Wednesday, 4 December 2019

অপরকে ক্ষমা করা মহৎ গুণ বা কারো দুর্ব্যবহারের পরিবর্তে মহানুভবতার পরিচয়ঃ


আসহাবে রাসূল (সা.)-এর জীবন কথন ;
অপরকে ক্ষমা করা মহৎ গুণ বা কারো দুর্ব্যবহারের পরিবর্তে মহানুভবতার পরিচয়ঃ
আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
 

০১. অবতরণিকা :
আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা)-এর কঠোর ভায়ার চিঠির প্রতি উত্তর আমিরুল মুমিনীন মু‘আবিয়া (রা)-এর যাদুকরী ভাষার মাধুর্যতা ও শালীন আচরণ এবং অমায়িক ব্যবহারে অভিভুত, বিমহিত ও মুগ্ধতার বহিঃপ্রকাশ :

আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা)-এর পক্ষ থেকে মু‘আবিয়া (রা)-এর নিকট পত্রঃ

মক্কায় আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা)-এর কৃষি জমির পার্শ্বে মু‘আবিয়া (রা)-এর কৃষি জমি ছিল। একদা মু‘আবিয়া (রা)-এর কৃষি শ্রমিকরা আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা)-এর কৃষি জমিতে প্রবেশ করে জমির ফসল নষ্ট ও তছনছ করে ফেলে। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা) শামে অবস্থানরত খলীফাতুল মুসলিমিন মু‘আবিয়া (রা)-এর নিকট পত্র প্রেরণ করেন।

হইতে, 
রাসূল (সা.)-এর আস্থাভাজন প্রিয় শিষ্য, যাতুন নেতাকাইন (দুই ফিতা ওয়ালা কোমর বন্ধনী নারী) আসমা (রা.)-এর সন্তান আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর।

প্রতি,
মু‘আবিয়া ইবন হিন্দ বিনতে উতবাহ (কলিজা ভক্ষণকারিণী মহিলার) পুত্র।

কিছুক্ষণ পূর্বে আপনার শ্রমিক আমার কৃষি জমিতে প্রবেশ করে জমির ফসল নষ্ট ও তছনছ করে ফেলেছে। আপনি যদি তাদেরকে এহেন কর্ম-কান্ড হতে প্রতিহত করতে কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ না করেন তাহলে আপনি দেখবেন কি ঘটে!! যখন মু‘আবিয়া (রা)-এর নিকট পত্র পৌছল তখন পত্র পাঠ করে তিনি প্রতি উত্তরে পত্র প্রেরণ করেন। যার ভাষা ন্মিনররূপ :

মু‘আবিয়া ইবন হিন্দ বিনতে উতবাহ (কলিজা ভক্ষণকারিণী মহিলার) পুত্রের পক্ষ থেকে রাসূল (সা.)-এর আস্থাভাজন প্রিয় শিষ্য, যাতুন নেতাকাইন (দুই ফিতা ওয়ালা কোমর বন্ধনী নারী) আসমা (রা.)-এর সন্তান আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা)-এর প্রতি :

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাবকুতুহু
আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি! যিনি ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই। সমগ্র বিশ্বের যদি আমি মালিক হতাম, আর আপনি তা আমার কাছে চাইতেন, আল্লাহর কসম! আপনি চাহিবা মাত্রই আমি তাহা প্রদান করতাম। আমার এ পত্র পাওয়া মাত্রই আমার শ্রমিক ও কৃষি জমিকে আপনার শ্রমিক ও কৃষি জমির সাথে একীভূত করে ফেলুন।

ইতি
মু‘আবিয়া

অতঃপর যখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা)-এর কাছে এ পত্র পৌছল তখন, দু‘নয়নের অশ্রুজলে পত্র ভিজে গেল। আর সাথে সাথে তিনি শামে মু‘আবিয়া (রা)-এর কাছে ছুটে গেলেন এবং তার কপালে ও মস্তক চুম্বন করলেন।

০২. শিক্ষনীয় বিষয় :
ক. ভাষাগত শালীনতা ও সদাচারণের মাধুর্যতা দিয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকেউ কপোকাত করা সম্ভব।
খ. ইসলাম মানব জাতিকে অমায়িক ব্যবহার, অপরকে ক্ষমা করার মহৎ গুণ ও বৈশিষ্ট্য অর্জনের নির্দেশ প্রদান করেছে।
গ. আত্মসমালোচনার দৃষ্টিতে নিজের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করে সংশোধন করাই শ্রেয়।
ঘ. ঘটনমূলক সমালোচনার জন্য মার্জিত ভাষা ব্যবহার আবশ্যক।
ঙ. ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করণে কারো অপমান, অসম্মান করা, খাটো করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা আদৌ বৈধ নয়।

০৩. তাখরীজ / তথ্যসূত্র :
ক. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (পৃথিবীর আদি-অন্ত ইতিহাস)।
খ. সিয়ারে ‘আলামুন নূবালা
গ. আসহাবে রাসূলের জীবন কথা।
ঘ. মানাক্বেবে আব্দুল্লা ইবনে যুবাইর ও মু‘আবিয়া (রাঃ)।

০৪. তাহক্বীক্ব :
যদিও ইহা প্রসিদ্ধ একটি ঘটনা তথাপিও ইহার সততা ও গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে রয়েছে ভিন্নমত ও মতবেদ।

০৫. সতর্কতা অবলম্বন :
উপরোল্লেখিত উভয় সাহাবী (রা.) দ্বয়ই সম্মানিত। তাই কাউকে ভাল ও খারাপ না ভেবে তাদের কাজ-কর্ম থেকে আমাদের সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ অবিচল রেখে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে সাহাবা (রা.) গণের জীবনী থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন, আমীন।

No comments:

Post a Comment