Tuesday, 30 July 2019

জায়গা-জমি বন্ধক ও লীজ দেওয়া-নেওয়ার শর‘য়ী বিধান


জায়গা-জমি বন্ধক ও লীজ দেওয়া-নেওয়ার শর‘য়ী বিধান
সংগ্রহে : আব্দুস সালাম হুসাইন আলী


১. জায়গা-জমি ও আসবাব পত্রের লীজ দেওয়া-নেওয়ার শর‘য়ী বিধান :
দাতা ও গ্রহীতার পারস্পরিক সম্মতিক্রমে কেবল জমি ও পুকুর লীজ দেওয়া যাবেহানযালা বিন ক্বায়েস (রাঃ) বলেন, আমি রাফেবিন খাদীজ (রাঃ)-কে দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে জমি লীজ দেওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এতে কোন দোষ নেই (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৯৭৪)আর গাছ সমূহের আম মুযারাবাঅংশীদারী চুক্তিতে পৃথকভাবে বর্গা দিতে হবে (আবুদাঊদ হা/৪৮৩৬; সনদ ছহীহ)

২. জায়গা-জমি বন্ধক দেওয়া-নেওয়ার শর‘য়ী বিধান :
জায়গা-জমি বন্ধক দেওয়া-নেওয়া এক ধরনের কর্যআর কর্যের মাধ্যমে লাভ গ্রহণ করা সূদছাহাবীগণ এমন কর্য নিষেধ করতেন যে কর্য লাভ আনয়ন করে (বায়হাক্বী, ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯৭)

৩. বর্তমানে জমি বন্ধক নেওয়া হচ্ছে এভাবে- দশ বা ত্রিশ হাযার টাকা কেউ অন্যের নিকট থেকে নিচ্ছে এক বিঘা বা দুই বিঘা জমি তাকে দিচ্ছেঐ টাকা যতদিন ফেরত না দিবে ততদিন সে জমি ভোগ করতে থাকবেউক্ত পদ্ধতি কি শরীআত সম্মত ?

উত্তর : উক্ত পদ্ধতি শরীআত সম্মত নয়কারণ ঋণের বিনিময়ে মুনাফা অর্জন করা সূদের অন্তর্ভুক্তযদিও সেটা উভয়ের সম্মতিক্রমে হয়সেখান থেকে কিছু টাকা ছেড়ে দিলে হালালহবে বলে যে কথা সমাজে চালু আছে সেটিও হীলা বা অপকৌশল মাত্রকেবলমাত্র টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার স্বার্থে কোনরূপ লাভ না নিয়ে জমি বন্ধক নেয়া শরীআত সম্মত (দ্রঃ ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৯৬; বুখারী, মিশকাত হা/২৮৩৩ সূদঅনুচ্ছেদ)

জমি তার মালিকের ব্যবহারে থাকবে, যাতে সে তার উৎপন্ন ফসলের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পায়পক্ষান্তরে জমিটি ঋণদাতার নামে বন্ধকী রেজিষ্ট্রি থাকবে, যাতে তার ঋণের টাকা মার না যায়ঋণ দেওয়ার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত থাকতে হবে, দুনিয়াবী লাভের নিয়ত রাখা যাবে নাআল্লাহ বলেন, ‘কে আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করবে? তিনি তাকে দ্বিগুণ ও বহু গুণ প্রতিদান প্রদান করবেনআল্লাহ রূযী সংকুচিত ও বর্ধিত করে থাকেনআর তাঁর নিকটেই তোমাদের ফিরে আসতে হবে’ (বাক্বারাহ ২/২৪৫)

৪. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সওয়ারীর পশু বন্ধক রাখলে তার পিঠে আরোহণ করা যাবেদুগ্ধবতী পশু রাখলে তার দুধ খাওয়া যাবেকিন্তু যে বন্ধক নিবে সে খরচ বহন করবে (তিরমিযী হা/১১৯১)হাদীছটি কি ছহীহ? যদি তাই হয়, তাহলে জমির ক্ষেত্রেও কি তাই হবে?


উত্তর : বন্ধক এবং ঋণের হুকুম একইঋণের বিপরীতে লাভ নেওয়া যেমন সূদ, ঠিক তেমনি বন্ধক নেওয়া জিনিস থেকেও কোনরূপ লাভ গ্রহণ করা সূদের অন্তর্ভুক্তবন্ধক মূলত ঋণের বিপরীতে যামানত স্বরূপসেটার সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঋণগ্রহীতার উপরশর্তানুযায়ী তার ঋণ পরিশোধ করলে তাকে তার বন্ধকী বস্ত্ত ফেরত দিবেআর ঋণ পরিশোধে অসম্মতি জানালে তার ঋণের পরিমাণ অনুযায়ী সে তা থেকে উসুল করে নিবেতবে বন্ধকী বস্ত্ত যদি পশু হয়, সে ক্ষেত্রে রাসূল (ছাঃ) বলেন, বন্ধক নেওয়া পশুর উপর সওয়ার হতে পারবে, তার খরচ অনুপাতে এবং তার দুধও পান করতে পারবে তার খরচ অনুপাতে (বুখারী হা/২৩৭৭, মিশকাত হা/২৮৮৬)

উল্লে­খ্য যে, একমাত্র পশুর ক্ষেত্রে উপকার গ্রহণ করার অনুমতি পাওয়া যায়যেহেতু পশুর জীবন রক্ষার জন্য তার দেখাশুনা করা অপরিহার্য, সেহেতু তার উপর ব্যয়কৃত অর্থ অনুপাতে সে তা থেকে উপকার গ্রহণ করতে পারবেকিন্তু জমির ক্ষেত্রে তা জায়েয নয় (সুবুলুস সালাম হা/৮০৯-এর ব্যাখ্যা, ৩/১০২ পৃঃ)

উল্লেখ্য যে, বন্ধকী জমির ফসল ভোগ করা অনুরূপ সূদ, যেমনভাবে কাউকে ১০০ টাকা ঋণ দিয়ে ১১০ টাকা নেওয়া সূদকেননা ঋণের বিনিময়ে যদি কোন লাভ নেওয়া হয়, তবে সেটাই সূদবন্ধক রাখা হয় কেবলমাত্র ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার স্বার্থে, বাড়তি লাভের জন্য নয়আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে উত্তম ঋণ দেয়, আল্লাহ তাকে বহুগুণ বেশী দান করে থাকেনআল্লাহ রূযির কম-বেশী করে থাকেন এবং তার কাছেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে’ (বাক্বারাহ ২/২৪৫)

