বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
বাঙ্গালী সংস্কৃতির নামে, অপসংস্কৃতির আগ্রাসনঃ
পহেলা বৈশাখ : অপসংস্কৃতির ভয়াবহ কালো থাবা (পাঠ ০১)
মুফতি আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
০১. অবতরণিকাঃ
অপসংস্কৃতির কৃষ্ণ-কালো
ধুম্রকুঞ্জ বাংলাদেশের আকাশ-বাতাসকে গ্রাস করে চলেছে। ধর্মহীনতা, নৈতিকতাবিচ্ছিন্ন সংশয়বাদিতার তীব্র প্লাবনে শিকড়বিহীন কচুরিপনার মত অস্থিরচিত্তে মানবজাতি দিনাতীপাত করছে এক অনিশ্চিত ও অজানা গন্তেব্যের পানে। বর্তমানে সংষ্কৃতির একটি বড় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে নববর্ষ পালন, পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়া, সাথে আছে নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার সুবর্ণসুযোগ। নববর্ষকে আহ্বান জানাতে গিয়ে মুসলিম নর-নারী আবেগে উত্তেজনায় হিল্লোলিত হয়ে বড় ধরণের অপরাধ ও শিরকের মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছে। পহেলা বৈশাখে ভোর না হতেই নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার মধ্য দিয়ে রমনার বটমূলে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার মহোৎসব শুরু হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা চত্বরে যুবক-যুবতীরা তাদের বুকে-পিটে উল্কি একে নেবার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। নানা দিকে নানান মিছিল শুরু হয়ে যায়। আর মিছিল শুধু মিছিল নয়, ঢোল-তবলা ও বাদ্যসহকারে জন্তু-জানোয়ারের মুখোশ পরিহিতি নারী-পুরুষের বেহায়াপনার অঙ্গভঙ্গি নিয়ে এক অস্থির দৃশ্য তৈরি করা হয়। এরা যখন বানর, হনুমান, বাঘ, ভাল্লুক, হাতি, ঘোড়ার মুখোশ পরে রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে তখন, মনে হয় এরা নিজেদের মানুষ পরিচয় দিতেই লজ্জবোধ করে। এরা যেন বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের চেয়ে বিবেক-বিবেচনাহীন বানর, হনুমান, বাঘ, ভাল্লুক, হাতি হতে বেশি ভালবাসে। তাছাড়া বর্তমানে তো তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ তাদের চেয়েও নীচে নেমে গেছে। সারাটি দিন এক শ্রেণির বেহায়া মানুষের অসভ্য-অশ্লীলতার দুর্গন্ধে ভরে থাকে। আর সন্ধ্যায় শুরু হয়ে যায় পূজারী-পূজারিণীদের ‘এসো হে বৈশাখ’ ইত্যাদি আরতি ধরণের বন্দনগীতি দিয়ে দেহমন সমর্পিত সাংস্কৃতিক সন্ধ্যানুষ্ঠান। যা আসলে প্রকৃতি পূজা ও রবীন্দ্রপূজারই নামান্তর। আর এসবই চলতে থাকে তথাকথিত ‘প্রগতিবাদ’, ‘আধুনিকতাবাদ’ নামে ‘নান্দনিকতবাদ’ ও আবহমান বাঙ্গালী সংস্কৃতির নামে। পক্ষান্তরে এসবই হারাম ও নিষিদ্ধ। ক্ষমার অযোগ্য, শাস্তিযোগ্য অপরাধ ; বিদ’আত, কুফর ও শিরকে পরিপূর্ণ।
২. পহেলা এপ্রিল ; ইতিহাস ও বিধি-বিধানঃ
এপ্রিল মাসে আমরা বাংলাদেশীরা একটি উৎসব করে থাকি, তা হলো ১৪ই এপ্রিল। অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ পালন করা। আমাদের দেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন মূলত ইসলামী হিজরী সনেরই একটি রূপ। ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বৎসর সৌর বৎসরর চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর।। এজন্য ভারতের মোগল সম্রাট আকবারের সময়ে প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৩. সৌর সন বা বাংলা সনের সূচনাঃ
সম্রাট আকবার তার দরবারের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ ‘আমির ফতুল্লাহ্ শিরাজী’-কে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খৃষ্টাব্দে সম্রাট
আকবার এ হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ২৯ (ঊনত্রিশ) বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরী সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।
সুতরাং বাংলা সন মূলত হিজরী সন। রাসূল (সাঃ)-এর হিজরত থেকেই এ পঞ্জিকার শুরু। ১৪১৫ বঙ্গাব্দ অর্থ রাসূল (সাঃ)-এর হিজরতের পর ১৪১৫ বৎসর। ৯৬২ চান্দ্র বৎসর ও পরবর্তী ৪৫৩ বৎসর সৌর বৎসর। সৌর বৎসর চান্দ্র বৎসরের চেয়ে ১১/১২ দিন বেশি এবং প্রতি ৩০ বৎসরে চান্দ্র বৎসর এক বৎসর বেড়ে যায়। এজন্য ১৪৩৩ হিজরী সাল মোতাবেক বাংলা ১৩১৮-১৯ সাল হয়।
