Tuesday, 5 November 2019

রাসূল (সাঃ) উত্তম, মহৎ, অনুপম ও মহান চরিত্রের অধিকারী কুরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবিঃ


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
রাসূল (সাঃ)-এর সীরাত (জীবন-চরিত) তথা জীবনেতিহাস
রাসূল (সাঃ) উত্তম, মহৎ, অনুপম ও মহান চরিত্রের অধিকারী কুরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবিঃ
সংকলনে : আব্দুস সালাম হুসাইন আলী

০১. রাসূল (সাঃ) উত্তম, মহৎ, অনুপম ও মহান চরিত্রের অধিকারী কুরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবিঃ
আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন :
﴿وَإِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيمٍ
‘নিশ্চয়ই আপনি মহান (উত্তম ও অনুপম) চরিত্রের অধিকারী’। [সূরা ক্বলম : ৪]।

০২. ব্যখ্যাঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَإِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيمٍ
‘নিশ্চয়ই আপনি মহান অনূপম চরিত্রের অধিকারী’।
ইবন আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে যে, خُلُقٍ عَظِيمٍ এর অর্থ হলো : دِيْنِ عَظِيمٍ তুমি মহান দ্বীনের উপর রয়ছে। অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম। মুজাহিদ (রাহি.) প্রমূখ, আবু মালিক (রাহি.), সুদ্দী (রাহি.) এবং বারী ইবন আনাস (রাহি.) এ কথাই বলেছেন। [তাবারী ২৩/২৪৩]।

যাহহাক (রাহি.) এবং ইবন যায়িদও (রাহি.) এরূপই বলেছেন। আতিয়্যাহ (রাহি.) বলেন যে, خُلُقٍ عَظِيمٍ দ্বারা آدَابٌ عَظِيمٍ বা উত্তম শিষ্টাচার বুঝানো হয়েছে।

০৩. হাদীস সমূহঃ
৩/১. কাতাদাহ (রাহি.) হতে বর্ণিথ আছে যে, আ‘য়িশাহ (রাযি.)-কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ ‘তুমি কি কুরআন পড়নি?’ প্রশ্নকারী সা‘দ ইবন হিশাম (রাহি.) বলেন : ‘হ্যাঁ, পড়েছি।’ তখন আ‘য়িশাহ (রাযি.) বলেন :
فَإِنَّ خُلُقَ رَسُولِ الله صَلَّي الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ الْقُرْآنَ
‘কুরআন কারীমই তাঁর চরিত্র ছিল।’ [তাবারী ২৩/৫২৯, সহীহ মুসলিম, আবূ দাঊদ, আহমাদ হা. ২৪৬৪৫]।

৩/২. রাসূল (সাঃ)-এর উপর অহী অবতীর্ণের সূচনালগ্নে যখন রাসূল (সাঃ) নিজের জীবন নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছিলেন তখন মুসলিম জননী খাদীজাহ (রাযি.) রাসূল (সাঃ)-কে শংকামুক্ত করণে সান্তনা প্রদানে ৫টি মহৎ গুণের উল্লেখ করেন। যথা :
فَقَالَتْ خَدِيْجَةُ كَلاَّ وَاللهِ مَا يُخْزِيْكَ اللهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الْكَلَّ، وَتَكْسِبُ الْمَعْدُوْمَ، وَتَقْرِيُ الضَّيْفَ، وَتُعِيْنُ عَلٰى نَوَائِبِ الْحَقِّ‏.
অতঃপর খাদীজাহ (রাযি.) বললেন, আল্লাহর কসম, কখনই নয়আল্লাহ্ আপনাকে কখনও লাঞ্ছিত করবেন না
ক. আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন।
খ. অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন
গ. নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন।
ঘ. মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং
ঙ. হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন
[হাদীসের মান : সহীহ। সহীহ বুখারী হা/নং ০৩ (শামেলা, ই.ফা, তা. পাব ও আ. প্র), সহীহ মুসলিম হা/নং ১৬০, আহমাদ হা/নং ২৬০১৮]।

৩/৩. আব্দুর রাযযাকও (রাহি.) অনুরূপ বর্ণণা করেছেন এবং সহীহ মুসলিমেও এ হাদীসটি পূর্ণরূপে বর্নিত হয়েছে।
[মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক ৩/৩০৭, সহীহ মুসলিম ১/৫১৩]।

৩/৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রকৃতিতে জন্মগতভাবেই আল্লাহ তা‘আলা পছন্দনীয় চরিত্র, উত্তম স্বভাব এবং পবিত্র অভ্যাস সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। সুতরাং এভাবেই কুরআনুল কারীমের উপর তাঁর ‘আমল এমনই ছিল যে, তিনি যেন ছিলেন কুরআনের আহকামের সাক্ষাত ‘আমলী নমুনা। প্রত্যেকটি হুকুম পালনে এবং প্রত্যেকটি নিষিদ্ধ বিষয় হতে বিরত থাকায় তাঁর অবস্থা এই ছিল যে, কুরআনের যা কিছু রয়েছে তা যেন তাঁরই অভ্যাস ও মহৎ চরিত্রের বর্ননা। উত্তম চরিত্রের সাথে সাথে তিনি ছিলেন, দয়াদ্র, ক্ষমা পরায়ন, ভদ্র এবং বিশিষ্ট গুণের অধিকারী। এ বিষয়ে সহীহায়িনে আনাস (রাযি.) থেকে একটি হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে।

