয়ে গেছেমুসলমান রাজা-বাদশারা ছিল বহুদলে বিভক্তকিছু নামধারী মুসলিম নেতারা নিজেদের ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার জন্য এই পাশবিক কাজে মদদ জুগিয়ে ছিল

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া: আজ হতে প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর আগে সেই যে স্পেনের রাজধানীতে এক ট্রাজেডির মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় মুসলিমদের পতন হয়, তা কেবল একটি ঘটনামাত্র নয়, বরং হাজার ঘটনার জন্মদাতাএরই পথ ধরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকে বিদ্বেষী খ্রিস্টান-ইহুদীগণপরপর তিনটি ক্রুসেডের পর মুসলিম দুনিয়া মূলতঃ অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে ইউরোপের ঔপনিবেশিক শক্তিতে পরিণত হয়ফলে পরাজিত মুসলিমগণ বিজয়ীদের সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক গোলামে পরিণত হয়

১৫. উপসংহারঃ
স্পেন হয়ে আছে মুসলিম উম্মাহর শোকের স্মারকপহেলা এপ্রিল আসে সেই শোকের মাতম বুকে নিয়েশোকের এই হৃদয়ভাঙা প্রেক্ষাপটে মুসলিম জাহানের জনপদে জনপদে আন্দালুসিয়ার নির্মমতার কালো মেঘ আবারও ছায়া ফেলছেএশিয়া-আফ্রিকাসহ সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে মুসলিম নামধারী একশ্রেণীর বিশ্বাসঘাতক এবং ক্রুসেডীয় উন্মত্ততার প্রতিভূ ফার্ডিনান্ডদের যোগসাজশআন্দালুসিয়ার মুসলমানদের করুণ পরিণতি যেন ধেয়ে আসতে চায় এই মানচিত্রের আকাশেওএ জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সমাজ-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিপর্যয়ের প্রলয়বাদ্য চলছেজাবাল আল তারেকঅর্থাৎ তারেকের পাহাড় সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে ৭১১ সালে উমাইয়া শাসনামলে মুসলমানরা তারেক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে ভূ-মধ্যসাগরের উত্তর তীরস্থ স্পেনকে রক্ষা করেছিল রাজা রডরিকের দু:শাসন থেকেআজ মুসলিম বিদ্বেষী ইউরোপীয়রা তার নাম বদলে রেখেছে জিব্রাল্টানাম বদলালে কি ইতিহাস বদলে যাবে? মুসলমানদেরকে যেভাবে ধোঁকা দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল ঠিক তেমনি আজো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হচ্ছেতাই আসুন পহেলা এপ্রিলকে অন্যকে বোঁকা বানানোর আনন্দদায়ক দিবস হিসাবে নয় বরং ঘৃণ্য এবং কালো দিবস হিসাবে পালন করি

১৬. তথ্যসূত্রঃ
  আল-মাউসুআতুল ইসলামী / الموسوعة الإسلامي       
  সংক্ষীপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ  
  মাকতাবাতুশ শামেলা / المكتبة الشاملة

No comments:

Post a Comment