Sunday, 11 August 2019

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের বিধান ও ইসলামী গবেষকদের ফাতুওয়া


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
أحكام تبادل التحية والتهنئة للعيد والفتوي للباحثين الإسلامية
Eid greetings exchanged and Islamic researchers fatwa
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের বিধান ও ইসলামী গবেষকদের ফাতুওয়া
সংকলনে : আব্দুস সালাম হুসাইন আলী

আলোচ্যসূচী :-
১. অবতরণিকা :
২. ঈদের সংজ্ঞা ও পরিচিতি :
৩. দলিল-প্রমাণ নিম্নরূপ :
৪. ইসলামী গবেষকদের ফাতুওয়া :
৫. উপসংহার :

১. অবতরণিকা :
ঈদ শব্দটির অর্থ : উৎসবইসলাম ধর্মের মতানুসারে প্রধান ধর্মীয় উৎসব গুলোকে ঈদ বলা হয়অর্থাৎ ইসলাম ধর্মানুযায়ী ঈদের ধর্মীয় সংজ্ঞা হলো : পবিত্র রমজানে এক মাস সাওম বা সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের এক তারিখে খুশী বা আনন্দ উদযাপনকে ঈদ বলা হয়

পক্ষান্তরে ঈদ মুবারক (আরবী : عيد مبارك‎‎) হল মুসলিমদের একটি ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্যঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ বা উদযাপনআর মুবারক শব্দের অর্থ কল্যাণময়সুতরাং ঈদ মুবারকের অর্থ হল ঈদ বা আনন্দ উদযাপন কল্যাণময় হোক

কিছু রাষ্ট্রে এই শুভেচ্ছা বিনিময় একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং কোন ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার অংশ নয়অর্থাৎ ঈদের দিন একে অপরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা এবং কোন ভাল শব্দ বা দুআমূলক বাক্য দ্বারা পরস্পরকে সম্ভাষণ জানানোর নামই হল ঈদের মুবারকবাদ

সুতরাং বলা যায় যে, ঈদের দিন একে অপরকে মুবারকবাদ দেওয়ায় ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপনে কোন দোষ নেইযেমন : তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ্ আমাদের ও তোমাদের নিকট থেকে এই ইবাদত কবুল করুন), ঈদ মুবারক (আমাদের ঈদ বরকতময় হোক) ইত্যাদি দুআমূলক বাক্য বলে এক অপরের সাথে সাক্ষাৎ করা বৈধ তবে সর্বোত্তম হলো হাদীস দ্বারা প্রমাণিত শব্দ ব্যবহার করা।

২. ঈদের সংজ্ঞা ও পরিচিতি :
১. ঈদের সংজ্ঞা বর্ণনা করতে গিয়ে আরবী অভিধানের অন্যতম কিতাব আল মুজামুল ওয়াসীতএর ৬৩৫ পৃষ্ঠায় আছে- ঈদ বলা হয় কোন দুশ্চিন্তা বা কোন রোগ অথবা কোন আকাংখ্যা বা এ ধরণের অন্যান্য বিষয় যা বারবার ফিরে আসে এবং এমন প্রত্যেক দিনকে ঈদের দিন বলা হয় যে দিন কোন সম্মানীত বা প্রিয়তম ব্যক্তির স্মরণে মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়

২. ঈদের সংজ্ঞা বর্ণনা করতে গিয়ে মিসবাহুল লুগাতএর ৫৮৩ পৃষ্টায় লিখা আছে - ঈদ এমন প্রত্যকে দিনকে বলা হয় যে দিন কোন সম্মানীত মহান ব্যক্তির অথবা কোন গুরুত্বপূর্ণ বড় ঘটনার স্মরণে কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়ঈদকে এ জন্য বলা হয় কারণ তা প্রত্যেক বছর ফিরে আসে

৩. ফিরজুল লুগাতএর ১২৭ পৃষ্ঠায় বলা আছে - ঈদ হল মুসলমানদের আনন্দের দিন, খুশির কোন অনুষ্ঠান ও খুবই আনন্দিত হওয়া

উপরে বর্ণিত অভিধান সমূহে ঈদের সংজ্ঞার আলোকে সংক্ষেপে বলা যায়, ঈদ হল কোন সম্মানীত প্রিয়তম ব্যক্তির অথবা কোন গুরুত্বপূর্ণ মহান ঘটনার স্মরণে অনুষ্ঠিত মাহফিল যা প্রতি বছরই নতুন নতুন আনন্দ নিয়ে আমাদের নিকট ফিরে আসে