মোগল সময় থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং কিছু আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার সকল ব্যবসায়ী ও দোকানদার পহেলা বৈশাখে ‘হালখাতা’ করতেন। পহেলা বৈশাখ এসব কর্মকান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটি মূলতঃ রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন নিয়ম-কানুনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ছিল। এ ধরনের কিছু সংঘটিত হওয়া মূলত ইসলামে নিষিদ্ধ বলার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
কিন্তু বর্তমানে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এমন কিছু কর্মকান্ড করা হচ্ছে যা কখনোই পূর্ববর্তী সময়ে বাঙ্গালীরা করেননি; বরং এর অধিকাংশই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে প্রচন্ডভাবে সাংঘর্ষিক। পহেলা বৈশাখের নামে বা নববর্ষ উদযাপনের নামে যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীদেরকে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও এদেশের মানুষেরা যা জানত না এখন নববর্ষের নামে তা আমাদের সংস্কৃতির অংশ বানানো হচ্ছে।
৪. বাংলার প্রাচীন জনগোষ্টির ইতিকথাঃ
বাংলার প্রাচীন মানুষেরা ছিলেন দ্রাবিড় বা সম্মানিত রাসূল নূহ আলাইহিস সালাম-এর বড় ছেলে সামের বংশধর। খৃষ্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে ইয়াফিসের সন্তানদের এশটি গ্রুপ আর্য নামে ভারতে আগমন করে। ক্রমান্বয়ে তারা ভারত দখল করে ও আর্য ধর্ম ও কৃষ্টিই পরবর্তীতে ‘হিন্দু’ ধর্ম নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ভারতের দ্রাবিড় ও অর্নায ধর্ম ও সভ্যতাকে সর্বদা হাইজ্যাক করেছে আর্যগণ। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ‘বাঙ্গালী’ সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে হাইজ্যাক করা। আর্যগণ বাংলাভাষা ও বাঙ্গালীদের ঘৃণা করতেন। বেদে ও পুরাণে বাংলাভাষাকে পক্ষীর ভাষা ও বাঙ্গালীদেরকে দস্যু- দাসের ভাষা ইত্যাদি বলা হয়েছে। মুসলিম সুলতানগণের আগমনের পরে তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গুরুত্বারূপ করেন। বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলতে বাংলার প্রাচীন লোকজ সংস্কৃতি ও মুসলিম সংস্কৃতির সংমিশ্রণ বুঝানো হতো। কিন্তু ক্রমান্বয়ে আর্যগণ ‘বাঙ্গালীত্ব’ বলতে হিন্দুত্ব বলে মনে করেন ও দাবি করেন। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদিগণ ভারতীয়ত্ব বা ‘হিন্দুত্ব’ হিন্দু ধর্মত্ব বলে দাবি করেন এবং ভারতের সকল ধর্মের মানুষদের হিন্দু ধর্মের কৃষ্টি ও সভ্যতা গ্রহণ বাধ্যতামূলক বলে দাবি করেন। তেমনিভাবে বাংলায় আর্য পন্ডিতগণ বাঙ্গালীত্ব বলতে হিন্দুত্ব ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বলতে হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলতে হিন্দু সংস্কৃতি বলে মনে করেন। এজন্যই তারা মুসলিমদের বাঙ্গালী বলে স্বীকার করেন না। শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’ গল্পে আমরা দেখেছি যে, বাঙ্গালী বলতে শুধু বাঙ্গালী হিন্দুদের বুঝানো হয়েছে এবং মুসলিমদেরকে তাদের বিপরীতে দেখানো হয়েছে। এ মানসিকতা এখনো একইভাবে বিদ্যমান। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদেরকে ‘বাঙ্গালী’ পরিচয় দিলে বা জাতিতে ‘বাঙ্গালী’ লিখলে ঘোর আপত্তি করা হয়। এ মানসিকতার ভিত্তিতেই ‘পহেলা বৈশাখে’ বাঙ্গালী সংস্কৃতির নামে পৌত্তলিক বা অশ্লীল কৃষ্টি ও সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে প্রচার করা হচ্ছে।
৫. ইসলাম ধর্মে উৎসবের রূপরেখাঃ
অনেকে উপলব্ধি না করলেও, উৎসব সাধারণত একটি জাতির ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত হয়। উৎসবের উপলক্ষগুলো খোঁজ করলে পাওয়া যাবে উৎসব পালনকারী জাতির ধমনীতে প্রবাহিত ধর্মীয় অনুভূতি, সংস্কার ও ধ্যান-ধারণার ছোঁয়া। উদাহরণস্বরূপ, খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন তাদের বিশ্বাসমতে স্রষ্টার পুত্রের জন্মদিন।
মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হত ২৫ শে মার্চ, এবং তা পালনের উপলক্ষ ছিল এই যে, ঐ দিন খ্রীষ্টীয় মতবাদ অনুযায়ী মাতা মেরীর নিকট ঐশী বাণী প্রেরিত হয় এই মর্মে যে, মেরী ঈশ্বরের পুত্রের জন্ম দিতে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সূচনার পর রোমক ক্যাথলিক দেশগুলো পয়লা জানুয়ারী নববর্ষ উদযাপন করা আরম্ভ করে। ঐতিহ্যগতভাবে এই দিনটি একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই পালিত হত। ইহুদীদের নববর্ষ ‘রোশ হাশানাহ’ ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদীদের ধর্মীয় পবিত্র দিন সাবাত হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে প্রায় সকল জাতির উৎসব-উপলক্ষের মাঝেই ধর্মীয় চিন্তা-ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর এজন্যই ইসলাম ধর্মে নবী মুহাম্মাদ (সা.) পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসবকে নির্ধারণ করেছেন, ফলে অন্যদের উৎসব মুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। রাসূল (সা.) বলেছেন : إِنَّ
لِقَوْمٍ عِيْدًا وَهَذَا عِيْدُنَا ‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ’ [সহীহ বুখারী ও মুসলিম]।
বিখ্যাত মুসলিম পন্ডিত ; ইমাম ইবনে তাইমিয়া এ সম্পর্কে বলেন : উৎসব-অনুষ্ঠান ধর্মীয় বিধান, সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেরই একটি অংশ, যা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন : ﴿لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ
شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا﴾ ‘তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি’ [সূরা মায়িদাহ : ৪৮]। অনুরূপভাবে মহান
আল্লাহ আরো বলেন : ﴿لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا هُمْ نَاسِكُوهُ﴾ ‘প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা, তাদেরকে পালন করতে হয়’ [সূরা
হাজবজ : ৬৭]।
যেমনটি কিবলাহ, সালাত এবং সাওম ইত্যাদি। সেজন্য তাদের [অমুসলিমদের] উৎসব-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া আর তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এই উৎসব-অনুষ্ঠানের সাথে একমত পোষণ করার অর্থ কুফরের সাথে একমত পোষণ করা। আর এসবের একাংশের সাথে একমত পোষণ করার অর্থ কুফরের শাখা বিশেষের সাথে একমত হওয়া। উৎসব-অনুষ্ঠানাদি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার দ্বারা ধর্মগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। নিঃসন্দেহে তাদের সাথে এসব অনুষ্ঠান পালনে যোগ দেয়া একজনকে কুফরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর বাহ্যিকভাবে এগুলোতে অংশ নেয়া নিঃসন্দেহে পাপ। উৎসব অনুষ্ঠান যে প্রতিটি জাতির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, এর প্রতি রাসূল (সা.) ইঙ্গিত করেছেন। তিনি বলেছেন : إِنَّ لِقَوْمٍ عِيْدًا
وَهَذَا عِيْدُنَا ‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ’ [সহীহ বুখারী ও মুসলিম]।
এছাড়াও আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণিত, ‘রাসূল (সা.) যখন [মদীনায়] আসলেন, তখন তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। তিনি [রাসুল (সা.)] বললেন, ‘এ দুটো দিনের তাৎপর্য কি?’ তারা বলল, ‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো দিনে উৎসব করতাম।’ রাসূল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদেরকে এদের পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেন : ইয়াওমুদ্দুহা ও ইয়াওমুল ফিতর [ঈদুল আয্হা ও ঈদুল ফিতর]’ [সুনান আবু দাউদ]।
এ হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ইসলাম আগমনের পর ইসলাম বহির্ভূত সকল উৎসবকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে এবং নতুনভাবে উৎসবের জন্য দুটো দিনকে নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সাথে অমুসলিমদের অনুসরণে যাবতীয় উৎসব পালনের পথকে বন্ধ করা হয়েছে।
ইসলামের এই যে উৎসব - ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা - এগুলো থেকে মুসলিম ও অমুসলিমদের উৎসবের মূলনীতিগত একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য স্পষ্ট হয় এবং এই বিষয়টি আমাদের খুব গুরুত্বসহকারে লক্ষ্য করা উচিৎ, যা হচ্ছে : অমুসলিম, কাফির কিংবা মুশরিকদের উৎসবের দিনগুলো হচ্ছে তাদের জন্য অশৃঙ্খল আচরণের দিন, এদিনে তারা নৈতিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, আর এই কর্মকান্ডের অবধারিত রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও ব্যভিচার। এমনকি খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের বহুলোক তাদের পবিত্র বড় দিনেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যকে জরাঞ্জলী দিয়ে মদ্যপ হয়ে ওঠে, এবং পশ্চিমা বিশ্বে এই রাত্রিতে কিছু লোক নিহত হয় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ী চালানোর কারণে।
