Sunday, 24 February 2019

شروط لا إله إلا الله Condition’s of the La-Ila-ha Illallah লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্-এর শর্তসমূহঃ

شروط لا إله إلا الله
Condition’s of the La-Ila-ha Illallah

লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্-এর শর্তসমূহঃ

রচনা, সংগ্রহ ও সঞ্চয়নে : আব্দুস সালাম হুসাইন আলী

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ  (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) -এর অর্থ, রুকন ও শর্তসমূহঃ
তাওহীদের মূলভিত্তি হলো আল্লাহর পরিচয় লাভ করাঅতঃপর মুখে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ -এর স্বীকৃতি দেয়া, অন্তরে তা বিশ্বাস করা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে তা বাস্তবায়ন ও একমাত্র তাঁরই ঈবাদত করা

০১.  لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ  (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) -এর অর্থ হলো : আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেইঅর্থাৎ: আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকলের ঈবাদতের যোগ্যতাকে অস্বীকার করা এবং যাবতীয় ঈবাদতকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা

০২.  لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ  (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) -এর রুকন হলো : দুইটিযথা :
  (ক) نفى বা নেতিবাচকযেমন, لا إله কোন মাবুদ নেই
  (খ) إثبات বা ইতিবাচকযেমন, إلا الله আল্লাহ্ ব্যতীত

০৩. لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ  (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) -এর শর্তসমূহঃ
ঐতিহাসিক মতে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ  (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) -এর ৭টি। কেহ কেহ ৮টি বলেছেন।
وقد جمع بعض أهل العلم هذه الشروط (المشهور) السبعة فى بيت واحد فقال :
কতিপয় বিদ্যানগণ প্রসিদ্ধ ৭টি শর্তকে একটি কবিতায় একত্রিত করেছেন। যথা :
عِلْمٌ يَقِيْنٌ وَإِخْلَاصٌ وَصِدْقُكَ مَعَ # مَحَبَّةٍ وَإِنْقِيَادٍ وَالْقُبُوْلُ لَهَا
বিদ্যা, বিশ্বাস এবং একনিষ্ঠতা আর বিশ্বস্ততা
ভালবাসা, আনুগত্য করা এবং গ্রহন করা।

কোন ব্যক্তি لا إله إلا الله -এর স্বীকৃতি দিলেই তাকে মুসলিম বলা যাবে নাবরং কয়েকটি শর্তসহ এ স্বীকৃতি পাওয়া গেলেই সে একজন খাঁটি মুসলিম হিসেবে গণ্য হবেلا إله إلا الله -এর শর্ত হলো ৮টিযথা :
 
১. اَلْعِلْمُ বা জ্ঞান অর্থাৎ لا إله إلا الله -এর অর্থ ও রুকন সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করাআল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন : ﴿فاعلم أنه لا إله إلا الله﴾  অর্থাৎ : জেনে রাখ, আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ্ নেই। [সূরা মুহাম্মাদ : ১৯]

উছমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন : مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ  যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই জেনে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [সহীহ্ মুসলিম হাদীছ ৪৩]

২. اَلْيَقِيْنُ বা দৃঢ় বিশ্বাস অর্থাৎ لا إله إلا الله -এর জ্ঞান অর্জনের পর তা মনেপ্রাণে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করাআল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন : ﴿ إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ﴾  অর্থাৎ : মুমিন তারাই যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের (সাঃ) উপর ঈমান আনে, অতঃপর কোনরূপ সন্দেহ করে না, আর তাদের মাল দিয়ে ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে; তারাই সত্যবাদী। [সূরা হুজরাত : ১৫]

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন : أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ لاَ يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সত্যিকার ইলাহ্ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূলযে বান্দাই সন্দেহমুক্ত অবস্থায় এ দুটি (সাক্ষ্য) নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। [সহীহ্ মুসলিম হাদীছ ৪৪]

৩. اَلْاِنْقِيَادُ বা আনুগত্য করা অর্থাৎ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ -এর উপর বিশ্বাস স্থাপনের পর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া সমস্ত আদেশ ও নিষেধের প্রতি আন্তরিক ও বাহ্যিকভাবে আনুগত্য প্রকাশ করাআল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন : ﴿ وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى﴾  অর্থাৎ : যে কেউ আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করে আর সে সৎকর্মশীল, সে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক শক্ত হাতল’ [সূরা লুক্বমান : ২২]

নাবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন : لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ তোমাদের কেউ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমার আনীত বিষয়ের অনুগত হবে। [মিশকাতুল মাসাবীহ্, ইমাম নাবাবীর চল্লিশ হাদীছ, আল-বানী -কিতাবুল ঈমান]

৪. اَلْقُبُوْلُ বা গ্রহন করা অর্থাৎ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ -এর সমস্ত দাবী মনেপ্রাণে গ্রহন করা ও তা প্রত্যাখ্যান না করাআল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন : ﴿إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ (35) وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوا آَلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ﴾ অর্থাৎ : তাদেরকে যখন বলা হত, আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ্ নেই, তখন তারা অহঙ্কার করত আর বলত : আমরা কি এক পাগলা কবির কথা মেনে আমাদের ইলাহগুলোকে ত্যাগ করব?’ [সূরা আস-সফ্ফাত : ৩৫-৩৬]

৫. اَلْاِخْلَاصُ বা নিষ্ঠা অর্থাৎ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ বলার পর সকল ঈবাদাত নিষ্ঠার সাথে পালন করারিয়া বা লৌকিকতার জন্য নয়আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন : ﴿ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ অর্থাৎ : তাদেরকে নির্ভেজালচিত্তে শুধু আল্লাহর ঈবাদত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে’ [সূরা বাইয়্যিনাহ্ : ০৫]

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন : أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي، مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ আমার সুপারিশ লাভে সবচেয়ে ধন্য ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে একনিষ্ঠচিত্তে বলে আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকার আর কোন ইলাহ্ নেই। [সহীহ্ বুখারী হা/ নং ৯৯]।

৬. اَلصِّدْقُ বা সত্য ও আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করা অর্থাৎ শুধু মুখে স্বীকার করলেই চলবে নাবরং তা সত্য হিসাবে মেনে নিতে হবেআল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন : ﴿ وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَঅর্থাৎ : তাদের পূর্বে যারা ছিল আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম; অতঃপর আল্লাহ্ অবশ্যই জেনে নিবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী’ [সূরা আনকাবূত : ০৩]

মুয়াজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন : مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ الله، صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ الله عَلىَ النَّارِ যে ব্যক্তি মনের বিশ্বাস নিয়ে এ সাক্ষী দিবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সত্যিকার ইলাহ্ নেই, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন। [সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম]

৭. اَلْمَحَبَّةُ বা মুহাব্বাত (ভালবাসা) করা অর্থাৎ এ কালিমায় বিশ্বাসীকে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য মুহাব্বাত করা, অপর দিকে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে অপছন্দ করাআল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন : ﴿ وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ অর্থাৎ : আর মানবমন্ডলীর মধ্যে এরূপ আছে- যারা আল্লাহ্ ব্যতীত অপরকে সদৃশ স্থির করে, আল্লাহ্কে ভালবাসার ন্যায় তারা তাদেরকে ভালবেসে থাকে এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে- আল্লাহর প্রতি তাদের প্রেম দৃঢ়তর’ [সূরা বাক্বারা : ১৬৫]

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন : ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ مَنْ كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ যার মধ্যে তিনটি গুণ আছে সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করেছেআল্লাহ্ এবং তদ্বীয় রাসূল তার নিকট সবার চেয়ে প্রিয় হবেসে মানুষকে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই ভালবাসবে এবং আল্লাহ কর্তৃক কুফরী থেকে রক্ষা পাওয়ার পর সে তাতে ফিরে যাওয়াকে এমনভাবে ঘৃণা করে যেমন- আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে ঘৃণা করে। [সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম]

৮. اَلْكُفْرُ بِمَا يُعْبَدُ مِنْ دُوْنِ اللهِ বা গাইরুল্লাহ্কে অস্বীকার করা অর্থাৎ আল্লাহ্ ছাড়া অন্য যে সকল জিনিসের ঈবাদত করা হয় তা অস্বীকার করা

উপরোক্ত শর্তসমূহ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ -এর আন্তরিক বিশ্বাস ও স্বীকৃতির মাধ্যমে আমরা সত্যিকার মুমিন হতে পারব, নতুবা নয়আল্লাহ্ আমাদের তাওফিক দান করুন

No comments:

Post a Comment