যেহেতু ঈদে ও অন্যান্য খুশীতে মুবারকবাদ দেওয়া, বরকত, মঙ্গল ও ক্ববূলের দুআ করা ইসলামে সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃতযেমন - রাসূল এর সাহাবাগণ ঈদগাহ হতে ফিরার সময় এক অপরকে বলতেন, তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা (আল্লাহ্ আমাদের ও তোমার পক্ষ থেকে এই ইবাদত ক্ববূল করুন)তবে বিষয়টি সরাসরি রাসূল থেকে প্রমাণিত নয়

৩. দলিল-প্রমাণ নিম্নরূপ :
. তাবিঈ জুবাইর ইবনু নুফাইর হতে বর্ণিততিনি বলেন :
ﻛَﺎﻥَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﺫَﺍ ﺍِﻟْﺘَﻘَﻮْﺍ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻌِﻴﺪِ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ : ﺗَﻘَﺒَّﻞَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻨَّﺎ ﻭَﻣِﻨْﻚ
আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সাহাবীগণ ঈদের দিন একে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ হলে বলতেন : তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা (আল্লাহ্ আমাদের ও তোমার পক্ষ থেকে এই ইবাদত কবুল করুন)” [ইবনু হাজার , ফাতহুল বারী; ২/৫১৭,  আলবানী , তামামুল মিন্নাহ্ ফিত তালীক্বি আলা ফিক্বহিস সুন্নাহ্; পৃষ্ঠা: ৩৫৪-৩৫৫; দারুর রায়াহ্ ছাপা; সন: ১৪০৮ হিজরী (২য় প্রকাশ); সনদ: স্বহীহ্ (তাহ্ক্বীক্ব : আলবানী)/হাসান (তাহ্ক্বীক্ব : ইবনু হাজার)]

সুতরাং, আলোচনায় বলা যায় যে, ঈদে মুবারকবাদ জানানো কোনো ইবাদত নয় : ঈদে একে অপরকে মুবারকবাদ জানানো এবং পরস্পরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা কোন ইবাদতমূলক বিষয় নয়এটা দেশীয় বা আঞ্চলিক আচার ও প্রথার অন্তর্গত একটি বিষয়এটা সামাজিক শিষ্টাচার ও লোকজ প্রথা হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে

৪. ইসলামী গবেষকদের ফাতুওয়া :
ক. শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ্ [মৃত: ৭২৮ হি.] (রাহি.)-এর ফাতুওয়া :
السؤال : ”ﻫَﻞْ ﺍﻟﺘَّﻬْﻨِﺌَﺔُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌِﻴﺪِ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺠْﺮِﻱ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻟْﺴِﻨَﺔِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ : ” ﻋِﻴﺪُﻙ ﻣُﺒَﺎﺭَﻙٌ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻬَﻪُ , ﻫَﻞْ ﻟَﻪُ ﺃَﺻْﻞٌ ﻓِﻲ ﺍﻟﺸَّﺮِﻳﻌَﺔِ ﺃَﻡْ ﻻ ؟ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ ﺃَﺻْﻞٌ ﻓِﻲ ﺍﻟﺸَّﺮِﻳﻌَﺔِ , ﻓَﻤَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﻘَﺎﻝُ ؟
الجواب : ”ﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟﺘَّﻬْﻨِﺌَﺔُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻌِﻴﺪِ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ ﺇﺫَﺍ ﻟَﻘِﻴَﻪُ ﺑَﻌْﺪَ ﺻَﻼﺓِ ﺍﻟْﻌِﻴﺪِ : ﺗَﻘَﺒَّﻞَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻨَّﺎ ﻭَﻣِﻨْﻜُﻢْ , ﻭَﺃَﺣَﺎﻟَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻚ , ﻭَﻧَﺤْﻮُ ﺫَﻟِﻚَ , ﻓَﻬَﺬَﺍ ﻗَﺪْ ﺭُﻭِﻱَ ﻋَﻦْ ﻃَﺎﺋِﻔَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻔْﻌَﻠُﻮﻧَﻪُ ﻭَﺭَﺧَّﺺَ ﻓِﻴﻪِ , ﺍﻷَﺋِﻤَّﺔُ , ﻛَﺄَﺣْﻤَﺪَ ﻭَﻏَﻴْﺮِﻩِ . ﻟَﻜِﻦْ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺣْﻤَﺪُ : ﺃَﻧَﺎ ﻻ ﺃَﺑْﺘَﺪِﺉُ ﺃَﺣَﺪًﺍ , ﻓَﺈِﻥْ ﺍﺑْﺘَﺪَﺃَﻧِﻲ ﺃَﺣَﺪٌ ﺃَﺟَﺒْﺘﻪ , ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻷَﻥَّ ﺟَﻮَﺍﺏَ ﺍﻟﺘَّﺤِﻴَّﺔِ ﻭَﺍﺟِﺐٌ , ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻻﺑْﺘِﺪَﺍﺀُ ﺑِﺎﻟﺘَّﻬْﻨِﺌَﺔِ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﺳُﻨَّﺔً ﻣَﺄْﻣُﻮﺭًﺍ ﺑِﻬَﺎ , ﻭَﻻ ﻫُﻮَ ﺃَﻳْﻀًﺎ ﻣَﺎ ﻧُﻬِﻲَ ﻋَﻨْﻪُ , ﻓَﻤَﻦْ ﻓَﻌَﻠَﻪُ ﻓَﻠَﻪُ ﻗُﺪْﻭَﺓٌ , ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﺮَﻛَﻪُ ﻓَﻠَﻪُ ﻗُﺪْﻭَﺓٌ . ﻭَﺍَﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ .
প্রশ্ন : ঈদের মধ্যে মুবারকবাদ জানানো এবং লোকমুখে প্রচলিত (সম্ভাষণ) ঈদুকুম মুবারাক (তোমাদের ঈদ বরকতময় হোক) ও অনুরূপ সম্ভাষণসমূহের ভিত্তি কি শারীআহ্য় আছে নাকি নেই? আর শারীআহ্য় যদি এর কোন ভিত্তি থাকে তবে (মুবারকবাদ জানাতে) কী বলা হবে?”
উত্তর : ঈদের দিন মুবারকবাদ জানানোর জন্য ঈদের সালাতের পর লোকেরা একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হলে বলবে তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ্ আমাদের এবং তোমাদের পক্ষ থেকে এই ইবাদত কবুল করুন) এবং আহালাহুল্লাহু আলাইকা (আরো ঈদ দেখার জন্য আল্লাহ্ তোমাকে বাঁচিয়ে রাখুন) এবং অনুরূপ ভাল সম্ভাষণএটা একদল সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁরা এরূপ করতেন এবং ইমামগণ এটা অনুমোদনও করেছে; যেমন : ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য ইমামগণকিন্তু ইমাম আহমাদ ইবনু হাজার বলেছেন, আমি প্রথমে কাউকে এই সম্ভাষণ জানাব নাকিন্তু কেউ যদি আমাকে এই মুবারকবাদ বা সম্ভাষণ জানায়, তবে আমি তার জবাব দিবএটা এ কারণে যে, অভিবাদনের জবাব দেওয়া ওয়াজিবকিন্তু প্রথমেই কাউকে মুবারকবাদ জানানো সুন্নাহ্ নয়, যে সুন্নাহর ব্যাপারে আদেশ করা হয়েছেআর এটা নিষিদ্ধ বিষয়ও নয়সুতরাং যে এটা করে, তারও দৃষ্টান্ত আছে; আর যে এটা পরিত্যাগ করে তারও দৃষ্টান্ত আছে[ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ্ - মাজমূউ ফাতাওয়া; ২৪/২৫৩]

খ. আল্লামা আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল তাহতাওয়ি হানাফি বলেন : ঈদ শুভেচ্ছায় সিরিয়া, মিসর প্রভৃতি দেশের লোকেরা ঈদ মোবারক আলাইকএ জাতীয় বাক্য বলতে অভ্যস্তসাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত বাক্যের সঙ্গে এর মর্মগত মিল রয়েছেফলে সেটার মতো এটা বলাও জায়েজ ও ভালোকথা এমন মন্তব্য করার সুযোগ আছে[হাশিয়াতুত তাহতাওয়ি আলা মারাকিল ফালাহ শারহ নুরুল ঈযাহ, পৃ : ৫৩০]

গ. মুহাদ্দিস ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন : ঈদের দিন কারও সঙ্গে দেখা হলে মুহাদ্দিস মাকহুল সম্ভাষণ জানাতেন ইসফ্লিতাবলেইয়াহইয়া বলেন, ‘ইসফ্লিতাঅর্থ আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন[muqbel.net/fatwa.php?fatwa_id=3320]

৫. উপসংহার :
সর্বপরি বলা যায় যে, ঈদের দিন মুআনাকা করার খাস কোন দলীল নেইতবে সুন্নাত মনে না করে যদি কেউ মুআনাকা করে তাতে কোন অসুবিধা নেইসাহাবীগণ পরস্পর সাক্ষাৎ করলে মুসাফাহা করতেন এবং সফর থেকে ফিরে আসলে মুআনাকা করতেন[সিলসিলা, সহীহাহ, হা : ২৬৪৭]

1 comment: