জেনে নিন ; কুরআন ও হাদিসে
বর্ণিত কিছু নিষিদ্ধ কর্মসমূহঃ
সংগ্রহ, তাখরীজ ও তাহক্বীক্ব : আব্দুস সালাম
হুসাইন আলী
কুরআন ও হাদীস নামক সাগর-মহাসাগরের অুনেক রত্ন, হিরা, মনি-মুক্তাতূল্য
বাণী-মহাবাণীই তো আমাদের অজানা, অচেনা। আমরা ছোট্ট ভাষা ব্যবহারকারী প্রাণী হিসেবে
পৃথিবী নামক গ্রহেরই তো বহু কিছু জানিনা। সেই অজানা, জানতে ও অচেনাকে চিনতে হলে
আমাদের পাঠ করতে হবে আল-কুরআন ও হাদীস। আর বাস্তব অনুশীলনের জন্য আমল করতে হবে। তাহলে আমাদের ভিতর থেকে মূর্খতা নাম্নীয় (জাহালত) অন্ধকারাচ্ছন্নতা
দূরীভূত হয়ে বিদ্যা নাম্নীয় (নূর) জ্যোতির আগমন ঘটবে। যেই (নূর) জ্যোতির মাধ্যমে
মানব জাতির ইহ-লৌকিক ও পর-লৌকের সকল কল্যাণ, মঙ্গল ও সফলতার সুবাতাস প্রবাহ হবে।
তাই চলুন জেনে নিই কু্রআন ও হাদিসে বর্ণিত
কিছু নিষিদ্ধ কর্ম ; যা আমরা না জেনে প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছিঃ
০১. ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুশরিক কাউকে বিয়ে করা যাবে না। [সূরা বাক্বারা : ২২১]।
০২. মুর্তি কেনা-বেঁচা, পাহারা দেওয়া
হারাম। [সূরা মাইদাহ : ৯০, সূরা ইবরাহীম : ৩৫)]।
০৩. স্বামী ব্যাতিত
অন্য কারোর জন্য সাজা (রূপ-সজ্জা করা) হারাম। [সূরা আহজাব
: ৩৩)]
০৪. উপুর হয়ে
বুকের উপরে ভর দিয়ে শোয়া নিষিদ্ধ, কারণ এইভাবে শয়তান শয়ন করে। [সহীহ বুখারী ৭৬৯ (ই. ফা), আবু দাউদ ৫০৪০, তিরমিযী ২৭৬৮, ইবনু মাযাহ ৩৭২৪]।
০৫. দাঁড়িয়ে এবং বাম হাতে খাওয়া বা পান করা নিষিদ্ধ, কারণ দাঁড়িয়ে এবং বাঁ হাতে শয়তান খায় ও পান করে। [সহিহ মুসলিম ২০২০, তিরমিযী ১৭৯৯, রিয়াদুস সালেহীন]।
০৬. গোসলখানায়
প্রসাব করা যাবে না। [ইবনে মাযাহ ৩০৪]।
০৭. কেবলামুখী বা
তার উল্টো হয়ে প্রসাব, পায়খানা করা যাবে না। [সহিহ বুখারি
৩৯৫]।
০৮. গুলি বা তীরের
নিশানা প্রশিক্ষণের জন্য প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না। [মুসলিম
৫১৬৭]।
০৯. কারো মুখমণ্ডলে
আঘাত করা যাবে না। [মুসলিম ৬৮২১]।
১০. কাপড় পরিধাণ
থাকা সত্তেও কারো গোপন অঙ্গের জায়গার দিকে দৃষ্টিপাত করা যাবে না। [মুসলিম ৭৯৪]।
১১. আল্লাহ ব্যাতিত
কারো নামে কসম করা যাবে না। বাপ দাদার নাম, কারো হায়াত, মসজিদ বা কুরআন এর নামে কসম করা, মাথায় নিয়ে সত্যতা প্রকাশ করা যাবে না। [আবু দাউদ৩ ২৫০, নাসায়ী ৩৭৭৮]।
১২. কোন প্রাণীকে
আগুনে পুড়িয়ে মারা যাবে না। [আবু দাউদ ২৬৭৭]।
১৩. পশুর হাড়
দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা নিষিদ্ধ, কারণ আল্লাহর নাম
নিয়ে জবাই করা প্রাণীর হাড়গুলো যা মানুষেরা ফেলে দেয়, তা মুসলিম জিনদের খাবার। [সহীহ বুখারী
৩৮৫৯, সহিহ মুসলিম ৪৫০ (শামিলা) ৮৯১ (ই. ফা)।]
১৪. রাসুল (সাঃ) সূর্যাস্তের পর বাচ্চাদের বাড়ির
বাইরে বের করতে নিষেধ করেছেন এবং ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে বলেছেন, কারণ তখন জিনেরা বাইরে বের হয়। [সহিহ মুসলিম ২০১৩]।
১৫. আযান দিলে শয়তান ও জিনেরা বায়ু ছাড়তে
ছাড়তে লোকালয় থেকে পলায়ন করে। আর কুকুর ও গাধা শয়তান জিনদেরকে দেখতে পেলে চিৎকার করে। একারণে, অনেক সময় ইশা বা ফযরের আযান দিলে কুকুরেরা চিৎকার চেচামেচি
শুরু করে। কারণ তখন
কুকুরেরা আযান শুনে পলায়নরত শয়তান জিনদের দেখতে পায়। উল্লেখ্য, রাতের বেলা কুকুর ও গাধার ডাক শুনলে ‘‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনীর
রজীম" এই দুয়া পড়ে শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ কাছে আশ্রয়
চাইতে হয়। [সহিহ বুখারী ৩৩০৩, সহিহ মুসলিম ২৭২৯,
তিরমিযী ৩৪৫৯, আদাবুল মুফরাদ ১২৩৪, আবু দাউদ ৫১০৩, ইবনু খুযাইমা ২৫৫৯, ইবনু
হিব্বান ৫৫১৭-১৮, ত্ববারানী ২০০৮, শারহুস সুন্নাহ ৩০৬০, ইবনুস সুন্নী ৩০৩]।
১৬. মোরগ আল্লাহর রহমতের ফেরেশতাদেরকে দেখতে পায়, একারণে
মোরগের ডাক শুনে "আল্লাহুম্মা ইন্নিআস-আসুকা মিং ফাযলিকা" এই দুয়া পড়ে
আল্লাহর অনুগ্রহ চাইতে হয়। [সহিহ
বুখারী ৩৩০৩, সহিহ মুসলিম, ২৭২৯]।
সুতরাং আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে
উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলার এবং আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন।
No comments:
Post a Comment