Wednesday, 6 February 2019

ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালবাসা দিবস Valentine day In Islam يوم الحب العالم فى الإسلام


ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালবাসা দিবস
Valentine day In Islam يوم الحب العالم فى الإسلام
রচনা : আ.স.ম শুয়াইব আহমাদ, সংগ্রহ ও সঞ্চয়নে : মুফতি আব্দুস সালাম


০১. ইসলামিক ভালবাসাঃ
১/১. ভালবাসার পরিচয়ঃ
اَلْحُبُّ Love বা ভালবাসাএক পবিত্র জিনিস যা আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে আমরা পেয়েছিভালবাসাশব্দটি ইতিবাচকআল্লাহ্ তাআলা সকল ইতিবাচক কর্ম-সম্পাদনকারীকে ভালবাসেন

আল্লাহ্ তাআলা বলেন : ﴿وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ﴾  আর তোমরা স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো নাতোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মুহসিনদের (অনুগ্রহকারীদেরকে) ভালবাসেন। [সূরা বাক্বারা : ১৯৫]

  খ. ভুলের পর ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পবিত্রতা অবলম্বন করা এ দুটিই ইতিবাচক কর্মতাই আল্লাহ্ তাআলা তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালবাসেনমহান আল্লাহ্ তাআলা বলেন : ﴿إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ﴾  নিশ্চয়ই  আল্লাহ্ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন। [সূরা বাক্বারা : ২২২]

  গ. তাক্বওয়া সকল কল্যাণের মূলতাই আল্লাহ্ তাআলা মুত্তাক্বীদেরকে খুবই ভালবাসেনতিনি বলেন :   ﴿فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِين﴾  আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা মুত্তাক্বীদেরকে ভালবাসেন। [সূরা আল ইমরান : ৭৬]

  ঘ. পবিত্র এ ভালবাসার সাথে অপবিত্র ও নিতিবাচক কোন কিছুর সংমিশ্রণ হলে তা আর ভালবাসা থাকে না, পবিত্রও থাকে না; বরং তা হয়ে যায় ছলনা, শঠতা ও স্বার্থপরতাভালবাসা, হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা এক অদৃশ্য সুতোর টানকোন দিন কাউকে না দেখেও যে ভালবাসা হয়; এবং ভালবাসার গভীর টানে রূহের গতির এক দিনের দূরত্ব পেরিয়েও যে দুই মুমিনের সাক্ষাত হতে পারে তা ইব্নু আব্বাস (রা) এক বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারিতিনি বলেন : النِّعَمُ تُكْفَرُ، وَالرَّحِمُ تُقْطَعُ، وَلَمْ نَرَ مِثْلَ تَقَارُبِ الْقُلُوبِ  কত নিআমতের না-শুকরি করা হয়, কত আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হয়, কিন্তু অন্তরসমূহের ঘনিষ্ঠতার মত (শক্তিশালী) কোন কিছু আমি কখনো দেখিনি। [ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ : হা/নং ২৬২]

১/২. ভালবাসার মানদন্ডঃ
  ক. কাউকে ভালবাসা এবং কারো সাথে শত্রুতা রাখার মানদ- হলো একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিশুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসতে হবে এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যইএটাই শ্রেষ্ঠ কর্মপন্থারাসূলু বলেনছেন : إِنَّ أَحَبَّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ الْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِনিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে শত্রুতা রাখা। [আহমদ, মুসনাদুল আনসার হা/নং ২০৩৪১]

  খ. ঈমানের পরিচয় দিতে হলে, কাউকে ভালবাসবার আগে আল্লাহর জন্য হৃদয়ের গভীরে সুদৃঢ় ভালবাসা রাখতে হবেকিছু মানুষ এর ব্যতিক্রম করেআল্লাহ্ তাআলা বলেনছেন : ﴿وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ﴾  আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে; কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ভালবাসায় তারা সুদৃঢ়। [সূরা বাক্বারা : ১৬৫]

  গ. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসতে হবে, নতুবা কোন ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পাবে নারাসূলু বলেনছেন : ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِতিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে সে ঈমানের স্বাদ পায়। (ক) আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে প্রিয় হওয়া। (খ) শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা। (গ) কুফুরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা। [সহীহ্ বুখারী হা/নং ১৫]

