Tuesday, 30 July 2019

জায়গা-জমি বন্ধক ও লীজ দেওয়া-নেওয়ার শর‘য়ী বিধান


জায়গা-জমি বন্ধক ও লীজ দেওয়া-নেওয়ার শর‘য়ী বিধান
সংগ্রহে : আব্দুস সালাম হুসাইন আলী


১. জায়গা-জমি ও আসবাব পত্রের লীজ দেওয়া-নেওয়ার শর‘য়ী বিধান :
দাতা ও গ্রহীতার পারস্পরিক সম্মতিক্রমে কেবল জমি ও পুকুর লীজ দেওয়া যাবেহানযালা বিন ক্বায়েস (রাঃ) বলেন, আমি রাফেবিন খাদীজ (রাঃ)-কে দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে জমি লীজ দেওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এতে কোন দোষ নেই (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৯৭৪)আর গাছ সমূহের আম মুযারাবাঅংশীদারী চুক্তিতে পৃথকভাবে বর্গা দিতে হবে (আবুদাঊদ হা/৪৮৩৬; সনদ ছহীহ)

২. জায়গা-জমি বন্ধক দেওয়া-নেওয়ার শর‘য়ী বিধান :
জায়গা-জমি বন্ধক দেওয়া-নেওয়া এক ধরনের কর্যআর কর্যের মাধ্যমে লাভ গ্রহণ করা সূদছাহাবীগণ এমন কর্য নিষেধ করতেন যে কর্য লাভ আনয়ন করে (বায়হাক্বী, ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯৭)

৩. বর্তমানে জমি বন্ধক নেওয়া হচ্ছে এভাবে- দশ বা ত্রিশ হাযার টাকা কেউ অন্যের নিকট থেকে নিচ্ছে এক বিঘা বা দুই বিঘা জমি তাকে দিচ্ছেঐ টাকা যতদিন ফেরত না দিবে ততদিন সে জমি ভোগ করতে থাকবেউক্ত পদ্ধতি কি শরীআত সম্মত ?

উত্তর : উক্ত পদ্ধতি শরীআত সম্মত নয়কারণ ঋণের বিনিময়ে মুনাফা অর্জন করা সূদের অন্তর্ভুক্তযদিও সেটা উভয়ের সম্মতিক্রমে হয়সেখান থেকে কিছু টাকা ছেড়ে দিলে হালালহবে বলে যে কথা সমাজে চালু আছে সেটিও হীলা বা অপকৌশল মাত্রকেবলমাত্র টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার স্বার্থে কোনরূপ লাভ না নিয়ে জমি বন্ধক নেয়া শরীআত সম্মত (দ্রঃ ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৯৬; বুখারী, মিশকাত হা/২৮৩৩ সূদঅনুচ্ছেদ)

জমি তার মালিকের ব্যবহারে থাকবে, যাতে সে তার উৎপন্ন ফসলের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পায়পক্ষান্তরে জমিটি ঋণদাতার নামে বন্ধকী রেজিষ্ট্রি থাকবে, যাতে তার ঋণের টাকা মার না যায়ঋণ দেওয়ার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত থাকতে হবে, দুনিয়াবী লাভের নিয়ত রাখা যাবে নাআল্লাহ বলেন, ‘কে আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করবে? তিনি তাকে দ্বিগুণ ও বহু গুণ প্রতিদান প্রদান করবেনআল্লাহ রূযী সংকুচিত ও বর্ধিত করে থাকেনআর তাঁর নিকটেই তোমাদের ফিরে আসতে হবে’ (বাক্বারাহ ২/২৪৫)

৪. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সওয়ারীর পশু বন্ধক রাখলে তার পিঠে আরোহণ করা যাবেদুগ্ধবতী পশু রাখলে তার দুধ খাওয়া যাবেকিন্তু যে বন্ধক নিবে সে খরচ বহন করবে (তিরমিযী হা/১১৯১)হাদীছটি কি ছহীহ? যদি তাই হয়, তাহলে জমির ক্ষেত্রেও কি তাই হবে?


উত্তর : বন্ধক এবং ঋণের হুকুম একইঋণের বিপরীতে লাভ নেওয়া যেমন সূদ, ঠিক তেমনি বন্ধক নেওয়া জিনিস থেকেও কোনরূপ লাভ গ্রহণ করা সূদের অন্তর্ভুক্তবন্ধক মূলত ঋণের বিপরীতে যামানত স্বরূপসেটার সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঋণগ্রহীতার উপরশর্তানুযায়ী তার ঋণ পরিশোধ করলে তাকে তার বন্ধকী বস্ত্ত ফেরত দিবেআর ঋণ পরিশোধে অসম্মতি জানালে তার ঋণের পরিমাণ অনুযায়ী সে তা থেকে উসুল করে নিবেতবে বন্ধকী বস্ত্ত যদি পশু হয়, সে ক্ষেত্রে রাসূল (ছাঃ) বলেন, বন্ধক নেওয়া পশুর উপর সওয়ার হতে পারবে, তার খরচ অনুপাতে এবং তার দুধও পান করতে পারবে তার খরচ অনুপাতে (বুখারী হা/২৩৭৭, মিশকাত হা/২৮৮৬)

উল্লে­খ্য যে, একমাত্র পশুর ক্ষেত্রে উপকার গ্রহণ করার অনুমতি পাওয়া যায়যেহেতু পশুর জীবন রক্ষার জন্য তার দেখাশুনা করা অপরিহার্য, সেহেতু তার উপর ব্যয়কৃত অর্থ অনুপাতে সে তা থেকে উপকার গ্রহণ করতে পারবেকিন্তু জমির ক্ষেত্রে তা জায়েয নয় (সুবুলুস সালাম হা/৮০৯-এর ব্যাখ্যা, ৩/১০২ পৃঃ)

উল্লেখ্য যে, বন্ধকী জমির ফসল ভোগ করা অনুরূপ সূদ, যেমনভাবে কাউকে ১০০ টাকা ঋণ দিয়ে ১১০ টাকা নেওয়া সূদকেননা ঋণের বিনিময়ে যদি কোন লাভ নেওয়া হয়, তবে সেটাই সূদবন্ধক রাখা হয় কেবলমাত্র ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার স্বার্থে, বাড়তি লাভের জন্য নয়আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে উত্তম ঋণ দেয়, আল্লাহ তাকে বহুগুণ বেশী দান করে থাকেনআল্লাহ রূযির কম-বেশী করে থাকেন এবং তার কাছেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে’ (বাক্বারাহ ২/২৪৫)

No comments:

Post a Comment