Wednesday, 10 April 2019

বিবাহ ও বিবাহের জন্য পাত্র-পাত্রী (বর-কনে) নির্বাচনে লক্ষ্যনীয় গুণাবলীঃ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
বিবাহ ও বিবাহের জন্য 
পাত্র-পাত্রী (বর-কনে) নির্বাচনে লক্ষ্যনীয় গুণাবলীঃ
আব্দুস সালাম হুসাইন আলী

০১. বিয়ের আসল উদ্দেশ্য হলো মানব অস্তিত্বের ধারা অব্যাহত রাখাবৈধভাবে যৌন তৃপ্তি অর্জন এবং স্নেহ ভালোবাসা, সহানুভূতি, নি:স্বার্থ সেবাভিত্তিক সুস্থ সমাজ জীবন গড়ে তোলা

০২. এজন্য একজন উত্তম স্ত্রী কেবল সেই হতে পারে যে নারী তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন ও সজাগ এবং উত্তম পন্থায় তাঁহার স্ত্রী সুলভ দায়িত্ব পালোনে হবে সক্ষম, নীতি, চরিত্র ও জ্ঞান বুদ্ধিতে হবে সে নারী আদর্শস্থানীয়াআর এজন্যই এমন স্ত্রী নির্বাচন করা উচিত যার অন্তর হবে ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিতযার কথা ও কাজ হবে যথার্থ মুসলিম, চরিত্র হবে সুন্দর, শ্লীলতা-শালীনতা, পবিত্রতার ব্যাপারে হবে সচেতন 

০৩. মহান আল্লাহ্ তাআলার ঐশীগ্রন্থ আল-কুরআন ও রাসূল (সা.)-এর মুখনিসৃত হাদীসে বর্ণিত একজন সতী-সাধবী, পূণ্যবতী স্ত্রী, আদর্শ নারী / রমণী, নর্ম-ভদ্র, কোমল-বিনয়ী, সচ্চরিত্রা স্ত্রী বা তরুণী বা কন্যা বা মহিলাই হলো আদর্শ নারী আর একজন আদর্শ নারী হলেন সুখময় দাম্পত্য জীবন, সুখী পরিবার গঠন ও সৌভাগ্যের চাবি স্বরূপ।

০৪. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
 تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَاوَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ
‘চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারীসুতরাং তুমি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে [সহীহ বখারী হা/নং ৫০৯০, সহীহ মুসলিম হা/নং১৪৬৬, সুনান নাসাঈ হা/নং ৩২৩০, সুনান আবু দাউদ হা/নং ২০৪৭, সুনান ইবনু মাজাহ হা/নং ১৮৫৮, সুনান আহমাদ হা/নং ৯৫২৬]

০৫. ব্যবখ্যাঃ যে সব কারণে একজন পুরুষ বিশেষ একটি মেয়েকে স্ত্রীরূপে বরণ করার জন্য উৎসাহিত ও আগ্রহান্বিত হতে পারে তা হচ্ছে চারটি। (১) সৌন্দর্য (২) সম্পদ (৩) বংশ (৪) দীনদারী এ গুণ চতুষ্টয়ের মধ্যে সর্বশেষে উল্লেখ করা হয়েছে দীনদারী ও আদর্শবাদিতার গুণ আর এ গুণটিই ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বাগ্রগণ্য ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আলোচ্য নির্দেশের সার কথা হল- দীনদারীর গুণসম্পন্না কনে পাওয়া গেলে তাকেই যেন স্ত্রীরূপে বরণ করা হয়, তাকে বাদ দিয়ে অপর কোন গুণসম্পন্না মহিলাকে বিয়ে করতে আগ্রহী হওয়া উচিত নয়- (সুবুলুস সালাম) চারটি গুণের মধ্যে দ্বীনদার হওয়ার গুণটি কেবল যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা-ই নয়, এ গুণ যার নেই তার মধ্যে অন্যান্য গুণ যতই থাক না কেন, ইসলামের দৃষ্টিতে সে অগ্রাধিকার যোগ্য কনে নয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস অনুযায়ী তো দ্বীনদারীর গুণ বঞ্চিতা নারী বিয়ে করাই উচিত নয় তিনি স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন- তোমরা স্ত্রীদের কেবল তাদের রূপ-সৌন্দর্য দেখেই বিয়ে করো না- কেননা এরূপ সৌন্দর্যই অনেক সময় তাদের ধ্বংসের কারণ হতে পারে তাদের ধন-মালের লোভে পড়েও বিয়ে করবে না, কেননা এ ধনমাল তাদের বিদ্রোহী ও অনমনীয় বানাতে পারে বরং তাদের দ্বীনদারীর গুণ দেখেই তবে বিয়ে করবেবস্ত্তত একজন দীনদার কৃষ্ণাঙ্গ দাসীও কিন্তু অনেক ভাল- (ইবনে মাজাহ, বাযযার, বাইহাকী) 

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- বিয়ের জন্য কোন্ ধরনের মেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বলেছিলেন- যে স্ত্রীকে দেখলে সে তার স্বামীকে আনন্দ দেয়, তাকে যে কাজের আদেশ করা হয় তা সে যথাযথ পালন করে এবং তার নিজের স্বামীর ধন মালের ব্যাপারে স্বামীর পছন্দের বিপরীত কোন কাজই করে না- (মুসনাদে আহমাদ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন- দুনিয়ার সব জিনিসই ভোগ সামগ্রী আর সবচেয়ে উত্তম সামগ্রী হচ্ছে নেক চরিত্রের স্ত্রী- (মুসনাদে আহমাদ)

০৬. উপরে উদ্ধৃত হাদীসগুলো থেকে সে কথাটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে তা এই যে, ইসলামের দৃষ্টিতে তাকওয়া, পরহেযগারী, দীনদারী ও উন্নত চরিত্রই হচ্ছে জীবন সঙ্গিনী পছন্দ করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় 

০৭. সারাংশঃ বিবাহের জন্য পাত্র-পাত্রী (বর-কনে) নির্বাচনে লক্ষ্যনীয় গুণাবলীঃ
. বর-কনের অন্যতম প্রধান গুণ হচ্ছে দ্বীনদার ও ধার্মিক হওয়া
২. বর-কনেকে তাক্বওয়াবান তথা মুত্তাক্বী (আল্লাহভীরু ও সাবধানতা অবলম্বনকারী) হওয়া।
৩. বর-কনের সৌন্দর্যতা, রূপ-লাবন্যতার প্রতি স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্য রাখা।
৪. বর-কনের ধন-সম্পদ, অর্থ-প্রাচুর্যতা, সহায়-সম্পত্তির প্রতি স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্য রাখা।
৫. বর-কনের বংশ গৌরব, বংশীয় ঐতিহ্যের প্রতি স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্য রাখা।
৬. বর-কনের কুফু উভয়ের অর্থনৈতিক ও পারিবারিক সমতার প্রতি স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্য রাখা।

৭. বর-কনের সামাজিক মান-মর্যাদার প্রতি স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্য রাখা।

No comments:

Post a Comment