আল্লাহর নামে যিনি স্বভাবে পরম মেহেরবান, কর্মে পরম দয়াবান
মানব
জীবনে ধৈর্য্য,
সহিষ্ণনতা ও আত্মসংযমতা অবলম্বন করা সকল নবী-রাসূলগণেরই
সুন্নাতঃ
রচনা, সংগ্রহ ও
সঞ্চয়নে : আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
০১. অবতরণিকাঃ
ধৈর্য্য, সহিষ্ণনতা
ও আত্মসংযমতা অবলম্বন করা,
হতাশ ও নৈরাশ না হওয়া, সালাত, ধৈর্য্য
ও সংযমতার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা। সম্ভাব্য বিপদ এর ক্ষেত্রে তো নয়ই, বরং প্রকৃত বিপদের ক্ষেত্রেও
মুমিন কখনোই হতাশ হতে পারবে না।
০২. ধৈর্য্য, সহিষ্ণনতা ও আত্মসংযমতা অবলম্বন এবং
হতাশ ও নৈরাশ না হয়ে মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থণার ব্যাপারে আল্লাহর
সুবহানাহু তা‘আলা বলেনঃ
ক. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন
: ﴿فَاصْبِرْ صَبْرًا جَمِيلًا﴾
‘অতঃএব আপনি উত্তম সবর করুন’। [সূরা মা‘আরিজ :
০৫]।
খ. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন
: ﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ
وَالصَّلَاةِ ۚ
إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ﴾ ‘হে
মুমিনগন! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন’। [সূরা বাক্বারা : ১৫৩]।
গ. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন
: ﴿قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا
تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ
الْغَفُورُ الرَّحِيمُ﴾ ‘বলুন, হে বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো
না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। [সূরা যুমার : ৫৩]।
ঘ. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন
: ﴿ إِلَّا تَنصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللَّهُ إِذْ أَخْرَجَهُ
الَّذِينَ كَفَرُوا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ
لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا ۖ فَأَنزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ
وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَّمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُوا
السُّفْلَىٰ ۗ
وَكَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ‘যদি তোমরা তাকে (রাসূলকে) সাহায্য
না কর, তবে মনে রেখো,
আল্লাহ তার সাহায্য করেছিলেন, যখন তাকে কাফেররা বহিস্কার করেছিল, তিনি
ছিলেন দু‘জনের একজন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি
আপন সঙ্গীকে বললেন বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার প্রতি স্বীয় সান্তনা নাযিল করলেন এবং তাঁর সাহায্যে এমন বাহিনী
পাঠালেন, যা তোমরা দেখনি। বস্তূতঃ আল্লাহ কাফেরদের
মাথা নীচু করে দিলেন আর আল্লাহর কথাই সদা সমুন্নত এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। [সূরা তাওবাহ : ৪০]।
ঙ. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন
: ﴿ وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن
كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴾ ‘আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে’। [সূরা আল-ইমরান : ১৩৯]।
চ. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন
: ﴿وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ
مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ ۞ الَّذِينَ إِذَا
أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ﴾ ‘আমি
তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ,
জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। আর আপনি শুভ সংবাদ প্রদান করুন ধৈর্যশীলদেরকে, যারা
তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই
প্রত্যাবর্তনকারী’। [সূরা বাক্বারা : ১৫৫ - ১৫৬]।
ছ. মহান আল্লাহ্ বলেছেন : ﴿فَإِنَّ مَعَ
الْعُسْرِ يُسْرًا ۞
إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا﴾ ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি। নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি’। [সূরা
আলাম নাশ্রাহ্ : ৫ - ৬]।
০৩. ধৈর্য্য, সহিষ্ণনতা ও আত্মসংযমতা অবলম্বন এবং
হতাশ ও নৈরাশ না হয়ে মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থণার ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) বলেনঃ
জ. রাসূল (ﷺ) বলেছেন : أَفْضَلُ الإِيْمَانِ اَلصَّبْرُ
وَالسَّمَاحَةُ ‘ধৈর্য ও উদারতাই সর্বোত্তম ঈমান’। হাদীসটি সহীহ। [আলবানী, সিলসিলাতুস
সাহীহাহ ৩/৪৮২, নং ১৪৯৫]।
০৪. ধৈর্য্য ও সংযমতা তিন প্রকার। যথা :
ক. اَلصَّبْرُ
عَلىَ الطَّاعَةِ আনুগত্যে ধৈর্য্য ও সংযমতা।
খ. اَلصَّبْرُ
عَلىَ الْمُصِيْبَةِ পিবদাপদে ধৈর্য্য ও সংযমতা।
গ. اَلصَّبْرُ
عَنِ الْمَعْصِيَةِ গুনাহ, পাপাচারে
ধৈর্য্য ও সংযমতা।
০৫. কেহ কেহ বলেন : ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ধৈর্য
তিন প্রকার। যথা :
ক. اَلصَّبْرُ
عِنْدَ الْمُصِيبَةِ وَالْمُشَقَّةِ বিপদ-আপদ ও কষ্টে ধৈর্যধারণ।
খ. اَلصَّبْرُ
عَنِ الْحِرْصِ وَالْمَعْصِيَةِ পাপ ও লোভ থোক ধৈর্যধারণ।
গ. اَلصَّبْرُ
عَلَى الْغَضَبِ ক্রোধের মধ্যে ধৈর্যধারণ।
[প্রমাণঃ
(ক) জামি‘উস সাগীর হা/নং ৫১২০ (হাদীসটি
দুর্বল)]
(খ) আল্লামা শাইখ ইবনু উসাইমীন
(রহ) কর্তক ‘ইমাম নানাবীর চল্লিশ হাদীসের’ ‘কল্যাণের দিকে দ্রুত ধাবিত’ হওয়া নাম্বনীয় হাদীসের ব্যাখ্যা।
(গ) ফাতহুল মাজীদ ‘লি শারহি
তিকাবুত তাওহীদ, আব্দুর রহমান বিন হাসান।
(ঘ) আল-ক্বাওলুল মুফীদ ‘আলা
কিতাবিত তাওহীদ, শাইখ ইবনু উসাইমীন।
০৬. উপসংহারঃ
মহান আল্লাহ আমাদের জীবনে
ধৈর্য্য, সহিষ্ণনতা ও আত্মসংযমতা অবলম্বন করতে এবং হতাশ ও নৈরাশ না হয়ে আল্লাহর নিকট
সাহায্য প্রার্থণা করার তাওফীক দান করুন, আমীন।
No comments:
Post a Comment