Sunday, 28 July 2019

‘দৈনিক অধিকার’-এ হজ্জের ধারাবাহিক আলোচনা ; ‘‘সুন্নাহ মোতাবেক হজ্জ আদায়ের পদ্ধতি’’।

অনুভূতি ব্যক্তকরণ, মহান স্রষ্টার কৃতজ্ঞতার 
বহিঃপ্রকাশের নামান্তর।
 

দৈনিক অধিকার’-এর বিশেষ আয়োজন, সমকালীন প্রসেঙ্গ ইসলাম
হজ্জের ধারাবাহিক আলোচনা ; ‘‘সুন্নাহ মোতাবেক হজ্জ আদায়ের পদ্ধতি’’

আজ ২৭ জুলা ২০১৯ ইং বিকালে রেকর্ড করা হলো, আমি গুনাহগারের রুঢ়, রুক্ষ ও কর্কশ ভাষার নিন্দিত ও বিক্ষিপ্ত কিছু বাক্যালাপ সমূহঃ

কৃজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি মহান স্রষ্টার প্রতি যিনি আমাকে এ প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন ‘‘আল-হামদুলিল্লাহ’’

ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি ‘বিভাগীয় সম্পাদক, শাইখ মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকিরও অনুষ্ঠান সঞ্চলনকারী মুহতারামকে যারা, কংকটাকীর্ণ, বিপদ সঙ্কল, পিচ্ছিল ঘিরি পথে চলা সহজলব্য করতে দুসাধ্যতার লাঘব করেছেনসুতরাং যাযাকাল্লাহু খাইরান

দৈনিক অধিকার কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই এবং এর উত্তর উত্তর সমৃদ্ধি ও কর্মপরিধির, ব্যাপকতার পাশাপাশি পরকালীন জীবনে, এহেন কার্যকলাপের বিনিময়ে, মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন, উত্তম প্রতিদান, চির মুক্তি ও শান্তির স্থান জান্নাত প্রাপ্তির দুআ করছি 

Wednesday, 24 July 2019

হজ্জের ধারাবাহিক আলোচনা ; সুন্নাহ মোতাবেক হজ্ব আদায়ের পদ্ধতি


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
كيفية أداء الحج على ضوء السنن
সুন্নাহ মোতাবেক হজ্ব আদায় করার পদ্ধতি
রচনা, সংগ্রহ ও সঞ্চয়ন :  আব্দুস সালাম হুসাইন আলী


إن الحمد لله وحده، والصلاة والسلام على من لا نبي بعده أما بعد!
পরিচিতি :
হজ্ব একটি উত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতএটি ইসলামের পঞ্চখুঁটির অন্যতমযে ইসলাম দিয়ে আল্লাহ তা`আলা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেনযে খুঁটিগুলো ব্যতীত কোন ব্যক্তির দ্বীনদারি পূর্ণতা পেতে পারে না

যে কোন ইবাদত দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করতে হলে এবং ইবাদত কবুল হতে হলে দুইটি বিষয় আবশ্যক :
১. আল্লাহর জন্য মুখলিস বা একনিষ্ঠ হওয়াঅর্থাৎ সে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের কল্যাণকে উদ্দেশ্য করা; প্রদর্শনেচ্ছা, প্রচারপ্রিয়তার উদ্দেশ্যে না করা অথবা অন্য কোন দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে না-করা
২. কথা ও কাজে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ জানা ছাড়া তাঁকে অনুসরণ করা সম্ভব নয়সুতরাং যে ব্যক্তি হজ্ব পালনের মাধ্যমে অথবা অন্য কোন ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায় তার কর্তব্য হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ জেনে নেয়ানিম্নে আমরা সুন্নাহ মোতাবেক হজ্ব আদায় করার পদ্ধতি সংক্ষেপে তুলে ধরব ইনশা-আল্লাহ।

হজ্বের প্রকারভেদ :
হজ্ব তিন প্রকার: তামাত্তু, ইফরাদ ও ক্বিরান
তামাত্তু হজ্ব : হজ্বের মাসসমূহে (হজ্বের মাস হচ্ছে- শাওয়াল, জ্বিলক্বদ, জ্বিলহজ্ব দেখুন আল-শারহুল মুমতি ৭/৬২) এককভাবে উমরার ইহরাম বাঁধা, মক্কায় পৌঁছে তওয়াফ করা, উমরার সায়ী করা, মাথা মুণ্ডন করা অথবা চুল ছাটাই করে উমরা থেকে হালাল হয়ে যাওয়াএরপর তারবিয়ার দিন অর্থাৎ ৮ জ্বিলহজ্ব এককভাবে হজ্বের ইহরাম বাঁধা এবং হজ্বের যাবতীয় কার্যাবলী শেষ করাঅতএব, তামাত্তু হজ্বকারী পরিপূর্ণ একটি উমরা পালন করেন এবং পরিপূর্ণ একটি হজ্ব পালন করেন

ইফরাদ হজ্ব : এককভাবে হজ্বের ইহরাম বাঁধা, মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম করা, হজ্বের সায়ী করা, মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট না করে তথা ইহরাম থেকে হালাল না হয়ে ইহরাম অবস্থায় থেকে যাওয়া এবং ঈদের দিন জামরা আকাবাতে কংকর নিক্ষেপের পর ইহরাম থেকে হালাল হওয়াআর যদি হজ্বের সায়ীকে হজ্বের তওয়াফের পরে আদায় করতে চায় সেটাতেও কোন অসুবিধা নেই

ক্বিরান হজ্ব : উমরা ও হজ্বের জন্য একত্রে ইহরাম বাঁধা অথবা প্রথমে উমরার ইহরাম বাঁধা এরপর তওয়াফ শুরু করার আগে হজ্বকে উমরার সাথে সম্পৃক্ত করা (অর্থাৎ তওয়াফ ও সায়ীকে হজ্ব ও উমরার সায়ী হিসেবে নিয়ত করা)ক্বিরান হজ্বকারীর আমলগুলো ইফরাদ হজ্বকারীর আমলের মততবে ক্বিরান হজ্বকারীর উপর হাদি আছে; ইফরাদ হজ্বকারীর উপর হাদি নেইহজ্বের প্রকারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে- তামাত্তু হজ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে এই হজ্ব আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই হজ্ব আদায় করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেনএমনকি যদি কেউ ক্বিরান হজ্ব বা ইফরাদ হজ্বের নিয়ত করে তাহলে তার ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিবর্তন করে হালাল হয়ে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেনযাতে সে ব্যক্তি তামাত্তু হজ্ব পালনকারী হতে পারেনএমনকি সেটা তাওয়াফে কুদুম ও সায়ীর পরও হতে পারে

কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি তাঁর বিদায়ী হজ্বে তওয়াফ ও সায়ী করার পর তাঁর সাহাবীগণকে নির্দেশ দেন- তোমাদের মধ্যে যার যার সাথে হাদি নেই সে যেন তার ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিবর্তন করে মাথার চুল ছোট করে হালাল হয়ে যায়তিনি আরো বলেন : আমি যদি হাদি না নিয়ে আসতাম তাহলে তোমাদেরকে যে নির্দেশ দিচ্ছি আমিও সেটা পালন করতাম[ইসলামী জিজ্ঞাসা ও জবাব, শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ]।

ইহরাম :
ইহরাম হলো : হজ্ব বা উমরাহ করার উদ্দেশ্যে পুরুষের জন্য সেলাই ব্যতীত দু’টি সাদা কাপড় পরিধান করা আর মহিলাদের জন্য হাত মোজা ও নেকাব ব্যতীত সুবিধামত পোষাক পরিধান করা।

ইহরামের সুন্নতগুলো হলো : গোসল করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, সলাত আদায় করা ইত্যাদিসলাত শেষ করার পর অথবা নিজ বাহনে আরোহণ করার পর ইহরাম বাঁধা।

যদি তামাত্তু হজ্বকারী হয় তাহলে বলবে : لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ عُمْرَةً লাব্বাইকাল্লাহুম্মা উমরাতান (হে আল্লাহ! আমি উমরাকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)

আর যদি ক্বিরান হজ্ব আদায়কারী হয় তাহলে বলবে : لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ بِحَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ লাব্বাইকাল্লাহুম্মা বি হাজ্জাতিন ওয়া উমরাতিন (হে আল্লাহ! হজ্ব ও উমরাকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)

আর যদি ইফরাদ হজ্বকারী হয় তাহলে বলবে : لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ حَجًّا লাব্বাইকাল্লাহুম্মা হাজ্জান (হে আল্লাহ! হজ্বকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)

এরপর বলবেন : اَللَّهُمَّ هٰذِهِ حَجَّةٌ لاَّ رِيَاءَ فِيْهَا وَلاَ سُمْعَةَ আল্লাহুম্মা হাযিহি হাজ্জাতুন লা রিয়াআ ফিহা ওয়ালা সুমআ (হে আল্লাহ! এ হজ্বকে এমন হজ্ব হিসেবে কবুল করুন যার মধ্যে লৌকিকতা ও প্রচারপ্রিয়তা নেই)এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে তালবিয়া পড়েছেন সেভাবে তালবিয়া পড়বেসেই তালবিয়া হচ্ছে : لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، لَبَّيْكَ لا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لا شَرِيكَ لَكَ লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইকলাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইকইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলকলা শারিকা লাক(অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার দরবারে হাজিরআমি আপনার দরবারে হাজিরআমি আপনার দরবারে হাজিরআপনি নিরঙ্কুশআমি আপনার দরবারে হাজিরনিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা, যাবতীয় নেয়ামত আপনার-ই জন্য এবং রাজত্ব আপনার-ই জন্যআপনি নিরঙ্কুশ।)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও একটি তালবিয়া পড়তেন সেটা হচ্ছে : لَبَّيْكَ إِلَهَ الْحَقِّ লাব্বাইকা ইলাহাল হাক্ব (অর্থ- ওগো সত্য উপাস্য! আপনার দরবারে হাজির)ইবনে উমর (রাঃ) আরেকটু বাড়িয়ে বলতেন : لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ بِيَدَيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ লাব্বাইকা ওয়া সাদাইকওয়াল খাইরু বি ইয়াদাইকওয়ার রাগবাউ ইলাইকা ওয়াল আমাল। (অর্থ- আমি আপনার দরবারে হাজির, আমি আপনার সৌজন্যে উপস্থিতকল্যাণ আপনার-ই হাতেআকাঙ্ক্ষা ও আমল আপনার প্রতি নিবেদিত)

পুরুষেরা উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বেআর নারীরা এভাবে পড়বে যেন পাশের লোক শুনতে পায়যদি পাশে বেগানা পুরুষ থাকে তাহলে গোপনে তালবিয়া পড়বেন

ইহরামকারী যদি কোন প্রতিবন্ধকতার আশংকা করেন যেমন রোগ, শত্রু বা গ্রেফতার ইত্যাদি তাহলে ইহরামকালে শর্ত করে নেয়া ভালইহরামকালে তিনি বলবেন : إِنْ حَبَسَنِيْ حَابِسٌ فَمَحِلِّيْ حَيْثُ حَبَسْتَنِيْ ইন হাবাসানি হাবেস ফা মাহিল্লি হাইসু হাবাসতানি (অর্থ- যদি কোন প্রতিবন্ধকতা - যেমন রোগ, বিলম্ব ইত্যাদি আমার হজ্ব পালনে- বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আমি যেখানে প্রতিবন্ধকতার শিকার হই সেখানে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাব)কেননা দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) অসুস্থ থাকায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহরাম করাকালে তাকে শর্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন : তুমি যে শর্ত করেছ সেটা তোমার রবের নিকট গ্রহণযোগ্য”[সহিহ বুখারি (৫০৮৯) ও সহিহ মুসলিম (১২০৭)]

যদি ইহরামকারী শর্ত করে থাকে এবং নুসুক পালনে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় তাহলে সে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবেএতে করে তার উপর অন্য কোন দায়িত্ব আসবে নাআর যদি প্রতিবন্ধকতার কোন আশংকা না থাকে তাহলে শর্ত না করাই বাঞ্ছনীয়কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শর্ত করেননি এবং সাধারণভাবে সবাইকে শর্ত করার নির্দেশও দেননিদুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) অসুস্থ থাকায় তাকে নির্দেশ দিয়েছেন

ইহরামকারীর উচিত অধিক তালবিয়া পাঠ করাবিশেষতঃ সময় ও অবস্থার পরিবর্তনগুলোতেযেমন উঁচুতে উঠার সময়নীচুতে নামার সময়রাত বা দিনের আগমনকালেতালবিয়া পাঠের পর আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রার্থনা করা এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত

উমরার ইহরামের ক্ষেত্রে ইহরামের শুরু থেকে তওয়াফ শুরু করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়ার বিধান রয়েছেআর হজ্বের ক্ষেত্রে ইহরাম করার পর হতে ঈদের দিন জমরা আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পড়ার বিধানমক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল : মক্কার কাছাকাছি পৌঁছলে সম্ভব হলে মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল করে নিবেকারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা প্রবেশের সময় গোসল করেছিলেন। [সহিহ মুসলিম (১২৫৯)]

তওয়াফ :
এরপর তওয়াফ শুরু করার জন্য হাজারে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাবেতওয়াফ মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় ডান পা আগে দিবে এবং বলবে :
بِسْمِ اللهِ والصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ الَّلهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ وافْتَحْ لِى أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
(অর্থ- আল্লাহর নামে শুরু করছিরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোকহে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিনআমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ারগুলো খুলে দিনআমি বিতাড়িত শয়তান হতে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর মহান চেহারারমাধ্যমে, তাঁর অনাদি রাজত্বেরমাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)

তাওয়াফ শুরু করার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলবে এবং আল্লাহর প্রশংসা ও মহত্ব বর্ণনাসূচক বিভিন্ন দু‘আ করাসহ নিজের জন্যও বিভিন্ন দু‘আ করা যেতে পারে।

এরপর তওয়াফ শুরু করার জন্য হাজারে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাবেডান হাত দিয়ে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করবে ও চুমু খাবেযদি হাজারে আসওয়াদে চুমু খেতে না পারে হাত দিয়ে স্পর্শ করবে ও হাতে চুমু খাবে (স্পর্শ করার মানে হচ্ছে- হাত দিয়ে ছোঁয়া)যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করতে না পারে তাহলে হাজারে আসওয়াদের দিকে মুখ করে হাত দিয়ে ইশারা করবে এবং তাকবির বলবে; কিন্তু হাতে চুমু খাবে নাহাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করার ফজিলত অনেকদলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী : আল্লাহ তাআলা হাজার আসওয়াদকে পুনরুত্থিত করবেনতার দুইটি চোখ থাকবে যে চোখ দিয়ে পাথরটি দেখতে পাবেতার একটি জিহ্বা থাকবে যে জিহ্বা দিয়ে পাথরটি কথা বলতে পারবেযে ব্যক্তি সঠিকভাবে পাথরটিকে স্পর্শ করেছে পাথরটি তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। [আলবানী আল-তারগীব ও আল-তারহীব (১১৪৪) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

তবে উত্তম হচ্ছে- ভিড় না করামানুষকে কষ্ট না দেয়া এবং নিজেও কষ্ট না পাওয়াযেহেতু হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি উমরকে লক্ষ্য করে বলেছেন- হে উমর! তুমি শক্তিশালী মানুষহাজারে আসওয়াদের নিকট ভিড় করে দুর্বল মানুষকে কষ্ট দিও নাযদি ফাঁকা পাও তবে স্পর্শ করবে; নচেৎ হাজারে আসওয়াদমুখি হয়ে তাকবীর বলবে। [মুসনাদে আহমাদ (১৯১), আলবানী তাঁর মানাসিকুল হাজ্জ ও উমরাগ্রন্থে হাদিসটিকে কাওয়ি’ (শক্তিশালী) মন্তব্য করেছেন] এরপর ডানদিক ধরে চলতে থাকবেবায়তুল্লাহকে বামদিকে রাখবেযখন রুকনে ইয়ামেনীতে (হাজারে আসওয়াদের পর তৃতীয় কর্নার) পৌঁছবে তখন সে কর্নারটি চুমু ও তাকবীর ছাড়া শুধু স্পর্শ করবেযদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তাহলে তওয়াফ চালিয়ে যাবে; ভিড় করবে নারুকনে ইয়ামেনী ও হাজারে আসওয়াদের মাঝখানে এলে বলবেন : (رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ) (অর্থ- হে আমাদের রব! আমাদিগকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করুন।) [সুনানে আবু দাউদ, আলবানী সহিহ আবু দাউদগ্রন্থে হাদিসটিকে হাসানবলেছেন]

যখনই হাজারে আসওয়াদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে তখনই হাজারে আসওয়াদ অভিমুখী হয়ে তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলবেতওয়াফের অন্য অংশে যা কিছু খুশি যিকির, দুআ ও কুরআন তেলাওয়াত করবেবায়তুল্লাহতে তওয়াফের বিধান দেয়া হয়েছে আল্লাহর যিকিরকে সমুন্নত করার জন্য

তওয়াফের মধ্যে পুরুষকে দুইটি জিনিশ করতে হয়
১. তওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইজতেবা করাইজতেবা মানে- ডান কাঁধ খালি রেখে চাদরের মাঝের অংশ বগলের নীচ দিয়ে এনে চাদরের পার্শ্ব বাম কাঁধের উপর ফেলে দেয়াতওয়াফ শেষ করার পর চাদর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিবেকারণ ইজতেবা শুধু তওয়াফের মধ্যে করতে হয়

২. তওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করারমল মানে হচ্ছে- ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটাআর বাকী চার চক্করে রমল নেই বিধায় স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবেসাত চক্কর তওয়াফ শেষ করার পর ডান কাঁধ ঢেকে নিয়ে মাকামে ইব্রাহিমে আসবে এবং পড়বে :
وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى
(আর তোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে তথা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে সলাতের জায়গা বানাও।) [সূরা বাকারা, আয়াত: ১২৫]

অতঃপর মাকামে ইব্রাহিমের পিছনে দুই রাকাত সলাত আদায় করবেপ্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন পড়বেদ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়বেসলাত শেষ করার পর হাজারে আসওয়াদের নিকট এসে সম্ভব হলে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করবেএক্ষেত্রে শুধু স্পর্শ করা সুন্নতযদি স্পর্শ করা সম্ভবপর না হয় তাহলে ফিরে আসবে; ইশারা করবে না

সায়ী (প্রদক্ষিণ) করা :
তওয়াফের পর এবং দুই রাকাত নফল সলাতের পর সায়ী করার স্থান এর দিকে এগিয়ে যাবে এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝখানে সায়ী (প্রদক্ষিণ) করবেতামাত্তু হজ্বকারী উমরার সায়ী করবেনআর ইফরাদ ও ক্বিরান হজ্বকারী হজ্বের সায়ী করবেন এবং ইচ্ছা করলে সায়ীটি হজ্বের ফরজ তওয়াফের পরেও আদায় করতে পারেন

যখন সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হবে তখন পড়বে : (إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ) (নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তাআলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম”) [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৮] এরপর বলবে : (نبدأ بما بدأ الله به) (আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমরাও তা দিয়ে শুরু করছি)

অতঃপর সাফা পাহাড়ে উঠবে যাতে করে কাবা ঘর  দেখতে পায়কাবা নজরে আসলে কাবাকে সামনে রেখে দুই হাত তুলে দুআ করবেদুআর মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং যা ইচ্ছা দুআ করবেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুআর মধ্যে ছিল : لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহলাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদিরলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহ, আনজাযা ওয়াদাহ, ওয়া নাসারা আবদাহ, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদা(“নেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ব্যতীততিনি নিরঙ্কুশরাজত্ব তাঁর-ই জন্যপ্রশংসা তাঁর-ই জন্যতিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবাননেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ছাড়াতিনি প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেনতাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সর্ব দলকে পরাজিত করেছেন।) [সহিহ মুসলিম (১২১৮)] এই যিকিরটি তিনবার উচ্চারণ করবেন এবং এর মাঝে বিভিন্ন দুআ করবেন

যখন সবুজ কালার চিহ্নিত স্থানে পৌঁছবেন তখন যত জোরে সম্ভব দৌঁড়াবেনকিন্তু কাউকে কষ্ট দিবেন নাদলিল হচ্ছে- হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা-মারওয়ার মাঝখানে সায়ী (প্রদক্ষিণ) করেছেন এবং বলেছেন: আবতাহ দৌঁড়িয়ে পার হতে হবে[সুনানে ইবনে মাজাহ (২৪১৯), আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

আবতাহ হচ্ছে : বর্তমানে দুইটি সবুজ রঙে চিহ্নিত স্থানদ্বিতীয় সবুজ রঙ চিহ্নিত স্থান থেকে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবেএভাবে মারওয়াতে পৌঁছবেমারওয়ার উপরে উঠে কিবলামুখি হয়ে হাত তুলে দুআ করবেসাফা পাহাড়ের উপর যা যা পড়েছে ও বলেছে এখানে তা তা পড়বে ও বলবেএরপর মারওয়া থেকে নেমে সাফার উদ্দেশ্যে হেঁটে যাবেস্বাভাবিকভাবে হাঁটার স্থানে হেঁটে পার হবে; আর দৌঁড়াবার স্থানে দৌঁড়ে পার হবেসাফাতে পৌঁছার পর পূর্বে যা যা করেছে তা তা করবেমারওয়ার উপরেও আগের মত তা তা করবেএভাবে সাত চক্কর শেষ করবেসাফা থেকে মারওয়া গেলে এক চক্করমারওয়া থেকে সাফাতে এলে এক চক্করতার সায়ীর মধ্যে যা খুশি যিকির, দুআ, কুরআন তেলাতেয়াত করতে পারবে

জ্ঞাতব্যঃ
(إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ) (নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তাআলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম”) [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৮] এই আয়াতটি শুধু সায়ীর শুরুতে সাফার নিকটবর্তী হলে পড়বেসাফা-মারওয়াতে প্রতিবার আয়াতটি পড়বে না যেমনটি কিছু কিছু মানুষ করে থাকে

মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছোট করা :
তামাত্তু হজ্বকারী যখন সায়ীর সাত চক্কর শেষ করবেন তখন তিনি পুরুষ হলে মাথা মুণ্ডন করতে পারেন অথবা চুল ছোট করতে পারেনমাথা মুণ্ডন করলে মাথার সর্বাংশমুণ্ডন করতে হবেঅনুরূপভাবে চুল ছোট করলেও মাথার সর্বাংশের চুল ছোট করতে হবেচুল ছোট করার চেয়ে মাথা মুণ্ডন করা উত্তমযেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার দুআ করেছেনআর চুল ছোটকারীদের জন্য একবার দুআ করেছেন। [সহিহ মুসলিম (১৩০৩)]

তবে হজ্বের সময় যদি অতি নিকটবর্তী হয় এবং নতুন চুল গজাবার মত সময় না থাকে তাহলে চুল ছোট করা উত্তম; যাতে হজ্বের সময় মাথা মুণ্ডন করতে পারেনদলিল হচ্ছে- বিদায় হজ্বকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে উমরার জন্য মাথার চুল ছোট করার নির্দেশ দিয়েছেনকারণ তাঁরা জ্বিলহজ্ব মাসের ৪ তারিখ সকাল বেলায় মক্কা পৌঁছেছিলেনআর নারীরা আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ চুল কেটে নিবেএর মাধ্যমে তামাত্তু হজ্বকারীর উমরার কাজ শেষ হলো এবং তামাত্তু হজ্বকারী সম্পূর্ণরূপে হালাল হয়ে গেলেনঅর্থাৎ হালাল অবস্থায় একজন মানুষ যা যা করতে পারে (যেমন- সেলাইকৃত পোশাক পরা, সুগন্ধি লাগানো, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি) এখন তামাত্তু হজ্বকারীও সেসব পারবেন

পক্ষান্তরে ইফরাদ ও ক্বিরান হজ্বকারী মাথা মুণ্ডন করবেন না; কিংবা মাথার চুল ছোট করবেন না; তারা ইহরাম থেকে হালাল হবেন নাবরং ইহরাম অবস্থায় থাকবেন এবং ঈদের দিন জমরা আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ করার পর মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটাই এর মাধ্যমে হালাল হবেনতারবিয়ার দিন তথা জ্বিলহজ্বের ৮ তারিখে তামাত্তু হজ্বকারী মক্কায় তার অবস্থানস্থল থেকে ইহরাম বাঁধবেউমরার ইহরামকালে যা করা মুস্তাহাব ছিল হজ্বের ইহরামের সময়ও তা করা (যেমন- গোসল, সুগন্ধি লাগানো, সলাত ইত্যাদি) মুস্তাহাবএই ইহরামের সময় হজ্বের নিয়ত করবেন, তালবিয়া পড়বেন এবং মুখে বলবেন: لبيك اللهم حجاً (হে আল্লাহ! হজ্বকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)যদি হজ্ব সমাপ্তকরণে কোন প্রতিবন্ধকতার আশংকা করে তবে শর্ত করে নিবেوإن حبسني حابس فمحلي حيث حبستني (অর্থ- যদি কোন প্রতিবন্ধকতা আমাকে আটক করে তাহলে আমি যেখানে আটক হই সেখানে হালাল হয়ে যাব)

আর যদি এমন কোন আশংকা না থাকে তাহলে শর্ত করবে নাহাজ্বীর জন্য মুস্তাহাব হলো ঈদের দিন জমরা আকাবাতে কংকর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করা

মীনায় গমন :
এরপর মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেসেখানে পৌঁছে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের সলাত কসর (৪ রাকাতের স্থলে ২ রাকাত) করে ঠিক ওয়াক্তে আদায় করবেদলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মীনাতে সলাতগুলো কসর করতেন; কিন্তু একত্রে আদায় করতেন না

কসর :
৪ রাকাত বিশিষ্ট সলাতগুলো ২ রাকাত করে আদায় করামক্কাবাসী এবং অন্য সকলে মীনা, আরাফা ও মুজদালিফাতে সলাত কসর করবেনদলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব আদায়কালে লোকদের নিয়ে সলাত আদায় করতেনতাঁর সাথে মক্কাবাসীরাও ছিলকিন্তু তিনি তাদেরকে পরিপূর্ণ সলাত পড়ার নির্দেশ দেননিযদি তা ফরজ হতো তাহলে তিনি তাদেরকে সে নির্দেশ দিতেন যেভাবে মক্কা বিজয়ের বছর নির্দেশ দিয়েছেনকিন্তু মক্কার দালানকোঠা প্রসারিত হতে হতে মীনা মক্কার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেযেন মীনা মক্কারই একটি মহল্লাতাই মক্কাবাসীরা সেখানে কসর করবে না

আরাফায় গমন:
আরাফার দিন সূর্যোদয়ের পর মীনা থেকে আরাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেসম্ভব হলে জোহরের পূর্ব পর্যন্ত নামিরাতে অবস্থান করবে (নামিরা হচ্ছে- আরাফার সম্মুখভাগের একটি স্থান)আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে কোন অসুবিধা নেইকারণ নামিরাতে অবস্থান করা সুন্নত; ওয়াজিব নয়সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর (অর্থাৎ জোহরের ওয়াক্ত হওয়ার পর) জোহর ও আসর উভয় সলাত একত্রে জোহরের ওয়াক্তে দুই রাকাত দুই রাকাত করে আদায় করে নিবে; ঠিক যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদায় করেছিলেন যাতে করে আরাফার মাঠে লম্বা সময় অবস্থান করে দুআ করতে পারেনসলাতের পর আল্লাহর যিকির ও দুআতে মশগুল হবেআল্লাহর কাছে রোনাজারি করবে, দুহাত তুলে কিবলামুখি হয়ে যা ইচ্ছা দুআ করবেযদি কিবলামুখি হতে গিয়ে জাবালে আরাফা পিছনে পড়ে যায় কোন অসুবিধা নেইযেহেতু দুআর ক্ষেত্রে সুন্নত হচ্ছে- কিবলামুখি হওয়া; পাহাড়মুখি হওয়া নয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাহাড়ের নিকটে অবস্থান করেছেন এবং বলেছেন : আমি এখানে অবস্থান করলাম; আরাফার ময়দানের সর্বাংশঅবস্থানস্থলসেই মহান দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দুআটি সবচেয়ে বেশি করেছেন সেটা হচ্ছে : لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ ، وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহুলা শরিকা লাহলাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদুওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদির। (অর্থ- এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেইতিনি নিরঙ্কুশরাজত্ব তাঁর-ই জন্যপ্রশংসা তাঁর-ই জন্যতিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান)

যদি কিছুটা একগেঁয়েমিএসে যায় এবং সঙ্গি-সাথীদের কথাবার্তা বলে কিছুটা সতেজ হতে চায় তাহলে ভাল কথা বলবে এবং ভাল কোন বই পড়বেবিশেষতঃ আল্লাহ তাআলার বদান্যতা, তাঁর মহান অনুগ্রহ বিষয়ক কোন বই পড়বেযাতে সে মহান দিনে আল্লাহর প্রতি আশার দিকটা ভারী থাকেএরপর পুনরায় আল্লাহর কাছে রোনাজারি ও দুআতে ফিরে আসবে এবং দিনের শেষভাগকে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হবেকেননা সবচেয়ে উত্তম দুআ হচ্ছে- আরাফা দিবসের দু

মুজদালিফাতে গমনঃ
সূর্য ডোবার পরে মুজদালিফাতে গমন করবেমুজদালিফাতে পৌঁছে মাগরিব ও এশার সলাত এক আযান দুই ইকামতে আদায় করবেযদি এই আশংকা হয় যে, মুজদালিফাতে পৌঁছতে পৌঁছতে মধ্যরাত পার হয়ে যাবে সেক্ষেত্রে রাস্তায় সলাত আদায় করে নিবেকারণ সলাতকে মধ্যরাতের বেশি বিলম্ব করে পড়া জায়েয হবে নামুজদালিফাতে এসে রাত্রি যাপন করবেফজরের ওয়াক্ত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর বিলম্ব না করে এক আযান ও এক ইকামতে ফজরের নামায পড়ে নিবে

এরপর আল-মাশআর আল-হারামের দিকে এগিয়ে যাবে (বর্তমানে মুজদালিফাতে মসজিদটি যে স্থানে রয়েছে এটি সেই জায়গা)সেখানে গিয়ে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিবে, আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করবে তথা তাকবীর বলবে এবং ইসফার (ইসফার মানে- সূর্যোদয়ের আগে পূবদিক ফর্সা হয়ে উঠা) হওয়া পর্যন্ত যা খুশি দুআ করবে

যদি আল-মাশআর আল-হারামে যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে নিজ স্থানে অবস্থান করে দুআ করবেদলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: আমি এ স্থানে অবস্থান করলামজাম্মতথা গোটা মুজদালিফাই অবস্থানস্থলহাত উঁচু করে কিবলামুখি হয়ে দুআ ও যিকির করবে

মীনায় গমনঃ
সূর্যোদয়ের পূর্বে আকাশ ভালভাবে ফর্সা হয়ে উঠলে মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেওয়াদি মুহাসসার (মুজদালিফা ও মীনার মধ্যবর্তী একটি উপত্যকা) দ্রুত পার হবেমীনায় পৌঁছে অপেক্ষাকৃত মক্কার নিকটবর্তী আকাবানামক জমরাতে একটির পর একটি করে মোট ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেপ্রতিটি কংকরের আকার হবে প্রায় ছোলার সম-পরিমানপ্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলবেজমরা আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ করার সুন্নত পদ্ধতি হলো- জমরাকে সামনে রাখবে, মক্কাকে বামে রাখবে এবং মীনাকে ডানে রাখবেকংকর নিক্ষেপ সম্পন্ন করার পর হাদি যবেহ করবেএরপর পুরুষ হলে মাথা মুণ্ডন করবে অথবা মাথার চুল ছোট করবেআর মহিলা হলে আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ চুল কাটবে। (এর মাধ্যমে ইহরাম থেকে প্রাথমিক হালাল অর্জিত হবে; অর্থাৎ এ হালাল হওয়ার মাধ্যমে স্ত্রী সহবাস ছাড়া আর সবকিছু হাজী সাহেবের জন্য হালাল হলো।)

এরপর মক্কা গমন করে হজ্বের তওয়াফ ও সায়ী করবে। (এর মাধ্যমে হাজী সাহেব দ্বিতীয় হালাল হবেএ হালালের মাধ্যমে ইহরামের কারণে যা কিছু হারাম হয়েছিল সবকিছু হাজীর জন্য হালাল হবে)কংকর নিক্ষেপ ও মাথা মুণ্ডনের পর তওয়াফ করার জন্য মক্কায় যেতে চাইলে সুন্নত হচ্ছে- সুগন্ধি লাগানোদলিল হচ্ছে আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস আমি ইহরাম করার আগে ইহরামের জন্য এবং হালাল হওয়ার পর তওয়াফের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম” [সহিহ বুখারি (১৫৩৯) ও সহিহ মুসলিম (১১৮৯)]

এরপর তওয়াফ ও সায়ী করার পর মীনাতে ফিরে আসবেজ্বিলহজ্বের একাদশ ও দ্বাদশ রজনী মীনাতে কাটাবে এবং সে দুদিন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর তিনটি জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করবেউত্তম হচ্ছে- কংকর নিক্ষেপের জন্য হেঁটে যাওয়াবাহনে চড়ে গেলেও অসুবিধা নেইপ্রথমে প্রথম জমরাতে এক এক করে পরপর ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেএই জমরাটি মক্কা থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে ও মসজিদে খাইফের নিকটেপ্রতিটি কংকর নিক্ষেপকালে তাকবীর বলবেএরপর একটু অগ্রসর হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যা ইচ্ছা দুআ করবেযদি দীর্ঘ সময় দাঁড়ানো ও দুআ করা কারো জন্য কষ্টকর হয় তাহলে সাধ্যানুযায়ী অল্প সময়ের জন্য হলেও দুআ করবে; যেন সুন্নত পালন হয়

এরপর মধ্যবর্তী জমরাতে একের পর এক মোট ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেপ্রতিটি কংকরের সাথে তাকবীর বলবেএরপর সামান্য বামে সরে গিয়ে কিবলামুখি হয়ে দাঁড়াবে এবং হাত উঁচু করে সম্ভব হলে লম্বা সময় ধরে দুআ করবেলম্বা সময় দুআ করা সম্ভব না হলে সামান্য সময়ের জন্য হলেও দাঁড়িয়ে দুআ করবেএই দুআটি ছেড়ে দেয়া উচিত নয়যেহেতু এটি সুন্নতঅনেক মানুষ না জানার কারণে অথবা অবহেলা করে এ সুন্নতটি ছেড়ে দেয়কখনো কোন সুন্নত যদি অপ্রচলিত হয়ে পড়ে তখন সে সুন্নতের উপর আমল করা ও মানুষের মাঝে এর প্রসার করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেযেন এ সুন্নতটি একেবারে মিটে না যায়

এরপর জমরা আকাবাতে একের পর এক মোট ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেপ্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলবেএই জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করার পর দাঁড়াবে না ও দুআ করবে নাএভাবে ১২ই জ্বিলহজ্ব ৩টি জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করার পর ইচ্ছা করলে দেরী না করে সেদিনই মীনা ত্যাগ করে চলে আসতে পারেআর চাইলে ১৩ই জ্বিলহজ্ব রাত্রি মীনাতে অবস্থান করে পরদিন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর ৩টি জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করে মীনা ত্যাগ করতে পারে

একদিন দেরী করে মীনা ত্যাগ করাটা উত্তম; তবে ওয়াজিব নয়কিন্তু ১২ ই জ্বিলহজ্ব সূর্যোদয়ের সময়েও কেউ যদি মীনাতে অবস্থান করে তাহলে তার জন্য ১৩ই জ্বিলহজ্ব রাত্রি মীনাতে কাটানো ও পরদিন ৩টি জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিবতবে মীনাতে সূর্য ডুবে যাওয়া যদি তার এখতিয়ারের বাইরের কোন কারণে হয় যেমন কেউ তাবু ত্যাগ করে গাড়ীতে চড়েছে কিন্তু রাস্তায় জ্যাম বা এ জাতীয় কোন কারণে আটকা পড়ে যায় তাহলে ১৩ তারিখ পর্যন্ত দেরি করা তার উপর ওয়াজিব হবে নাকারণ এ বিলম্বটা তার এখতিয়ারভুক্ত নয়অতঃপর যখন মক্কা ত্যাগ করে নিজ দেশে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করবে তখন বিদায়ী তওয়াফ না করে মক্কা ত্যাগ করবে নাদলিল হচ্ছে- তোমাদের কেউ প্রস্থান করবে না যতক্ষণ না সে শেষ কাজ বায়তুল্লাহতে (তওয়াফ) না করে” [সহিহ মুসলিম (১৩২৭)]

অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- লোকদেরকে আদেশ করা হয়েছে- তাদের সর্বশেষ আমল যেন হয় বায়তুল্লাহতে (তওয়াফ)তবে হায়েযগ্রস্ত নারীকে এ ব্যাপারে ছাড় দেয়া হয়েছে” [সহিহ বুখারি (১৭৫৫) ও সহিহ মুসলিম (১৩২৮)]

হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীদের উপর বিদায়ী তওয়াফ নেই এবং তাদের জন্য মসজিদে হারামের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় জানানোটাও উচিত নয়কারণ এ ধরনের পদ্ধতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত হয়নিযখন দেশে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করবে তখন হাজী সাহেবের সর্বশেষ কাজ হবে তওয়াফযদি বিদায়ী তওয়াফ করার পর সঙ্গিদের অপেক্ষা করতে হয় অথবা মালপত্র বাহনে উঠানোর জন্য অপেক্ষা করতে হয় অথবা পথের সম্বল হিসেবে কিছু কিনতে হয় এতে কোন অসুবিধা নেইএর জন্য পুনরায় তওয়াফ করতে হবে নাতবে যদি সফর বিলম্বের নিয়ত করতে হয় (উদাহরণতঃ সফর ছিল দিনের পূর্বাহ্ণে এবং বিদায়ী তওয়াফ করে নিয়েছে কিন্তু পরে যদি সফর দিনের অপরাহ্ণে) করতে হয় তাহলে পুনরায় বিদায়ী তওয়াফ করে নেয়া ওয়াজিব; যাতে সর্বশেষ আমলটা তওয়াফ হয়

হজ্ব বা উমরার ইহরাম বাঁধার পর ইহরামকারীর উপর নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ওয়াজিবঃ
১. ইসলামী যাবতীয় অনুশাসন পরিপূর্ণভাবে মেনে চলাযেমন- ঠিক সময়ে সলাতগুলো আদায় করা
২. আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন যেমন খারাপ কথা, পাপ কাজ ও অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকাদলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী: অতএব, এই মাসসমূহে যে ব্যক্তি নিজের উপর হজ্বকে আবশ্যক করে নিল তার জন্য হজ্বে অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়” [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৭]
৩. পবিত্র স্থানগুলোর ভিতরে অথবা বাইরে কথা বা কাজের মাধ্যমে মুসলমানকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা
৪. ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ সেগুলো থেকে বিরত থাকা। যথা :
ক. চুল বা নখ না কাটাতবে কাঁটা বা এ জাতীয় কিছু তুলে ফেললে রক্ত বের হলেও গুনাহ হবে না
খ. ইহরাম বাঁধার পর শরীরে, পরিধেয় পোশাকে বা খাবার-দাবারে সুগন্ধি ব্যবহার করবে নাসুগন্ধিযুক্ত সাবান ব্যবহার করবে নাতবে ইহরামের আগে ব্যবহারকৃত সুগন্ধির কোন আলামত যদি থেকে যায় এতে কোন অসুবিধা নেই
গ. শিকার করবে না
ঘ. স্ত্রী সহবাস করবে না
ঙ. উত্তেজনাসহ স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরবে না, চুমু খাবে না বা এ জাতীয় কিছু করবে না
চ. নিজে বিয়ের চুক্তি করবে না অথবা অন্য কারো বিয়ের আকদ পড়াবে না অথবা কোন নারীকে নিজের জন্য অথবা অন্য কারো জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিবে না
ছ. মহিলারা হাত মোজা পরবে নাতবে কোন ন্যাকড়া দিয়ে হাত পেঁচালে গুনাহ হবে না
এই সাতটি নিষিদ্ধ কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ে সমানতবে বিশেষভাবে পুরুষের জন্য কাজগুলো হচ্ছে :
ð এঁটে থাকা কোন কিছু দিয়ে মাথা ঢাকবে নাতবে ছাতা দিয়ে, গাড়ীর ছাদের আড়ালে, তাবুর আড়ালে ছায়া নিতে অথবা মাথায় বোঝা বহন করতে কোন দোষ নেই
ð সেলাইকৃত জামা, পাগড়ী, টুপি, পায়জামা, মোজা পরা যাবে নাতবে লুঙ্গি না পেলে পায়জামা পরবেজুতা না পেলে মোজা পরবে
ð ইতিপূর্বে উল্লেখিত পোশাকগুলোর স্থলাভিষিক্ত কোন পোশাকও পরা যাবে নাযেমন- জুব্বা, ক্যাপ, টুপি, গেঞ্জি ইত্যাদি
ð জুতা, আংটি, চশমা, হেডফোন ইত্যাদি পরা যাবেহাতে ঘড়ি পরা যাবে, গলায় হার পরা যাবেটাকা-পয়সা রাখার জন্য বেল্ট পরা যাবে
ð সুগন্ধিহীন কিছু দিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া যাবেমাথা ও শরীর ধোয়া যাবে ও চুলকানো যাবেএতে করে অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন চুল পড়ে গেলে তাতে কোন দোষ নেই
ð নারীরা নেকাব পরবে নানেকাব হচ্ছে- এমন কাপড় যা দিয়ে নারীরা তাদের মুখ ঢেকে রাখে; শুধু চোখ দুটি দেখা যায়নারীরা চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবে। তবে যদি বেগানা পুরুষদের দৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ইহরাম অবস্থায় অথবা ইহরামের বাইরে মুখ ঢেকে রাখা ওয়াজিব

[প্রমাণ : আলবানীর মানাসিকুল হজ্জ ওয়ার উমরাহএবং শাইখ উছাইমীনের সিফাতুল হজ্ব ওয়াল উমরাআল-মানহাজ লি মুরিদিল উমরা ওয়াল হাজ্জ”]।