১/৩. আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালবাসার ফযীলতঃ
  ক. আল্লাহ রাব্বুল ইয্যতের মহত্ত্বের নিমিত্তে যারা পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন করে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে তিনি তাঁর রহমতের ছায়ায় জায়গা দেবেনরাসূল বলেন : إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلَالِي الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّيকিয়ামতের দিন আল্লাহ্ বলবেন, আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করবআজ এমন দিন, যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই। [সহীহ  মুসলিম, হা/নং ৪৬৫৫]

  খ. রাসূল আরও বলেন :
إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ لَأُنَاسًا مَا هُمْ بِأَنْبِيَاءَ وَلَا شُهَدَاءَ يَغْبِطُهُمُ الْأَنْبِيَاءُ وَالشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِمَكَانِهِمْ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ تُخْبِرُنَا مَنْ هُمْ قَالَ هُمْ قَوْمٌ تَحَابُّوا بِرُوحِ اللَّهِ عَلَى غَيْرِ أَرْحَامٍ بَيْنَهُمْ وَلَا أَمْوَالٍ يَتَعَاطَوْنَهَا فَوَ اللَّهِ إِنَّ وُجُوهَهُمْ لَنُورٌ وَإِنَّهُمْ عَلَى نُورٍ لَا يَخَافُونَ إِذَا خَافَ النَّاسُ وَلَا يَحْزَنُونَ إِذَا حَزِنَ النَّاسُ
নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা নবীও নয়, শহীদও নয়; কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তাঁদের সম্মানজনক অবস্থান দেখে নবী এবং শহীদগণও ঈর্ষান্বিত হবেনসাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে বলুন, তারা কারা? তিনি বলেন : তারা ঐ সকল লোক, যারা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালবাসেঅথচ তাদের মধ্যে কোন রক্ত সম্পর্কও নেই, এবং কোন অর্থনৈতিক লেন-দেনও নেইআল্লাহর শপথ! নিশ্চয় তাঁদের চেহারা হবে নূরানি এবং তারা নূরের মধ্যে থাকবেযে দিন মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে, সে দিন তাঁদের কোন ভয় থাকবে নাএবং যে দিন মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে, সে দিন তাঁদের কোন চিন্তা থাকবে না। [সুনানু আবু দাঊদ, হা/নং ৩০৬০]

১/৪. পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি করার উপায়ঃ
ইসলামে পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপিত না হলে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া যায় না, শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করা যায় না, এমনকি জান্নাতও লাভ করা যাবে নাতাই রাসূল মুমিনদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য একটি চমৎকার পন্থা বাতলে দিয়েছেনতিনি বলেন : لَا تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْতোমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার না হবে, তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপন করবেআমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের কথা বলব না, যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হবে? সাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয় ইয়া রাসূলুল্লাহ্! (তিনি বললেন) তোমাদের মধ্যে বহুল পরিমাণে সালামের প্রচলন কর। [সহীহ মুসলিম হা/নং ৮১]

০২. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালবাসা দিবস (Valentine day)
২/১. ভালবাসা দিবস কি ও এর ক্ষতিকর প্রভাব
  ক. বিশ্ব ভালবাসা দিবস কি : এক নোংরা ও জঘন্য ইতিহাসের স্মৃতিচারণের নাম বিশ্ব ভালবাসা দিবসএ ইতিহাসটির বয়স ১৭৩৭ (সতের শত সাঁইত্রিশ) বছর হলেও বিশ্ব ভালবাসা দিবসনামে এর চর্চা শুরু হয় সাম্প্রতিক কালেই২৭০ (দুই শত সত্তর সালের) ১৪ (চৌদ্দই ফেব্রুয়ারির কথাতখন রোমের স¤্রাট ছিলেন ক্লডিয়াসসে সময় ভ্যালেন্টাইননামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদেরকে গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীক্ষা দিতএ অপরাধে সম্রাট ক্লডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরোশ্ছেদ করেনতার এ ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নাম করণ করা হয় ভ্যালেন্টাইন ডেযা আজকের বিশ্ব ভালবাসা দিবস

  খ. বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১১৯৩ ইং সালেকিছু ব্যবসায়ী মদদে এটি প্রথম চালু হয়অপরিণামদর্শী মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়আর যায় কোথায় লুফে নেয় বাংলার তরুণ-তরুণীরাএরপর থেকে ঈমানের ঘরে ভালবাসার পরিবর্তে ভুলের বাসা বেঁধে দেয়ার কাজটা যথারীতি চলছেআর এর ঠিক পিছনেই মানব জাতির আজন্ম শত্রু শয়তান এইডসনামক মরণ-পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁত বের করে হাসছেমানুষ যখন বিশ্ব ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন পৃথিবীতে ভালবাসার অভাব ছিলনাআজ পৃথিবীতে ভালবাসার বড় অভাবতাই দিবস পালন করে ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়আর হবেই না কেন! অপবিত্রতা নোংরামি আর শঠতার মাঝে তো আর ভালবাসা নামক ভালো বস্তু থাকতে পারে নাতাই আল্লাহ্ তাআলা মানুষের হৃদয় থেকে ভালবাসা উঠিয়ে নিয়েছেন

  গ. বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে চেনার জন্য আরও কিছু বাস্তব নমুনা পেশ করা দরকারদিনটি যখন আসে তখন শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা তো একেবারে বেসামাল হয়ে উঠেনিজেদের রূপা-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসেশুধু কি তাই? অঙ্কন বা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার ধারেতাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্যতারপর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে খোশ গল্পএ হলো বিশ্ব ভালবাসা দিবসের কর্মসূচি! বিশ্ব ভালবাসা দিবস না বলে বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস বললে অন্তত নামকরণটি যথার্থ হতো

২/২. বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালনের ক্ষতিকর কিছু দিকঃ
  ক. ভালবাসা নামের এ শব্দটির সাথে এক চরিত্রহীন লম্পটের স্মৃতি জড়িয়ে যারা ভালবাসার জয়গান গেয়ে চলেছেন, পৃথিবীবাসীকে তারা সোনার পেয়ালায় করে নীল বিষ পান করিয়ে বেড়াচ্ছেন

  খ. তরুণ-তরুণীদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছেঅথচ আল্লাহ্ তাআলা বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন নাআল্লাহ্ তাআলা বলেন : وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَআর তারা তো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়আর আল্লাহ্ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না। [সূরা মায়িদাহ্ : ৬৪]

  গ. নৈতিক অবক্ষয় দাবানলের মত ছড়িয়ে যাচ্ছে

  ঘ. নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করছেযারা ঈমানদারদের সমাজে এ ধরণের অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য আল্লাহ্ তাআলা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেনআল্লাহ্ তাআলা বলেন :  إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِযারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [সূরা নূর :১৯]

বস্তুত যে সমাজেই চরিত্রহীনতার কাজ ব্যাপক, তথায় আল্লাহ্র নিকট থেকে কঠিন আযাব সমূহ ক্রমাগত অবতীর্ণ হওয়া অবধারিতআব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন : لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمِ যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, পরে তারা তারই ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায়নি। [ইবনু মাজাহ, হা/নং ৪০০৯]

  ঙ. তরুণ-তরুণীরা বিবাহ পূর্ব দৈহিক সম্পর্ক গড়তে কোন রকম কুণ্ঠাবোধ করছে নাঅথচ তরুণ ইউসুফ আলাইহিস সালামকে যখন মিশরের এক রানী অভিসারে ডেকেছিল, তখন তিনি কারাবরণকেই এহেন অপকর্মের চেয়ে উত্তম জ্ঞান করেছিলেনরোমান্টিক অথচ যুব-চরিত্রকে পবিত্র রাখার জন্য কী অতুলনীয় দৃষ্টান্ত! আল্লাহ্ জাল্লাহ শানুহু সূরা ইউসুফের ২৩-৩৪ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন এ ভাবে :
وَرَاوَدَتْهُ الَّتِي هُوَ فِي بَيْتِهَا عَنْ نَفْسِهِ وَغَلَّقَتِ الْأَبْوَابَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ قَالَ مَعَاذَ اللَّهِ إِنَّهُ رَبِّي أَحْسَنَ مَثْوَايَ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ (২৩) وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِ وَهَمَّ بِهَا لَوْلَا أَنْ رَأَى بُرْهَانَ رَبِّهِ كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ (২৪) وَاسْتَبَقَا الْبَابَ وَقَدَّتْ قَمِيصَهُ مِنْ دُبُرٍ وَأَلْفَيَا سَيِّدَهَا لَدَى الْبَابِ قَالَتْ مَا جَزَاءُ مَنْ أَرَادَ بِأَهْلِكَ سُوءًا إِلَّا أَنْ يُسْجَنَ أَوْ عَذَابٌ أَلِيمٌ (২৫) قَالَ هِيَ رَاوَدَتْنِي عَنْ نَفْسِي وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِنْ أَهْلِهَا إِنْ كَانَ قَمِيصُهُ قُدَّ مِنْ قُبُلٍ فَصَدَقَتْ وَهُوَ مِنَ الْكَاذِبِينَ (২৬) وَإِنْ كَانَ قَمِيصُهُ قُدَّ مِنْ دُبُرٍ فَكَذَبَتْ وَهُوَ مِنَ الصَّادِقِينَ (২৭) فَلَمَّا رَأَى قَمِيصَهُ قُدَّ مِنْ دُبُرٍ قَالَ إِنَّهُ مِنْ كَيْدِكُنَّ إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ (২৮) يُوسُفُ أَعْرِضْ عَنْ هَذَا وَاسْتَغْفِرِي لِذَنْبِكِ إِنَّكِ كُنْتِ مِنَ الْخَاطِئِينَ (২৯) وَقَالَ نِسْوَةٌ فِي الْمَدِينَةِ امْرَأَةُ الْعَزِيزِ تُرَاوِدُ فَتَاهَا عَنْ نَفْسِهِ قَدْ شَغَفَهَا حُبًّا إِنَّا لَنَرَاهَا فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ (৩০) فَلَمَّا سَمِعَتْ بِمَكْرِهِنَّ أَرْسَلَتْ إِلَيْهِنَّ وَأَعْتَدَتْ لَهُنَّ مُتَّكَأً وَآَتَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُنَّ سِكِّينًا وَقَالَتِ اخْرُجْ عَلَيْهِنَّ فَلَمَّا رَأَيْنَهُ أَكْبَرْنَهُ وَقَطَّعْنَ أَيْدِيَهُنَّ وَقُلْنَ حَاشَ لِلَّهِ مَا هَذَا بَشَرًا إِنْ هَذَا إِلَّا مَلَكٌ كَرِيمٌ (৩১) قَالَتْ فَذَلِكُنَّ الَّذِي لُمْتُنَّنِي فِيهِ وَلَقَدْ رَاوَدْتُهُ عَنْ نَفْسِهِ فَاسْتَعْصَمَ وَلَئِنْ لَمْ يَفْعَلْ مَا آَمُرُهُ لَيُسْجَنَنَّ وَلَيَكُونَنْ مِنَ الصَّاغِرِينَ (৩২) قَالَ رَبِّ السِّجْنُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا يَدْعُونَنِي إِلَيْهِ وَإِلَّا تَصْرِفْ عَنِّي كَيْدَهُنَّ أَصْبُ إِلَيْهِنَّ وَأَكُنْ مِنَ الْجَاهِلِينَ (৩৩) فَاسْتَجَابَ لَهُ رَبُّهُ فَصَرَفَ عَنْهُ كَيْدَهُنَّ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ (৩৪)
সে যে স্ত্রীলোকের ঘরে ছিল সে তার কাছ থেকে অসৎকাজ কামনা করল ও দরজাগুলো বন্ধ করে দিল এবং বলল, ‘আসসে বলল, ‘আমি আল্লাহ্্র আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তিনি আমার প্রভু; তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেননিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘনকারীরা সফলকাম হয় নাসে রমণী তো তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত যদি না সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন দেখতে পেতআমি তাকে মন্দ-কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলামসে তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্তওরা উভয়ে দৌড়ে দরজার দিকে গেল এবং স্ত্রীলোকটি পিছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল, তারা স্ত্রীলোকটির স্বামীকে দরজার কাছে পেলস্ত্রীলোকটি বলল, ‘যে তোমার পরিবারের সাথে কুকর্ম কামনা করে তার জন্য কারাগারে প্রেরণ বা অন্য কোন মর্মন্তুদ শাস্তি ছাড়া আর কি দ- হতে পারে? ইউসুফ বলল, ‘সে-ই আমার কাছ থেকে অসৎকাজ কামনা করছিলস্ত্রীলোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিল, ‘যদি তার জামার সামনের দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি সত্য কথা বলেছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী, কিন্তু তার জামা যদি পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি মিথ্যা বলেছে এবং পুরুষটি সত্যবাদীগৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিক থেকে ছেঁড়া হয়েছে তখন সে বলল, ‘নিশ্চয়ই এটা তোমাদের নারীদের ছলনা, তোমাদের ছলনা তো ভীষণহে ইউসুফ! তুমি এটা এড়িয়ে যাও এবং হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর; তুমিই তো অপরাধীনগরের কিছু সংখ্যক নারী বলল, ‘আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাস হতে অসৎকাজ কামনা করছে, প্রেম তাকে উন্মত্ত করেছে, আমরা তো তাকে স্পষ্ট ভুলের মধ্যে দেখছিস্ত্রীলোকটি যখন ওদের কানা-ঘুষার কথা শুনল, তখন সে ওদেরকে ডেকে পাঠাল, ওদের জন্য আসন প্রস্তুত করল, ওদের সবাইকে একটি করে ছুরি দিল এবং ইউসুফকে বলল, ‘ওদের সামনে বের হওতারপর ওরা যখন তাঁকে দেখল তখন ওরা তাঁর সৌন্দর্যে অভিভূত হল এবং নিজেদের হাত কেটে ফেললওরা বলল, ‘অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক মহিমান্বিত ফেরেশতাসে বলল, ‘এই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছআমি তো তার থেকে অসৎকাজ কামনা করেছিকিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে কারারুদ্ধ হবেই এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবেইউসুফ বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! এ নারীরা আমাকে যার দিকে ডাকছে তার চেয়ে কারাগার আমার কাছে বেশী প্রিয়আপনি যদি ওদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন তবে আমি ওদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বএবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবতারপর তার প্রতিপালক তার ডাকে সাড়া দিলেন এবং তাকে ওদের ছলনা হতে রক্ষা করলেনতিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [সূরা ইউসুফ : ২৩-৩৪]

  চ. শরীরে উল্কি আঁকাতে যেয়ে নিজের ইয্যত-আব্রু পরপুরুষকে দেখানো হয়যা প্রকাশ্য কবিরা গুনাহযে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে তা আঁকা হয়, উভয়ের উপরই আল্লাহর লানত বর্ষিত হয়রাসূল বলেন : لَعَنَ اللَّهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ যে ব্যক্তি পর-চুলা লাগায় এবং যাকে লাগায়; এবং যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে আঁকে, আল্লাহ্ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন। [সহী বুখারী হা/নং ৫৪৭৭]

মূলত যার লজ্জা নেই, তার পক্ষে এহেন কাজ নেই যা করা সম্ভব নয়তাই রাসূল বলেন : إِذَا لَمْ تَسْتَحِ فَاصْنَعْ مَا شِئْتযদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহলে যা ইচ্ছা তাই করতে পার। [সহী বুখারী হা/নং ৩২২৫]

  ছ. ভালবাসা দিবসের নামে নির্লজ্জতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও খুন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছেআব্দুল্লাহ্ ইব্নু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিতরাসূল বলেন : وَلَا فَشَا الزِّنَا فِي قَوْمٍ قَطُّ إِلَّا كَثُرَ فِيهِمُ الْمَوْتُযে জনগোষ্ঠীর-মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, তথায় মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হারে দেখা দেবে। [মুয়াত্তা মালিক হা/নং ৮৭০]

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসগুলোর ভাষ্য কতটা বাস্তব বর্তমান বিশ্বের বাস্তব চিত্র এর প্রমাণ বহন করেঅবাধ যৌন মিলনের ফলে AIDSনামক একটি রোগ বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছেএটা এমনি মারাত্মক যে, এ রোগে আক্রান্ত হলে এর কোন আরোগ্য নেইকিছু পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে :

  বিশ্বের ১৪০ কোটিরও বেশী লোক থেকে ১৯৮৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত এক লক্ষ এগার হাজারেরও বেশী AIDSরোগীর তালিকা পাওয়া গিয়েছে। [আব্দুল খালেক, নারী, (,ফা,বা.ঢাকা,১৯৮৪ইং) পৃ. ৯৬]

  ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২,৪২,০০০ এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছেএর মধ্যে ১,৬০,০০০ মৃত্যু বরণ করেছিল১৯৯২ সালের গবেষণালব্ধ তথ্য মতে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ৫০ লক্ষ্য এইডস রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে  পড়েছে[[Baron & Bzrne, Ibid., P. 329]

  ৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৯৬ এর Time InternationalÕ পত্রিকায় পরিবেশিত তথ্য মতে, ৬৫ লক্ষ জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে এই ঘাতক ব্যাধিআগামী ৫ বৎসরে আরও ৩ কোটি লোক মারা যাবে এই রোগে। [মাসিক পৃথিবী, (ঢাকা, ডিসেম্বর, ১৯৯৯), পৃ. ৫]

  বিশ্ব এইডস দিবস ২০০০-এর প্রাক্কালে জাতিসংঘ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বলা  হয়েছে : ‘‘ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবনকারী এবং সমকামিতা, ইতর রীতির যৌনতার মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপ, রাশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন-আমেরিকা ক্যারিবীয় অঞ্চল ও এশিয়ায় এইডস দেখা দিয়েছেআফ্রিকার কয়েকটি দেশে প্রতি তিনজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এইডস আক্রান্তশিশুদের ৮০ ভাগ এই রোগের ভাইরাসে আক্রান্তআফ্রিকার উপ-সাহারা এলাকায় এ বছর ১০ লাখেরও বেশী লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেরাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে নতুন করে এইডস দেখা দিয়েছেমাত্র একবছরে এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছেউত্তর আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যেও নতুন করে এইডস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। [রয়টার্স, দৈনিক ইনকিলাব, (ঢাকা, ২রা ডিসেম্বর ২০০০ ইং) পৃ .১-২]

  জাতিসংঘের দেয়া তথ্য মতে : বিশ্বে ৩ কোটি ৬০ লাখ লোক এইডসে আক্রান্ত ২০০০ইং সনে ৫০ লাখ লোক নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছে। [প্রাগুক্ত]

   ‘বিশ্ব এইডস দিবসের আলোচনা সভায় (ঢাকা) বাংলাদেশের তৎকালীন সমাজকল্যাণ, প্রতি মন্ত্রী ড. মোজাম্মেল হোসেনের দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে এইডস ভাইরাস বহনকারী রোগীর সংখ্যা একুশ হাজারের বেশী। [দৈনিক ইনকিলাব, (স্টাফ রিপোর্টার, বিশ্ব এইডস দিবসে ঢাকায় আলোচনা সভা, ২রা ডিসেম্বর, ২০০০ ইং) পৃ.১]

  সিফিলিস-প্রমেহ : বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমেরিকার শতকরা ৯০% অধিবাসী রতিজ দুষ্ট ব্যাধিতে আক্রান্তসেখানকার সরকারী হাসপাতালগুলিতে প্রতি বৎসর গড়ে দুই লক্ষ সিফিলিস এবং এক লক্ষ ষাট হাজার প্রমেহ রোগীর চিকিৎসা করা হয়(Enczclopedia Britannica, V. 23, P. 45.) এছাড়াও আমেরিকায় প্রতি বৎসর ত্রিশ-চল্লিশ হাজার শিশু জন্মগত সিফিলিস রোগে মৃত্যুবরণ করে। [আঃ খালেক, নারী, (ঢাকা : ই.ফা. বা., ১৯৮৪ ইং), পৃ. ৯৬]

  Dr. Laredde বলেন, ফ্রান্সে প্রতি বৎসর কেবল সিফিলিস ও তদ-জনিত রোগে ত্রিশ হাজার লোক মারা যায়। [প্রাগুক্ত]

  হার্পিস রোগ : ব্যভিচারের কারণে জননেন্দ্রিয়ে সৃষ্ট অত্যন্ত পীড়াদায়ক রোগ হলো Genital Herpes. মার্কিন জনসংখ্যার শতকরা দশ ভাগ (জনসংখ্যা ২৬ কোটি ধরলে তার ১০% হয় ২ কোটি ৬০ লক্ষ) এই রোগে আক্রান্তএটাই সব নয়প্রত্যেক বৎসর প্রায় ৫০০,০০০ মানুষের নাম এই মারাত্মক হার্পিস রোগীদের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। [Baron & Bzrne, Social pszchologz : Understanding Human Interaction, P. 329.]

