জায়গা-জমি বন্ধক ও
লীজ দেওয়া-নেওয়ার শর‘য়ী বিধান
সংগ্রহে : আব্দুস
সালাম হুসাইন আলী
১. জায়গা-জমি ও আসবাব পত্রের লীজ দেওয়া-নেওয়ার
শর‘য়ী বিধান :
দাতা ও গ্রহীতার
পারস্পরিক সম্মতিক্রমে কেবল জমি ও পুকুর লীজ দেওয়া যাবে। হানযালা বিন ক্বায়েস (রাঃ) বলেন, আমি রাফে‘ বিন খাদীজ (রাঃ)-কে দীনার ও
দিরহামের বিনিময়ে জমি লীজ দেওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এতে কোন দোষ নেই (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৯৭৪)। আর গাছ সমূহের আম ‘মুযারাবা’ অংশীদারী চুক্তিতে পৃথকভাবে বর্গা দিতে হবে (আবুদাঊদ হা/৪৮৩৬; সনদ ছহীহ)।
২. জায়গা-জমি বন্ধক দেওয়া-নেওয়ার শর‘য়ী বিধান :
জায়গা-জমি বন্ধক দেওয়া-নেওয়া এক ধরনের কর্য। আর কর্যের মাধ্যমে লাভ গ্রহণ করা সূদ। ছাহাবীগণ এমন কর্য নিষেধ করতেন যে কর্য লাভ আনয়ন করে
(বায়হাক্বী, ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯৭)।
৩. বর্তমানে
জমি বন্ধক নেওয়া হচ্ছে এভাবে- দশ বা ত্রিশ হাযার টাকা কেউ অন্যের নিকট থেকে নিচ্ছে
এক বিঘা বা দুই বিঘা জমি তাকে দিচ্ছে। ঐ
টাকা যতদিন ফেরত না দিবে ততদিন সে জমি ভোগ করতে থাকবে। উক্ত
পদ্ধতি কি শরী‘আত সম্মত ?
উত্তর : উক্ত
পদ্ধতি শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ ঋণের বিনিময়ে মুনাফা
অর্জন করা সূদের অন্তর্ভুক্ত। যদিও সেটা উভয়ের সম্মতিক্রমে হয়। সেখান থেকে কিছু টাকা ছেড়ে দিলে ‘হালাল’ হবে বলে যে কথা সমাজে চালু আছে সেটিও হীলা বা অপকৌশল মাত্র। কেবলমাত্র টাকা ফেরত পাওয়ার
নিশ্চয়তার স্বার্থে কোনরূপ লাভ না নিয়ে জমি বন্ধক নেয়া শরী‘আত সম্মত (দ্রঃ ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৯৬; বুখারী, মিশকাত হা/২৮৩৩ ‘সূদ’ অনুচ্ছেদ)।
জমি তার মালিকের
ব্যবহারে থাকবে, যাতে সে তার উৎপন্ন ফসলের
মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পায়। পক্ষান্তরে জমিটি ঋণদাতার নামে বন্ধকী রেজিষ্ট্রি থাকবে, যাতে তার ঋণের টাকা মার না যায়। ঋণ দেওয়ার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত
থাকতে হবে, দুনিয়াবী লাভের নিয়ত রাখা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘কে আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে উত্তম ঋণ
দান করবে? তিনি তাকে দ্বিগুণ ও বহু গুণ প্রতিদান
প্রদান করবেন। আল্লাহ রূযী
সংকুচিত ও বর্ধিত করে থাকেন। আর তাঁর নিকটেই তোমাদের ফিরে আসতে হবে’ (বাক্বারাহ ২/২৪৫)।
৪. আবু
হুরায়রা (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সওয়ারীর পশু বন্ধক রাখলে তার পিঠে আরোহণ করা যাবে। দুগ্ধবতী
পশু রাখলে তার দুধ খাওয়া যাবে। কিন্তু যে বন্ধক নিবে সে খরচ বহন করবে (তিরমিযী
হা/১১৯১)। হাদীছটি কি ছহীহ? যদি তাই হয়, তাহ’লে জমির ক্ষেত্রেও কি তাই হবে?
উত্তর : বন্ধক এবং ঋণের হুকুম একই। ঋণের বিপরীতে লাভ নেওয়া যেমন
সূদ,
ঠিক তেমনি বন্ধক নেওয়া জিনিস থেকেও কোনরূপ লাভ গ্রহণ
করা সূদের অন্তর্ভুক্ত। বন্ধক মূলত ঋণের বিপরীতে যামানত স্বরূপ। সেটার সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঋণগ্রহীতার উপর। শর্তানুযায়ী তার ঋণ পরিশোধ
করলে তাকে তার বন্ধকী বস্ত্ত ফেরত দিবে। আর ঋণ পরিশোধে অসম্মতি জানালে তার ঋণের পরিমাণ অনুযায়ী সে
তা থেকে উসুল করে নিবে। তবে বন্ধকী বস্ত্ত যদি পশু হয়, সে ক্ষেত্রে রাসূল (ছাঃ) বলেন, বন্ধক নেওয়া পশুর উপর সওয়ার হ’তে পারবে, তার খরচ অনুপাতে এবং তার দুধও
পান করতে পারবে তার খরচ অনুপাতে (বুখারী হা/২৩৭৭, মিশকাত হা/২৮৮৬)।
উল্লেখ্য যে, একমাত্র পশুর ক্ষেত্রে উপকার গ্রহণ করার অনুমতি পাওয়া যায়। যেহেতু পশুর জীবন রক্ষার জন্য
তার দেখাশুনা করা অপরিহার্য, সেহেতু তার উপর ব্যয়কৃত অর্থ
অনুপাতে সে তা থেকে উপকার গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু জমির ক্ষেত্রে তা জায়েয নয় (সুবুলুস সালাম হা/৮০৯-এর
ব্যাখ্যা, ৩/১০২ পৃঃ)।
উল্লেখ্য যে, বন্ধকী জমির ফসল ভোগ করা অনুরূপ সূদ, যেমনভাবে কাউকে ১০০ টাকা ঋণ দিয়ে ১১০ টাকা নেওয়া সূদ। কেননা ‘ঋণের বিনিময়ে যদি কোন লাভ নেওয়া হয়, তবে সেটাই সূদ’। বন্ধক রাখা হয় কেবলমাত্র ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার স্বার্থে, বাড়তি লাভের জন্য নয়। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে উত্তম
ঋণ দেয়,
আল্লাহ তাকে বহুগুণ বেশী দান করে থাকেন। আল্লাহ রূযির কম-বেশী করে
থাকেন এবং তার কাছেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে’ (বাক্বারাহ ২/২৪৫)।
No comments:
Post a Comment