বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহীম
অনাড়ি কলামিষ্টের কলমের খোঁচা ; না বলা কথা, চাপা পড়া আর্তনাদ
পুরুষ নির্যাতন, করণীয়, ইসলামে নারীর অবস্থানঃ
মুফতি আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
০১. অবতরণিকাঃ
এই পৃথিবীতে পুরুষ শাসিত সমাজে অহরহ নারী কর্তৃক পুরুষরা
নিযাতিত হচ্ছে। সমাজের অনেক পুরুষ
তার নিজ ঘরে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। চক্ষুলজ্জা আর পরিবারের কথা চিন্তা করে দিনের
পর দিন বউয়ের এসব নির্যাতন-নিপীড়ন আর হুমকি-ধমকি নীরবে সহ্য করছে আর অসংখ্য, অগণিত
পুরুষ নিরবে নিভৃতে সহ্য করার পাশাপাশি সংসারের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখছে।
সমাজে অনেক পুরুষই স্ত্রীর যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদেন। লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে চোখ মোছেন; কিন্তু দেখার কেউ নেই। বলারও উপায় নেই। বিভিন্নমহল থেকে পুরুষ নির্যাতন বন্ধে আইন
প্রণয়নেরও জোর দাবি জানানো হচ্ছে। আবার অনেকেই তো বলে
: পুরুষরা নারীর হাতে নির্যাতন
সহ্য করতে করতে নিরবে মানসিকভাবে মৃত্যুবরণ করছেন, অথচ বলতে পারছেন না।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, সমাজ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। বদলে যাওয়া সমাজেরই নতুন রূপ হচ্ছে পুরুষ
নির্যাতন। নির্যাতিত পুরুষের
কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ
দৈহিক-আর্থিক, কেউ সামাজিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। তথা বর্তমান সমাজে
স্যোসাল, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া সহ অনলাইন
ভিত্তিক সকল মিডিয়াগুলি এসব সবাদ ফলাও করছে। নারীরা তাদের রূপ-লাবন্য, সৌন্দর্যতা, অহঙ্কার, আত্মগৌরব, জৈবিক চাহিদা, অতিরিক্ত
প্রসাধনীসহ সাংসারিক নানা বিষয়ে অভিমান করে এবং পুরুষদেরকে মানসিকভাবে কখনোওবা
শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।
ঘরে-বাইরে এ ধররের নির্যাতন প্রায়ই ঘটছে। তুলনামূলক কম হলেও নির্যাতিত পুরুষের সংখ্যা
এদেশে নেহায়েত কম নয়। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে নারী
নির্যাতনের পরিসংখ্যান থাকলেও নেই পুরুষ নির্যাতনের সঠিক তথ্য। ফলে নারী নির্যাতনের
খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হলেও অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনাগুলো।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে
দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসার বন্ধন আগের চেয়ে অনেকটা হালকা। এছাড়া সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিক স্খলন, লোভ-লালসা, উচ্চবিলাসিতা, পরকীয়া, মাদকাসক্তি, অর্থনৈতিক
বৈষম্য,
বিশ্বায়নের ক্ষতিকর প্রভাব, অবাধ আকাশ সাংস্কৃতিক প্রবাহসহ নানা কারণেই এমনটা ঘটছে। যার চরম পরিণতি হচ্ছে
সংসারের ভাঙন ও নির্যাতন। পারিবারিক অশান্তি ও সংসার ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী-পুরুষ উভয়ই। উচ্চবিত্ত থেকে
নিম্নবিত্ত সমাজের সব অংশই প্রতিনিয়ত ভুগছেন নানা পারিবারিক যন্ত্রণায়। এক্ষেত্রে নির্যাতিত
নারীর পাশে সমাজের অনেকেই সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু পুরুষশাসিত এ সমাজে পুরুষও যে নির্যাতিত
হতে পারে সেটি যেন কারও ভাবনাতেই নেই। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আড়ালেই থেকে যায় পুরুষ নির্যাতনের
করুণ কাহিনী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্ত্রী কর্তৃক
নির্যাতনের শিকার হলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না পুরুষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের ভবিষ্যৎ, সামাজিক মর্যাদা, চক্ষুলজ্জা, জেল-পুলিশ আর উল্টো মামলার ভয়ে বাধ্য হয়ে স্ত্রীর নির্যাতন
নীরবে সহ্য করে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। পুরুষ চাইলেও নির্যাতনের কথা বলতে পারছে না। অন্যদিকে একজন নারী
আইনের অপব্যবহার করে ইচ্ছে করলেই ঘটনা সাজিয়ে পুরুষের বিরুদ্ধে থানা বা আদালতে
সহজেই নারী নির্যাতনের মামলা বা যৌতুক মামলা দিতে পারছেন।
০৩. কী চাই নারী? এদের ব্যাপারে কাজী নজরুলের ঐতিহাসিক নারী কবিতার কৃদয়াংশ উল্লেখ্য :
‘‘নারী নাহি হতে চায় শুধু
একা কারো,
এরা দেবী,, এরা লোভী,,
যত পূজা পায় এরা,, তত চায় আরো...
ইহাদের অতি লোভী মন,,
একজনে তৃপ্ত নয়,,
এক পেয়ে সুখী নয়,,
যাচে বহুজন..।’’
‘যা বিদ্রোহী কবি নজরুলের বচন।’
কবির এই বক্তব্যই চির সত্য তা নয় বরং কবির আবেগ ও মনোভাব মাত্র। এর বিপরীতও
হতে পারে।
তথাকিথিত প্রগতিবাদিদের মত গা এলিয়ে নারীদেরকে নিয়ে ‘যা ইচ্ছে তা করা বা বল’
বা নারীদের একদম নিকৃষ্ঠ মনে করে ‘যা ইচ্ছে তাই বলা’ এই প্রবন্ধের মূখ্য উদ্দেশ্য
নয় বরং আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নারী তথা ‘মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধুদের’ দোষগুলো
সংশোধনের নিমিত্তই বহমান এই প্রবন্ধের আলোচনা।
০৪. ইসলামে নারী তথা ‘মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধুদের’ সৎ রমণী,
সতী-সাধবী স্ত্রীর শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছেঃ
সৎ রমণী, সতী-সাধবী স্ত্রী
হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদঃ আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন :
اَلدُّنْيَا كُلُّهَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا
اَلْمَرْأَةُ الصَّالِحَة ‘সমস্ত পৃথিবী হচ্ছে সম্পদ, আর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে সৎ, সতী-সাধবী স্ত্রী’।
ব্যাখ্যাঃ একজন মুসলিম পুরুষের জীবনে সঙ্গী নির্বাচন করার জন্য একজন নেক ও সৎ রমণী
প্রয়োজন। আর মুসলিম রমণীর উপর
আবশ্যক হচ্ছে, নেক স্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। এ অবস্থায় আল্লাহ দু’জনের
উপরই সন্তুষ্ট হন। তাই নেককার রমণীর
মাধ্যমে শুধুমাত্র দুনিয়ার জীবনই নয় আখিরাতের জীবনও শান্তিময় হতে পারে। সংসারে ধৈর্য্য-সহ্য, সংযম ও সহিষ্ণতার খুবই প্রয়োজন। এক্ষেত্রে স্বামীর চেয়ে স্ত্রীকেই বেশি
ধৈর্যশীল ও সংযমী হতে হয়। সুতরাং মহান আল্লাহ সকল মা-বোনদের এই গুণে-গুণান্বিতা হওয়ার তাওফীক দান করুন, আমীন। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম, দুগ্ধপান
অধ্যায় : হা/নং ২৬৬৮, মিশকাত (বাংলা) হা/নং ২৯৪৯, সুনান নাসায়ী হা/নং ৩২৩২]।
০৫. এসম্পর্কে
আরো বিস্তারিত পড়তে বা জানতে পড়ুন আমার লেখা প্রবন্ধ ;
সৎ
ও আদর্শ নারী, রমণী বা স্ত্রী ; সৌভাগ্যের চাবি স্বরূপঃ
০৬. উপসংহারঃ
নারীদেরকে নিয়ে শুধু
খারাপ বর্ণনা করা ও খারাপ না বলে তাদের দোষগুলি সংশোধনের সুযোগ দেয়া এবং তাদেরকে
কুরআন ও হাদীসের আলোকে সৎ উপদেশ দিয়ে ভাল করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা
অত্যন্ত প্রসংশনীয় ও কল্যাণকরও বটে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা নারীদেরকে এবং
পুরুষদেরকে নিজেদের কৃতকর্মের সকল অপরাধ থেকে অনুশোচিত হয়ে তাওবাহ করে বেশি করে সৎ
কর্ম করার তাওফীক দান করুন, আমীন।
No comments:
Post a Comment