Wednesday, 17 July 2019

مصارف الصدقة والفطر والذكاة / সদক্বাহ-ফিৎরা ও যাকাতের খাত সমূহঃ


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
مصارف الصدقة والفطر والذكاة
সদক্বাহ-ফিৎরা ও যাকাতের খাত সমূহঃ
আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
 

০১. সদক্বাহ-ফিৎরা ও যাকাত প্রদানের খাত সমূহের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা এরশাদ করেন :
﴿إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاِبْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ সাদাকাহ হচ্ছে শুধুমাত্র গরীবদের এবং অভাবগ্রস্তদের, আর এই সাদাকাহর (আদায়ের) জন্য নিযুক্ত কর্মচারীদের এবং (দীনের ব্যাপারে) যাদের মন রক্ষা করতে (অভিপ্রায়) হয় (তাদের), আর গোলামদের আযাদ করার কাজে এবং কর্জদারদের কর্জে (কর্জ পরিশোধে), আর জিহাদে (অর্থাৎ যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য) আর মুসাফিরদের সাহায্যার্থেএই হুকুম আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়’। [সূরা তাওবাহ : ৬০]।

০২. সদক্বাহ-ফিৎরা ও যাকাত প্রদানের খাত সমূহের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণঃ
এ আয়াতে সদাক্বাহ, ফিৎরা ও যাকাতের সম্পদ ব্যয় করার খাত উল্লেখ করা হয়েছেযাকাতের সম্পদ আট শ্রেণির সকলের মাঝে বণ্টন করতে হবে, না কোন একশ্রেণিকে দিলেই হবে? এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত পাওয়া গেলেও সঠিক কথা হল যখন যেথায় বেশি প্রয়োজন হবে তখন সে খাতেই ব্যয় করা উত্তম[তাফসীর ইবনু কাছীল ও তাফসীর ফাতহুল মাজীদ]।

০৩. আটটি খাতের সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
৩/১. اَلْفَقِيْرُ (ফকীর) : যারা উপার্জনে অক্ষম বা সর্বহারা তারাই ফকীর বলে গণ্য হবে
ð ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ () বলেন : সদাক্বাহ ধনী ও সুস্থ সবল লোকের জন্য হালাল নয়[আবূ দাঊদ ১৬৩৪, তিরমিযী ৬৫২, সনদ সহীহ]।

ð দুজন লোক রাসূলুল্লাহ ()-এর কাছে সাদাকার মাল চাইলতিনি () তখন তাদের আপাদমস্তক লক্ষ করে বুঝতে পারলেন যে, তারা সুস্থ ও সবল লোকতিনি () তাদেরকে বললেন : তোমরা চাইলে আমি দিতে পারিকিন্তু জেনে রেখ! ধনী, শক্তিশালী উপার্জনে সক্ষম ব্যক্তির জন্য এতে কোন অংশ নেই[আবূ দাঊদ ১৬৩৩, নাসাঈ ২৫৯৭, সনদ সহীহ]।

৩/২. اَلْمِسْكِيْنُ (মিসকীন) : যারা ফকীর থেকে একটু স্বচ্ছল তারাই মিসকীন
e রাসূলুল্লাহ () বলেন: মিসকীন সেই ব্যক্তি নয় যে এক লোকমা বা দুলোকমা, একটি খেজুর, দুটি খেজুরের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে চেয়ে বেড়ায়সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ()! তাহলে মিসকীন কে? রাসূলুল্লাহ () বললেন: যার কাছে এমন কিছু নেই যার দ্বারা সে অমুখাপেক্ষী হতে পারে, যার এমন অবস্থা প্রকাশ পায় না যা দেখে তাকে সদাক্বাহ দেয়া হবে এবং মানুষের কাছেও চায় না[সহীহ বুখারী ১৪৭৯]।

৩. وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا (তহসীলদার বা যাকাত সংগ্রহকারী) :
যাকাতের মাল থেকে তাদের পারিশ্রমিক ও বেতন স্বরূপ প্রদান করা। এ থেকে উদ্দেশ্য সরকারের সে সব কর্মচারী যারা যাকাত ও সদাক্বাহ আদায় ও বণ্টন এবং হিসাব-নিকাশের কাজে নিয়োজিত থাকে[তাফসীর ইবনু কাছীল ও তাফসীর ফাতহুল মাজীদ]।

৩/৪. وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ (যাদের মনকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা আবশ্যক) :
প্রথমত : সে কাফির যে ইসলামের প্রতি অনুরাগী হয়এমন ব্যক্তিকে সাহায্য করলে আশা করা যায় যে, সে ইসলাম কবূল করবে
দ্বিতীয়ত : সে সকল নবমুসলিম যাকে ইসলামে দৃঢ় থাকার জন্য সাহায্য করা হয়
তৃতীয়ত : সে লোকও এতে শামিল যাকে সাহায্য করলে আশা করা যায় যে, সে নিজের এলাকার লোকেদেরকে মুসলিমদের ওপর হামলা করা থেকে বিরত রাখবে এবং অনুরূপভাবে সে নিজের নিকটতম মুসলিমদেরকে রক্ষা করবে

@ আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: নাবী ()-এর কাছে কিছু জিনিস প্রেরণ করা হলএরপর তিনি সেগুলো চারজনের মধ্যে বণ্টন করে দিলেনআর বললেন : তাদেরকে (এর দ্বারা) ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করছি। ......হাদীসের শেষ পর্যন্ত[সহীহ বুখারী ৪৬৬৭]।

৩/৫. وَفِي الرِّقَابِ (দাসমুক্তি) :
F নাবী () বলেন : তিন প্রকার লোকেদের সাহায্য করা আল্লাহ তাআলার ওপর আবশ্যক
ক. ঐ যোদ্ধা যে আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদ করে
খ. ঐ চুক্তিবদ্ধ দাস, যে তার চুক্তির টাকা আদায়ের ইচ্ছা করেএরূপ চুক্তিবদ্ধ দাস যাকাতের সম্পদের হকদার
গ. ঐ ব্যক্তি যে বিবাহ করতে চায় পবিত্র থাকার জন্য[তিরমিযী ১৬৫৫, নাসাঈ ৩১২০, সনদ সহীহ]।

৩/৬. اَلْغَارِمِينَ (ঋণগ্রস্ত লোক) :
প্রথমত : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য যে ব্যক্তি নিজ পরিবারের খরচাদি এবং জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে লোকেদের কাছে ঋণ গ্রহণ করেছেআর তার কাছে এমন কোন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নেই যা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারেদ্বিতীয়ত : এমন যামিনদার ব্যক্তি যে কারো যামিন হয়েছে, অতঃপর যামানতের টাকা তার আসল যিম্মাদার আদায় করতে না পারায় তার ঘাড়ে এসে পড়েছে
তৃতীয়ত: যার ফসলাদি দুর্যোগ এসে ধ্বংস করে দিয়েছে বা বাণিজ্য ও শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিঃস্ব হয়েছে ফলে সে ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছে[তাফসীর ইবনু কাছীল ও তাফসীর ফাতহুল মাজীদ]।

৩/৭.  فِي سَبِيلِ اللهِ(আল্লাহর পথ) :
অর্থাৎ যারা আল্লাহ তাআলার রাস্তায় জিহাদ করে তাদের সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় বাবদ এবং মুজাহিদদের ব্যয় বাবদঅন্য একটি হাদীসে হাজ্জ ও উমরাকে ফী সাবীলিল্লাহর অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে

কতেক আলিম বলেন : ইসলামী দাওয়াত ও তাবলীগের কাজও فِي سَبِيلِ اللهِ (আল্লাহর পথ)এর অন্তর্ভুক্তকারণ এতেও জিহাদের মতই আল্লাহ তাআলার কালেমাকে উঁচু করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে[তাফসীর ইবনু কাছীল ও তাফসীর ফাতহুল মাজীদ]।

৩/৮. وَاِبْنِ السَّبِيلِ (মুসাফির) :
যদি কোন মুসাফির বৈধ সফরে সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে- অথচ সে তার এলাকায় প্রচুর সম্পদের অধিকারী সে ব্যক্তি প্রয়োজন মিটানোর জন্য যাকাতের হকদার 

ð রাসূলুল্লাহ ()-এর কাছে এসে বললেন : আমি আমার স্বামীকে যাকাত দিতে চাই এটা কি সঠিক হবে? রাসূলুল্লাহ () বললেন : হ্যাঁএতে তোমার দুটি প্রতিদান রয়েছে(ক) যাকাত প্রদানের জন্য, (খ) আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য[সহীহ বুখারী ১৪৬৬, সহীহ মুসলিম ১০০০]।

@ তবে যার ব্যয় বহন করা ওয়াজিব তাকে যাকাত দেয়া যাবে নাযেমন পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তানযদি রাষ্ট্র প্রধান ছেলে যাকাতের সম্পদ থেকে পিতাকে দেয় তাহলে তা বৈধঅনুরূপ স্ত্রী তার সম্পদ থেকে স্বামীকে যাকাত দিতে পারে যদি স্বামী যাকাত পাওয়ার যোগ্য হয়যেমন আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদের স্ত্রী যায়নাব

৪. যাকাতের নিসাব : 
৪/১. স্বর্ণ, রৌপ্য ও নগদ টাকার যাকাত :
কারো মালিকানায় বিশ দিনার অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রোপ্য বা তার সমপরিমাণ নগদ টাকা থাকলে এবং এক বছর পূর্ণ হলে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ শতকরা আড়াই টাকা হিসেবে যাকাত দিতে হবে

৪/২. ব্যবসার মালের যাকাত :
ব্যবসার মালপত্রের দাম নিসাব পরিমাণ হলে এবং পূর্ণ এক বছর থাকলে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত দিতে হবে 

৪/৩. গৃহপালিত পশুর যাকাত :
গৃহপালিত পশুর যাকাত ফরয হওয়ার জন্য শর্ত হল এমন পশু হওয়া যা সারা বছর এমনি মাঠে চড়ে বেড়ায় তা দেখা শুনা করতে তেমন কোন খরচ হয় না
ক. উট : সর্বনিম্ন পরিমাণ হল ৫ হতে ৯টি, এতে যাকাত দিতে হবে একটি ছাগল
খ. গরু বা মহিষ: সর্বনিম্ন পরিমাণ হল ৩০ হতে ৩৯টি, এতে যাকাত দিতে হবে এক বছরের একটি বাচ্চা গরু 
গ. ছাগল বা ভেড়া: সর্বনিম্ন পরিমাণ হল ৪০ হতে ১২০টি, এতে যাকাত দিতে হবে একটি ছাগলসর্বক্ষেত্রে শর্ত হল এক বছর পূর্ণ হতে হবে 

৫. উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয় হলো :
. সদক্বা, ফিৎরা ও যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ সুনির্ধারিত।
খ. সদক্বা, ফিৎরা ও যাকাতের প্রকৃত প্রাপকদের নিকট সদক্বা, ফিৎরা ও যাকাত প্রদান করা।
. যাকাতের নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত প্রদানে অবহেলা না করে দ্রুত যাকাত প্রদান করা।

No comments:

Post a Comment