অপরদিকে মুসলিমদের উৎসব হচ্ছে ইবাদতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এই বিষয়টি বুঝতে হলে ইসলামের সার্বিকতাকে বুঝতে হবে। ইসলাম কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠানের সমষ্টি নয়, বরং তা মানুষের গোটা জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে উদ্যোগী হয়। তাই একজন মুসলিমের জন্য জীবনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইবাদত, যেমনটি কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিচ্ছেন : ﴿وَمَاخَلَقْتُ الْجِنَّ
وَالإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنَ﴾ ‘আমি জ্বিন ও মানুষকে আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করিনি’ [সূরা যারিয়াত : ৫৬]।
সেজন্য মুসলিমের জীবনের আনন্দ-উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়, বরং তা নিহিত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া আদেশ পালন করতে পারার মাঝে, কেননা মুসলিমের ভোগবিলাসের স্থান ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়, বরং চিরস্থায়ী জান্নাত। তাই মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখিরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালবাসা ।
তাইতো দেখা যায় যে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা -এ দুটো উৎসবই নির্ধারণ করা হয়েছে ইসলামের দুটি স্তম্ভ পালন সম্পন্ন করার প্রাক্কালে। ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ সাওম পালনের পর পরই মুসলিমরা পালন করে ঈদুল ফিতর, কেননা এই দিনটি আল্লাহর আদেশ পালনের পর আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার ও ক্ষমার ঘোষণা পাওয়ার দিন বিধায় এটি সাওম পালনকারীর জন্য বাস্তবিকই উৎসবের দিন। এদিন এজন্য উৎসবের নয় যে, এদিনে আল্লাহর দেয়া আদেশ নিষেধ শিথিল হতে পারে না, যেমনটি বহু মুসলিমদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা এই দিনে আল্লাহর আদেশ নিষেধ ভুলে গিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, বরং মুসলিমের জীবনে এমন একটি মুহূর্তও নেই, যে মুহূর্তে তার ওপর আল্লাহর আদেশ নিষেধ শিথিলযোগ্য। তেমনিভাবে ঈদুল আযহা পালিত হয় ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হাজ্জ পালনের প্রাক্কালে। কেননা ৯ই জিলহজ্জ হচ্ছে ইয়াওমুল ‘আরাফা, এদিনটি ‘আরাফাতের ময়দানে হাজীদের ক্ষমা লাভের দিন, আর তাই ১০ই জিলহজ্জ হচ্ছে আনন্দের দিন ঈদুল আযহা। এমনিভাবে মুসলিমদের উৎসবের এ দুটো দিন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করার দিন, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন এবং শরী‘য়তসম্মত বৈধ আনন্দ উপভোগের দিন। এই উৎসব মুসলিমদের ঈমানের চেতনার সাথে একই সূত্রে গাঁথা।
৬. নতুন বছরের সাথে মানুষের কল্যাণের সম্পর্কঃ
‘নতুন বছর নতুন কল্যাণ বয়ে আনে, দূরীভূত হয় পুরোনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি।’ এধরনের কোন তত্ত্ব ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়, বরং নতুন বছরের সাথে কল্যাণের শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতি-পুজারী মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অবশিষ্টাংশ। ইসলামে এ ধরনের কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান হীরকখন্ড, হয় সে এই মুহূর্তকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে, নতুবা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বছরের প্রথম দিনের কোন বিশেষ তাৎপর্য নেই। আর তাইতো ইসলামে হিজরী নববর্ষ পালনের কোন প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়নি। না কুরআনে এর কোন নির্দেশ এসেছে, না হাদীসে এর প্রতি কোন উৎসাহ দেয়া হয়েছে, না সাহাবীগণ এরূপ কোন উপলক্ষ পালন করেছেন। এমনকি ‘পহেলা মুহাররামকে নববর্ষের সূচনা হিসেবে গণনা করা শুরুই হয় নবীজীর (সা.) মৃত্যুর বহু পরে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর আমলে। এ থেকে বোঝা যায় যে, নববর্ষ ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা তাৎপর্যহীন, এর সাথে জীবনে কল্যাণ-অকল্যাণের গতিপ্রবাহের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই, আর সেক্ষেত্রে ইংরেজি বা অন্য কোন নববর্ষের কিইবা তাৎপর্য থাকতে পারে ইসলামে?
কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করল। যদি সে মনে করে যে আল্লাহ এই উপলক্ষের দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল। আর কেউ যদি মনে করে যে নববর্ষের আগমনের এই ক্ষণটি নিজে থেকেই কোন কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে লিপ্ত হল, যা তাকে ইসলামের গন্ডীর বাইরে নিয়ে গেল।
আর এই শিরক এমন অপরাধ যে, শিরকের ওপর কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে চিরতরে হারাম করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন : ﴿إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ
بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا
لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ﴾ ‘নিশ্চয়ই যে কেউই আল্লাহর অংশীদার স্থির করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন, আর তার বাসস্থান হবে অগ্নি। এবং যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই’। [সূরা
মায়িদাহ : ৭২]।
নববর্ষ উদযাপনের সাথে মঙ্গলময়তার এই ধারণার সম্পর্ক রয়েছে বলে কোন কোন সূত্রে দাবী করা হয়, যা কিনা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। মুসলিমদেরকে এ ধরনের কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে ইসলামের যে মূলতত্ত্ব: সেই তাওহীদ বা একত্ববাদের ওপর পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
৭. নববর্ষের অনুষ্ঠানাদি : শয়তানের পুরোনো কূটচালের নবায়নঃ
আমাদের সমাজে নববর্ষ যারা পালন করে, তারা কি ধরনের অনুষ্ঠান সেখানে পালন করে, আর সেগুলো সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য কি? নববর্ষের অনুষ্ঠানাদির মধ্যে রয়েছে : পটকা ফুটিয়ে বা আতশবাজি পুড়িয়ে রাত ১২টায় হৈ-হুল্লোড় করে পরিবেশ ও প্রতিবেশের শান্তি বিনষ্ট করে নববর্ষকে স্বাগত জানানো, ব্যান্ড সঙ্গীত বা অন্যান্য গান-বাজনার ব্যবস্থা, সম্ভ্রান্ত পল্লী বাড়িতে বা ক্লাবে গান-বাজনা, মদ্যপান ও পান শেষে ব্যভিচারের আয়োজন ইত্যাদি। এছাড়া রেডিও, টি.ভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান ও পত্র-পত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্র ও ‘রাশিফল’ প্রকাশ।
৮. বিদেশী সংস্কৃতির জন্য মায়া কান্না / কথা সত্য মতলব খারাপঃ
এক সময় বাংলা বর্ষপঞ্জি এদেশের মানুষের জীবনের অংশ ছিল। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কৃষি ও কর্ম এ পঞ্জিকা অনুসারেই চলত। এজন্য পহেলা বৈশাখ হালখাতা বা অনুরূপ কিছু অনুষ্ঠান ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে আমাদের জীবনের কোথাও বঙ্গাব্দের কোনো প্রভাব নেই। কাগজে কলমে যাই লেখা হোক, প্রকৃতপক্ষে আমরা নির্ভর খৃষ্টীয় পঞ্জিকার উপর। যে বাংলা বর্ষপঞ্জি আমরা বছরের ৩৬৪ দিন ভুলে থাকি, সে বর্ষপঞ্জির প্রথম দিনে আমরা সবাই ‘বাঙ্গালী’ সাজার চেষ্টা করে এ নিয়ে ব্যাপক হইচই করি। আর এ সুযোগে দেশীয় ও বিদেশী বেনিয়োগণ ও আধিপত্যবাদীগণ তাদের ব্যবসা বা আধিপত্য প্রসারের জন্য এ দিনটিকে কেন্দ্র করে বেহায়াপনা-বেলেল্লপনা, অশ্লীলতা ও অনৈতিকতার প্রচার করে।
পাশ্চাত্য সভ্যতার অনেক ভাল দিক আছে। কর্মস্পৃহা, মানবাধিকার, আইনের শাসন ইত্যাদি অনেক গুণ তাদের মধ্যে বিদ্যমান। পাশাপাশি তাদের কিছু দোষ আছে যা তাদের সভ্যতার ভাল দিকগুলি ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ দোষগুলির অন্যতম হলো মাদকতা ও অশ্লীলতা। আমরা বাংলাদেশের মানুষেরা পাশ্চাত্যের কোনো ভালগুণ আমাদের সমাজে প্রসার করতে পারিনি বা চাইনি। তবে তাদের অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও মাদকতার ধ্বংসাত্মক দিকগুলি আমরা খুব আগ্রহের সাথে গ্রহণ করতে ও প্রসার করতে চাচ্ছি। এজন্য খৃষ্টীয় ক্যালেন্ডারের শেষ দিনে ও প্রথম দিনে ‘থার্টিফার্ষ্ট নাইট’ ও ‘নিউ-ইয়ারস’-ডে বা নববর্ষ উপলক্ষ্যে আমাদের বেহায়াপনার শেষ থাকে না।
পক্ষান্তরে, আমাদের দেশজ সংস্কৃতির অনেক ভাল দিক আছে। সামাজিক শিষ্টাচার, সৌহার্দ্য, জনকল্যাণ, মানবপ্রেম ইত্যাদি সকল মূল্যবোধ আমরা সমাজ থেকে তুলে দিচ্ছি। পক্ষান্তরে দেশীয় সংস্কৃতির নামে অশ্লীলতার প্রসার ঘটানো হচ্ছে। বেপর্দা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, মাদকতা ও অপরাধ একসূত্রে গাথা। যুবক-যুবতীদেরকে অবাধ মেলামেশা ও বেহায়াপনার সুযোগ দিবেন, অথচ তারা অশ্লীলতা, ব্যভিচার, এইডস, মাদকতা ও অপরাধের মধ্যে যাবে না, এরূপ চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। অন্যান্য অপরাধের সাথে অশ্লীলতার পার্থক্য হলো, কোনো একটি উপলক্ষ্যে একবার এর মধ্যে নিপতিত হলে সাধারণভাবে কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীরা আর এ থেকে বেরোতে পারে না। বরং ক্রমান্বয়ে আরো বেশি পাপ ও অপরাধের মধ্যে নিপতিত হতে থাকে। কাজেই নিজে এবং নিজের সন্তান ও পরিবার-পরিজনকে সকল অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করুন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেছেন :
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ﴾
‘হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা ঐ অগ্নি থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশ্তাগণ, যারা অমান্য করে না আল্লাহ্ যা আদেশ তাদেরকে করেন তা এবং তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হন তাই করেন’। [সূরা তাহরীম : ০৬]।
আব্দুল্লাহ্ ইবনু ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা) কে বলতে শুনেছি :
كُلُّكُمْ
رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، الإِمَامُ رَاعٍ وَمَسْئُولٌ
عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِي أَهْلِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ
رَعِيَّتِهِ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ فِي بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْئُولَةٌ عَنْ
رَعِيَّتِهَا، وَالْخَادِمُ رَاعٍ فِي مَالِ سَيِّدِهِ وَمَسْئُولٌ عَنْ
رَعِيَّتِهِ
তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, রাষ্ট্রনেতা তার প্রজাদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল আর তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পুরুষ লোক তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন মহিলা তার স্বামীর ঘরের সার্বিক ব্যাপারে দায়িত্বশীলা, তাকে সেটার পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পরিচারক তার মালিকের সম্পদের সংরক্ষক, আর তাকে সেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’ [সহীহ বুখারী হা/নং ৮৯৩, সহীহ মুসলিম হা/নং
১৮২৯]।
সম্মানিত পাঠক! পহেলা বৈশাখ বা অন্য কোনো উপলক্ষ্যে ছেলে-মেয়েদেরকে বেপর্দা ও বেহায়াপনার সুযোগ দিবেন না। তাদেরকে বুঝান ও নিয়ন্ত্রণ করুন। আপনি মসজিদে সালাত আদায় করছেন আর আপনার ছেলে-মেয়ে পহেলা বৈশাখের নামে বেহায়াভাবে মিছিল বা উৎসব করে বেড়াচ্ছে। আপনার ছেলে-মেয়ের পাপের জন্য আপনার আমলনামায় গোনাহ জমা হচ্ছে। শুধু তাই নয়। অন্য পাপ আর অশ্লীলতার পার্থক্য হলো, যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-সন্তানদের বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয় তাকে ‘দাইউস’ বলা হয়। আর রাসূল (সাঃ) বারংবার বলেছেন যে, : ‘তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করেছেন ; মাদকাসক্ত, পিতা-মাতার অবাধ্য এবং দাইউস, যে তার পরিবারের মধ্যে ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয়’। [মুসনাদে আহমাদ ২/৬৯]।
নিজেকে এবং নিজের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করার পাশাপাশি মু’মিনের দায়িত্ব হলো সমাজের মানুষদেরকে সাধ্যমত ন্যায়ের পথে ও অন্যায় বর্জনে উদ্বুদ্ধ করা। কাজেই পহেলা বৈশাখ ও অন্য যে কোনো উপলক্ষ্যে ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশা ও বেহায়াপনার ক্ষতি, অন্যায় ও পাপের বিষয়ে সবাইকে সাধ্যমত সচেতন করা। যদি আপনি তা করেন তবে কেউ আপনার কথা শুনুক অথবা না শুনুক আপনি আল্লাহর কাছে অফুরন্ত সাওয়াব লাভ করবেন। আর যদি আপনি তা না করেন তবে এ পাপের গযব আপনাকেও স্পর্শ করবে। কুরআন ও হাদীসে বিষয়টি বারংবার বলা হয়েছে।
ব্যবসায়িক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক কোনো স্বার্থে অনেক মুসলিম পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশা ও বেহায়াপনার পথ খুলে দেওয়ার জন্য মিছিল, মেলা ইত্যাদির পক্ষে অবস্থান নেন। আপনার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য এরচেয়ে ভয়ঙ্কর আর কিছুই হতে পারে না। অশ্লীলতা প্রসারের ভয়ঙ্কর পাপ ছাড়াও ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা ধ্বনিত হচ্ছে। মহান আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেছেন :
﴿إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آَمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ﴾
‘যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার-প্রসার ঘটুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ্ তা’আলা জানেন, তোমরা জান না’ [সূরা নূর : ১৯]।
সম্মানিত পাঠক! সাবধান হোন! সতর্ক হোন! আপনি কি আল্লাহর সাথে পাল্লা দিবেন? আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে আপনি কি জয়ী হবেন? কখন কিভাবে আপনার ও আপনার পরিবারের জীবনে ‘যন্ত্রণাদায়ক শান্তি’ নেমে আসবে তা আপনি বুঝতেও পারবেন না। আপনার রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক বা অন্য কোনো স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অন্য পথ দেখুন। অন্য বিকল্প চিন্তা করুন। তবে কখনোই অশ্লীলতার প্রচার-প্রসার ঘটে এরূপ কোনো বিষয়কে আপনার স্বার্থ উদ্ধারের বাহন বানাবেন না।
৯. পহেলা বৈশাখে অপসংস্কৃতির ভয়াবহ কালো থাবা ; ঈমান ও ইসলাম বিধ্বংসী কার্যক্রমসমূহঃ তথা পান্তা-ইলিশ ভক্ষণ ও নগ্নপদে বিচরণঃ
এটা সম্পূর্ণরূপে অর্থ-সম্পদ অপচয়-অপব্যয় এবং অমুসলিমদের সংস্কৃতির অনুকরণের নামান্তর যা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।
ক. মহান আল্লাহ তা’আলা অর্থ-সম্পদ অপব্যয় ও অপচয়কে নিষেধ করে দিয়েছেন : ﴿وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا
تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ ﴾ অর্থ : ‘খাও ও পান কর এবং অপচয়-অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না’ [সূরা আ‘রাফ : ৩১]।
খ. অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে : ﴿إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ
كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا﴾ অর্থ : ‘নিশ্চয় অপচয়-অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ’ [সূরা বানী ইসরাঈল : ২৭]।
গ. রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন : مَنْ
تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত’। [আবু দাউদ হা/নং ৪০৩১, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/নং ৪৩৪৭, সনদ সহীহ]।
ঘ. পান্তা-ইলিশের হাস্যকর কাহিনী ও সূচনা : আশির দশকে হঠাৎ করেই পান্তা-ইলিশ ও মঙ্গল শোভাযাত্র’র শুরু হয়। জানা যায়, ১৯৮৪ সালের ১৪ এপ্রিল, কর্মহীন কিছু ব্যক্তি পহেলা বৈশাখের দিন এক বেকারকে কিছু উপার্জনের জন্য রমনা পার্কে পান্তা ভাতের দোকান দেয়ার পরামর্শ দেয়। সে মতে ফুটপাতের জনৈক বেকার পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ ও বেগুন ভর্তা নিয়ে ঢাকার রমনার বটমূলে খোলা উদ্যানে দোকান দেয়। প্রচন্ড গরমে পার্কে ঘুরতে আসা মানুষ সে দোকানে এসে সেই পান্তা ভাত, ইলিশ ভাজা এবং বেগুন ভর্তা নিয়ে ফুটপাতের লোকজনের মত দূর্বা ঘাসের উপর বসেই খাওয়া শুরু করে আর কাকতালীয়ভাবে কয়েক ঘন্টার মেধ্যই পান্তা শেষ হয়ে যায়। অতঃপর দুপুরে রোদে পার্কে ঘুরতে আসা মানুষ পান্তা না পেয়ে পাশের ষ্টলে থাকা চটপটি, সিঙ্গারা, সামুচা, আইসক্রিম ইত্যাদি খেয়ে ঘুরাফেরা করেন। তখন থেকে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে রমনা পার্কে পান্তা-ইলিশের আয়োজনের সূচনা আর এটাই হলো পান্তা-ইলিশের ইতিহাস। [দৈনিক ইনকিলাব, ১৪ এপ্রিল
২০১৫ ইং]।
১০. শিরকী চিন্তাধারার অনুপ্রবেশ এবং বৈশাখী সূর্যকে স্বাগত জানানোঃ
ক. চারুশিল্পীদের রমনার বটমূলে ছায়ানটের উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথের আগমনী গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো হে বৈশাখ...। গানের মাধ্যমে প্রভাতের উদীয়মান সূর্যকে প্রতক্ষ্যকরণ ও নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে পান্তা-ইলিশ ভোজ, বৈশাখী, মেলা, যাত্রা, শিল্পীদের সঙ্গীত, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গম্ভীরা গান প্রভৃতি বিভিন্ন লোকসঙ্গীতের আয়োজন করা হয় এসব মূলতঃ সূর্য ও প্রকৃতি পূজারী বিভিন্ন প্রাচীন সম্পদ্রদায়ের অনুকরণ মাত্র যা আধুনিক শিক্ষিত মানুষের দৃষ্টিতে পূনরায় শোভনীয় হয়েউঠেছে আর এসব সূর্যপূজারই শামিল যা ইসলামে সর্বসম্মতিক্রমে হারাম ও নিষিদ্ধ এবং শয়তানের ক্লাসিকাল ট্রিকও বটে। শয়তানের এই কূটচালের বর্ণনা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন :
﴿وَجَدْتُهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُونَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ﴾
অর্থ : ‘আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সেজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলী সুশোভিত করে দিয়েছে। অতঃপর তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। অতএব তারা সৎপথ পায় না’ [সূরা নামল :
২৪ ]।
খ. রবীন্দ্রনাথের বৈশাখীর আগমনী গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো হে বৈশাখ’ এবং অন্যান্যদের ‘মুমূর্ষরে দাউ উড়ায়ে, আবর্জনা, জরাজীর্ণ দূর কর’। শিরকে পরিপূর্ণ কেননা বৈশাখের আগম করার এবং জরাজীর্ণ, আবর্জনা দূর করার নিজস্ব কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই। এসব আক্বীদা ও বিশ্বাস ; ঈমান ও ইসলাম বিধ্বংসী মরণ ব্যাধী নামক এ্যানথ্রাক্স জাতীয় ভাইরাস আকৃতির শিরক। শিরকের ভয়াবহতা সম্পর্কে কুরআনে এরশাদ হচ্ছে :
﴿إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ﴾
অর্থ : ‘ নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই’ [সূরা
মায়িদাহ্ : ৭২]।
১১. মেলাঃ
মেলায় নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা ও বিচরণ পরিলক্ষিত হয়, যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। এই মেলা নারীদেরকে বে-পর্দায় চলতে উৎসাহিত করে। এর মাধ্যমে অশ্লীলতার প্রসার ঘটে। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন :
﴿إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آَمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ﴾
অর্থ : ‘যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার-প্রসার ঘটুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ্ তা’আলা জানেন, তোমরা জান না’ [সূরা নূর :
১৯]।
১২. হালখাতাঃ
‘হালখাতা’ অর্থ হলো হালনাগাদ খাতা। ‘হালখাতা’ বলতে একটি নতুন হিসাব বইকে বোঝানো হত। আসলে ‘হালখাতা’ হলো : বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকান-পাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বানিজ্যিক এলাকা, সব স্থানেই পুরোনো বছরের হিসাবের বই বন্ধ করে নতুন হিসাবের বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকানিরা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকেন। এ প্রথাটি এখন বেশ পরিচিত, বহুলপ্রচলিত এমনকি মহা দুমদামে পালিত হয়। [দৈনিক প্রথম আলো, ১৩ এপ্রিল
২০১৫ ইং]। এই হালখাতার মধ্যেও রয়েছে শিরকের উদকট ও উদ্ভট দুর্গন্ধ। সমাজে একটি ভ্রান্ত আক্বীদা বা অন্ধবিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে যে, বছরের প্রথম দিনে বাকির খাতায় নাম উঠালে, সারা বছরই বাকিতে ব্যবসা করতে হবে। অথচ এটি সম্পূর্ণ শিরকী আক্বীদা বা বিশ্বাস। এ বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করা বাধ্যতামূলক আবশ্যকীয় কর্ম।
১৩. মঙ্গল শোভাযাত্রাঃ
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নামে আশরাফুল মাখলুক্বাত আজ কতেক অজ্ঞ-মূর্খ মানুষের ন্যায় তথাকথিত শিক্ষিত মহল বিভিন্ন জন্তু-জানোয়রের মুখোশ পরে অশ্লীল নৃত্য ও ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করে থাকে এবং একে লক্ষ্য করে মঙ্গল ও কল্যাণ লাভের আশা করে। অথচ এটা সম্পূর্ণরূপে শিরক। পশু-পাখির ছবি ও মুখোশ প্রদর্শন মূতিপূজার বহিঃপ্রকাশ ও মূর্তিপূজা প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা। প্রকৃতপক্ষে মঙ্গল-অমঙ্গল, কল্যাণ-অকল্যাণের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা’আলারই রয়েছে। এরশাদ হচ্ছে : ﴿أَلَا إِنَّمَا طَائِرُهُمْ عِنْدَ اللَّهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ﴾ অর্থ : ‘শুনে রাখ! তাদের অশুভ, অকল্যাণ ও অলক্ষণ -এর চাবিকাঠি একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই হাতে রয়েছে। অথচ এরা জানে না’ [সূরা আ‘রাফ : ১৩১]। নাবী কারীম (সা) বলেছেন : অশুভ আলামত বা দুর্ভাগ্যের ধারণা যে ব্যক্তিকে তার স্বীয় প্রয়োজন, দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে দূরে রাখল, সে মূলতঃ শিরক করল। [মুসনাদে আহ্মাদ : ২/২২০]।
[চলবে] ইনশা-আল্লাহ . . . .
[চলবে] ইনশা-আল্লাহ . . . .
No comments:
Post a Comment