Tuesday, 26 February 2019

শাহাদাহ্, ঈমান ও ইসলাম বিধ্বংস বা বিনষ্টের কারণ সমূহঃ (সংক্ষিপ্তাকারে) نَوَاقِضُ الشَّهَادَة وَالْإِيْمَان وَالْإِسْلَام (مُخْتَصِرًا)


بسم الله الرحمن الرحيم
نَوَاقِضُ الشَّهَادَة وَالْإِيْمَان وَالْإِسْلَام (مُخْتَصِرًا)
শাহাদাহ্, ঈমান ও ইসলাম বিধ্বংস বা বিনষ্টের কারণ সমূহঃ (সংক্ষিপ্তাকারে)
The reasons for the destruction or destruction of Shahadah, Iman & Islam (Shortly)
রচনা, সংগ্রহ ও সঞ্চয়নে : আব্দুস সালাম হুসাইন আলী

نَحْمَدُهُ وَنُصَلِّى عَلَى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ – أَمَّا بَعْدُ!



১. অবতরণিকাঃ
যে সকল কথা ও কাজের মাধ্যমে একজন মুসলিম কাফির ও মুরতাদ হয়ে যায় সেগুলোকেই ঈমান ও ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয় বলেআমরা অযূ ও নামায ভঙ্গের কারণ জানি কিন্তু শাহাদাহ্, ঈমান ও ইসলাম বিধ্বংসী বা বিনষ্টকারী এমন কয়েকটি বিষয় রয়েছে, যার কারণে মুসলিম ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়সেগুলো কি আমরা জানি?

২. ঐতিহাসিক ও প্রসিদ্ধ মতে শাহাদাহ, ঈমান ও ইসলাম বিধ্বংসী বা বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ হলো দশটিযথা:
২/১. اَلشِّرْكُ بِاللهِ বা আল্লাহর সাথে র্শিরক করাঃ
র্শিক বলা হয় : যে সকল অধিকার আল্লাহ্ তায়ালার সাথে খাস, সেগুলোতে অন্য কিছুকে তাঁর সমকক্ষ বানানোআল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : ﴿إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ﴾ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে র্শিক করবে আল্লাহ্ তায়ালা তার উপর জান্নাত হারাম করে দিবেন, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। [সূরা মায়িদা : ৭২]

রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন : أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهْوَ خَلَقَكَ আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, অথচ তিনি তোমাকে সুষ্টি করেছেন। [সহীহ বুখারী হা/নং ৪৪৭৭, মুসলিম হা/নং ৮৬, ১৫৬ ও ১৬৫]

২/২. مَنْ جَعَلَ بَيْنَهُ وَ بَيْنَ اللهِ وَسَائِطَ يَدْعُوْهُمْ وَيَسْأَلُهُمْ الشَّفَاعَةَ وَيَتَوَكَّلُ عَلَيْهِمْ বা আল্লাহ্ তায়ালা ও বান্দার মাঝে অন্য কাউকে মাধ্যম বানানোঃ
যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তাআলা ও বান্দার মাঝে কাউকে মাধ্যম নির্ধারণ করে, তাদের কাছে শাফায়াত প্রার্থনা করে এবং তাদের উপর ভরসা করে, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেমহান আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন :  ﴿وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى﴾ যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবক রূপে গ্রহন করে তারা বলে, আমরা তাদের ঈবাদত করি এ জন্যই যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করে দিবে। [সূরা যুমার : ৩]

২/৩. مَنْ لَمْ يُكَفِّرُ الْمُشْرِكِيْنَ أَوْ شَكَّ فِىْ كُفْرِهِمْ أَوْ صَحَّ مَذْهَبُهُمْ অর্থাৎ মুশরিকদের কাফির না বলা অথবা তাদের কাফির হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করা, কিংবা তাদের ধর্মকে সঠিক মনে করাঃ
এটা কুফরিআল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : ﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ﴾ হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র’ [সূরা তাওবাহ্ : ২৭]

২/৪. مَنْ إِعْتَقَدَ أَنَّ غَيْرَ هُدَى النَّبِّىْ أَكْمَلُ مِنْ هَدْيِهِ أَوْ أَنَّ حُكْمَ غَيْرَهُ أَحْسَنُ مِنْ حُكْمِهِ অর্থাৎ রাসূল (সা:) কর্তৃক আনীত আদর্শের চেয়ে অন্যের আদর্শকে পূর্ণাঙ্গ ও রাসূলের (সা:) নির্দেশনাবলীর চেয়ে অন্যের নির্দেশনাবলীকে ভালো মনে করাঃ
মহান আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : ﴿اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا﴾ আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলামতোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম। [সূরা মায়িদাহ্ : ৩]

২/৫. مَنْ أَبْغَضَ شَيْئًا مِمَّا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ وَلَوْ عَمِلَ بِهِ অর্থাৎ রাসূল (সা:) কর্তৃক আনীত কোন বিষয় অপছন্দ করা, যদিও সে তদানুযায়ী আমল করেঃ
মহান আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন :
 ﴿وَالَّذِينَ كَفَرُوا فَتَعْسًا لَهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ ۞ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ﴾
যারা কুফরি করেছে তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ এবং তিনি তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেনএটা এজন্য যে, আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তারা তা অপছন্দ করেসুতরাং আল্লাহ্ তাদের কর্ম নিষ্ফল করে দিবেন। [সূরা মুহাম্মাদ : ৮-৯]

২/৬. مَنْ إِسْتَهْزَأَ بِشَىْءٍ مِّنْ دِيْنِ الرَّسُوْلِ أَوْ ثَوَابِهِ أَوْ عِقَابِهِ অর্থাৎ রাসূলের (সা:) কর্তৃক আনীত দ্বীনের কোন বিষয় বা ঘোষিত সাওয়াব বা শস্তি সম্পর্কে ঠাট্রা বিদ্রুপ করাঃ
মহান আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : ﴿قل أبالله وآياته ورسوله كنتم تستهزئون﴾ আপনি বলুন, তবে কি তোমরা আল্লাহ্, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্রা করেছিলে? [সূরা তাওবা : ৬৫]

২/৭. اَلسِّحْرُ যাদুঃ
اَلسِّحْرُ বা যাদুর আভিধানিক অর্থ : গোপনীয় বা সুক্ষ্মপারিভাষিক অর্থ : ফুঁক বা গিরা দেয়ার শাধ্যমে শয়তানের সাহায্যে যাদুকৃত ব্যক্তির ক্ষতি করামহান আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : ﴿وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ﴾ বরং শয়তানরাই কুফরী করেছেতারা মানুষদের যাদু শিক্ষা দিয়েছে। [সূরা বাক্বারা : ১০২]

২/৮. مُظَاهِرَةُ الْمُشْرِكِيْنَ وَمُعَاوَنَتُهُمْ عَلَى الْمُسْلِمِيْنَ অর্থাৎ মুসলিমদের বিপক্ষে বা মুসলিমদের উপর মুশরিকদের সাহায্য-সহযোগিতা করাঃ
আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : ﴿وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ﴾  আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেনিশ্চয়ই সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবেঅবশ্যই আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দেন না। [সূরা মায়িদা : ৫১]

২/৯. مَنْ إِعْتَقَدَ أَنَّ بَعْضَ النَّاسِ يَسَعَهُ الْخُرُوْجُ عَنْ شَرِيْعَةِ مُحَمَّدٍ অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে মুহাম্মাদ (সা:)-এর শরীয়তের ঊর্ধ্বে মনে করাঃ
এমন ধারণা পেষণকারী কাফিরআল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : ﴿وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾ আর যে, লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সূরা আল-ইমরান : ৮৫]

রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন : وَلَوْ كَانَ مُوْسَى حَيًّا وَاتَّبَعْتُمُوْهُ وَتَرَكْتُمُوْنِىْ لَضَلَلْتُمْযদি মুসা (আ:) জীবিত থাকতেন, আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তার অনুসরণ করতে, তাহলে অবশ্যই তোমরা গোমরাহ্ হয়ে যেতে। [নাসাঈ]

রাসূলুল্লাহ (সা:) অন্যত্র ইরশাদ করেছেন : وَلَوْ كَانَ مُوْسَى حَيًّا مَا وَسَعَهُ إِلَّا إِتِّبَاعِىْযদি মুসা (আ:) জীবিত থাকতেন, তাহলে আমার অনুসরণ ছাড়া তার অন্য কোন পথ থাকত না। [নাসাঈ, মিশকাত হা/নং ১৩৬]

২/১০. اَلْإِعْرَاضُ عَنْ دِيْنِ اللهِ অর্থাৎ আল্লাহ্র দ্বীন থেকে বিমুখ থাকা বা হওয়াঃ
আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : ﴿وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآَيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنْتَقِمُونَ﴾ যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হওয়ার পর তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে? আমি অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকি। [সূরা আস-সাজ্দা : ২২]

৩. উপসংহারঃ
উপরোক্ত কোন একটি বিষয় কারো মাঝে পাওয়া গেলে সে ইসলাম থেকে খারেজ (বের) হয়ে যাবেতাই আমাদেরকে উক্ত বিষয়গুলি থেকে বেঁচে থাকতে হবেআল্লাহ্ সকলকে তাওফিক দান করুন

No comments:

Post a Comment