  বিশ্ব ভালবাসা দিবসের এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্ম-কা-ের ফলে মুসলিম যুব-মানস ক্রমশ ঈমানি বল ও চেতনা হারিয়ে ফেলছে

  মানুষের হৃদয় থেকে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় উঠে যাচ্ছে

প্রিয় মুমিন-মুসলিম ভাই-বোনেরা ! ভালবাসা কোন পর্বীয় বিষয় নয়এটি মানব জীবনের সুখ-শান্তির জন্য একটি জরুরি সার্বক্ষণিক মানবিক উপাদানসুতরাং আমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ বৃদ্ধির জন্য রাসূল এর শিখানো সার্বক্ষণিক পন্থাটি অবলম্বন করিবিশ্ব ভালবাসা দিবসের নামে এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্মকা- হতে আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে হেফাযত করুনশুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যেন কাউকে ভালবাসি এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই রাখিআমীন !!!

০৩. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালবাসা দিবস (Valentine day)  
৩/১. ইসলামে এর বিধান
প্রশ্নঃ সাম্প্রতিক সময়ে ভালবাসা দিবসউদযাপন অনেকের (বিশেষ করে ছাত্রীদের) মাঝে ছড়িয়েছে; যা খ্রিষ্টানদের একটি উৎসবতখন প্রত্যেকের বস্ত্র হয় সম্পূর্ণ লাল রঙ্গের পোশাক-জুতা সবই; আর তারা পরস্পরের নিকট লাল ফুল বিনিময়  করেজাতীয় উৎসব উদযাপন করার বিধান বর্ণনা করার জন্য অনুরোধ রইলতা-ছাড়া এ-রূপ বিষয়ে মুসলিমদের প্রতি আপনাদের দিকনির্দেশনা কী?

উত্তর: কয়েকটি কারণে ভালবাসা দিবসউদযাপন জায়েজ নয়যথা :
  থমত : এটি একটি নব-উদ্ভাবিত বিদআতী দিবস, শরীয়তে যার কোনো ভিত্তি নেই
  দ্বিতীয়ত : এটি অনৈতিক-প্রেম পরিণতির দিকে মানুষকে ধাবিত করে
  তৃতীয়ত : এর কারণে সালাফে সালেহীনের পথ-পদ্ধতির বিরোধী এরূপ অর্থহীন বাজে কাজে মানুষের মন-মগজ ব্যস্ত করার প্রবণতা তৈরি হয়

তাই এ-দিনে দিবস উদযাপনের কোনো কিছু প্রকাশ করা কখনও বৈধ নয়; চাই তা খাদ্য-পানীয় গ্রহণ, পোশাক-আশাক পরিধান, পরস্পর উপহার বিনিময় কিংবা অন্য কিছুর মাধ্যমেই হোক না কেনআর প্রত্যেক মুসলিমের উচিত নিজ দীন নিয়ে গর্বিত হওয়া এবং অনুকরণপ্রিয় না হওয়াকেউ করতে দেখলেই সেও করবে, কেউ আহ্বান করলেই তাতে সাড়া দিবে, এমনটি যেন না হয়

আল্লাহ্র নিকট দুআ করি তিনি যেন, প্রত্যেক মুসলিমকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় ফিতনা থেকে হেফাযত করেন; আর আমাদেরকে তিনি তাঁর অভিভাবকত্ব ও গ্রহণ করে এবং গুনাহমুক্ত জীবন-যাপন করার ও সৎকর্ম করার তাওফিক প্রদান করে ধন্য করেন, আমীন, ছুম্মা আমীন

No comments:

Post a Comment