৩/৫. আনাস (রাযি.) বলেন : ‘দশ বছর ধরে আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে থেকেছি, কিন্তু তিনি কোন এক দিনের জন্যও আমাকে উহ! (যন্ত্রণা প্রকাশক ধ্বনি) পর্যন্ত বলেননি। কোন করণীয় কাজ না করলেও এবং যা করণীয় নয় তা করে বসলেও তিনি আমাকে কোন শাসন গর্জণ করা এবং ধমক দেওয়াতো দূরের কথা ‘তুমি এরূপ কেন করলে’ অথবা ‘কেন এরূপ করলেনা’ এ কথাটিও বলেননি। তিনি সবারই চেয়ে বেশি চরিত্রবান ছিলেন। তাঁরই হাতের তালুর চেয়ে বেশি নরম আমি কোন রেশম অথবা অণ্য কোন জিনিস স্পর্স করিনি। আর তাঁর ঘাম অপেক্ষা বেশি সুগন্ধময় কোন মিশক অথবা আতর আমি শুঁকিনি। [বুখারী ৬০৩৮, ফাতহুল বারী ১০/৪৭১, মুসলিম ২৩০৯, মুসলিম ৪/১৮১৪, আহমাদ ৮৯৫২, সহীহ।]।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জীবনটাই ছিল কুরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি

৩/৬. ইমাম বুখারী (রাহি.) বারা (রাযি.) হতে বর্ণণা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সবচেয়ে সুন্দর ছিলেন, ছিলেন সবচেয়ে মধুরতম ব্যবহারের ব্যক্তিত্ব। তিনি খুব লম্বাও ছিলেননা এবং খুব খাটোও ছিলেননা। [ফাতহুল বারী ৬/৬৫২]।

এ সম্পর্কে বহু হাদীস রয়েছে। ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রাহি.) তাঁর ‘কিতাবুশ শামায়িল’ কিতাবে এ সম্পর্কীয় হাদীস বর্ণণা করেছেন।

৩/৭. মুসনাদে আহমাদে ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কখনো তাঁর হাত দ্বারা না তাঁর কোন দাসকে প্রহার করেছেন, না প্রহার করেছেন তাঁর কোন স্ত্রীকে এবং না প্রহার করেছেন অণ্য কোন কাউকে। তবে হ্যাঁ, আল্লাহর পথে জিহাদ করেছেন (এবং ঐ জিহাদে কেহকে মেরেছেন) সেটা অন্য কথা। যখন তাঁকে তাঁর পছন্দের দু’টি কাজের যে কোন একটি গ্রহণ করার অধিকার দেওয়া হত তখন তিনি সহজটি অবলম্বন করতেন। তবে সেটা পাপের কাজ হলে তিনি তা থেকে বহু দূরে থাকতেন। কখনও তিনি কারও নিকট হতে তাঁর নিজের কারণে কোন প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে কেহ আল্লাহর মর্যাদা ক্ষুন্ন করলে তিনি আল্লাহর আহকাম জারি করার জন্য অবশ্যই তার নিকট হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন। [আহমাদ ৬/২৩২, মুসলিম ৭/৮০]।

৩/৮. মুসনাদে আহমাদে আবূ হুরাইরা (রাযি.) হতে বর্ণিথ আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : ‘নিশ্চয়ই আমি উত্তম ও পরিপূর্ণ আদব-আখলাক বাস্তবে রূপায়িত করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি’। (অর্থাৎ নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি)।’ [আহমাদ ২/৩৮১, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৬৭০]।

৩/৯. আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর, কোন খারাপ কাজ হয়ে গেলে সাথে সাথে একটি ভাল কাজ কর, কেননা সে ভাল কাজ খারাপ কাজের অপরাধ মুছে দেবেআর মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার কর

৩/১০. আবূ দারদা (রাঃ) বলেন : নাবী (সাঃ) বলেন : কিয়ামতের দিন মুমিনের নেকীর পাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে আর কিছুই ভারী হবে না[তিরমিযী হা. ২০০২, সহীহ]। এ ছাড়াও উত্তম চরিত্রের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে

সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উত্তম, মহৎ ও মহান অনুপম চরিত্রের অনুসারী হয়ে নিজেদের চারিত্রিক সৌন্দর্যতা ও মাধুর্যতা আনয়ন করা। তাহলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বত্র শান্তি বিরাজ করবে

০৪. রাসূল (সাঃ) উত্তম, মহৎ, মহান ও অনুপম চরিত্রের অধিকারী’ বিষয় থেকে শিক্ষণীয় হলো :
ক. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উত্তম চরিত্রের অধিকারী যা আল্লাহ তাআলা নিজেই সত্যায়ন করেছেন
খ. আমাদের রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া উচিত
গ. জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে রাসূল (সাঃ)-এর অনুসরণ করা আবশ্যক।

০৫. তথ্যসূত্রঃ
ক. তাফসীর ইবন কাছীর ; বাংলা, ড. মুজীবুর রহমান, সূরা কলমের তাফসীর পৃঃ ৫২৬-৫২৮।
খ. তাফসীর ফাতহুল মাজীদ।
গ. তাফসীর আহসানুল বায়ান।
ঘ. তাফসীর যাকারিয়া।
ঙ. পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ভার্চুওয়াল লাইব্রেরী ‘মাকতাবাতুশ শামিলা’।
চ. ইউকিপিডিয়া ; ইন্টারনেট ভিত্তিক একটি উন্মুক্ত বিশ্বকোষ।
ছ. বাংলা হাদীস ভার্চুওয়াল লাইব্রেরী।

1 comment: